Tuesday, January 9, 2024

দুপুর মিত্রের ফ্ল্যাশ নাটক

 

ফ্ল্যাশ নাটক-১

চরিত্র : ২, পাহাড়ের উপরে মান্দি দেবতা আর মানুষ। দৃশ্য-১, ঘটনা-১

পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে এক খিস্টান মান্দি যুবকের সাথে নাওয়াং দেবতার দেখা হয়ে গেল।

খিস্টান মান্দি যুবক বললেন: আপনি কে? এই নির্জন পাহাড়ে এমন অদ্ভুত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন? আপনাকে দেখার পর থেকে আমার দাদীমার চেহারা আর পূর্বপুরুষদের চেহারা মনে পড়ছে কেন? আমার মন এমন অদ্ভুত পবিত্র ভালবাসায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে কেন?

নাওয়াং দেবতা বললেন: আমি তোমাদের দেবতা। আমি মর্তলোকে মিমাং পুরীর দ্বাররক্ষক। মানুষের আত্মাকে পার করে দেওয়াই আমার কাজ। আমি আত্মাকে চিকমাং পর্বতের মিমাং পুরীতে নিয়ে যাই। মানুষের আত্মা সেখানেই বসবাস করে। এজন্যই আমাকে দেখা মাত্র তোমার পূর্বপুরুষদের চেহারা মনে পড়ছে। তুমি হাঁটতে হাঁটতে চিকমাং পর্বতের কাছে চলে এসেছ। এজন্যই পবিত্রতায় ভরে ওঠছে মন তোমার।

খ্রিস্টান মান্দি যুবক বললেন: কিন্তু আমরা তো খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছি। ফাদাররা আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের কোনও দেবতা নেই। আমরা যে দেবতার পূজা করি, তারা দেবতা নয়, শয়তান।

নাওয়াং দেবতা বললেন: নিজেদের বুদ্ধি দিয়েই তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে পাবে।

খ্রিস্টান মান্দি যুবক বললেন: ফাদাররা বলেছেন, আমরা চু খেয়ে গ্রামে গ্রামে পড়ে থাকি। এ কারণেই আমরা দরিদ্র। খ্রিস্টান হয়ে যাবার পর আমরা অনেক পরিশ্রমি হয়েছি। আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেকেই আমাদের মেরে বিতাড়িত করতে চেয়েছে। কিন্তু খ্রিস্টান হওয়ার পর থেকে কেউ আর সাহস করেনি।

নাওয়াং দেবতা বললেন: নিজেদের বুদ্ধি দিয়েই তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে পাবে।

খ্রিস্টান মান্দি যুবক বললেন: কিন্তু ফাদার বলেছেন, আমাদের আত্মা স্বর্গে চলে যায়। চিকমাং পর্বতে নয়।

নাওয়াং দেবতা বললেন: নিজেদের বুদ্ধি দিয়েই তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে পাবে।

খ্রিস্টান মান্দি যুবক বললেন: আমি আমার পূর্ব পুরুষদেরকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তারা কি আমাদের নিয়ে অসন্তুষ্ট।

নাওয়াং দেবতা বললেন: নিজেদের বুদ্ধি দিয়েই তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে পাবে।

খ্রিস্টান মান্দি যুবক বললেন: আমাদের আত্মা কি তাহলে শয়তান হয়ে গেছে। আমরা কি স্বর্গে যাব না চিকমাং পর্বতের মিমাং পুরীতে যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষেরা বসবাস করে।

নাওয়াং দেবতা বললেন: নিজেদের বুদ্ধি দিয়েই তোমরা তোমাদের পথ খুঁজে পাবে।

মান্দি যুবক পবিত্রতায় আচ্ছন্ন হয়ে কেঁদে ফেললেন।

নাওয়াং দেবতা বললেন: এই পথ ছাড়াও আরো একটি গুপ্ত পথ আছে, যেখান দিয়ে মিমাং পুরীর আত্মা আর জীবিত আত্মারা চলাচল করে।

মান্দি যুবক পবিত্রতায় আচ্ছন্ন হয়ে কেঁদে ফেললেন। আর দেখতে পেলেন তার পূর্বপুরুষ তাদের ঘরে বসে তার মাকে কাজে সাহায্য করছে।



ফ্ল্যাশ নাটক-২

চরিত্র : ২, দৃশ্য-১, ঘটনা-১

হাজং ছেলে: আমাদের মূল দেবী তো কামাখ্যা। তাহলে আমরা হাজংরা এত ঘটা করে দুর্গা পজা করি কেন?

হাজং বাবা: কারণ আমরা এক সময় ছিলাম তান্ত্রিক। এখন হয়েছি বৈষ্ণব।

হাজং ছেলে: তান্ত্রিক থেকে বৈষ্ণব হয়ে গেলে তো বিশ্বাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের এত বিশ্বাস এত তাড়াতাড়ি বদলাল।

হাজং বাবা: না আমাদের বিশ্বাস বদলায় নি। সমাজ বদলেছে। সমাজ বদল এমন যে এটা বিশ্বাসকেও তুমুল পাল্টে দেয়।

হাজং ছেলে: কি বললে বাবা। কিছুই বুঝতে পারছি না।

হাজং বাবা: এক সময় আমরা তান্ত্রিক ছিলাম কারণ আমাদের রাজা নরনারায়ণ তখন তান্ত্রিক ছিলেন। তাই কামাখ্যা পূজা করত সকলে। এরপর আমাদের রাজা শংকর আচার্যের ভক্ত হন। তখন থেকেই হাজংরা পাল্টাতে শুরু করে।

হাজং ছেলে: তাহলে রাজা ধর্ম পাল্টালে প্রজারাও ধর্ম পাল্টায়।

হাজং বাবা: পাল্টায় না, পাল্টাতে বাধ্য হয়। সমাজ এমন জিনিস বিশ্বাসকেও গলা টিপে হত্যা করতে দ্বিধা করে না।

হাজং ছেলে: সব হাজংরা কি কখনও আর কামাখ্যা দেবীকে প্রধান মনে করবে না। আর কখনই কি তারা তান্ত্রিক হবে না। এখন তো কোনও রাজা নেই।

হাজং বাবা ছেলের মুখের দিকে তাকায় আর বলে সমাজের রাজা সব কালেই থাকে। সমাজের বাইরে কিছু করতে গেলেই তা টের পাওয়া যায়। ছেলে মাথা নিচু করে তার বাবা আর অন্ধকারের দিকে তাকায় যেন এই বুঝি শত সহস্র মন্ত্রে কিছুক্ষণের জন্য কেঁপে উঠল কামাখ্যা দেবীর মণ্ডপ।

ফ্ল্যাশ নাটক-৩

চরিত্র-২, দৃশ্য-১, ঘটনা-১।

বাঙালি: তোমরা তো গাছ কাট। গাছ কেটে বন শেষ করে দিয়েছ।
মান্দি: না আমরা কাটিনি। মিসি শালজংকে আমরা কাটতে পারি না। মিসি শালজংএর অভিশাপ আমরা নিতে পারব না।

বাঙালি: তাহলে বন কে কাটে? বনে তো তোমরা থাক। যারা বনে থাকে তারাই বন কাটে।
মান্দি: না যারা বনে থাকে তারা বন কাটে না। যারা বনের বাইরে থাকে তারা বন কাটে। কারণ বনের সাথে তাদের কোনো প্রেম নেই।

বাঙালি: তোমরা জুম চাষ কর। এটা তো ঠিক।
মান্দি: হ্যাঁ ঠিক।

বাঙালি: জুম চাষে তো বন তোমরা পোড়াও।
মান্দি: হ্যাঁ ঠিক। তবে এটা বন পোড়ানো না। এটা অনেকটা যজ্ঞের মত। ভাল ফসল হওয়ার জন্য যজ্ঞ করা বলতে পার। এটা আমরা প্রাচীন কাল থেকেই করি। এর আগে কখনই এতে বনের ক্ষতি হয় নি। এখনও হয় না। যা বল তা তোমরা আসলে না জেনে বানিয়ে বল।

বাঙালি: তাহলে তোমাদের মিসি শালজং নেই।
মান্দি: আছে তোমরা দেখতে পাও না।

বাঙালি: যদি থাকত, তাহলে বন আর তোমাদের সেই রক্ষা করত।
মান্দি: মিসি শালজং আগেও আমাদের রক্ষা করেছে। এখনও করছে।

বাঙালি: কই শাল বন তো আর নেই। মিসি শালজং আর কোথায় পেলে।
মান্দি: ওই যে ওই বনের দিকে তাকাও। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ওই বনে অনেক কিছুই চাষ হচ্ছে। কেবল শাল গাছ ছাড়া। এ বছর কোনো কিছুরই এখানে চাষ নেই। তাকাও। দেখ কত সবুজ সবুজ গাছ জন্মাচ্ছে। সেই-ই শাল। কোনও বীজ সেখানে দেওয়া হয়নি। কোনও কাণ্ড সেখানে দেওয়া হয়নি। কোনও সার সেখানে দেওয়া হয়নি। মিসি শালজং আছেন। দেখ শাল গাছের সবুজ সবুজ পাতায় মিসি শালজং হেসে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে।

ফ্ল্যাশ নাটক-৪

চরিত্র-১, কাহিনী-১, ঘটনা-১।

একজন নকমা(পুরোহিত) পূজা করছেন।

ফয় স্রাং। আ:— —। বাগিপ্পাখো হন্গিপ্পাখো ফাথি গিপ্পাখো অংআৎগিপ্পাখো বাংআৎগিপ্পাখো জাল্পেৎগিপ্পাখো থন্মিদন গিপ্পানা রাক্ষিগিপ্পানা সালাম দাক্কেংজক সালাম অন্নেংজক।

আ জন্মদাতা,দানকারী, পরিবেশ সৃষ্টিকারী, সম্প্রসারণকারী, ফল প্রদানকারী, ফসল বৃদ্ধিকারী, সুস্থ্য ও সুঠাম দেহ দানকারী, প্রাণরক্ষাকারী এবং ধনজন রক্ষাকারী দেব দেবীর উদ্দেশ্যে সালাম জানাই প্রণাম জানাই। আমরা তোমাদের স্তব করি, পূজা করি।

(নকমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে। আর প্রতিবার প্রতিমন্ত্রে খুব বেশি মাত্রায় চু খাচ্ছে সে। এর আগে এতটা চু খেতে তাকে দেখেনি কেউ।)

তুমি কি আমাকে শুনতে পাও।

আমার ছেলেটি গত বছর পুলিশের গুলিতে মারা গেল। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেল। সবার সামনে ধরে নিয়ে গেল। কারোরই কিছু করার ছিল না। কেউই কিছু করতে পারি নি। পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারি নি। পরের দিন তার লাশ এল ঘরে।

ফয় স্রাং। আ:— —। বাগিপ্পাখো হন্গিপ্পাখো ফাথি গিপ্পাখো অংআৎগিপ্পাখো বাংআৎগিপ্পাখো জাল্পেৎগিপ্পাখো থন্মিদন গিপ্পানা রাক্ষিগিপ্পানা সালাম দাক্কেংজক সালাম অন্নেংজক।

আ জন্মদাতা,দানকারী, পরিবেশ সৃষ্টিকারী, সম্প্রসারণকারী, ফল প্রদানকারী, ফসল বৃদ্ধিকারী, সুস্থ্য ও সুঠাম দেহ দানকারী, প্রাণরক্ষাকারী এবং ধনজন রক্ষাকারী দেব দেবীর উদ্দেশ্যে সালাম জানাই প্রণাম জানাই। আমরা তোমাদের স্তব করি, পূজা করি।

(নকমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে। আর প্রতিবার প্রতিমন্ত্রে খুব বেশি মাত্রায় চু খাচ্ছে সে। এর আগে এতটা চু খেতে তাকে দেখেনি কেউ।)

তুমি কি আমাকে শুনতে পাও।

আমার বউ সেই শোকে না খেয়ে শেষমেষ মরে গেল। ছেলের বউ তার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আমি আমার ছেলের বউয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আমার ছেলের বাচ্চার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা।

ফয় স্রাং। আ:— —। বাগিপ্পাখো হন্গিপ্পাখো ফাথি গিপ্পাখো অংআৎগিপ্পাখো বাংআৎগিপ্পাখো জাল্পেৎগিপ্পাখো থন্মিদন গিপ্পানা রাক্ষিগিপ্পানা সালাম দাক্কেংজক সালাম অন্নেংজক।

আ জন্মদাতা,দানকারী, পরিবেশ সৃষ্টিকারী, সম্প্রসারণকারী, ফল প্রদানকারী, ফসল বৃদ্ধিকারী, সুস্থ্য ও সুঠাম দেহ দানকারী, প্রাণরক্ষাকারী এবং ধনজন রক্ষাকারী দেব দেবীর উদ্দেশ্যে সালাম জানাই প্রণাম জানাই। আমরা তোমাদের স্তব করি, পূজা করি।

(নকমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে। আর প্রতিবার প্রতিমন্ত্রে খুব বেশি মাত্রায় চু খাচ্ছে সে। এর আগে এতটা চু খেতে তাকে দেখেনি কেউ।)

