Tuesday, January 9, 2024

মানস চৌধুরী ও স্বকৃত নোমানের ভূমিকাসহ দুপুর মিত্রের এন্টিস্টোরি

 

যাবতীয় কিছুতে ‘এন্টি’ উপসর্গ দেখলেই আমার তাতে আগ্রহ জন্মে বেশি। আমি জানি যে নিয়ম মেনে কোনো আচার (বা অনাচার) পালন রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে সবসময় সুবিধের নয়। তাও অভ্যাস হয়ে গেলে যে সমস্যা! আমার আগ্রহ জন্মে। সাহিত্যধারার ক্ষেত্রেও তাই। সুবিমল মিশ্রের এন্টি-উপন্যাসও তখন বাড়তি [অন]আচারমূলক নিষ্ঠা নিয়ে খেয়াল করেছিলাম। এদফায় দুপুর মিত্রের বেলায়ও তাই হয়েছে। নেটের জমানায় দুপুর মিত্র সুলভ বটেন। এগুলো পড়তে এমনকি আমার কোনো খরচাপাতিও করতে হয়নি।

দুপুর মিত্রের হলেও এন্টি-গল্পগুলো করিমেরই প্রায়। দশটির মধ্যে আটটিতেই করিম জ্বলজ্বল করছেন তাঁর প্রতিদিনকার সঙ্কট আর যাপন সমেত। তবে একজন করিম নন, কয়েকজন করিম। নেহায়েৎ দৈবাৎ করিমের সঙ্কট আর টানাপড়েন আটপৌরে হলেও তাঁদের মীমাংসা প্রায়শই সাদাসিধে নয়। তাঁরা বিশেষ তীর্যক রঙ্গরসের মধ্য দিয়ে জগৎ নিয়ে ফয়সালা করেন। প্রায়শ তাঁরা উইটি। সেটা জাতীয় সঙ্গীতের জন্য স্পন্সর যোগাড় করাতে হয়তো বেশি ধরা পড়ে, কিন্তু সাধারণভাবে তাঁদের ভাবনাচিন্তার দুনিয়াতেই এটা আছে। আবার করিমেরা নিস্পৃহ, নিরাসক্ত এক প্যাসিভ মানুষ মাত্র। যখন মাইকে বেহুদা প্রোপাগান্ডা ভাষণ শোনেন, কিংবা গ্রামীণ ফোনে কথা বলেন। একমাত্র স্বপ্নার সঙ্গে প্রেমের ভেজালটুকু বাদ দিলে করিমসমূহের জগৎ খুবই বৈশ্বিক আর রাষ্ট্রীক পরিস্থিতির অংশ। কিন্তু কখনো কখনো করিমের উপস্থিতি তাঁর প্রতি লেখকের বাড়তি পক্ষপাতের কারণেই। আসলেই কোনো কাজ নেই। ৬নং কিস্সাটিতে তো একেবারেই নেই। এই খামাকা উপস্থিতি কোনো কোনো করিমকে, তাই কিস্সাগুলোকে দুর্বল করেছে।

দুপুর মিত্র তাঁর এই প্রচেষ্টাতে ভীষণ রাজনৈতিক। সেটা আমাকে বিশেষভাবে ভাবিয়েছে। হয়তো এ কারণেও যে লেখালেখির বাইরে তাঁকে একবার দেখেছি, এবং মিশনের বাইরে ফেইসবুক-ব্লগ দুনিয়ার কথাবার্তায় একাধিকবার দেখেছি। যোগাযোগের জন্য তাঁকে আমার বিশেষ দুরূহ মনে হতো। হয় খোঁচাখুঁচি করছেন (ডিজিটাল দুনিয়ায়) না-হয় প্রায় চোখাচোখিটাই স্পষ্টভাবে করছেন না (বস্তু দুনিয়ায়)। এই এন্টি-গল্পগুলো দুপুর মিত্র বিষয়ে আমাকে আরাম দিয়েছে। তাঁর দেখাদেখি ও ভাবাভাবির দুনিয়ার খানিক পরিচয় পেয়েছি আমি। রচনার উদ্দেশ্য থাকতেই হবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর তর্ক আছে, তবে রচনা উদ্দেশ্যপরায়ণ হলে কী উদ্দেশ্য সেটা একেবারেই প্রাসঙ্গিক জিজ্ঞাসা। দুপুর মিত্রের উদ্দেশ্য-অনুসন্ধান সহজেই বোধগম্য এই কাজগুলোতে। হয়তো শেষ টুকরাটি খানিক বিভ্রান্তিতে ফেলে। হতে পারে ঢাকা শহরের কিছু ইতিহাস আমি জানি না বলে। আবার মাইকে প্রোপাগান্ডাটিও [৬ নং] বিশেষ উদ্দেশ্যবিহ্বল রচনা মনে হয়। অবধারিত বলে।

হয়তো দুপুর তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত [বা বিযুক্ত] থাকতে চেয়ে খানিক জোরাজুরি করেছেন সব লেখাগুলোতেই। এদিক থেকে এই সংকলনটি উদ্বেলিত ধরনের। কিন্তু আবার ভেবে দেখলে, ওই জোরাজুরিটি না থাকলে এই রচনাগুলোর কিছুই থাকে না। নানান অভিব্যক্তিতে মানুষ লিখুক, বা বলুক, বা ব্লগাক। বেশুমার অভিব্যক্তি, আর তা প্রকাশের ভাষানুসন্ধানই সমকালীন সাহিত্য। সাহিত্যে ধ্রুপদ এখন একটা কল্প-আকাঙ্খা মাত্র। বহুপদ আর ক্ষণপদ কেবল। জনপদই লোপাট হয়ে যাচ্ছে, তো সাহিত্য! দরকারও নেই ধ্রুপদের মায়াকান্না।        

 মানস চৌধুরী
উত্তরা॥ ১৬ই জানুয়ারি ২০১৩


Onthat ass use test offer 

অ্যান্টি স্টোরি বা ‘না-গল্প’ আসলে কথাসাহিত্যের অন্তর্গত এক ধরনের গদ্য রচনা। গল্প, কিন্তু এর মধ্যে গল্পোচিত প্রত্যাশিত গুণাবলি নেই। গল্পের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়ে তার বিপরীতে প্রতিকাঠামো দাঁড় করানোটাই হচ্ছে না-গল্পের প্রধান কাজ। গল্পের সঙ্গে এর একটা সুস্পষ্ট পার্থক্য আঙ্গিক, ঘটনা, চরিত্র ও পটভূমির ক্ষেত্রে।অর্থাৎ গল্পের উপাদানগুলো ত্যাগ করে না-গল্প।

