Monday, January 8, 2024

মধ্যবিত্ত সংসারের কবিতা -ত্রিপদী : দুপুর মিত্র


মধ্যবিত্ত সংসারের কবিতা -ত্রিপদী

দুপুর মিত্র

প্রথম প্রকাশ:  সেপ্টেম্বর, ২০২০

বইটি বিক্রির জন্য নয়। কপিলেফ্ট। এই বইয়ের সমস্ত লেখা কপিলেফ্ট। এই বইটির যে কোন অংশ যে কেউ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল লেখক ও লেখাকে অবিকৃত রেখে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি ব্যতিরেকেই যে কেউ নকল এবং পরিবেশন করতে পারবেন।

এছাড়া বইটি  ই -মেইলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করে যে কেউ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পাবেন। ই -মেইল ঠিকানা-mitra_bibhuti@yahoo.com

প্রকাশক

দুপুর মিত্র

প্রচ্ছদ

দুপুর মিত্র



দুপুর মিত্র লিখেছেন ‘মধ্যবিত্ত সংসারের কবিতা-ত্রিপদী’, আমি বলতে চাই এসবই জীবনবৃত্তের কবিতা, জীবনবিত্তেরও। তাঁর ৫০টি ত্রিপদী পড়তে গিয়ে মধ্যবিত্ত চেতনার দেখা মেলে যেটুকু সেটা কতটুকু মধ্যবিত্ত? তার এ লেখায় অনেক কিছুর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্যমহীন, নিশ্চেষ্ট একটি মন। সেই মনটিকে একটি জায়গায় পেয়ে চমৎকৃত হই। ৪৩ নম্বর ত্রিপদীতে তিনি লেখেন: ‘‘যাদের বাসায় ছাদ আছে তারা করে ছাদবাগান।/যাদের জমি আছে তারা জমিতে গাছ লাগান।/আমাদের ছাদ-জমি কিছু নেই, আমরা বাগান করি মনের ভেতর, কত ফুল ফুটে আছে দেখে যান।’’ সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মনে জেগে উঠবে এক যে বাগান, তার নাম ‘মনবাগান’। মধ্যবিত্তের চিত্ত কতটা বিত্তবান হতে পারে তা তো সেই মনবাগানের সৌরভ নিলে পর বোঝা যায়। কারণ চিত্তের ধনে যে ধনী সেই ধন খুব সহজে কী অর্জন করা যায়?