তুমি কি আমাকে শুনতে পাও।

কত হাজার বছর ধরে এই শালবনে আমরা। আমরা জানি এই শালবন আমাদের রক্ষা করবেন। সেই বিশ্বাসে আমার বাবা, আমার সব পূর্বপুরুষেরা বেঁচে বেঁচে মরে গেছেন। এখন আমিও বেঁচে বেঁচে মরে আছি। এক বেলা খাবার জুটে না। ছেলের বউটার কি হবে। বাচ্চাটার কি হবে। সাংসারেক বলে তাদের দায়িত্ব মিশনারিরা নেবে না।

ফয় স্রাং। আ:— —। বাগিপ্পাখো হন্গিপ্পাখো ফাথি গিপ্পাখো অংআৎগিপ্পাখো বাংআৎগিপ্পাখো জাল্পেৎগিপ্পাখো থন্মিদন গিপ্পানা রাক্ষিগিপ্পানা সালাম দাক্কেংজক সালাম অন্নেংজক।

আ জন্মদাতা, দানকারী, পরিবেশ সৃষ্টিকারী, সম্প্রসারণকারী, ফল প্রদানকারী, ফসল বৃদ্ধিকারী, সুস্থ্য ও সুঠাম দেহ দানকারী, প্রাণরক্ষাকারী এবং ধনজন রক্ষাকারী দেব দেবীর উদ্দেশ্যে সালাম জানাই প্রণাম জানাই। আমরা তোমাদের স্তব করি, পূজা করি।

(নকমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে। আর প্রতিবার প্রতিমন্ত্রে খুব বেশি মাত্রায় চু খাচ্ছে সে। এর আগে এতটা চু খেতে তাকে দেখেনি কেউ।)

নকমা অনেক জোড়ে জোড়ে মন্ত্র পাঠ করছিল। চারপাশটা অনেক তাড়াতাড়িই ভারি হয়ে উঠল। দামাল বেজে উঠল। নকমা হঠাৎ শুয়ে পড়ল।

ফয় স্রাং। আ:— —। বাগিপ্পাখো হন্গিপ্পাখো ফাথি গিপ্পাখো অংআৎগিপ্পাখো বাংআৎগিপ্পাখো জাল্পেৎগিপ্পাখো থন্মিদন গিপ্পানা রাক্ষিগিপ্পানা সালাম দাক্কেংজক সালাম অন্নেংজক।

আ জন্মদাতা, দানকারী, পরিবেশ সৃষ্টিকারী, সম্প্রসারণকারী, ফল প্রদানকারী, ফসল বৃদ্ধিকারী, সুস্থ্য ও সুঠাম দেহ দানকারী, প্রাণরক্ষাকারী এবং ধনজন রক্ষাকারী দেব দেবীর উদ্দেশ্যে সালাম জানাই প্রণাম জানাই। আমরা তোমাদের স্তব করি, পূজা করি।

( নকমার মুখ থেকে কোনও মন্ত্র শোনা গেল না। নকমার শুখ থেকে কোনোদিন আর মন্ত্র শোনা যাবে না।)

ফ্ল্যাশ নাটক-৫

চরিত্র-২, ঘটনা-১, দৃশ্য -১ ।

অন্ধকার ঘরে অনেক রাতে চিৎকার করে ওঠল এক হাজং ফেরিওয়ালা যুবক। কামাখ্যা দেবী তাকে দর্শন দিয়েছেন। কামাখ্যা দেবী তাকে বলেছেন, তার সাধনা করতে আর মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে। তাহলেই সে সফল হবে।

হাজং যুবক তার স্ত্রীকে এই স্বপ্নের কথা বলেন। হাজং যুবক বলেন, তাকে এখনই দেবীর সাধনায় বসতে হবে। হাজং স্ত্রীর বুক দুরু দুরু করে কেঁপে ওঠে। সত্যি কি দেবী তার স্বামীকে দর্শন দিয়েছেন। তার স্বামী আবার সংসার ত্যাগ করে দেবী সাধনায় দূরে কোথাও চরে যাবেন নাতো? সারারাত ঘুম হল না তার স্ত্রীর। ঘুম হল না হাজং যুবকেরও।

যুবক: আমাকে অবশ্যই কামাখ্যা দেবীর সাধনায় বসে পড়তে হবে।
স্ত্রী: দেবী আপনাকে দর্শন দিয়ে কি বলেছেন। সত্যি কি তিনি দর্শন দিয়েছেন।

যুবক: হ্যাঁ। সত্যি দেবী আমাকে দর্শন দিয়েছেন। বলেছেন তার সাধনা আর মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে খুব দ্রুত আমরা ধনী হয়ে যাব।
স্ত্রী: আমাদের ধনী হওয়ার কি দরকার। আমরা কি এমনিতেই সুখী নই।

যুবক: তুমি কি ভয় পাচ্ছ লক্ষ্মী। আমরা সুখী। কিন্তু দেবী দর্শন দিয়ে যদি কোনো্ কিছু করতে বলেন আমরা কিছু পাই বা না পাই তা অবশ্যই করা উচিত। আর ধনী তো হতেই হবে। দেবী যেহেতু আমাকে নিজে দর্শন দিয়ে বলেছেন, তার সাধনা তো অবশ্যই আমাদের করা উচিত।
স্ত্রী: কিন্তু দেবী দর্শন দিয়ে তোমাকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে বলেছেন। মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তুমি এমনিতেই অনেক সফল হবে।

যুবক: না। দেবী সাধনা ছাড়া এ সম্ভব নয়।
স্ত্রী: কেন সম্ভব নয়।

যুবক: বিশ্বাস। মনের জোর। মনের জোরটাই আসল। দেবীর সাধনাই কেবল এই মনের জোর নিয়ে আসতে পারে। নতুবা আমি যদি শুধুই মাত্র কাজ করে যাই আর মনে যদি জোর না থাকে, আমার হযত কোনো্ কাজই হবে না। কামাখ্যা দেবী আমার মা। আমার মনের জোর। আমার সাহস। তার সাধনাই আমাকে অনেক কিছু এনে দিতে পারে।

তার স্ত্রীর কপালে ভাজ পড়ে যায়। ভবিষ্যতের শংকা দুলতে থাকে মনে। সত্যি কি দেবী তার স্বামীকে দর্শন দিয়েছেন। সত্যিই তাদের কষ্ট দূর হবে আর তারা অনেক ধনী লোক হবে। দীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে স্ত্রীর মুখ থেকে বারবার নাম আসতে থাকে- মা কামাখ্যা, মা কামাখ্যা।

ফ্ল্যাশ নাটক-৬

চরিত্র -৫, ঘটনা -১, দৃশ্য -৩।

সুখময় রিছিলের পক্ষেই সবাই। সুখময় রিছিলের পক্ষেই তো লোকজন থাকবে। এলাকায় কত গরীব মানুষকে সে ছেলের মত করে বড় করে তুলেছে। অনেক মানুষই তাকে দাদা নয়, বাবা বলে ডাকে। বাংলাদেশে কোথাও কোনো এলাকায় এমন চেয়ারম্যান থাকতে পারে, ধারনা ছিল না। সুখময় এই আদিবাসী গ্রামের চেয়ারম্যান। সুখময়ের চারপাশে এত মানুষ থাকে, স্বেচ্ছায় এত মানুষ থাকে যে না দেখলে তা বিশ্বাস করা সত্যি মুশকিল হবে কারও। সুখময়ের সত্যিকারের কোনও ক্ষতি হওয়ার আগে অন্য কারোরই ক্ষতি হবে। সুখময়ের বাড়ি গ্রামবাসী নিজেরাই পাহারা দিয়ে রাখে। সুখময়ের বউয়েরও কোনও কাজ করতে হয় না। গ্রামবাসীরা তার বউকে মা বলে ডাকে। সবাই সকাল থেকেই তার বাড়িতে এসে স্বেচ্ছায় কাজ করে দিযে যায়। সুখময়রা আসলে প্রাচীন জমিদারের মতই। টাকার জন্য সে চেয়ারম্যান হয়নি। ওদের এত টাকা যে অনেক সম্পত্তিই যারা না খেয়ে থাকে তাদেরকে সে দান করেছে। কিন্তু এই সুখময় বাঁচেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কোনও এক অন্ধকারে কাউকে কিছু না জানিয়ে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আর সে ফেরে নি।

একযুগ পরে। বাড়ির সামনে সুখময়ের কবর। প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এবারও তাই। সকাল থেকেই অনেক মানুষজন আসছে।

একজন সাধারণ মানুষ। খুব সকালে এসে কবরের সামনে বসে কাঁদছে। আর বলছে, বাবা। তুমি চলে গেছ। তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না আমরা।

এরপর ধীরে ধীরে গ্রামের অনেক মানুষ আসল। কবরের ওপরে মোমবাতি, ফুল এসব এনে দিল।

একজন জেলার একটু বড় নেতা। তার সাথে বেশ কিছু সাঙ্গপাঙ্গ। এসে সবাইকে বলল- সুখময়ের খুনের বিচার হবেই। আমরা এই মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। তারপর সুখময়ের বউয়ের সাথে কুশল বিনিময় করে চলে গেল।

এরপর আরেকজন বড় নেতা আসল। এসে সুখময়ের বউয়ের সাথে কুশল বিনিময় করল। বলল- দিদি, অনেকদিনই তো হয়ে গেল। আমরা চাই আপনি এবার এ এলাকার চেয়ারম্যান হন।

সুখময়ের বউ স্থিরজল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

বাড়িতে যারা মেহমান আসবে তাদের সবারই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোকজন আসছে একই সাথে আপ্যায়নও করা হচ্ছে। সুখময়কে যারা বাবা বলে ডাকত, তারাই সব কাজ করছে।

বেলা বাড়তে লাগল। বাড়িও কেমন নিরব হতে লাগল। আর সুখময়ের কবরটাও।

সন্ধ্যায় পাগলের মত একজন লোকের চিৎকার শোনা গেল।

সুখময়কে যারা মেরেছে তাদের সবাই আমরা চিনি। আমরা বেইমান। সুখময়ের জমি নিয়ে আমরা সুখে আছি। সুখময়কে চেয়ারম্যান বানিয়ে আমরা সুখে থেকেছি। আমরা বেইমান। সুখময় আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। সুখময় আমার বাবা। কিন্তু বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমরা নেই নাই। আমরা বেইমান, কিন্তু আমি বেইমান না। আমি সবাইকে চিনি। আমি কাউকে ছাড়ব না।

সুখময়ের কবর ঘিরে কিছু মানুষ জড় হয়ে গেল। তাদের মধ্যে থেকে একজন লোক পাগলের মত লোত লোকটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।

ফ্ল্যাশ নাটক-৭

চরিত্র -২, কাহিনী-১, ঘটনা-১

নরেন হাজং: যার ঘর নেই, তাদেরই বাস্তুপূজা করতে হয়।
স্মরেণ হাজং: কেন? সব হাজং বাড়িতেই তো বাস্তু পূজা হচ্ছে। সবারই কি বাড়ি নেই?

(হাজংদের ঘরে ঘরে হাসি আর পিঠা পায়েসের উৎসব। ঘরে ঘরে হচ্ছে বাস্তুপূজা।)

নরেন হাজং: হাজংদের ঘর থাকা মানেই বাস্তু নয়, ঘর পশুপাখি, গাছপালা, নদী নালা সব মিলিয়েই হাজংদের বাস্তু।
স্মরেণ হাজং: তাহলে হাজংদের বাস্তু নেই।

নরেন হাজং: না নেই। হাজংদের আছে শুধু মাথা গুজে রাখার ঠাই। তাও অধিকাংশ হাজংয়ের আর নেই।
স্মরেণ হাজং: তাহলে বাস্তুদেবী আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট।

নরেন হাজং: হ্যাঁ শুধু অসন্তুষ্ট নন। আমরাই তাকে অনেক বেশি ক্রোধান্বিত করেছি।
স্মরেণ হাজং: তাহলে কি শুধু পূজায় এই ক্রোধ ভাঙানো যাবে?

নরেন হাজং: না, তাতো নইই। কিন্তু কখনো কখনো এমন সময় আসে আমরা যে আলাদা হয়ে গিয়েছি টের পাই না। কখনো কি ভেবেছ একই বাস্তু দেবীর পূজা করছি, কিন্তু এক একজন আলাদা আলাদা ঘরে। কিন্তু খেয়াল করেছিস আমরা তো একটা পৃথিবীতেই থাকি। যে বাস্তু দেবী আমাদের একটা পৃথিবী নামের ঘর দিয়েছেন, সেই বাস্তুদেবী কি কখনও আলাদা আলাদা করে এক এক ঘরে থেকে পূজা নেবেন?