অ্যান্টি স্টোরি আসলে সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত কোনো জনের নয়-এটি গৌণ, অবকিশিত ও অপ্রতিষ্ঠিত একটি জনের। দুপুর মিত্রের আগেও বাংলা ভাষায় ধারাটির চর্চা হয়েছে। সুবিমল মিশ্রের অ্যান্টি স্টোরি চর্চা সর্বলেখক বিদিত। আশির দশকে মাখরাজ খান ও শাহাদুজ্জামানের মধ্যেও একটা প্রয়াস দেখা যায়। তাঁদের সফলতা-ব্যর্থতা অন্য প্রসঙ্গ। নব্বইয়ের চঞ্চল আশরাফও এ ধারায় লিখেছেন। তাঁর রচিত ‘টিকটিকির রক্ত লাল হয়ে ওঠার আগে’ একটি সার্থক অ্যান্টি স্টোরি বলা যেতে পারে।

প্রচলিত পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা এড়িয়ে তার বিরোধিতা করাই হচ্ছে সৃজনশীল লেখকের কাজ। দুপুর মিত্র সেই কাজটাই করেছেন। তাঁর না-গল্পগুলো পড়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, প্রথাগত শিল্পকাঠামোকে অস্বীকার করে প্রথমত তিনি সাহসকিতার পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর না-গল্পগুলোর মধ্যে এক ধরনের নতুন বিনির্মাণ রয়েছে। নিরীক্ষার নামে যে ফাঁকি চলে, তা থেকে সচতেনভাবেই তিনি দূরে থেকেছেন। ফলে আঙ্গিক-সন্ধানী পাঠক হিসেবে তাঁর এই প্রচেষ্টা আমার দৃষ্টি আর্কষণ করে। দুপুরের ফেইসবুক ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে শুরু থেকেই তাঁর না-গল্পগুলোর প্রতি আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল, তবে গুপ্তভাবে। যখন দেখি, না, স্রেফ নাম কুড়ানোর জন্য উল্টোপথে হাঁটছেন না তিনি, তাঁর না-গল্পগুলোর মধ্যে নতুন বিনির্মাণ আছে, তখন পর্যবেক্ষণের গোপনতাকে প্রকাশ্যে রূপ দিতে দ্বিধা থাকল না। মহাসমুদ্রের ফেনায়িত বুদ্বুদের মতো লেখকের চিত্তে প্রতিনিয়ত চিন্তার যে বুদ্বুদ ভেসে বেড়ায়, তাকে শব্দ ও বাক্যে, প্রথাবিরুদ্ধ আঙ্গিকে নান্দনকিভাবেই গ্রেপ্তার করতে পেরেছেন দুপুর। পড়ে আমার উপলব্ধির জগতটা আন্দোলিত হয়, বাস্তবতার জগত থেকে শিল্পের সুড়ঙ্গপথে বোধের চৌকাঠে পা রাখতে সক্ষম হই। দুপুর কেবল আঙ্গিক অস্বীকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকনেনি, বিষয় নির্বাচনেও তার অভিনবত্ব লক্ষণীয়। তাঁর না-গল্পগুলোর বিষয় বাস্তবতার্স্পশী, কখনো ইতিহাসর্স্পশীও। এর বাইরেও বিষয় বৈচিত্র রয়েছে। বর্ণনা, শব্দের ফিউশন এবং বাক্যালঙ্কারেও একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন।

নাগরিক ও প্রাযুক্তিক ব্যস্ততার কারণে আমাদের সাহিত্য পাঠের অভ্যাস দিন দিন কমছে। আয়তনিক দিক থেকে হৃস্ব হওয়ার কারণে দুপুর মিত্রের না-গল্পগুলো পড়তে খুব বেশি সময় লাগে না। ফলে প্রজ্ঞার উৎর্কষ সাধনে ব্যস্ত পাঠকের জন্য এগুলো উৎকৃষ্ট মাধ্যম হতে পারে বৈকি!

দুপুর মিত্রের অ্যান্টি স্টোরি বা না-গল্প সম্পর্কে উপর্যুক্ত মন্তব্যগুলো যে স্তুতি নয়, তা বোঝা যাবে তাঁর না-গল্পগুলো পাঠান্তে সুতরাং শুরু করা যাক।

স্বকৃত নোমান
ঢাকা, ০৬ জানুয়ারি ২০১৩


Onthat ass use test offer 

এন্টি স্টোরি-১: প্রকৃতিতে কোনো কিছুই দ্বান্দ্বিকভাবে ঘটে না অথবা প্রেমে ব্যর্থতার জন্য শুধু তুমি আর আমি দায়ী নই

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল কথা হল সমস্ত বস্তুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের মধ্যেই সম্পর্কযুক্ত।

[করিম আর স্বপ্না। করিম স্বপ্নাকে ভালবাসে। স্বপ্না করিমকে ভালবাসে। ভালবাসা একটি সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ভিতরে দ্বন্দ্বও রয়েছে। আবার সমন্বয়ও রয়েছে।]

[ কিন্তু করিম আর স্বপ্না সম্পর্কযুক্ত নয়, যদি না করিম স্বপ্নার বা স্বপ্না করিমের প্রেমে না পড়ে বা অন্য কোনও কিছু না হয়। এই সম্পর্ক না থাকলে দ্বন্দ্বও থাকবে না, সে হিসেবে সমন্বয়ও হবে না]

দ্বন্দ্ব দুই প্রকারঃ অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্ব। কোন বস্তু নিজের অভ্যন্তরে যে দ্বন্দ্ব তা হল অন্তর্দ্বন্দ্ব আর একটি বস্তুর সাথে অন্য বস্তুর যে দ্বন্দ্ব তা হল বহির্দ্বন্দ্ব।

[ করিম স্বপ্নাকে ভালবাসে কিনা আসলেই করিম স্বপ্নার প্রেমে পড়েছে কিনা এ নিয়ে নিজের ভিতরে করিমের যে দ্বন্দ্ব তা হল অন্তর্দ্বন্দ্ব আর করিম এবং স্বপ্নার মধ্যে মাঝে মাঝে যে ঝগড়া-ঝাটি ঘটে, তা হল বহির্দ্বন্দ্ব]

[ করিম আর স্বপ্নার ভিতর কেবল মাত্র বা কেবলমাত্রই দুইটি দ্বন্দ্ব কাজ করে না। একই সাথে সমাজ,রাষ্ট্র, ধর্ম, বর্ণসহ অনেকগুলো দ্বন্দ্ব কাজ করে। সেটা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্ব উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে। মানে অন্তর্দ্বন্দ্বেও অনেকগুলো দ্বন্দ্ব কাজ করে আবার বহির্দ্বন্দ্বেও অনেকগুলো দ্বন্দ্ব কাজ করে]