(স্মরেণ হাজং কেমন চুপ হয়ে যান।)

কিছুক্ষণ পর বলে ওঠেন, নরেন আজ বুঝলাম। আসলে তোমার কথাই ঠিক। হয়ত এইই সত্য যে বাস্তুদেবী অনেক আগে থেকেই আর পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকান না।

( দুজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। দুজনের মুখ থেকেই একটি বাক্য ভেসে আসে- ক্ষমা কর বাস্তুদেবী।

ফ্ল্যাশ নাটক-৮

( পাহাড়ের উঁচু ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে দুই বন্ধু কথা বলছেন। একজনের পড়নে লুঙ্গি, অন্যজন পেন্টশার্ট পড়া। সুবর্ণ চাকমা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে এলাকায় এসেছেন কাজ করতে, নৃপেন চাকমা স্থানীয় একটি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেন।)

সুবর্ণ চাকমা: আমাদের কোনো কণ্ঠস্বর নেই।
নৃপেন চাকমা: কেন? তুমি কথা বলছ না।

সুবর্ণ চাকমা: তুমি আমার কথাটাকে এমন হাল্কা করে দেখছ কেন? তুমি কি রিতা চাকমাকে রাতের আধারে যখন বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়, তখন কোনও কথা বলেছিলে?
নৃপেন চাকমা: না।

সুবর্ণ চাকমা: বাঙ্গালিরা যেদিন একশ বাড়ি পুড়িয়ে দিল, তখন কথা বলেছিলে?
নৃপেন চাকমা: না।

সুবর্ণ চাকমা: তাহলে তোমার কণ্ঠস্বর আছে বল কি করে।
নৃপেন চাকমা: এসব বলে কি হবে?

সুবর্ণ চাকমা: তার মানে তুমি এসব মেনে নিচ্ছ।
নৃপেন চাকমা: না।

সুবর্ণ চাকমা: নিরবতা মানেই সম্মতি দেওয়া।
নৃপেন চাকমা: না।

সুবর্ণ চাকমা: না কিভাবে।
নৃপেন চাকমা: আমি জানি না।

সুবর্ণ চাকমা: তুমি জান না মানে? বারবার না না করছ কেন? বল যে আমরা ভীতু, আমরা কোনও প্রতিবাদ করতে চাই না। আমাদের কোনও কণ্ঠস্বর নেই।
নৃপেন চাকমা: না। আমাদের কণ্ঠস্বর আছে।

সুবর্ণ চাকমা: কোথায় সেটা।
নৃপেন চাকমা: ভাল করে তাকাও। তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলে অনেকদিন। ভাল ছাত্র। তুমি ধরতে পারবে সহজেই।

সুবর্ণ চাকমা: আমি ধরতে পারছি না।
নৃপেন চাকমা: পারবে।

সুবর্ণ চাকমা: পারছি না।
নৃপেন চাকমা: আজ রাতে তোমাকে একটি জায়গায় নিয়ে যাব। দশটার দিকে তোমাদের বাসার সামনে একটা বাইকের শব্দ পাবে, তখনই ভাববে আমি এসেছি। তোমাকে একটি জায়গায় নিয়ে যাব। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। এমনকি তোমার মা-বাবাকেও না।

ফ্ল্যাশ নাটক-৯

( মধুপুর শালবনের এক মান্দি পরিবার। স্ত্রী ও স্বামী কথা বলছেন তাদের সংসার নিয়ে)

মাইকেল চাম্বুগং: কোথায় যাও এই দুপুর বেলায়?
লিপি চাম্বুগং: কোথায় আবার। বনের ভেতর। ঘরে কিছু নাই। দেখি কিছু আলু আর চুক্কা পাতা নিয়ে আসি।

মাইকেল চাম্বুগং: আলু কি আসলে পাবা?
লিপি চাম্বুগং: খুইজা দেখি দেখতে তো দোষ নাই। বনের অনেক ভেতরে যাওয়া ছাড়া এখন আর আলু পাওয়া যায় না।

মাইকেল চাম্বুগং: আমি কি তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি।
লিপি চাম্বুগং: কষ্ট?

মাইকেল চাম্বুগং: এই যে কোনও কাজ-কর্ম নাই আমার। ঘরে খাবার নাই। পোলাপান না খাইয়া থাকার অবস্থা। বিয়ের পর তোমার ঘরে আসার পর থেকেই একটা না একটা অভাব-অনটন লেগেই আছে।
লিপি চাম্বুগং: আমাদের ঘরে তুমি যখন থেকে জামাই হইয়া আইছ, তার আগে থেকেই অভাব-অনটন।

মাইকেল চাম্বুগং: তা আমি জানি।
লিপি চাম্বুগং: না অনেক কিছুই তুমি জান না।

মাইকেল চাম্বুগং: কি সেসব।
লিপি চাম্বুগং: তোমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার দু-তিন বছ আগেও আমরা ধনী পরিবারই ছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে যাবার পর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা পয়সা প্রয়োজন পড়ে। তখন প্রায় সব জমিই বিক্রি করতে হয়েছে। তখন তেমন কেউ কিনতে চায় নাই। কিন্তু টাকার প্রয়োজন ছিল খুব। এক প্রকার বলতে গেলে জলের দামেই জমিগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। বাবাও বেঁচে রইলেন না, জমিগুলোও হাতছাড়া হল।

মাইকেল চাম্বুগং: এইসব দুঃখ করে এখন লাভ আছে। এখন তো সবাই খিস্টান রীতিতে বিয়ে করে। ছেলের বাড়িতেই মেয়ে যায়। আসলে এই সম্পত্তি তোমার থাকা না থাকা বিষয় না। এইভাবে ভাব যে আমি কিছু করতে পারলে তুমি সুখী হতে।
লিপি চাম্বুগং: না, আমরা তো সাংসারেক। আমাদের ঘরে কোনো মেয়ে বউ হয়ে অন্যের ঘরে যায় নাই।

মাইকেল চাম্বুগং: আমি তো আর বলছি না তুমি বউ হয়ে আমাদের বাসায় যাবে। আমি জামাই হয়েই তো সাংসারেক রীতি মেনে তোমাদের ঘরে এসেছি। বলছিলাম যে আমি যদি অনেক কাজ করতে পারতাম তাহলে তোমার এত কষ্ট করতে হত না।
লিপি চাম্বুগং: না সাংসারেক রীতিতে মেয়েরাই সব। মেয়েদেরকেই সংসারের দায়িত্ব নিতে হয় বেশি। আসলে আমিই তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি।

মাইকেল চাম্বুগং: সময় অনেক পাল্টিয়েছে লিপি।
লিপি চাম্বুগং: সময়কে পাল্টা দেবার আর ধরে রাখার দুই কাজই করে মেয়েরা।

ফ্ল্যাশ নাটক-১০

( দুই ভাই আলাপ করছিল, তাদের নিজেদের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোথায় যাবে এসব নিয়ে। নগেন ছোট ভাই আর স্মরেণ ভাই। )

নগেন কোচ: কাল আওয়ামী লীগের এক নেতা এসেছিল।
স্মরেণ কোচ: হুম কি বলছে।

নগেন কোচ: ভারতে চইলা যাইতে কইছে। না গেলে খেদাইয়া দিব।
স্মরেণ কোচ: হুম।

নগেন কোচ: কি কিছু কইলা না আমরা কি ভারতে চইলা যামু?
স্মরেণ কোচ: আর কেউ আইছিল।

নগেন কোচ: বিএনপিরও এক নেতা আইছিল। তারও এক কথা। ভারতে চইলা যাইতে কইল।
স্মরেণ কোচ: হুম। সবই এক।

নগেন কোচ: আমি একবার ডিসি অফিসের দিকে গেছিলাম। আমার কথা কেউ শুনলই না।
স্মরেণ কোচ: আমারে না জাইয়াই ডিসি অফিসে গেলি?

নগেন কোচ: কি করমু। পোলাপান, সংসার চিন্তা, হুমকি ধামকি সব কিছু মিলাইয়া আমার মাথা কাজ করতাছে না। অস্থির লাগতাছে।
স্মরেণ কোচ: পাথর তুলব হেরা। পাথর তুইলা সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি বানাইব বড় লোকেরা। আর আমাদের বাড়ি থিকা তুইলা দিব।

নগেন কোচ: হ কইছে আজ হোক, কাল হোক এই জমি থিকা পাথর তুলবই। আমগর নাকি বাড়ি ছাড়তেই হব। তারা বুদ্ধি দিয়া কইল- তার থিকা কিছু টাকা নিয়া বাড়ি চইলা যাও।
স্মরেণ কোচ: হুম।

নগেন কোচ: আমরা কি টাকা নিয়া ভারত চইলা যামু?
স্মরেণ কোচ: না।

নগেন কোচ: তাইলে? বাংলাদেশ তো আর আমাদের দেশ না। এ‌ই দেশে থাইকা কি করমু। ব্রিটিশ আমল থেকেই একই কাহিনী। দাদারাও দেশ ছাড়ছে। একবার দাঙ্গার সময়, আরেকবার যুদ্ধের সময়। আমাদেরও ছাড়তে অইব।
স্মরেণ কোচ: না।
নগেন কোচ: না বললে কেউ শুনব না। একগুয়েমি চলবে না। কেউ তোমাকে মানব না।
স্মরেণ কোচ: তোরা যা, আমি এখানেই মরমু।
নগেন কোচ: দাদা, তোমার কি হইছে।
স্মরেণ কোচ: কিছু না, আমার কিছু হয় নাই। সন্ধ্যা ঘনায়ে আসতাছে। বাতি জ্বালা। এখনই হাতি চইলা আসব।

নগেন কোচ: দাদা, তোমার কি হইছে।
স্মরেণ কোচ: কিছু না। ওই দেখ। আমাগ বাপ গরু নিয়া আইতাছে বাসায়। শব্দ পাইতাছস।

নগেন কোচ: না। তোমার কি মাথা খারাপ হইছে। বাপ আইব কোথ্থিকা। বাপে তো নাই।
স্মরেণ কোচ: আছে। বাপে প্রতিদিন আসে। তুই টের পাস না।

নগেন কোচ: কি কইতাছ দাদা এইসব।
স্মরেণ কোচ: হ ঠিকই কইতাছি। বাপ আসে, দাদা-দীদা আসে। প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় আসে। ধূপবাতি দেওয়ার পর থিকাই তারা গল্প শুরু করে। এই ঘর এই বাড়ি আমি ছাড়মু না। আমার বাপ- দাদা সবাই এখনও এই ঘরে আছে। তাগরে ছাইড়া আমি কোনো্ জায়গায় যামু না।

নগেন কোচ: কিন্তু তারা তা মানব না।
স্মরেণ কোচ: না মানলে পুরানো সেই ধনুকটা আজও বাসায় আছে। আমার দাদা এইটা বানাইছিল। বাপে এইটা দিয়া হাতি খেদাইছে, ব্রিটিশদের খেদাইছে, পাকিস্তানিদের খেদাইছে। যারা আমাগ তাড়াইতে আসব আমি তাগরে এইটা দিয়া তাড়ামু।

ফ্ল্যাশ নাটক-১১

সুবাস মারমা: বন বিভাগ আমাদের জমি কাইরা নিছে। আমাদের আর চাষ করতে দিব না। আমরা এখন কেমনে বাঁচমু।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: বনে এখন কোনও শাকসব্জি নাই। ফল নাই। বন থেকেও কিছু খাবার সংগ্রহ করে বাঁচা যাবে না।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: আমার ছেলে কাল থেকে খাবার পায় না। আমি তার দিকে তাকাইতে পারি না।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: আমার বউ খালি কান্নাকাটি করে। আমাদের কোনো ভবিষ্যত নাই।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: এলাকার কয়েকজন বাঙালি নেতা আছে। আমাদের ভিটেমাটি ছাড়ার জন্য শাসিয়ে গেছে।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: পুলিশ এসে আমাদের শাসিয়ে গেছে।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: এনজিও থেকে তাকে বলা হয়েছে সে গরিব বলে তাকে আর লোন দেওয়া হবে না। আগের লোন পরিশোধ না করলে, তাকে ঘরের সবকিছু বিক্রি করে তা পরিশোধ করতে হবে।
ফাদার: প্রভুর কাছে আসো। প্রভুই সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।

সুবাস মারমা: প্রভু আমি তো আপনার কাছেই এসেছি।
ফাদার: প্রাণ-মন দিয়ে আসো। প্রভুর চোখের দিকে তাকাও। উনিই এই বিশ্ব তৈরি করেছেন। সমস্ত কিছু উনার ইশারাতেই হয়। এই যে দেখ কত মানুষ কাজ করছে। কেউ কুটির শিল্প তৈরি করছে, কেউ চাষ করছে। এই বিশ্বজগত কর্মময়। এই বিশ্বজগত আনন্দের। তোমাকেও এই আনন্দ আর কর্মযজ্ঞে আমন্ত্রণ।

সুবাস মারমা: (কেঁদে ওঠে সুবাস। )
ফাদার: কেঁদ না সুবাস। পৃথিবীর কান্নার জন্য নয়। প্রভুর কাছে যারা আসে তারা সবাই সুখী।

সুবাস মারমা: (সুবাস ফাদারের মুখের দিকে তাকায়)
ফাদার: (ফাদার সুবাসের মাথায় হাত রাখে)

সুবাস মারমা: (সুবাস সুবিশাল চার্চের ভেতরে ঢুকে পড়ে।)
ফাদার: (ফাদার তাকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি কামরা করে দেয়।

সুবাস মারমা: (সুবাস হাসিমুখে কাজ করতে থাকে)
ফাদার: ফাদার সুবাসকে থামিয়ে বলেন, আজ আর তোমাকে কাজ করতে হবে না। যাও, তোমার স্ত্রী-পুত্রদেরও চার্চে নিয়ে আস।

ফ্ল্যাশ নাটক-১২

মাইকেল হাগিদক: আমি সত্যানুসন্ধান করতে চাই।
জর্নেশ চিরান: কোন সত্য, কিসের সত্য, একমন সত্য, কার সত্য।

মাইকেল হাগিদক: সমস্ত সত্য।
জর্নেশ চিরান: সমস্ত সত্য বলে কিছু নাই। তুমি নাম ধরে বল।

মাইকেল হাগিদক: এই ধর মান্দিরা কোথা থেকে আসল, যুগের পর যুগ মান্দিরা কেন নিপীড়িত হচ্ছে, মান্দি জাতি কি এক সময় বিলুপ্তি হয়ে যাবে কিনা, মান্দিরা তাদের ধর্ম হারিয়ে ফেলবে কিনা, অথবা মান্দিরা তাদের সবকিছু ফিরে পাবে কিনা।
জর্নেশ চিরান: এতগুলো সত্য।

মাইকেল হাগিদক: হ্যাঁ এতগুলো সত্য আমার জানতে হবে। কেননা আমি আমাকেই এখন আর বিশ্বাস করতে পারছি না।
জর্নেশ চিরান: এত সত্য তো এক সাথে জানা যাবে না।

মাইকেল হাগিদক: তাহলে একটা একটা করে বল।
জর্নেশ চিরান: একটা একটা করে বললেও অনেক সময় লাগবে।

মাইকেল হাগিদক: সময় লাগলে লাগুক, সময়ের চাইতে আমার কাছে সত্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
জর্নেশ চিরান: কিন্তু এসব সত্য জানার জন্য অগ্নিপরীক্ষা করতে হবে। আর অগ্নিপরীক্ষার জন্য যে কারণকে তুমি সন্দেহ কর, তাকে পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকতে হবে।

মাইকেল হাগিদক: কিরকম সেটা।
জর্নেশ চিরান: অগ্নিপরীক্ষার সময় তুমি যে কারণকে সত্য বলে মনে কর তাকে থাকতে হবে। এরপর একটি পাত্রে তাজা ডিম নিয়ে পাত্রের নিচে তাপ দিতে হবে। তাপে ডিম সিদ্ধ না হলে বুঝতে হবে সত্যের পেছনে তুমি যে কারণকে দায়ি মনে করছ তা সঠিক।

মাইকেল হাগিদক: কিন্তু এত সত্যের কালন তো আমি জানি না। জানা সম্ভবও না।
জর্নেশ চিরান: তাহলে সত্য জানাও সম্ভব না।

ফ্ল্যাশ নাটক-১৩

হরিদাস সাওতাল: কোম্পানি ঘেরাও করে কি লাভ হল?
নবকুমার সাওতাল: লাভ তো তখনই হয়েছে। স্বাধীনতা এসেছে।

হরিদাস সাওতাল: কার স্বাধীনতা, কোন স্বাধীনতা?
নবকুমার সাওতাল: কোম্পানি চলে যাওয়ায় স্বাধীনতা, কোম্পানির শোষণ না করতে পারার স্বাধীনতা।

হরিদাস সাওতাল: কোম্পানি কি এখন দেশে নেই? কোনও কোম্পানি কি আর শোষণ করে না।
নবকুমার সাওতাল: করে। কিন্তু সেই কোম্পানি তো নাই। আগের মত আর শোষণ তো হয় না।

হরিদাস সাওতাল: আমি যদি বলি শোষণ আরো বেড়েছে। আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে।
নবকুমার সাওতাল: না। শোষণ কই বাড়ল। আমরা তো এখন স্বাধীন। নিজের মত করে চলতে পারি । কথা বলতে পারি।

হরিদাস সাওতাল: বেড়েছে। কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে। আগে জোর করে শোষণ করত। এখন আদর করে শোষণ করে।
নবকুমার সাওতাল: কি বলিস তুই।

হরিদাস সাওতাল: হ্যা তাই। তোমার তো মোবাইল আছে। তুমি তো মোবাইল ব্যবহার কর। প্রতি সেকেণ্ডে কত হাজার কোটি টাকা শোষণ হয় এই এক মোবাইলের মাধ্যমেই। আগে কি মোবাইল ছাড়া তুমি চলতে পারতা না? এখন কি মোবাইল ছাড়া চলতে পার না।
নবকুমার সাওতাল: হ্যা পারতাম। পারি। কিন্তু মোবাইল তো এখন প্রয়োজন।

হরিদাস সাওতাল: না প্রয়োজন নয়। কৌশলে প্রয়োজনীয় করা হয়েছে। শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় করা হয়েছে। তুমি তা টের পাও নাই।
নবকুমার সাওতাল: মানে?

হরিদাস সাওতাল: একবারে যে টের পাও না, তাও নয়। যখন বারবার মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে যায়, তখন কি এটা বল না, যে খাইতে পারি না। অথচ এক যন্ত্রের কারণে কত টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নবকুমার সাওতাল: হ্যা বলি।
হরিদাস সাওতাল: তার মানে তুমি শোষণ টের পাও। কিন্তু এই শোষণের কৌশল এতটাই আদরের যে তোমার সেটা আদর মনে হয়, থাপ্পড় মনে হয় না।
নবকুমার সাওতাল: তাহলে কি অবস্থা এই যে আগে আমরা শোষিত হতে দিতাম না, আর এখন নিজেরাই শোষিত হতে দেই নিজেদেরকে।

ফ্ল্যাশ নাটক-১৪

সুরেন চাকমা: আমাদের গ্রামের সবচেয়ে প্রবীন লোক, নিরেন কাকা স্বপ্নে দেখেছিলেন, যেদিন চাকমারা বাঙালিদের সাথে চলতে শুরু করবে সেদিন থেকেই এই অঞ্চলের পাহাড় ধসে পড়া শুরু হবে এবং একদিন সমস্ত পাহাড় ধসে পড়বে। চাকমারা আর পাহাড়ে বসবাস করতে পারবে না। তিনি যে চাকমাকেই বাঙালিদের সাথে মিশতে দেখতেন, তাকেই এই কথা বলতেন।
নরেন চাকমা: স্বপ্ন তো স্বপ্নই।

সুরেন চাকমা: না স্বপ্ন স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন হচ্ছে, একদিন যা ঘটবে তার পূর্বাভাষ।
নরেন চাকমা: তাহলে চাকমারা তো বাঙালিদের সাথে মিশছে। পড়াশোনা করছে। অনেক মেয়েরা বাঙালি ছেলেদেরকে বিয়েও করছে। কই কিছু তো তেমন হচ্ছে না।

সুরেন চাকমা: হচ্ছে তুমি টের পাচ্ছ না।
নরেন চাকমা: কেমন।

সুরেন চাকমা: গত বছর কি একটিও পাহাড় ধসে নাই।
নরেন চাকমা: ধসেছে। দু একটি তো ধসবেই। আর সেটি তো আমাদের কারণে না বাঙালিদের কারণে। তারা জানে না কিভাবে পাহাড় কেটে পথ বানালে পাহাড় ধসে পড়ে না।

সুরেন চাকমা: এই একটি দুইটি থেকেই একদিন ১০০টি পাহাড় ধসে পড়বে। হুম ঠিকই বলেছে বাঙালিরা পাহাড় কাটার নিয়ম জানে না। তারপরও এই বাঙালিরা পাহাড়িদের বসতিতে ঘর বানিয়েছে। নিজের মত করে পাহাড় কেটে যাচ্ছে। এইভাবে আরও বাঙালি এখানে বসত করবে। আরও ঘর বানাবে। আর আরো পাহাড় ধসে পড়বে।
নরেন চাকমা: এটা তো তাহলে ভাল। পাহাড়ের এই কষ্টকর জীবন আর থাকবে না। আমরা বাঙালি আর চাকমা মিলে সমতল ভূমিতে সহজ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারব।

সুরেন চাকমা: পারবে না। ধীরে ধীরে আমরা নাই হয়ে যাব।
নরেন চাকমা: কেন?

সুরেন চাকমা: পাহাড়ের জীবনই আমাদের জন্য সহজ। কারণ এটা আমাদের রক্তে রয়েছে। আমরা জানি কিভাবে এখানে সংগ্রাম করতে হয়। আর সমতল ভূমি হলে আমরা কিছুই করতে পারব না।
নরেন চাকমা: এটা তোমার ধারণা। চাকমারা কি এখন সমতলে ভাল জীবন যাপন করছে না।
সুরেন চাকমা: করছে। কিন্তু যে বেঁচে থাকার সাথে ঐতিহ্য থাকে না, লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস থাকে না; সে বেঁচে থাকা বেঁচে থাকা নয়, মৃত্যু।



ফ্ল্যাশ নাটক-১৫

রাকিব বাওয়ালি: একবার বনদুর্গাই আমাকে বাঘ থেকে রক্ষা করেন।
আজিবার দফাদার: বনদুর্গা! কিভাবে?

রাকিব বাওয়ালি: গভীর রাত। বনের অন্ধকার। ঘুটঘুটে কালো। আমরা কেবল নৌকা নিয়ে পারে এসেছি। অমনি একটি বাঘ আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা বনদুর্গা বলে জোরে চিৎকার করতে থাকি। বাঘ আমাদের দিকে তাকিয়ে পরে অন্য দিকে চলে যায়। আমি সেদিনই প্রথম বুঝি বনদুর্গা আমাদের সাথেই থাকেন। তিনিই আমাদের রক্ষা করেন।
আজিবার দফাদার: কিন্তু আমার ছেলেকে তো ঘর থেকেই বাঘ তুলে নিয়ে গেল। আমিও বনদুর্গা পূজা করি। একবার ঘর থেকে বেরুবার সময়, আরেকবার ঘরে ঢুকার সময় বনদুর্গাকে মনে করেই বের হই। কই আমার ছেলেকে তো বনদুর্গা রক্ষা করল না।

রাকিব বাওয়ালি: এমন কথা বলিস না আজিবার। পাপ হবে। মা এসবের শাস্তি দেবেন নিশ্চয়ই।
আজিবার দফাদার: আমাদের পাপ কি? সারাদিন খেটেখুটে যা পাই তা দিয়েই চলি। আমাদের পাপ কোথায়? তাছাড়া আমার ছেলে কি পাপ করল?

রাকিব বাওয়ালি: তোর পাপ হবে রে আজিবার। তুই মাকে নিয়ে প্রশ্ন তুললি। অনেক সময় আমাদের অনেকের জন্ম হয় পৃথিবীতে কিছু সময় থাকার জন্য। যারা অল্প সময়ে মরে যায়, তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে বলে মরে যায়, এরপর সে স্বর্গে চলে যায়।
আজিবার দফাদার: সত্যি বলছ রাকিব। আমার ছেলে তাইলে স্বর্গে গেছে।

রাকিব বাওয়ালি: হ্যাঁ স্বর্গে গেছে বলেই মা বনদুর্গা তাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে গেছে।
আজিবার দফাদার: তাই যেন হয়। মা বনদুর্গা, তুমি আমার ছেলেরে দেইখ।

ফ্ল্যাশ নাটক-১৬

সুনীতি হদি: প্রতি শীতকালে পিকনিক হয়। আর বাঙালিদের নির্যাতনের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রাম জুড়ে।
রুবি হদি: হ্যাঁ ওদের আর পিকনিক আর আমাদের ওপর নির্যাতন।

সুনীতি হদি: নির্যাতনটাই যেন ওদের উল্লাস।
রুবি হদি: নির্যাতনই ওদের পিকনিক।

সুনীতি হদি: মাঝে মাঝে অবাক হই কিভাবে এক দল যুবক পিকনিক খেতে এসে ঢুকে পড়ে আমাদের আদিবাসী গ্রামে আর প্রতিবছরই ধর্ষণের শিকার হই আমরা কেউ না কেউ।
রুবি হদি: আমাদের জন্ম আর জীবন হয়ে ওঠেছে ওদের পিকনিকের উপভোগের বিষয়।

সুনীতি হদি: আজব বিষয় আরও যে এর কোনও বিচার নেই। মামলা হলে বা পত্রিকায় এলে পুলিশ এসে আবারও আমাদের ধর্ষণ করে যায়। বিচার চাওয়াটা যেন এক অপরাধ।
রুবি হদি: আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখনই এসব ঘটনায় আমার এক বান্ধবীকে হারিয়েছি। পরে বাবা আমাকে মিশনারিতে পাঠিয়ে দেয় ভয়ে। সেই বান্ধবীর কথা মনে পড়ে খুব। তাকে ধর্ষণ করেছিল বাঙালি পিশাচরা। মুখ দেখাতে না পেরে আত্মহত্যা করে সে।

সুনীতি হদি: তারপর কত যুগ হয়ে গেল। আমার ছেলে-মেয়ে এখন বড় হয়েছে। তোরটাও।
রুবি হদি: কিন্তু পাল্টায়নি কিছুই। সেই আগের মতই এখনও পিকনিক হয়। খুব সকাল থেকে মিলিটারির মত ঢুকে পড়ে আমাদের গ্রামে কত শত বাস। সেখান থেকে বাঙালিরা নেমে পড়ে আমাদের আদিবাসী গ্রামে। তারপর…