মার্ক্স বলেন, এই দুই দ্বন্দ্বের মাঝে অন্তর্দ্বন্দ্বই হল পরিবর্তনের ভিক্তি। বহির্দ্বন্দ্ব কোন কোন ক্ষেত্রে অন্তর্দ্বন্দ্বকে প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু যতক্ষন পর্যন্ত অন্তর্দ্বন্দ্ব পরিপক্কতা লাভ না করে ততক্ষন পর্যন্ত বহির্দ্বন্দ্ব কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।

[ করিম যদি মনে করে আবার নিজেকে পরিবর্তন করে বা সত্যি সত্যি প্রেমে পড়েছে বলে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারে তা হলে করিম প্রেমে পড়ল মানে করিমের পরিবর্তন হল। কখনও কখনও স্বপ্নার প্রেম করিমকে প্রেমে পড়তে উদ্বুদ্ধ্ব করতে পারে, তবে এই প্রেরণা করিম পাবে না, যদি না করিম নিজে থেকে প্রেমের জন্য তৈরি হতে না থাকে।]

[করিম আর স্বপ্নার মাঝে কেবল মাত্র দুইটি দ্বন্দ্ব নেই। একই সাথে একই সময়ে অনেকগুলো দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। সে হিসেবে কেবল মাত্র দুইটি দ্বন্দ্বের অন্তর্দ্বন্দ্ব পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।

অর্থাত বস্তুবিশ্বে একই সাথে অনেকগুলো দ্বন্দ্ব কাজ করে।

মানব সভ্যতার ইতিহাসেও সমাজের অভ্যন্তরে প্রতি নিয়ত বহুধরনের শক্তির দ্বন্দ্ব চলেছে, চলছে এবং সেটি একই সাথে একই সময়ে একই স্থানে। সেটা দ্বান্দ্বিকভাবে হয় নি বা বস্তুর দ্বান্দ্বিকতার কারণে হয় নি; হয়েছে অনেকগুলো বস্তুর বা শক্তির একই সাথে একই সময়ে একই স্থানে অনেকগুলো সংঘর্ষ বা ক্রিয়ার কারণে।

করিম আর স্বপ্নার বিষয়টিও তাই। করিম আর স্বপ্না প্রাণপণে চাইলেও সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি, বর্ণ, অর্থনীতি এই সব সমস্ত বলের একই সাথে বিপরীত ক্রিয়ার জন্য তাদের প্রেম ব্যর্থ হয়।]

এন্টি স্টোরি-২: ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই অথবা নীরা আর কখনই ফিরে আসবে না

কিউবা কি হয়েছিল তোমার। ক্যাস্ট্রো কি হয়েছিল তোমার। ১৯৫৩ সাল, ক্যাস্ট্রো তুমি বাতিস্তার একটি ব্যারাকে আক্রমন চালালে; এরপর দীর্ঘ ১৫ বছরের জেল। গেরিলা বাহিনী গঠন করে ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে বাতিস্তাকে পরাজিত করলেন। বিপ্লব হল। এই বিপ্লব কি আবার হবে? এইভাবে আরও এক জায়গায়। ধরা যাক তুমিই হবে সেই বিপ্লবের নায়ক। তারপরও কি
হবে, সেইভাবে আরেকবার বিপ্লব।

মাও সেতুং ১০০০০ কি মি লং মার্চের মাধ্যমে উত্তরের দিকে অগ্রসর হতে হতে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়লে। ১৯৪৬ সালে শুরু হলো চীনে গৃহ যুদ্ধ। ১৯৪৯ সালে ন্যাশনালিস্টদের পরাজিত করে শুরু করলে কমিউনিস্ট পার্টির যুগ। এইভাবে আবার কি কোথাও ইতিহাস হবে, একই ভাবে, যেভাবে লং মার্চ, গৃহযুদ্ধ, তারপর কমিউনিস্ট যুগ। ইতিহাস কি একইভাবে হয়, একইভাবে পুনরায়?

অথবা শোষিত শ্রমিক শ্রেনীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের উত্থান সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, প্রতিটি মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাল যে অক্টোবর বা বলশেভিক বিপ্লব, কমরেড লেনিনসহ অনেক বিপ্লবী মহানায়কেরা যেভাবে, যে কারণে, যে ক্ষোভে শুরু হয়েছিল; সেই বিপ্লব সেই বলশেভিক বিপ্লব কি আবার একইভাবে ধরা যাক অন্য কোনও মহানায়কদ্বারা শুরু হবে কি বা শুরু করা যাবে কি বা আসলে বলশেভিক বিফলবের মতই কিছু হবে কি?

অথবা ফ্রান্সের ৯৫ ভাগ সম্পত্তির মালিক ছিলো মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। রক্ষীবাহিনীর সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের মানুষ বাস্তিল অভিমুখে রওয়ানা হল। প্রতিনিধিরা রক্তক্ষয় এড়াতে বাস্তিল দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে প্রস্তাব দিল আলোচনার। লক্ষ্য ছিলো বাস্তিলে অবস্থিত ৭ জন রাজবন্দীকে মুক্ত করা এবং বাস্তিলে রক্ষিত অস্ত্রসমূহ জনগনের হাতে তুলে দেওয়া এবং কামানগুলো অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু দ্য লোন প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দেওয়ায় উত্তেজিত হয়ে পড়ল জনতা, আছড়ে পরল জনতার ঢেউ বাস্তিল দুর্গে, বাস্তিলের রক্ষীরাও কামান দাগাতে শুরু করে সেই সময়; প্রায় দুইশত বিপ্লবী জনতা হতাহত হয়। এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত ক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল ধ্বংস করে। এই যে ইতিহাস, এই ইতিহাস থেকে কি শিক্ষা নেওয়া আছে? জনতা উত্তেজিত হলে বাস্তুল দুর্গও ভেঙে যায়। সবসময়ই কি ভেঙে যায়? জনতা কি এইখানেই কেবল উত্তেজিত হয়েছিল। কতবারই তো উত্তেজিত হয়েছে জনতা, তাতে কি ভেঙে গেছে বাস্তুল দুর্গ? এই ইতিহাস কি আবার হবে? এই ইতিহাস কি বারবার হয়? ইতিহাসের কি পুনরাবৃত্তি ঘটে?