সুনীতি হদি: এরজন্য তো আমরাই দায়ী। আমরা কি এখনও পর্যন্ত বড় কোনও আন্দোলন করেছি এইসব বাঙালির বিরুদ্ধে।
রুবি হদি: না করি নাই। যে জন্ম ধর্ষণের হাতে বন্দি, সে আন্দোলনও ধর্ষণের হাতেই বন্দি হবে।

সুনীতি হদি: না, হবে না। তোর এই ভাবনাই আমাদের সব আদিবাসীর। ধর্ষণকেই তারা নিয়তি ভেবেছে। এখান থেকে বেরুবার আলাদা কোনও রাস্তা খুঁজে নাই।
রুবি হদি: খুঁজেছে, এরকম অনেক ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। কিন্তু ধর্ষণের হাতেই বন্দি হয়ে গেছে তারা। অনেকে তো জীবিতই নেই।

সুনীতি হদি: তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা!
রুবি হদি: আমাদের ছেলেমেয়েরা তো আর আদিবাসী নেই। ওরা এখন বাঙালি সংস্কৃতিতেই বড় হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা আর ধর্ষিত হবে না। ওরা এখন আমাদেরই সেই আদিবাসী গ্রামে পিকনিক খেতে যাবে আর বাঙালিদের সাথে হয়ত ধর্ষণ করে আসবে কাউকে।

ফ্ল্যাশ নাটক-১৭

মোহন বাউল। অন্ধ। একটি একতারা হাতে। তার ছেলের শিক্ষক ফোন করে কোনও এক শ্মশান ঘাটে গান শোনার জন্য ডেকেছে। শ্মশানের পাশে একটি নদী। সূর্য ডুবে যাবে শীঘ্রই। নদীঘাটে মোহন বাউল আর তার ছেলের স্কুল শিক্ষক।
স্কুল শিক্ষক: আইছেন। বসেন। এই নদীঘাট আর শ্মশান ঘাটেই গান শুনব।
মোহন বাউল: গান শুনবেন। আমার বাসায় বইসা শুনলেই তো ভাল হইত। আমার ছেলের নাম রতন। সে তো আপনাদের ইসকুলের ছাত্র।
স্কুল শিক্ষক: ও রতন। আমি চিন্তাছি না। আচ্ছা কালকেই পরিচয় হমু নে। আপনে গান ধরেন।
মোহন বাউল: এহন তো সবাই কালজয়ী গান শুনে। বাজারি গান। হাল্কা গান। আগে আমাদের বাউলদের বিচার বইত। তহন গান গাইতাম। বাজারের গানে ওই গানগুলা হারাইয়া গেছে। আমি তো গান গাইয়া সংসার চালাই। ওই গান কেউ শুনবার চায় না। তাই অনেক গান ভুইলা গেছি।
স্কুল শিক্ষক: আপনে গান ধরেন।
মোহন বাউল: প্রথমে সাধুর প্রশংসা কইরা গান গাই। (গান শুরু করে বাউল।)
স্কুল শিক্ষক: (চুপ করে বসে থাকে গান শুনে স্কুল শিক্ষক। নদীর দিকে দৃষ্টি ছড়িয়ে দেয় তার।)
মোহন বাউল: শ্মশান ঘাটে যহন বইছি, মহাদেব-কালিরে নিয়ে একটা গান গাই। এই গান একবার এক মন্দিরে গাওয়ার সময় ঠাকুর আর সাধুর মইধ্যে ঝগড়া-ঝাটি শুরু হইয়া গেছিল। বিরাট ঝগড়া। একশ মানুষ জড় হইয়া গেছিল। (গান ধরে বাউল-বলি না দিয়া কালিপূজা কে করবি আয়, কথা কয় না দেবী, মানুষ পেট ভরে খায়।)
স্কুল শিক্ষক: আরশিনগর গানটা জানেন না। বাড়ির পাশে আরশিনগর?
মোহন বাউল: হ জানি। এই গান তো হাল্কা। এই গান শুনবেন। এই গানের কারণেই তো ভাল ভাল গান, তত্ত্বের গান চাপা পইড়া গেছে। (গান ধরে বাউল- বাড়ির পাশে আরশিনগর। সেথা পড়শি বসত করে)
স্কুল শিক্ষক: এইবার দেহতত্ত্বের গান গান।
মোহন বাউল: জিকির আর হরেকৃষ্ণ নাম জপ দিয়া কিছু হইব না। সাধু ভজন করা লাগব। সাধুই সব রহস্যের কথা জানে। (গান ধরে বাউল। গান চলতে থাকে। একটার পর একটা।)

ফ্ল্যাশ নাটক-১৮

নৃপেন মারমা: আগে পাড়ায় পাড়ায় জলকেলি উৎসব হত। এখন তো কোথাও এমন উৎসব হয় না, কেবল শহর ছাড়া। শহরের জলকেলি উৎসবগুলো জানি কেমন? এমনভাবে উৎসব হয়, মনে হয় পুরুষরা মারমা নারীদের খেয়ে ফেলবে।
সুগম মারমা: এজন্যই বলছি পাড়ায় পাড়ায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

নৃপেন মারমা: সাংস্কৃতিক সংগঠন? এটা কেন? আগে তো এসব ছিল না। তখন কি জলকেলি উৎসব হয় নি?
সুগম মারমা: হয়েছে। কিন্তু এখন তো আগের মত অবস্থা নেই। এসব ফিরিয়ে আনতে হলে সংগঠনের প্রয়োজন।

নৃপেন মারমা: এ দেশে তো কত বড় বড় সংগঠনই আছে। তুই কি দেখাতে পারবি সংগঠন কোনও সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। পাকাপোক্ত করতে পেরেছে। বরং এমন অনেক দেখানো যাবে সংগঠন পুরো সংস্কৃতিটাকে এমনভাবে ব্যবহার করা শুরু করে যে সমাজ আর এক সময় এই উৎসবের ধারে কাছে আসতে চায় না।
সুগম মারমা: কিন্তু সংগঠন একে ভাল ভাবেও তো ব্যবহার করতে পারে?

নৃপেন মারমা: পারে না। সাংস্কৃতিক সংগঠন মানেই এটা সমাজ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করে। এর সাথে জনগণের আচরণ আত্মিক নয়, অনেকটা দূর থেকে মজা নেওয়ার মত।
সুগম মারমা: এজন্য কি আমরা বসে থাকব? এটা ছাড়া কি আর কোনও উপায় আছে?

নৃপেন মারমা: আছে, পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় নয়। প্রতিটি পরিবার এক একটি সংগঠন। মারমাদের প্রতি পরিবারে এর চর্চা নিয়ে আসতে হবে। তাহলে এটা সহজেই পাকাপোক্ত হবে এবং মারমা নামের জাতি হিসেবে পরিচিত সংগঠনটির খুব দ্রুতই পরিবর্তন হবে।
সুগম মারমা: কিন্তু প্রতিটি পরিবারে কি সম্ভব?

নৃপেন মারমা: প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় যদি সম্ভব হয়, প্রতিটি বাড়ি বাড়ি কি সম্ভব হবে না? কি সম্ভব?
সুগম মারমা: হ্যাঁ সম্ভব।

ফ্ল্যাশ নাটক-১৯

সুমেধ চাকমা: বাঙ্গালিরা যে হারে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার চালায়, তাতে আদিবাসীদেরও একটা কিছু করা উচিত।
তাপস চাকমা: কিন্তু এই অত্যাচার বাঙ্গালির নয়, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের।

সুমেধ চাকমা: সেটা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদীই বটে, তবে আমাদের জাতীয়তাবাদ কি হবে?
তাপস চাকমা: কি হবে না, সেটা তো আছেই। আমরা জুম্ম জাতীয়তাবাদী।

সুমেধ চাকমা: তাহলে সংঘাতটা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ বনাম জুম্ম জাতীয়তাবাদ?
তাপস চাকমা: হ্যাঁ ঠিক তাই।

সুমেধ চাকমা: তাহলে আদিবাসীদের জুম্ম জাতীয়তাবাদী হওয়া উচিত।
তাপস চাকমা: হওয়া উচিত নয়। এই জাতীয়তাবাদ আছেই। কেবল তা উস্কে দিতে হবে।

সুমেধ চাকমা: কিন্তু সব বাঙ্গালি তো আমার শত্রু নয়।
তাপস চাকমা: তা নয়।

সুমেধ চাকমা: বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ বনাম জুম্ম জাতীয়তাবাদ মানে সব বাঙ্গালিকে হটিয়ে জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা। তাই না? এটা তাহলে কি করে সম্ভব? যেখানে সব বাঙ্গালি আমার শত্রু নয়।
তাপস চাকমা: বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ বনাম জুম্ম জাতীয়তবাদ মানে বাঙ্গালি উচ্ছেদ নয়, বাঙ্গালির দেমাগকে আঘাত।

সুমেধ চাকমা: তাহলে আমরা উচ্ছেদ করব না। দেমাগকে আঘাত করব। দেমাগ ভেঙ্গে চুরমার করে দেব।
তাপস চাকমা: হ্যাঁ তাই।

সুমেধ চাকমা: কিন্তু ততদিনে আমরা যদি নাই হয়ে যাই।
তাপস চাকমা: হব না।

সুমেধ চাকমা: কিভাবে?
তাপস চাকমা: জুম্ম জাতীয়তাবাদের কারণে।

ফ্ল্যাশ নাটক-২০

উখ্যিং চো: ক্ষমতাবানরা যদি মনে করে, তোকে দেশ ছাড়া করবে তাহলে কি এখানে থাকতে পার বি?
উ মা মিং: না।

উখ্যিং চো: তাহলে কি এই দেশ এই বাংলাদেশ আমাদের ?
উ মা মিং: না।

উখ্যিং চো: তাহলে আমাদের দেশ কোথায়।
উ মা মিং: আমাদের দেশ নেই।

উখ্যিং চো: আমাদের পূর্বপুরুষ কোথায়। আমাদের ইতিহাস কোথায়।
উ মা মিং: আমাদের কিছুই নেই। রাখাইনদের কিছুই থাকে না।

উখ্যিং চো: রাখাইনদের কিছু থাকে না কেন?
উ মা মিং: কারণ রাখাইনদের হাতে অস্ত্র নেই।

উখ্যিং চো: কি বলছিস তুই?
উ মা মিং: হ্যা সত্যি তাই। আমাদের ঘরছাড়া করা হয়, কারণ আমাদের হাতে অস্ত্র নেই।

উখ্যিং চো: কিন্তু দেখ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা হল। মামলা এক বছরও চালাতে পারলাম না। মামলা চালানোর এত টাকা পাব কোথায়। এরচেয়ে বিক্রি করে যাই পাওয়া যায় তাই ও ভাল। কিন্তু তোর কি এটা মনে হয় না সরকার নিজে সবাইকে নিয়ে আমাদের তাড়াল।
উ মা মিং: অবশ্যই। ওরা ভাল করেই জানে মামলা দীর্ঘ হবে। মামলা দীর্ঘ হলে এতদিন মামলা চালাতে আমার পারব না, এটা ওরা ভাল করেই জানে। এবং এক সময় বিক্রি করতে বাধ্য হব। এটাও তাদেরই জানা। এসব পরিকল্পিত। তোদের কাহিনী তো জানলাম। তোরা কিছু টাকা হলেও পেয়েছিস।

উখ্যিং চো: হ্যাঁ তা পেয়েছি।
উ মা মিং: আর আমাদের কথা ভাব। একদল লোক গভীর রাতে এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলল। সকাল বেলা ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বলল- এটা তাদের জমি। তারা দখলে নিয়েছে। কিচ্ছু বলার নাই। কিচ্ছু বলার ছিল না।

উখ্যিং চো: এগুলো সব আমাদের জীবনের সাথে ফাইজলামি। আমাদের সাথে ছিনিমিনি।
উ মা মিং: এই ফাইজলামি, এই ছিনিমিনি ওরা আমাদের সবার সাথেই খেলছে।

উখ্যিং চো: আর আমরা এসব মেনে নিচ্ছি।
উ মা মিং: মেনে নেওয়া ছাড়া কি করব। সকালে বায়নাপত্র বানিয়ে, পুলিশ সাথে করে এনে নিজেদের গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে, দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে।

উখ্যিং চো: এসব কি আমরা মেনে নেব।
উ মা মিং: মেনেই তো চলছি। শুধু বাঁচার জন্যে। আমাদের জমির ওপর ঘর বানিয়ে ওরাই আমাদের ভাড়া দিচ্ছে। কাজ করে যা পয়সা পাই তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।

উখ্যিং চো: কিন্তু এই মেনে নেওয়া কি টিকে থাকা? এই ভাবে খেটে খুটে কোনো রকম সংসার চালিয়ে যাওয়াকে কি টিকে থাকার মত কিছু? শেষ পর্যন্ত এই ভাড়া বাড়ি থেকেও আমাদের তাড়াবে। এমন কি মনে হয় না?
উ মা মিং: মনে হয়। কিন্তু ভাবতে চাই না। যদি বিদ্রোহ করতে গিয়ে যতদিন টিকে আছি, ততদিনও টিকে থাকতে না পারি?

ফ্ল্যাশ নাটক-২১

সেলুং রাখাইন: আরকান কি আবার দখল হবে?
প্রুমারী রাখাইন: দখল? কে দখল করবে?

সেলুং রাখাইন: কেন আমরাই। কারণ সেটা আমাদেরই রাজ্য।
প্রুমারী রাখাইন: না সেটা আর আমাদের নেই। ওটা রাক্ষসদের জায়গা ছিল। আবারও সেখানে রাক্ষস ঢুকেছে। সেই রাক্ষস আমরা নিজেরাই হয়েছি। যে রাক্ষস দমন করে রাজা মারায়ু রাজত্ব দখল করেছিলেন, সেই রাজ্যের রাক্ষস এখন আমরা নিজেরাই হয়েছি।

সেলুং রাখাইন: মানে কিভাবে, এসব কি বলছ।
প্রুমারী রাখাইন: এক সময় রাক্ষসরা এসে জনগণের ওপর অত্যাচার চালাত, এখন আমরাই জনগণের ওপর অত্যাচার চালাই।

সেলুং রাখাইন: রাজা মারায়ু তো আছেন। তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন।
প্রুমারী রাখাইন: না রাজা মারায়ু আর আমাদের রক্ষা করবেন না। তিনি রাক্ষসদের হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছিলেন এবং আরাকান রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। সেই রাজ্যে এখন আমরাই রাক্ষস। তিনি এখন কাকে বাঁচাবেন? আমাদের না যারা যেসব রাক্ষসরা এক সময় অত্যাচার চালাত তাদের?

সেলুং রাখাইন: কিন্তু রাজা মারায়ু তো আমাদের রক্ষাকারী, আমাদের জাতির জনক।
প্রুমারী রাখাইন: রাখাইন প্রে আর নেই। রাজা মারায়ু আর আমাদের সাথে নেই। অনেক আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চরে গেছেন।

সেলুং রাখাইন: কিন্তু রাজা মারায়ু অর্জুনের ছেলে।
প্রুমারী রাখাইন: ভাইয়ে ভাইয়ে যখন ঝগড়া হয়, মারপিট হয়, খুনাখুনি হয়; পৃথিবীর সমস্ত বাবারাই তখন অভিশাপ দেন। রাজা মারায়ু অর্জুনের ছেলে বলেই আমাদের ওপর তার অভিশাপ আরও বর্শিত হবে। ভুলে যেও না কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে আপন ভাই, আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধেই হয়েছিল। অর্জুন না চাইলেও কৃষ্ণই তাকে বলেছিলেন যুদ্ধ করতে।

ফ্ল্যাশ নাটক-২২

নিপেন টিপ্পা: প্রতিবছরই কারমা পূজা হয়। ধূম করে করা হয়। যাতে দেবী অসন্তুষ্ট না হন। কই আমাদের অবা তো আর যায় না।
রথীন্দ্র ওঁরাও: অভাব? অভাব কি যাওয়ার জিনিস। দেবতারাও পরীক্ষা নেন। অভাবের পরীক্ষা। মরে মরে শেষ হয়ে যাওয়ার পরীক্ষা।

নিপেন টিপ্পা: পূজায় তো আমরা কোনও ত্রুটি করি না।
রথীন্দ্র ওঁরাও: পূজায় কি খিল কদম গাছই আন?

নিপেন টিপ্পা: না সেই গাছ কই পাব? সেই গাছ তো এখন আর নাই।
রথীন্দ্র ওঁরাও: তুমি কি জান কেন কারমা পূজা খিল কদম গাছ লাগে?

নিপেন টিপ্পা: না।
রথীন্দ্র ওঁরাও: কারমা তো সেই খিল কদম গাছের নাম, যার কাছে ছিল কর্মভাগ্য। কারাম আর ধরাম তাদের বোন পারাবেতীকে এই পূজা করার নির্দেশ দিয়েছিল।

নিপেন টিপ্পা: তখন থেকেই কারমা পূজা।
রথীন্দ্র ওঁরাও: খিল কদম গাছই যে জাতির কাছে নাই, তার কাছে কি কর্মভাগ্য থাকবে।

নিপেন টিপ্পা: না। তাহলে এতদিন আমরা যে পূজা করে এসেছি তা আর দেবতার কাছে পৌঁছায় নি।
রথীন্দ্র ওঁরাও: না।

নিপেন টিপ্পা: সেই গাছকে আমরা কিভাবে ফিরিয়ে আনব, আমাদের তো এখন নিজেদেরই জমি নেই। তাহলে আমরা আরও অভাবী হব। অভাবে অভাবে একদিন আমরা কেউই থাকব না?
রথীন্দ্র ওঁরাও: না।

ফ্ল্যাশ নাটক-২৩

অজিত মাহাতো: পুলিশ খবর পাঠিয়েছে কোন মিছিলে দেখলেই আমাকে গ্রেফতার করা হবে।
জীবন মাহাতো: পুলিশ তো এটা বলবেই। এটা ভাল খবর তবে।

অজিত মাহাতো: ভাল খবর? আমাকে গ্রেফতার করা হবে আর তুমি বলছ ভাল খবর।
জীবন মাহাতো: হ্যাঁ এটা ভাল খবরই। কারণ এখন বোঝা যাচ্ছে সরকারের টনক নড়েছে। ওরা বুঝতে পেরেছে আমরা আমাদের দাবি নিয়ে কঠোর আর সঠিক অবস্থানে এসেছি।

অজিত মাহাতো: তাহলে তো তারা দাবি মেনে নিলেই পারে।
জীবন মাহাতো: না দাবি এত সহজে তারা মানবে না। তোর কি মনে আছে গহালপূজার কথা। সারারাত গ্রামের বাড়ি ঘুরে ঘুরে গান গাইতাম-রাহা মাতো হেরিন রে এ, রাহা মাতো হেরিন রে। রাত জাগার পরদিন হত গহালপূজা। আর সেই পূজায় গোয়ালঘরে ছাগল বলি দেওয়া হত। দেবতারাও বলি চায়। আর আমাদের বেঁচে থাকার দাবি ওরা মেনে নেবে আমাদের কারও বলি ছাড়াই?

অজিত মাহাতো: তার মানে বলি আমাদের হতেই হবে।
জীবন মাহাতো: হ্যাঁ বলি আমাদের হতেই হবে। আর এটাই সুখবর যে যখনই আমরা বলি হওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত থাকব, তখন সরকার মানতে বাধ্য হবে। আমাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আমরা জিতে যাব।

অজিত মাহাতো: কিন্তু?
জীবন মাহাতো: এখন আর পেছানোর সুযোগ নেই। সবাইকে ডাক।

অজিত মাহাতো: কেন?
জীবন মাহাতো: কালই মিছিল হবে। আর সেই মিছিলের নেতৃত্ব দেবে তুমি।

অজিত মাহাতো: দাদা, মাহাতোদের জন্য জীবন আমি দিতেই পারি। কিন্তু তুমি যখন গহালপূজার কথা বলছিলে মায়ের কথা মনে পড়ছিল খুব।
জীবন মাহাতো:অজিত, এখন এমন আবেগি হয়ে পড়লে চলবে না। তুমি শুধু তোমার মায়ের জন্য নো, সমস্ত মাহাতো জাতির জন্য কাজ করছ।

অজিত মাহাতো: ঠিক আছে দাদা। আমি এখনই যাচ্ছি। কালই মিছিল হবে।
জীবন মাহাতো: যাও। আমি জানি তুমি ফিরে আসবে। পুলিশ আমাদের কিছু্‌ই করতে পারবে না। কারণ সূর্য দেবতা আমাদের সাথেই আছেন।

ফ্ল্যাশ নাটক-২৪

রঘুনাথ মুণ্ডা: আমাদের ধর্মের মূলমন্ত্র মরতে আর মারতে শেখা।
অর্জুন মুণ্ডা: এমন মন্ত্র কি কোন ধর্মে থাকতে পারে ? এ আমাদের কোন ধর্মের মন্ত্র।

রঘুনাথ মুণ্ডা: আমাদের ধর্মের নাম বীরসাইত।
অর্জুন মুণ্ডা: বীরসাইত?

রঘুনাথ মুণ্ডা: হ্যাঁ বীরসাইত। বীরসা মুণ্ডার নাম নিশ্চয়ই শুনেছ। সেইই আমাদের ধর্মগুরু।
অর্জুন মুণ্ডা: কিন্তু উনি তো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।

রঘুনাথ মুণ্ডা: হ্যাঁ সে সময়েই হাজার হাজার মুণ্ডা তার শিষ্যত্ব গ্রহন করে। বংশ পরম্পরায় সেই শিষ্যত্বের ধারা আমরা বহন করছি।
অর্জুন মুণ্ডা: উনি তো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। অন্যায় রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এখানে উনার ধর্ম কোথায়?

রঘুনাথ মুণ্ডা: অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্ম। আমরা বীরাসকে ভগবান ডাকি। বীরসাই আমাদের ভগবান।
অর্জুন মুণ্ডা: কিন্তু ধর্ম?

রঘুনাথ মুণ্ডা: হ্যাঁ উনার উপদেশই আমাদের ধর্মোপদেশ। উনি বলতেন- কেউ যদি আমাদের অরণ্য মাকে কেড়ে নিতে চায়, কেউ যদি আমাদের জাতিকে খারাপ বলে, কেউ যদি আমাদের ধর্মকে ধর্ম মনে না করে, কেউ যদি আমাদের শুধু শোষণ করে তবে আমি বিদ্রোহ করবই।
অর্জুন মুণ্ডা: বিদ্রোহ আর ধর্ম পালন।

রঘুনাথ মুণ্ডা: বিদ্রোহই আমাদের ধর্ম, যদি আমরা শোষিত হই। যদি আমাদের জাতিকে অপমান করা হয়। বীরসার এই শিক্ষাকেই আমরা বড় মনে করি।
অর্জুন মুণ্ডা: ঠিক আছে। কিন্তু তোমাদের কি স্বর্গ-নরক আছে? বীরসাকে কি তোমাদের এখন বাঁচাতে পারবে?

রঘুনাথ মুণ্ডা: হ্যাঁ পারবে।
অর্জুন মুণ্ডা: কিভাবে?

রঘুনাথ মুণ্ডা: বীরসার বাণী যদি আমরা সমস্ত মুণ্ডা জাতি মেনে চলি।
অর্জুন মুণ্ডা: কিন্তু যেখানে ত্রাণকর্তার ওপর ভরসা নেই, তার কাছে কি করে আসবে?

রঘুনাথ মুণ্ডা: মুণ্ডা জাতি কি আর আগের মত আছে। সমস্ত জাতিই হারিয়ে যাচ্ছে। এটা কেন?
অর্জুন মুণ্ডা: কেন?

রঘুনাথ মুণ্ডা: কারণ আমরা ভগবান বীরসার কথা মানি না। আমরা মনে করি না- কেউ যদি আমাদের অরণ্য মাকে কেড়ে নিতে চায়, কেউ যদি আমাদের জাতিকে খারাপ বলে, কেউ যদি আমাদের ধর্মকে ধর্ম মনে না করে, কেউ যদি আমাদের শুধু শোষণ করে তবে আমি বিদ্রোহ করবই। আমরা যদি তা মনে করতাম তাহলে এভাবে হারিয়ে যেতে বসতাম না।
অর্জুন মুণ্ডা: তোমার কি ধারণা বীরসা মুণ্ডার এমন ক্ষমতা আছে যে জাতিকে বাঁচাতে পারবে।

রঘুনাথ মুণ্ডা: হ্যাঁ পারবে। তার কথা মত তুমি চল। আমাদের জাতির বিরুদ্ধে সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ শুরু কর, দেখবে আমরা আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি।
অর্জুন মুণ্ডা: কেউ আসবে না।

রঘুনাথ মুণ্ডা: তাহলে জাতিও থাকবে না।
অর্জুন মুণ্ডা: তাহলে বীরসা মুণ্ডা তোমাদের ভগবান না। ভগবান হলে উনি অবশ্যই জাতিকে রক্ষা করতেন।

রঘুনাথ মুণ্ডা: বিদ্রোহ ছাড়া জাতি রক্ষা হবে না, ভগবান বীরসা তাই-ই বলে গেছেন।

ফ্ল্যাশ নাটক-২৫

রূপালী সাংমা: উন্নয়ন আপা বলছেন আমরা যেন সব মান্দি মেয়েদের স্কুলে পাঠাই। কেউ যেন ঘরের ভেতরে না থাকে।
প্রেমা হাগিদক: আর কি বলছে?

রূপালী সাংমা: যে সমস্ত মান্দি মেয়েরা রাস্তাঘাটে টিজের শিকার হন, তারা যেন তাদের কাছে যান। তারা আইনি সহায়তা দেবেন।
প্রেমা হাগিদক: আর কি বলছে?

রূপালী সাংমা: বিবাহিত মান্দি মেয়েরা যদি ঘরের ভেতর নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে যেন তারা তাদেরকে জানান। তারা এর ব্যবস্থা করবে।
প্রেমা হাগিদক: আর কি বলছে?