ভুল, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে না। বিপ্লবী ইতিহাসেরও না। কাজেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ারও কিছু নেই। কোনও ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে না। মানে একই ভাবে ঘটে না। মানে যে পরিস্থিতিতে, যে কার্য-কারণে একটি বিতিহাসকে আমরা দেখছি; ঠিক হুবুহু একই কার্যকারণে পৃথিবীর কোথাও কোনও আরকেটি ইতিহাস হয় না।

অথবা কুসুম আর ফিরে আসেনি শশীর কাছে।

‘চিরদিন কি একরকম যায়??মানুষ কি লোহার গড়া যে সে চিরদিন একরকম থাকবে,বদলাবে না?বলতে বসেছি যখন তখন কড়া করেই বলি,আজ হাত ধরে টানলেও আমি যাবোনা।আপনি কি ভেবেছিলেন আপনার সুবিধামতো সময়ে আমাকে ডাকবেন আর আমি চলে আসবো?’

অথবা নীরারাও ফিরে আসে না। ফিরে আসবে না। কারণ মানুষ এক রকম থাকে না বদলায়। ইতিহাসও পুনরায় ঘটে না, বদলায়।

এন্টি স্টোরি-৩: জাতীয় সংগীত পরিবেশনে স্পন্সর চাই

স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। কিন্তু এত টাকা পাবে কোথায়? স্কুল ফান্ডে যে টাকা জমা হয়, তা শিক্ষকরাই খেয়ে ফেলেন। এটার জন্য আলাদাভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা চাইলে, অভিভাবকরা ক্ষেপে যেতে পারেন। স্পন্সর ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আসলেই সম্ভব নয়। করিম স্পন্সর যোগাড় করে অনুষ্ঠান করল।

স্কুলে খেলা-ধূলার প্রোগ্রামটারও একই অবস্থা। অনেক টাকা -পয়সার ব্যাপার। স্পন্সর ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। করিম স্পন্সর যোগাড় করল।

পিকনিকে যেতে হবে। চাঁদা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে টাকা ওঠেছে, তার সাথে স্পন্সরের টাকা যোগ করলে পিকনিকটা আরও ভাল হবে। করিম স্পন্সর যোগাড় করল।

স্কুলের ফটকটা মেরামত করতে হবে। কিন্তু এত টাকা স্কুলের ফান্ডে নেই অথবা সেই টাকাও ঢুকে গেছে শিক্ষকের পেটে। এত কিছু চিন্তার কি আছে। কোনও একটা কোম্পানিকে বলে দিলে এত দিনের নামকরা স্কুল, সেই স্কুলের ফটকে কোম্পানির নামও থাকল আর স্কুলের নামও থাকল। যে কোনও কোম্পানিই রাজি হয়ে যাবে এতে। করিম স্পন্সর যোগাড় করল।

স্কুলের ছেলে-মেয়েরা ইদানিং এসেম্বলি হলে আসতে চায় না। প্রতিদিনের শপথ আর জাতীয় সংগীতও গাইতে চায় না তারা। প্রতিদিন এসেম্বলি হলে যদি ছেলে-মেয়েদের জন্য বিস্কিটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তারা সবাই এসেম্বলি হলে আসবে। শপথ আর জাতীয় সংগীত সবাই মনোযোগ দিয়ে করবে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য সাপন্সর দরকার। করিম স্পন্সর যোগাড় করতে বের হল।


Onthat ass use test offer 

এন্টি স্টোরি-৪: আমাদের দেশের নামও আমেরিকা

করিম ভাবছে

আমেরিকায় কিছু হলে আমাদের দেশে কত কিছু ঘটে। আমাদের দেশের পত্রিকায় আমেরিকা প্রেসিডেন্টের বড় বড় ছবি ছাপা হয়। ওদের দেশের নির্বাচনের উতসবের ঢেউ আমাদের দেশেও বয়ে যায়। ওদের নির্বাচনের সময় আমরাও উত্তেজিত থাকি। নির্বাচিতকে দেখে হেসে উঠি- আনন্দে লাফিয়ে উঠি। টিভি-পত্রিকায় ওদের মুখ ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। শুধু বাংলাদেশের মিডিয়া নয়, রাজনীতিকদের মধ্যে উল্লাসের প্লাবন বয়ে যায়।

করিম ভাবছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পদের কেউ একজর বলেছিল-আমেরিকার তার নিজস্ব স্বার্থেই বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ও বিশ্বের চতুর্থ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক কারণেই আমেরিকার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বিক্ষুদ্ধ চরমপন্থী সহিংসতার মাঝে মধ্যপন্থী সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক লোকায়ত রাষ্ট্রশক্তি হিসাবে বাংলাদেশের বর্তমান উত্থান এই অঞ্চলে প্রচণ্ড আশাবাদ নিয়ে এসেছে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা এমনকি চীনের সাথে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ সহযোগীতার কেন্দ্রস্থল হিসাবে আবির্ভুত হচ্ছে। শান্তিরক্ষী মিশনে বিশ্বের প্রথম দুটি পূর্ণাঙ্গ মহিলা পুলিশ ইউনিট সহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১০ হাজার ৬৫৩ জন শান্তিরক্ষী সদস্যের বৃহত্তম শান্তিরক্ষা বাহিনী হিসাবে বিশ্বে বাংলাদেশ সুনাম কুড়াচ্ছে। তারজন্য আমেরিকা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায়।

করিম ভাবছে

আমেরিকা ও বাংলাদেশ যৌথ ভাবে “অপারেশন টাইগার সার্ক-৪” এর প্রশিক্ষণ মহড়া শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাপি জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ ও আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে গত রবিবার সকাল থেকে এ মহড়া শুরু হয়েছে। মহড়ায় বাংলাদেশের সেনা, নৌ , বিমান, বর্ডার গার্ড, র‌্যাব, কোষ্ট গার্ডের সদস্য ও কর্মকর্তারা অংশ গ্রহণ করেন। এতে আমেরিকার তিন শত সেনা সদস্য এবং একটি নৌ যুদ্ধ জাহাজ, হেলিকপ্টার সহ অন্যান্য আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপেম্বর পর্যন্ত ৭ টি স্থানে এ মহড়া চলবে। রোববার মহেশখালি ও কুতুবদিয়া দ্বীপের উপকূল ও স্থলে এ মহড়ায় আমেরিকা ও বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা যৌথ ভাবে কাজ করে। মহড়া চলা কালে উপকুলের জনবসতি ও সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও জেলেদের কোন ধরণের বাধা বিপত্তি হবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নৌ অধিদপ্তর ।