রূপালী সাংমা: আরও এরকম অনেক কিছু।
প্রেমা হাগিদক: তুমি তো অনেকদিন ধইরা উন্নয়ন আপাদের সাথে কাজ কর তোমার কি মনে হয়।

রূপালী সাংমা: ভালই কিন্তু।
প্রেমা হাগিদক: কিন্তু কি?

রূপালী সাংমা: মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা আগেই অনেক স্বাধীন আছিলাম। আর উন্নয়নের বেড়াজালে ক্রমশ কেন জানি আটকাইয়া যাইতাছি।
প্রেমা হাগিদক: মানে?

রূপালী সাংমা: আগে টিজ কারে কয় কেউ জানত না। এখন এগুলা জানাজানি হবার পর দিন দিন আরও যেন এইসব বাড়তাছে।
প্রেমা হাগিদক: কি রকম?

রূপালী সাংমা: মান্দি সমাজে মেয়েরাই তো সব আয় উপার্জন করত। মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হত। সংসারের প্রায় সব কাজই করত। তখন পারিবারিক নির্যাতন, টিজ এইসব কিছু ছিল না।
প্রেমা হাগিদক: এখন?

রূপালী সাংমা: এখন উন্নয়ন আসার পরে আমরা কেমন যেন স্বাধীনতার বদলে ঘরে আটকাইয়া গেলাম আরও। এখন মেয়েগর কথা বাইরে তো নাইই-সংসারেও তেমন একটা খাটে না। আগে পুরুষরা আমাগর কথা শুনত। কিন্তু উন্নয়ন আসার পর পুরুষরা ঘরের বাইরে সব কাজ করা শুরু করল। মেয়েগর ঘরের ভেতরের কাজ দিল। অথচ আগে তো মেয়েরাই বেশি ঘরের বাইরের কাজ করত। মেয়েরাই ছিল মান্দি সমাজের সব।
প্রেমা হাগিদক: তাহলে উন্নয়ন তেমন একটা কিছু হয় নাই।

রূপালী সাংমা: না হইছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হইছে। আগে বনে বাদারে ঘুইরা ঘুইরা খাবার সংগ্রহ করতে হইত। এখন তা করতে হয় না। কিন্তু আমরা নারীরা কেমন যেন আটকাইয়া যাইতাছি। এখন তো আর খাবার সংগ্রহের জন্য বনেবাদারেও যাইতে পারি না।

ফ্ল্যাশ নাটক-২৬

প্রেমা রিছিল: তার সাথে প্রেম করা অসম্ভব।
রবি মৃ: কেন?

প্রেমা রিছিল: সে তো স্মার্ট না। সে কেমন আচ্চুদের সাথে ঘুরে। চু খায়। চেহারার মধ্যে নাক বোচা বোচা মান্দি ছাপ এখনও আছে। অসম্ভব।
রবি মৃ: তোমার বাবারও কিন্তু নাক বোচা প্রেমা। এমনকি তোমারও।

প্রেমা রিছিল: হ্যাঁ আমারও। আমার মা-বাবারও। এমনকি আমার সব পূর্বপুরুষেরও। কিন্তু আমি আর নাক বোচা কাউকে দেখতে পাইনা। অবশ্য অনেক নাক বোচা পুরুষ মানুষকেও সুন্দর লাগে।
রবি মৃ: তাহলে?

প্রেমা রিছিল: সে সুন্দর কিন্তু স্মার্ট না। হিন্দি সিনেমার নায়কদের মত না। যার সাথে ঘুরব, সে যদি দেখানোর মত কেউ না হয তাহলে প্রেম করে কোনও লাভ আছে?
রবি মৃ: তা নেই। তবে প্রেমটা কি কেবলই ঘুরে বেড়ানো?

প্রেমা রিছিল: না আমি বুচ্ছি। তুমি বলবা প্রেম করা মানে ভালভাবে সংসার করা। এসব আমি জানি। কিন্তু আমার কাচে জামাইকে নিয়া ঘুরাও সংসারের মত অনেক বড় কিছু। অনেকক্ষেত্রে সংসারের চাইতে আমার কাছে বড় মনে হয়।
রবি মৃ: আচ্ছা। পৃথিবীর সব মানুষই সুন্দর। কেবল তার ভেতর থেকে সৌন্দর্যকে বের করে আনতে হয়।

প্রেমা রিছিল: হুম। এত সাধনা কইরা, সিরিয়াস হইয়া প্রেম করার ইচ্ছা আমার নাই। তা দাদা একটা কথা বলা তো? তোমার বন্ধু কোন কারণে আমার প্রেমে পড়ল। আমি তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।
রবি মৃ: তোমার চ্ঞ্চলতাকেই নাকি ওর বেশি পছন্দ হয়েছে।

প্রেমা রিছিল: হা হা হা ফাইজলামি।
রবি মৃ: আরে না । ফাইজলামি না। আমার বন্ধুটা খুব ভাল। অনেক ভাল হবে যদি তোমাদের মধ্যে বিয়ে হয়।

প্রেমা রিছিল: সেটা সম্ভব না । কখনই সম্ভব না।
রবি মৃ: কেন সে নাক বোচা, স্মার্ট না। এই কারণে?

প্রেমা রিছিল: না তা না।
রবি মৃ: তাহলে কি?

প্রেমা রিছিল: পরান মৃর নাম শুনছ। ওই যে মধুপুরে সবচেয়ে ধনী বাড়িটা। সে আমার হাজবেন্ড।
রবি মৃ: মানে তার তো অনেক বয়স। তার সাথে। আচ্ছা কিন্তু আমরা কেউই জানলাম না।
প্রেমা রিছিল: পৃথিবীর অনেক কথাই অনেক মানুষ জানে না।
রবি মৃ: কিন্তু তুমি কি সুখী?
প্রেমা রিছিল: হ্যাঁ অবশ্যই। তার টাকা আছে। আর আমি সেই টাকা ওড়াই। মেয়েরা ছেলদের কাছে কোনকিছুই তেমন আসলে চায় না, কেবল টাকা ছাড়া।
ফ্ল্যাশ নাটক-২৭
স্বপ্না হাজং: ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। এখনও তেমনি।
রত্না হাজং: আমার মা ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন বাঙালিরা এসে ঘরে ঢুকে পড়ে। আর যা খুশি ঘরের মেয়েদের সাথে তাই করে যায়।

স্বপ্না হাজং: আমার দিদিকে তো নেতাটেতাদের বলেও ঘরে রাখা গেল না। শেষ মেষ ঢাকাই চলে যেতে হল।
রত্না হাজং: নেতাদের বলে কি আর কি হবে। ওরাই তো নষ্টের গোড়া। শুরুটা তো ওরাই করে।

স্বপ্না হাজং: আলপনার কথা মনে আছে তোর?
রত্না হাজং: থাকবে না আবার। আমরা এক সাথে ইসকুলে যেতাম। তারপর একিদন নাই।

স্বপ্না হাজং: নাই মানে সেই যে আলপনা গেল আর ফিরে এল না।
রত্না হাজং: কুত্তার বাচ্চারা আলপনারে শুধু ধর্ষণ করে নাই। খুন করে বনের ভিতরে লাশ রেখে গেছে।

স্বপ্না হাজং: গ্রামের সবাই জানত কারা ওরা। পুলিশও জানত।
রত্না হাজং: কিন্তু কেউই আগায়নি। কে কার ঘরে বিপদ ডেকে আনে।

স্বপ্না হাজং: ওরা দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছে। পুলিশও নির্বিকার টাকা খেয়ে চুপচাপ।
রত্না হাজং: যেন হাজং মেয়েদের ধর্ষণ করার মধ্যে কোনও পাপ নেই।

স্বপ্না হাজং: আমাদের জীবনেও কি কম ধকল গেছে। কিভাবে কিভাবে যেন আমরা বেঁচে গেলাম।
রত্না হাজং: আসলেই, বেঁচে যাওয়াটাই এখন আমাদের কাছে কত বিস্ময়কর।
স্বপ্না হাজং: শুধুমাত্র চেহারার কিছু ফারাক। শুধুমাত্র ওদের সংস্কৃতির সাথে আমাদের সংস্কৃতি মেলে না। আর এতেই কত জুলুম।
রত্না হাজং: জুলুম নয়, এই এতটুকু ফারাকই ওদের কাছে এত বড় যে তারা শুধু এই ফারাকের কারণে আমাদের আলাদা করে রাখেনি, খুন-ধর্ষণ করারও এক প্রকার সামাজিক বৈধতা তারা যেন পেয়ে গেছে।
স্বপ্না হাজং: অথচ জাতিসংঘ জাতি বৈচিত্র্যের কথা বলে। রাষ্ট্র তাতে সই করে।
রত্না হাজং: এইসব জাতিসংঘের জাতিগত বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি বৈচিত্র্য, রাষ্ট্রের স্বাক্ষর এসব দিয়া আমাদের কি হবে, যেখানে সামান্য একটু চেহারা ফারাকই, সংস্কৃতির ফারাকই আরেকটা জাতিকে হত্যা-ধর্ষণের মত সামাজিক বৈধতা দেয়।
স্বপ্না হাজং: জানি না। এসবের কিছুই জানি না।
রত্না হাজং: আমরা কেবলই পুড়ব, মরব, ধর্ষিত হব। এটাই আমাদের নিয়তি।
ফ্ল্যাশ নাটক-২৮
এনজিও কর্মকর্তা: এটা কি জান তোমার আদিবাসীদের নিয়ে সংগ্রামের কথা সমস্ত দেশবাসী জানে।
আদিবাসী নেতা: জানি। কিন্তু তাদের এসব জাইন্যা কি হবে।

এনজিও কর্মকর্তা: কি আশ্চর্য তুমি বুঝতে পারছ না। তুমি এখন অনেক বড় কিছু। একজন ন্যাশনাল লেভেলের মানুষ।
আদিবাসী নেতা: কি রকম?

এনজিও কর্মকর্তা: আরে তোমার কথায় আদিবাসীরা সবাই প্রশ্নহীন ভাবে সায় দেয়। সমস্ত দেশ আদিবাসী বলতে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সমস্ত মিডিয়া তোমার দিকে। তুমি এখন যা বলবা তাই।
আদিবাসী নেতা: এসব দিয়া আমাদের কি হবে?

এনজিও কর্মকর্তা: অন্যান্যদের কি হবে জানি না। তবে তোমার হবে।
আদিবাসী নেতা: মানে?

এনজিও কর্মকর্তা: সরকার, আমলা, বিদেশী কূটনীতিকরা তোমার সাহস আর সংগ্রামের প্রশংসা করে কথা বলছে। এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানরাও তোমার প্রশংসা করতে বাধ্য হচ্ছে। তোমার আন্দোলন তো সফল।
আদিবাসী নেতা: কই সফল। আদিবাসীরা তো কিছুই পেল না।

এনজিও কর্মকর্তা: আরে তুমি অনেক কিছু পাবে।
আদিবাসী নেতা: কি পাব?

এনজিও কর্মকর্তা: বিত্ত, বৈভব, সম্মান যা চাও।
আদিবাসী নেতা: কে দেবে?

এনজিও কর্মকর্তা: আমি দেব। তোমার সংগ্রামী জীবন, আদিবাসীদের তোমার ওপর আস্থা, তোমার পরিশ্রম সম্পর্কে আমি ভাল করেই জানি।
আদিবাসী নেতা: তাহলে?