করিম ভাবছে

কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গ্রেফতার হয়েছেন। নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও এফবিআই। সন্দেহভাজনের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠে আসায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। নাফিসের এই ঘটনা অবশ্য বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সারা বিশ্ব জুড়েই নানা ধরনের সন্ত্রাসবাদ, আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং ‘সুইসাইড টেরোরিজম’এর মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যা এবং আতংক তৈরি ধর্মীয় উগ্রপন্থী দলগুলোর জন্য খুব জনপ্রিয় একটা পদ্ধতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আল-কায়দার ১৯ জন সন্ত্রাসী চারটি যাত্রীবাহী বিমান দখল করে নেয়। তারপর বিমানগুলো কব্জা করে আমেরিকার বৃহৎ দুটি স্থাপনার ওপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছিল। নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বা পেন্টাগনে ঐ হামলা চালানো হয়। প্রায় তিন হাজার মানুষ সেই হামলায় মৃত্যুবরণ করে। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা ছিলো এটি।

করিম ভাবছে

বাংলাদেশিরা আমেরিকায় গিয়ে কি করে। অনেকে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। যারা ওয়াটার হিসাবে কাজ করেন, তারা সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজ করে ১হাজার থেকে ১২শ ডলার রুজি করেন ( যদি সেটা ভাল রেস্টুরেন্ট হয়)। অনেকে আবাসিক হোটেলে কাজ করেন। এই জব অন্য সব প্রফেশনাল জব থেকে অনেক ভাল। অনেক ভাল সেলারি, অনেক ভাল বেনিফিট। অনেকে ট্যাক্সি ক্যাব চালান। এটা একটা ফ্লেক্সিবল জব। টাকাও ভাল । সপ্তাহে পাঁচদিন চালালে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা হয়ে যায় । আর স্টুডেন্ট দের জন্য বেস্ট জব। এখানে কালো, হলুদ হরেক রকমের ট্যাক্সি আছে। এই ক্যাব চালাতে আলাদা লাইসেন্স বানাতে হয়, কোন কোন ক্যাব চালাতে হলে আলাদা টেস্ট দিতে হয়। অনেকে আছেন অনেকদিন ধরে এখানে যাদের অনেকের নিজস্ব ব্যবসা আছে। ব্যবসা বলতে ডেলি গ্রোচারি, রেস্টুরেন্ট, হাঁস মুরগীর ফার্ম , গিফট শফ, গ্যাস স্টেশন, মোবাইল এক্সোসরিসের দোকান, সেলুন ইত্যাদি । যারা মধ্য বয়স্ক, একটু বয়স্ক মানুষ দেশ থেকে আসেন, তারা কাজ পেতে এখানে একটু সমস্যা হয়। তাদের জন্য সিকিউরিটি হল বেস্ট জব । তাই এই বয়সি লোকজন সিকিউরিটিতে কাজ করতে প্রায়ই দেখা যায়। এর জন্য তাদের আলাদা ট্রেনিং করে একটা সার্টিফিকেট নিতে হয়। তারা ঘণ্টায় ৮-১৫ ডলার পর্যন্ত আয় করেন। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে চেকে ট্যাক্স বাদে ৩২০-৪০০ ডলার থাকে। ফল, শাক সবজি বিক্রি করেন। অনেক ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করে লাইক ম্যাকডোনাল্ড, সাবওয়ে,বার্গার কিং, ডানকিন ডোনাট,ডমিনো পিজা ইত্যাদি। এসবের সেলসে বেশির ভাগ বাঙালি মেয়েরা কাজ করে। ছেলেরা যারা কাজ করে কিছুদিন কাজ করে ম্যানেজার হয়ে যায়, মেয়েদেরও অনেকে হয়। সেলসে যারা কাজ করেন তারা ঘণ্টায় ৭.৫০ -১০ ডলার করে আয় করেন । অনেকে ফার্মেসিতে কাজ করেন।

করিম ভাবছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এলেন। সেকি সাজ সাজ রব! বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা চারিদিকে সাফল্যের ঢেঁকুর তোলা শুরু করলেন। বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। যারপরনাই ঘটনা তারা ঘটিয়ে ফেলেছেন। পৃথিবীর অধিপতি তাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। অতঃপর তিনি এক প্রহরের জন্য এলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমেরিকান ডেকোরেশনে মঞ্চ তৈরি করে বক্তব্য দিলেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশ গ্যাসের ওপরে ভাসছে। সুতরাং বাংলাদেশের উচিৎ গ্যাস রফতানি করা।

করিম ভাবছে

বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, বঙ্গোপসাগর গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য আমেরিকান তেল গ্যাস কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। সরকারি কর্মকর্তারা বৃহষ্পতিবার ওই চুক্তির কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন এই চুক্তি ওই জালানি কম্পানিকে বঙ্গোপসাগরে দুটি এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকার দেবে। টিফা চুক্তি করছে।

করিম ভাবছে

বাংলাদেশের মত মুসলমান অধ্যুষিত দেশে আমেরিকা বিরোধি মানুষই বেশি। ইরাক যুদ্ধের পর আমেরিকার প্রতি অনেক মানে প্রায় অধিকাংশ মানুষই বিরক্ত। তারা পারলে আমেরিকাকে শেষ করে দেয়। কিন্তু ডিভি লটারি ঘোষণা হওয়ার পর বাঙ্গালি যেসব মুসলমানকে স্যুইসাইড স্কোয়াডে যাবে ভেবেছিলাম, তারাই ডিভি লটারিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর আবেদনকারীর সংখ্যাই বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ডিভি লটারির জন্য সারাবিশ্বকে মোট ৬টি ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী বিভক্ত করে মূল পর্বের লটারি পরিচালনা করে। তবে দ্বিতীয়বারের মতো নিয়ম করা হয়েছে, যে দেশ প্রতি ৫ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি অধিবাসী পাঠিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সমসাময়িক ডিভি লটারির আওতায় আনা হবে না। বিভক্তকৃত ৬টি অঞ্চলের মধ্যে অবস্থানকারী যে কোনো দেশের শুধু ৭ শতাংশ আবেদনকারী ডিভি লটারির জন্য নির্বাচিত হবে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার আবেদনকারী এ লটারিতে বিজয়ী হয়েছিল। ডিভি লটারি চালুর পর বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৯ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছেন। ২০১০ সালের ডিভিতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮৯৬ জনকে ভিসা দেওয়া হয়েছে।

এন্টি স্টোরি-৫: তুমি hi বললে যে কারণে আমার ভিতরে সুড়সুড়ি শুরু হয়ে যায়

করিম স্বপ্ন দেখছিল- অনেক অপূর্ব সুন্দরী নারীরা মিছিল করছে।

আমার দেখতে সুন্দরী নই
আমরা দেখতে উদ্ভটও নই
আমরা খুবই ক্ষেপা

একজন সুন্দরী বক্তৃতা দিচ্ছিল- যুবতী মেয়েদের কাছ থেকে তোমরা কি আশা কর? আমরা মুখে মেক- আপ দিয়ে ঘুরব? আমরা জেনে গেছি – Miss World is the jewel in the crown of rape culture.