এনজিও কর্মকর্তা: তোমার তো একমাত্র ছেলে না খেয়ে মারা গেল। কেউ কি এগিয়েছে। না কোনো আদিবাসী, না রাষ্ট্রের কেউ। কি কেউ এগিয়েছে?
আদিবাসী নেতা: না।

এনজিও কর্মকর্তা: আমার কথা শুন। আগে কথা দাও যে ফেলে দেব না।
আদিবাসী নেতা: না শুনে কেমনে বলি যে ফেলে দেব না। এমন কথাও তো হতে পারে যা আমি পারব না।

এনজিও কর্মকর্তা: আরে না পারবে। পারবে বলেই বলছি ।
আদিবাসী নেতা: আচ্ছা বলেন।

এনজিও কর্মকর্তা: তুমি আমাদের সাথে কাজ কর। আমাদের এনজিওতে। মাসে ৫০ হাজার দেব। তোমার কোনও অভাব অনটনই থাকবে না। তোমাকে আমি চিনে বলেই বললাম। কি করবে?
আদিবাসী নেতা: করব।
ফ্ল্যাশ নাটক-২৯
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: আপনাকে যে খ্রিস্টানরা খ্রিস্টান বানাইতে চাইল, মুসলমানরা কি কখনও মুসলমান বানাইতে চাইছে?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: একবার চাইছিল ‘৪৭ এর সময়। তখন আমাদের মুসলমানি করতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধের পরও চাইছে। মাঝে মাঝে আমাদের মা-বেটিও ধইরা নিয়া যাইতে চাইছে।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: কিন্তু আপনারা সবাই তো এখন খ্রিস্টান।
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: আমি না। আমার ছেলে-মেয়েরা। ওদের বউ-জামাইরা। ওরা খ্রিস্টান না হলে মুসলমানদের অত্যাচারে হয়ত বাঁচতই না।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: তাহলে খ্রিস্টানরা তো ভালই।
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: হ্যাঁ ভালই। ওরা আমাদের পড়াইছে। উপার্জন করা শিখাইছে। একটা কাম কইরা খাইতাছে সবাই।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: কিন্তু খ্রিস্টান না হয়ে কোনও উপায় ছিল না?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: না, ছিল না। কারণ খ্রিস্টান না হলে ততদিনে মুসলমানেরা আমাদের শেষ করে দিত না হয় আমাদের ভারতে চলে যেতে হত।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: খ্রিস্টান হওয়ার পর নিজের জাতি-সংস্কৃতি- ধর্ম কি আর আছে?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: নাই। মাঝে মাঝে ওরা কিছু কিছু পালন করে। তবে নাইই। কেউ আর আমাদের দেবতার কথা বলে না। আমাদের নাতি-নাতনিরাই এখন বলে- আমাদের দেব-দেবী নাকি ভূত-প্রেত।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: ছোটবেলায় আপনার বেড়ে ওঠা আর আপনার নাতি-নাতনিদের বেড়ে ওঠা। ফারাকটা চোখে ভেসে ওঠে কখনও।
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: অনেক সময়ই। পার্থক্য মেলাই দেখি। এই পার্থক্য দিয়া আর কি অইব।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: আপনার খারাপ লাগে না?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: লাগে মাঝে মাঝে লাগে।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: আপনি কি নিজের ধর্ম পালন করতে পারবেন এখন?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: না এখন আমার মত আগের ধর্মের বিশ্বাসী তো কেউ আর নাই। আর তাছাড়া পুলাপান নাতি-নাতনিরা বড় হইছে। ফাদাররা আছে ওগর দিকে তাকাইয়া যাওন যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: তাহলে আপনাদের ধর্মের লোকজন আর কিছুদিন পরে পাওয়া যাবে না। একটা ধর্মই বিলুপ্তি হইয়া গেল।
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: না ইন্ডিয়াতে আছে। এইখানে নাই।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক: আপনার শেষকৃত্য কোন নিয়মে হবে?
আদিবাসী বয়স্ক ও জ্ঞানী লোক: জানি না বাবা, আমি জানি না। ( লোকটি হঠাৎ করেই চুপ হয়ে যায়। আজ আর কোন কথাই বলেনি লোকটি)

ফ্ল্যাশ নাটক-৩০
মতেন্দ্র মারমা: তুই যখন ছোট ছিলি তখন তোকে পালিয়ে রেখে রেখে আমাদের বড় করতে হয়েছে।
সুরেং মারমা: পালিয়ে রেখে?

মতেন্দ্র মারমা: হ্যাঁ পালিয়ে রেখে।
সুরেং মারমা: পালিয়ে রেখে কেন?

মতেন্দ্র মারমা: কারণ তখন মারমাদের ঘরে কোনও বাচ্চা ছেলে-মেয়ে থাকলেই চুরি করে ধরে নিয়ে যেত।
সুরেং মারমা: কেন?

মতেন্দ্র মারমা: সরকার একটা প্রজেক্ট করেছিল।
সুরেং মারমা: প্রজেক্ট? বাচ্চা ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রজেক্ট। তাও আবার সরকার নিজে?

মতেন্দ্র মারমা: হ্যাঁ সরকার নিজেই। তোকে পালিয়ে বড় করেছি, অথচ তোরই বিশ্বাস হচ্ছে না।
সুরেং মারমা: না। কিভাবে হবে। এখন তো কেবল খুন-ধর্ষণ হতে দেখি। বাচ্চা চুরি করার কথা তো শুনিনি।

মতেন্দ্র মারমা: সে সময় সরকার আমাদের জাতির উপর একটা পরীক্ষা চালাচ্ছিল।
সুরেং মারমা: জাতির উপর কি পরীক্ষা?

মতেন্দ্র মারমা: তারা গবেষণা করে দেখছিল কোন সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে কোন বাচ্চা সরকারের বিপক্ষে যাবে না। তারা বাচ্চা ধরে নিয়ে গিয়ে নানা রকমের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা চালাত। তারা সফল হয়েছে। হুম সম্পূর্ণ সফলই হয়েছে।
সুরেং মারমা: কিভাবে সফল?

মতেন্দ্র মারমা: এই যে তুই বিশ্বাসই করছিস না। সরকার এমন কিছু করতে পারে?
সুরেং মারমা: না এমন কিছু তো দেখি নাই।

মতেন্দ্র মারমা: অথচ আমার আর তোর মার এমন দিন গেছে, আমরা দিনের বেলায় সকাল হওয়ার আগে আগেই তোকে নিয়ে সীমান্তের ওপারে চরে যেতাম আর সন্ধ্যা হলে ঘরে ফিরতাম।
সুরেং মারমা: তাহলে কি এখন যে খুন-ধর্ষণ হচ্ছে এটাও সরকারের আমাদের উপর পরীক্ষা?

ফ্ল্যাশ নাটক-৩১
সুরেশ বানাই: হে এনজিওগুলা সাহায্য তো করেই, কিন্তু আমার বাবা যখন অসুস্থ হল তখন কোনও এনজিও সাহায্য করে নাই।
সুজন বানাই: কেন?

সুরেশ বানাই: আমি জানি না। আমি আমাদের পাশের বাড়িতে যে এনজিও লোকটি আসে তাকে বলেছিলাম সাহায্যের কথা। সে বলল অফিসে যোগাযোগ করতে।
সুজন বানাই: তারপর।

সুরেশ বানাই: তারপর একদিন আমি অফিসে যাই। ম্যানেজার বলল- আমাদের এই ধরনের সাহায্যের ফান্ড নাই। সে বলল- আমরা সব রোগের ওষুধ দেই না। যে ওষুধ আমাদের কাছে আসে কেবল সেগুলাই দেই। যে ধরনের সাহায্যের জন্য টাকা আসে, কেবল সেগুলাই দেই।
সুজন বানাই: তাইলে এনজিও মানে তো আর আমাদের উন্নয়ন না। ওরা যা চায়, যেভাবে ভাল চায় সেভাবে ভাল হওয়া।

সুরেশ বানাই: হ। আমার বিষয়টা চিন্তা কর। বাপের অসুখ। আমার কাছে বড় সাহায্য তো বাপরে সহায়তা করা। অথচ আমি যাওয়ার পর কইল এনজিওতে এই রকমের সাহায্য করা হয় না।
সুজন বানাই: পরে কি হইছিল?

সুরেশ বানাই: শেষমেষ এনজিও ছাইড়া আমি মিশনারিতে যাই। সেখানে আমার এক পয়সাও লাগে নাই। ফাদাররাই সব কইরা দিছে।
সুজন বানাই: এনজিওরা সব সাহায্য করতে পারে না, কিন্তু মিশনারি পারে।

সুরেশ বানাই: কারণ কি?
সুজন বানাই: এনজিও অল্প অল্প কইরা ব্যবসা করে আর মিশনারি পুরো জীবন নিয়েই ব্যবসা করে।

ফ্ল্যাশ নাটক-৩২
স্মরেন কোচ: আমার ছেলেরে আমি কৃষকই বানামু্।
রতন কোচ: কৃষক বানাবা? কৃষক হইয়া কি করব? এখন তো সবাই চাকরি করে। পুলারা মারতে চাও নাকি?

স্মরেন কোচ: মারতে না বাঁচাইতে চাই। মাটির সাথে লড়াই করা শিখামু। হয় মাটির সাথে লড়াই করতে করতে নতুন ফসল ঘরে আনব, নয় মাটিতেই নুইয়া পড়ব।
রতন কোচ: আজকাল কার পুলাপান তো কেউ কৃষি কাজ করে না। চাকরি করে।

স্মরেন কোচ: এইটাই তোমাগর দোষ। চাকরি কইরা এক জনের লগে আরেকজন লড়াই করব। মানুষে মানুষে লড়াই কইরা খুন হব। এই খুন হওয়ার দিকে তোমরা তোমাগর পুলাপানরে ঠেইলা দেও।
রতন কোচ: কিন্তু চাকরি কইরা সবাই তো খুন হয় না। আর কৃষি কাজে এহন তো কোনও লাভ নাই।

স্মরেন কোচ: রতন, লাভ লোকসানের কথা মাথায় রাইখা কৃষি কাজ করলে কোনও লাভ হবই না। এতে দেবতা রুষ্ট হয়। দেবতারে রুষ্ট কইরা কোনও কাজ হয় না। একবার কও তো এখন কি তুমি আগের মত মাটির দিকে তাকাও? মাটির কাছে কান পাইতা রাখ? আমি জানি তুমি রাখ না। তুমি কেবল মানুষের দিকে তাকাও। কোন মানুষের কত টাকা তার দিকে তাকাও। কোন মানুষের কত বড় বিল্ডিং তার দিকে তাকাও। তাই না?
রতন কোচ: এইটাই ত জীবন।

স্মরেন কোচ: না তুমি হারাইয়া গেছ রতন। একদিন তুমি আর নিজেরেই খুঁইজা পাবা না। মাটি থিকা যতই মানুষ দূরে সরতে থাকে, ততই মানুষ হারাইয়া যাইতে থাকে। আস্তে আস্তে সে তার মা-বাবারে হারায়, তারপর সে নিজেরে হারায়, তারপর সে পুলাপানরে হারায়। তারপর তার পাশে আর কেউ থাকে না।
রতন কোচ: ভুল কইতাছ। তোমার সাথে আমি তর্কে যামু না। তোমার ভুল নিজেই বুঝতে পারবা। হয়ত তোমার পুলাই তোমারে ভুল ধরাইয়া দিব।

ফ্ল্যাশ নাটক-৩৩
বিদেশি: আপনি কি এই বনেই থাকেন?
আদিবাসী: না কেন?

বিদেশি: না আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি।
আদিবাসী: বনের ভেতরে তো পথ থাকে না। পথ হারাবে কিভাবে?

বিদেশি: কি বললেন?
আদিবাসী: তোমার বাসা কোথায়?

বিদেশি: সমুদ্রের তীরে।
আদিবাসী: সমুদ্রের তীর থেকে তুমি এই বনে এলে কি করে?

বিদেশি: আমি জানি না কি করে এলাম। কেবল জানি যে এখন আমি একটি বন থেকে বের হতে পারছি না।
আদিবাসী: এই বনে যে একবার ঢুকে সে বের হতে পারে না।

বিদেশি: কেন?
আদিবাসী: ধীরে ধীরেই বুঝতে পারবা।

বিদেশি: তাহলে এখন উপায়।
আদিবাসী: আমার সাথে চল। পাহাড়ের উপর। সেখানে আমাদের ঘর আছে। জুম চাষের যন্ত্র আছে। তুমি আমাদের সাথে থাকবে।

বিদেশি: কিন্তু আমার বউ আমার পরিবার।
আদিবাসী: বেঁচে থাকলে একদিন তো দেখা হবেই।

বিদেশি: তুমি অনেক রহস্য করে কথা বল।
আদিবাসী: না আমি কোনো রহস্য করছি না। তুমিই আমার ভিতরে রহস্য খুঁজতেছ।

বিদেশি: দয়া করে বেরুবার পথ বলে দাও।
আদিবাসী: আমি দুঃখিত। বনে থাকলে আবার আমাদের দেখা হবে।

ফ্ল্যাশ নাটক-৩৪
যোগেশ কোচ: আমারে আদালতের কাছেই যাইতে দিল না।
মতেন্দ্র কোচ: যাওয়া মাত্র আমাদের পুলিশ তাড়াইয়া দিল।

যোগেশ কোচ: অথচ আমরা মামলার ব্যাপারে যাইতাছিলাম।
মতেন্দ্র কোচ: যেখানে চেহারার কারনে আদালতেই যাইতে দেয় না, সেখানে মামলা করমু কেমনে?

যোগেশ কোচ: মামলা করলেও তো নিব না।
মতেন্দ্র কোচ: মামলা তো বাঙালি মুসলমানের বিরুদ্ধেই।

যোগেশ কোচ: দেশটা ওগর, আইন-আদালতও তো ওগর। ওরা থাকতে না দিলে আমরা থাকমু কেমনে।
মতেন্দ্র কোচ: কিন্তু আসলেই কি এই দেশের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নাই। আমাদের কোনও প্রেম নাই।

যোগেশ কোচ: নাই। একবিন্দুও নাই। এই দেশ আমগর না তাগর। যারা যা দখলে নেয় হেইডাই তাগর। মুসলমানেরা দেশ দখলে নিছে, দেশটা তাগরেই।
মতেন্দ্র কোচ: অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও যুদ্ধ করছিলাম। কতজন যুদ্ধে মারা গেল। আমাদে নাম কাউরেই নিতে দেখি নাই। এহন দেখি যে মুসলমানেরা রাজাকার আছিল, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।

যোগেশ কোচ: জমি আমগর না, আইন-আদালত- বিচার আমগর না। দেশ আমগর না। তাইলে আমগর কি?
মতেন্দ্র কোচ: একদিন এই দেশের লিগা যুদ্ধ করছিলাম, এই স্মৃতি। এই স্মৃতিডাই কেবল আমগর।