করিম স্বপ্ন দেখছিল- স্বপ্নের ভিতরে দৌঁড়াচ্ছিল।

ইংল্যান্ডে ৮০ হাজার নারীর বেশ্যা-বৃত্তির সাথে জড়িত। ৫ হাজার শিশু মেয়ে জড়িত এই কাজে।
বেশ্যাবৃত্তিতে জড়িত নারীদের ৭৫ ভাগই এই কাজ শুরু করেছেন ১৮ বছরের নিচের বয়স থেকে। ১৮ বছরের নিচের এই দেহকর্মীদের প্রায় সবাই ভাসমান দেহকর্মী।
শিশু দেহকর্মীদের ৭৫ ভাগই স্কুল থেকে হারিয়ে যাওয়া শিশু।
ইংল্যান্ডে শুধু মাত্র ১৯ ভাগ নারী ফ্ল্যাট, পার্লারে দেহব্যবসার কাজ করেন।

করিম স্বপ্ন দেখছিল- স্বপ্নের ভিতরে ঘেমে গিয়েছে।

ভারতের বেশ্যাপল্লীগুলোতে বাংলাদেশের ২৭ হাজার নারী ও শিশু কাজ করে। তাদেরকে জোর করিয়ে এই কাজ করা হয়।
গত দশকে ২ লাখ বাংলাদেশি নারী ভারত-পাকিস্তান ও মধ্য প্রাচ্যে যৌন কাজের জন্য বিক্রি হয়েছে।
গত ২০ বছরে মধ্য-প্রাচ্যে বাংলাদেশের ২ লাখ নারী ও শিশু বিক্রি হয়েছে।
কলকাতায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি যৌন-কর্মী রয়েছে।
ভারতের মুম্বাই ও গোয়ায় ১০ হাজার বাংলাদেশি শিশু যৌন কর্মী রয়েছে।

করিম স্বপ্ন দেখছিল- স্বপ্নের ভিতরে কেঁদে ফেলল সে।

১৯৩০ সাল থেকে সারা বিশ্বের প্রায় ৪০০ সুন্দরী প্রতিনিধিত্ব করেছেন লাক্সকে। তবে সেরাদের সেরা হিসেবে সারাহ জেসিকা পার্কার এবং ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নাম লিপিবদ্ধ লাক্সের ইতিহাসে।
তোমার রেশম কোমল রূপের জাদুতে সাজবে বাংলাদেশ। এক হাজার ১০০ এর বেশিও প্রতিযোগী লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারে।

কেউ একজন এত গভীর রাতে করিমের মুখ থেকে একটি শব্দ শুনতে পেল। সম্ভবত সেই শব্দটি করিমের প্রেমিকার নাম।


Onthat ass use test offer 

এন্টি স্টোরি-৬: বাংলাদেশ যেভাবে গরীবের দেশ হলো

মাইকে ভাষণ চলছে:

সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ চির দিনের জন্য বাংলার মাঠি থেকে আমরা নির্মুল করে দেব, জনগনের অধিকার বোনের অধিকার ভাইয়ের অধিকার আমরা রক্ষা করব।

বিদ্যুতের সমস্যা কমিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াবো।

রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন আমরা করব।

জনগনের জয় হবেই হবে, প্রত্যেকে প্রস্তুত হও।

করিম শুনল।

মাইকে ভাষণ চলছে:

আমরা ক্ষমতায় আসলে মিথ্যা মামলা দেব না। তথ্য-প্রমাণসহ মামলা দিয়ে প্রচলিত আইনে বিচার করব।

দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসব। দেশবিরোধী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নতি হবে। ঘরে ঘরে চাকরি না দিতে পারলেও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান করব। কৃষকরা কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য যাতে পায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করিম শুনল।

মাইকে ভাষণ চলছে:

ঈমানদারদের এক কথা। ভারতীয় সংস্কৃতির আমদানীর মাধ্যমে যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা জনগনের জন্য কল্যাণ ও উন্নয়নের রাজনীতি উপহার দেব।

ওয়াদা করার সময় লিখে রাখা উচিত। কেননা দুনিয়ায় জবাব দিতে না হলেও আখেরাতে এর হিসাব দিতেই হবে।

করিম শুনল।

মাইকে ভাষণ চলছে:

বিদেশীরা আমাদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে রেখেছে। দেশে খাদ্য নিয়ে ফটকাবাজি হচ্ছে। গত কয়েক দশকে খাদ্য পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মুনাফাখোররা বুঝে গেছে, খাদ্য পণ্যের দাম বাড়লেও চাহিদা কমবে না কেননা মানুষকে তিনবেলা খাবার খেতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকায় কৃষককে ঠকিয়ে মধ্যস্বত্তভোগীরা ২০ গুণ দাম বাড়িয়ে মুনাফা করছে।

জনগণের সকল আন্দোলন ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরকার বেআইনি ও সুদূরপ্রসারীভাবে জাতীয় স্বার্থহানিকর কাজ করে যাচ্ছে।

করিম শুনল।

মাইকে ভাষণ চলছে:

সামাজিক ব্যাবসায় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হবে। দারিদ্র্য দূর হবে। মানুষ গরিব থাকবে না। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গরিব নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হচ্ছে। সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরাই কাজ করছি।

দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে সমাজে আমরাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করছি।

করিম শুনল।

এন্টি স্টোরি-৭। বাংলাদেশ যে কারণে গ্রামীন ফোনের কাছে ঋণী

ভারত নামের পৃথিবীর এক জায়গায় ২০০ বছর ধরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাজ করত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নানা ভাবে ভারতকে দিয়ে কাজ করাত। ভারত কিছুই বুঝতে পারত না। ভারত এতটাই উদাস আর বোকা ছিল যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের ঘরে ঢুকে ধীরে ধীরে সব নেওয়া শুরু করল। এইভাবে সব নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইউরোপের নানা জায়গায় বাণিজ্য বিস্তার শুরু করল ও শিল্প-কারখানা বানাতে লাগল। ইউরোপ ভারতকে নানাভাবে ঠকিয়ে আধুনিক হতে শুরু করল। এটাই ইউরোপের শিল্পায়ন ও আধুনিকতার ইতিহাস। ভারত এই কথা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ জানাল। বলল- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, তোমরা আমাদের নও। তুমি চলে যাও। নানা সংগ্রাম করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারত তাড়িয়ে দিল।

ভারতের দুই বন্ধু জুটল। একজনের নাম বাংলাদেশ, আরেকজনের নাম পাকিস্তান।

একদিন বাংলাদেশেও গ্রামীণ ফোন এল।

বাংলাদেশে করিম নামের একজন কৃষক আছে। উনি প্রতিরাতেই গ্রামীন ফোনে কথা বলেন।

গ্রামীন কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় হয়েছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪৯ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ বেশি।

অপরদিকে প্রথম প্রান্তিকে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাড়িয়েছে ৫৬৩ কোটি টাকায়। গতবছরের একই সময়ে এর পরিমান ছিল ২৯১ কোটি টাকা।

এছাড়াও বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন দাড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায় এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশের করিম নামের কৃষককে এখন আধুনিক কৃষক বলা হয়।

এন্টি স্টোরি-৮: ডারউইন খুনিদের সমর্থক ছিলেন(করিম সাহেবের না লেখা চিঠির একটি অংশ) ।

একদিন গভীর বৃষ্টির রাতে করিম ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। দেখল, কোথাও কোনও জনমানব নাই। এক নাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছে যে পড়ছেই। ধানক্ষেতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছোট ছোট আলো। মানুষগুলো এত রাতে এত বৃষ্টির ভিতর টর্চ জ্বেলে ব্যাঙ ধরছে। কিছু কিছু আলো হঠাত হঠাত নিভে যাচ্ছে। করিম এইসব আলোর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করল।

একটা মাছ লাফিয়ে লাফিয়ে পা
ড়ে উঠছে, এরপর মাছটি ব্যাঙ এর মত হচ্ছে মান ব্যাঙ হচ্ছে এরপর ব্যাঙ থেকে এটি গরুর মত হল এরপর গরু থেকে এটি মানুষের মত হল।

করিম আরও একটু এগিয়ে গেল। আরও একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করল।

একটা মানুষ কেমন গরুর মত দাঁড়িয়ে আছে মানে মানুষটি গরু হয়ে গেল। তারপর গরু থেকে মানুষটি ব্যাঙ হয়ে গেল। তারপর ব্যাঙ থেকে মানুষটি মাছ হয়ে গেল।

করিমের ডারউইনের বিবর্তনের কথা মনে পড়ল। কিন্তু কোনটা ঠিক? মাছ থেকে মানুষ না মানুষ থেকে মাছ। দুইটাই তো সম্ভব। ডারউইনেরও তো এটা ধারণা ছিল। ধারণা মানে প্রমাণ করে দেখানোর বিষয় ছিল না মানে ডারউইনের ধারণাকেই মানুষ প্রশ্নহীনভাবে মেনে নিয়েছে কোনও প্রমাণ ছাড়াই। এইসব দৃশ্য করিমের মনে সন্দেহ তৈরি করল। করিম ভাবল, ডারউইন বেঁচে থাকলে তিনি তাকে একটি চিঠি লিখতেন।

রহিম সাহেব করিম সাহেবের মত নয়। রহিম সাহেব দিনে একটা খুন করলেও কিছু হয় না। মানে সবাই জানে থানা-পুলিশ-দারোগা- আদালত সবাই জানে। এবং সবাই তাকে মানে। রহিম সাহেব প্রতিবারই নির্বাচণে জেতেন। রহিম সাহেব প্রতিবারই বিপুল ভোটে নির্বাচনে জেতেন। কোথাও জমি-জমা নিয় সমস্যা হলে, কোথাও সালিশ-দরবার হলে রহিম সাহেব এগিয়ে থাকেন। এগিয়ে থাকেন মানে রহিম সাহেবকে সবাই ডেকে নিয়ে আসেন। কারণ সবাই রহিম সাহেবের কথা মানেন। রহিম সাহেবের খুবই নাম-ডাক। সবাই তাকে খুব সম্মান করে।

প্রকৃতিতে জীবন-সংগ্রাম চলে। যে নির্দিষ্ট প্রকরণকে প্রকৃতি নির্বাচন করে সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়।

রহিম সাহেব একটি নতুন প্রজাতি। সে মানুষ খুন করে করে জীবন-সংগ্রাম চালিয়েছে। এজন্য সব সময় নির্বাচনে জেতেন। সকল মানুষ তাকে সম্মান করেন। ডারউইন রহিম সাহেবের কথা ভেবেছেন। এজন্য তিনি টিকে আছেন।

কিন্তু ডারউইন করিম সাহেবের কথা ভাবেন নি। করিম সাহেব কেমন উদাস উদাস। কেউ তাকে চেনে না। মানবে তো দূরের কথা। এজন্যই সম্ভবত করিম সাহেব ডারউইনকে চিঠি লেখার কথা ভাবেন, ভেবেছিলেন।

এন্টি স্টোরি-৯: নিয়তি ছাড়া মার্কসবাদ অর্থহীন; এজন্যই আমি এখনও তোমার জন্য অপেক্ষা করি।

আদিম সাম্যবাদ তারপর সামন্তবাদ তারপর পুজিঁবাদ তারপর বিপ্লব মানে আবারও সাম্যবাদ। এটা ইতিহাস। যেনতেন ইতিহাস নয়। মার্কসের ইতিহাস। মানব সভ্যতার ইতিহাস। ইতিহাসেরও আশা লাগে। মানে স্বপ্ন লাগে। মানে বেঁচে থাকা লাগে। মানুষ তো আশা নিয়েই বাচেঁ। মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারে না। ইতিহাসের ভিতরেও স্বপ্ন থাকা চাই। আশা থাকা চ
াই। মার্কস সেই আশা দেখিয়েছিলেন। মানুষ এখনও স্বপ্ন দেখে। এভাবেই স্বপ্ন দেখে। এভাবেই বেঁচে থাকতে চায়। তাই মানুষ এভাবেই ইতিহাসকে দেখতে চায়। ভালবাসতে চায়। আশা রাখতে চায়। কিন্তু এটা কি শুধুই আশা। এটা কি শুধুই স্বপ্ন? এটা কি শুধুই বেঁচে থাকা? এই ইতিহাস এই মানব সভ্যতার ইতিহাসেরও কি স্বপ্ন ছাড়া রক্ষা নেই?

করিমের ঘুমটা হঠাত ভেঙ্গে যায়। বিছানা ছেড়ে সে টেবিল-চেয়ারে গিয়ে বসে। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খায়।

ইতিহাসের রেখাটা কি তাহলে এরকমই- সরলরৈখিক। মানে আদিম সাম্যবাদ>সামন্তবাদ>পুজিঁবাদ>সাম্যবাদ। আদিম সাম্যবাদের পরে সামন্তবাদ এসেছে। এসেছে কি? না অর্থনীতিকে মূল ধরে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এক একটা দশার নাম দেওয়া হয়েছে। যেভাবেই করা হোক না কেন বিষয়টা এরকমই। মানে সামন্তবাদের পর পুঁজিবাদ এসেছে এরপর। তারপর সাম্যবাদ আসবে। আসলেই কি আসবে? সামন্তবাদ থেকে পুজিঁবাদের ফারাক কি? কতটুকু ফারাক। ধরণ পাল্টিয়েছে। এককালে জমিদাররা কর নিত, এখন রাষ্ট্র কর নেয়। এককালে গ্রামের জোতদাররা সুদ নিত, এখন গ্রামীন ব্যাংক নেয়। ধরণ পাল্টিয়েছে। আচ্ছা ধরে নিলাম এই ধরণের নাম পুজিঁবাদ। তারপর শ্রেনী বৈষম্য বাড়বে। বাড়তে বাড়তে বেড়ে যাবে নিপীড়িত শ্রমিকের সংখ্যা আর কমে যাবে নিপীড়ক ধনীদের সংখ্যা। বিপ্লব হতে বাধ্য। তারমানে এটা নিয়তি। আসলেই কি বিপ্লব হতে বাধ্য। তাহলে কি নিয়তি বলে কোনও কিছু আছে? আমরা কি তাহলে নিয়তির হাতে বন্দী। মার্কস এমন ভবিষ্যতবাণী দিতে পারেন! দিয়েছেন কি?

করিম একটি সিগারেট ধরায়। ছাদে ওঠে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশটা অনেক স্বচ্ছ। অজস্র তারা করিমের দিকেই তাকিয়ে আছে বলে মনে হল।

এই যে খুন-রাহাজানি-হত্যা-ধর্ষণ-যুদ্ধ-হত্যাযজ্ঞ-এলিজাবেথ টেইলরের আরেকটি বিয়ে- টম ক্রুজের মন খারাপ, বিয়ের প্রতি আগ্রহহীন হয়ে ওঠছেন নন্দিতা দাশ–এইসবের ভিতরে একটি নিয়তি থাকা ভাল। একটি স্বপ্ন থাকা ভাল। একটি আশা একটি বিপ্লব থাকা ভাল। এটা থাকার দরকার আছে। এছাড়া, এই স্বপ্ন-প্রেম-আশা ছাড়া মানুষ বাঁচবে কি করে। অথবা করিমেরও তো বাঁচতে হবে। একটা আশা নিয়ে। একটা স্বপ্ন নিয়ে। তাকেও অপেক্ষা করতে হবে। আশা ছাড়া-স্বপ্ন ছাড়া কি অপেক্ষা করা যায় অথবা মানুষ আশা করে বলেই, স্বপ্ন দেখে বলেই অপেক্ষা করে,এই অপেক্ষা অনন্তকালের জন্য হলেও সে কোনও অভিযোগ করে না ।

এন্টি স্টোরি-১০। আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক

নবাব আবদুল গনির ইংরেজ শাসকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন মাত্র সাতাশ বছর বয়সে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ইংরেজদের অর্থ, হাতি, ঘোড়া,নৌকা সবকিছু দিয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন। সে জন্য বাংলার শাসক হ্যালিডের রিপোর্টে গনি মিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কিন্তু আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক।

১৮৬০ সালে ঢাকায় মুসলমান শিয়া-সুন্নীদের দাঙ্গা যখন ইংরেজ সরকার থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল তখন নবাব আবদুল গনি নিজের চেষ্টায় তিন দিনের মধ্যে ঢাকা শহরকে শান্ত করেছিলেন। এ জন্য সরকার তাঁকে সি.এস.আই (কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ১৮৬৭ সালে ভাইসরয় তাঁকে আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। ১৮৭৫ সালে তাঁকে বংশানুক্রমিক ‘নবাব’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৬৮ সালে কে.সি.এস.আই (কিং কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া) উপাধি লাভ করেন।

কিন্তু আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক।

ঢাকা শহরে নবাব আবদুল গনির প্রভাব প্রতিপত্তের প্রতীক ছিল আলী মিয়ার কেনা রংমহল। যা বর্তমানে ‘আহসান মঞ্জিল’ নামে পরিচিত। তিনি বাড়িটিকে মেরামত করে ছেলের আসহানউল্লাহ্‌ এর নামে নামকরণ করেন। বাড়ীটি ঢাকাবাসীর কাছে ‘নবাব বাড়ী’হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। ঢাকা শহরের শাহবাগ, বেগুনবাড়ী সহ অনেকাংশেরই মালিক ছিলেন নবাব আবদুল গনি। তিনি বেগুনবাড়ীতে চা বাগান করেছিলেন। ঢাকায় পেশাদারী ঘোড়দৌড় শুরু করেছিলেন বলে অনেকের মতে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানও নাকি নবাব আবদুল গনির সম্পত্তি ছিল। তখন ঘোড়দৌড় ঢাকায় শহুরে বিনোদন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

কিন্তু আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক।

নবাব আবদুল গনিই ঢাকা শহরে প্রথম বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৮৭৯ সালে নবাব আবদুল গনির কে.সি.এস.আই উপাধি পাওয়া এবং প্রিন্স অফ ওয়েলসের সুস্থ হয়ে ওঠা উপলক্ষে সরকারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তখন একটি কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঢাকাবাসীর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। নবাব আবদুল গনি আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই প্রকল্পে।

কিন্তু আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক।

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল গনি দুই বার বিয়ে করেছিলেন। তার সন্তানাদির সংখ্যা ছিল ছয় জন। ১৮৭৭ সালে খাজা পরিবারের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন পুত্র আহসান উল্লাহের উপর। ১৮৯৬ সালে যেদিন তিনি পরলোকগমন করেন সেদিন ঢাকার সকল স্কুল,কলেজ,অফিস-আদালত বন্ধ ছিল।

কিন্তু আমাদের গনি মিয়া একজন গরীব কৃষক।

Onthat ass use test offer