ত্রিপদীগুলি পড়তে পড়তে অবিরাম প্রশ্ন তৈরি হতে থাকে। কখনো জাপানি হাইকুর কথা মনে পড়ে, কখনো সংস্কৃত বা বাংলা শ্লোক। ইদানিং বাংলা দ্বিপদী কবিতার একটা চল শুরু হয়েছে। দুপুর সেখান থেকে সরে আসতে চেয়েছেন হয়ত। জাপানি কবি বাশো বা চিনা কবি লি বো ও প্রমুখ কবির ছোট ছোট কবিতায় যে অসাধ্য সাধন করা হয়েছে, তা তো আমাদের বিস্মিত করে রেখেছেন চিরদিনের জন্য। বাশো যখন লেখেন: ‘‘কাম, সি রিয়েল/ফ্লাওয়ার্স/অফ দিস পেইনফুল ওয়ার্ল্ড।’’ অনুবাদে কী হয়:‘‘এসো, দেখো সত্য/ফুলগুলি/এই যন্ত্রণাময় দুনিয়ার।’’ এমন অনেক হাইকু আছে, যা রচনার কঠিন শর্ত মেনে লেখা। একটু এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। দুপুর মিত্র কোনো বাধাধরা নিয়মে ত্রিপদীগুলি লেখেননি। গ্রিক কবি জর্জ সেফেরিস যখন লেখেন হাইকুর মতোই:‘‘তুমি লেখো/কালি কমে/ সমুদ্র বাড়ে।’’ বা পর্তুগিজ ফার্নান্দে পেসোয়ার কলমে উঠে আসে নিজেকে লুকানো মানুষের কাহিনি, যেখানে সে বলে,‘‘আমি নিজেকে এমনভাবে হারিয়েছি, অন্যরা তো দূরে থাকুক, আমার আত্মাও আমাকে খুঁজে পাবে না।’’ এভাবে গহিন-গভীরে লুকাতে ইচ্ছুক একটা বাঙালি মন যেন ঘুরে বেড়ায় দুপুর মিত্রের মনবাগানে। কিন্তু সে কি আর সব কিছু সম্পর্কে অসচেতন? মোটেও নয়। ফলে ১৬ নম্বর ত্রিপদীতে দেখি আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে শ্লেষ: ‘‘মাথা উঁচু করে আর দাঁড়ালে কোথায়, এখনো তো রয়ে গেলে নিচু।’’ এভাবে প্রশ্ন হানা দেয়। আবার দেখায় বাস্তবের আড়ালে বাস্তবতা, যেমন ত্রিপদী ১৯ আমাদের টের পাওয়ায়, যাকে পূজা করি তাকে বিসর্জনও দিতে হয়, যেতে হয় জগতের কাজে। কারণ পূজা ও ভোজ তো জীবনের স্বল্প সময়ের ঘটনা; আসল তো পড়ে থাকে জীবন ও কাজ। কিন্তু এই কাজ যদি স্রেফ পেটের দায় হয়, তখন তৈরি হয় সংকট। যে সংকটে উঠে আসে ২৫,২৬, ৪৫, ৫০ সংখ্যক ত্রিপদীতে। সাহিত্য শিল্প জীবন জীবিকার নানান জটিলতা আরো হতোদ্যম ও নিশ্চেষ্ট করে দেয় যেন অনেককে। উপায় কি নিশ্চেষ্ট না হয়ে! ত্রিপদী ৩৩ বলে: ‘‘একদিন আমরা সবাই টিভিতে ঢুকে যাব।/আমরা ঘুরে বেড়াব এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে; ঘুমাব, খাব।/রক্ত মাংসের শরীর থাকবে না তখন, খুব কাছে থেকে হারাব।’’ ফলে জীবন সম্পর্কে মোটেও বেখেয়ালির কিছু নেই এই সব ত্রিপদীতে;  বরং আছে গভীরতর জীবনবাদ। যেমন শুরু থেকেই ৩, ৪ নং ত্রিপদী দুটো যেমন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘‘উড়োজাহজ’’ সিনেমা একে একে আসা ভূতগুলি যা বলে, তার মূল কথা :‘‘বেঁচে থাকার চেয়ে ভালো কিছু হয়, বলো?’’ এই জিজ্ঞাসা বার বার উঁকি দিয়ে যায় ত্রিপদীগুলির ভেতরে।

অক্ষরে অক্ষরে শব্দরেখা ধরে ধরে আমাদের নানান পরিস্থিতি থেকে ঘুরিয়ে আনার, জানা অজানা চেনা অচেনার সঙ্গে সংযুক্ত করার সামর্থ্য রাখে বলেই তা সাহিত্য। দুপুর সংযোগ তৈরির প্রয়াস নিয়েছেন ত্রিপদীতে। ঝুঁকি তো নিয়েছেনই; কারণ যে সংযুক্ত হতে পারবে না, তার কাছে এর কানাকড়িও দাম নেই; আর যে পারবে-তার জন্য খুলে যেতে পারে জীবনের অন্য জীবন, তা কেবল মধ্যবিত্তের বৃত্তে আবদ্ধ কোনো কিছু নয়।

হামীম কামরুল হক


১৩ ভাদ্র ১৪২৭

দুপুরের সবচেয়ে প্রিয় মিত্র হলেন সূর্যালোক। দুপুর মিত্রই সম্ভবত সেই রোদ্দুর হতে চাওয়া কবি যার ‘মধ্যবিত্ত সংসারের কবিতা -ত্রিপদী’ কবিতায় চিত্রকল্প শুধুমাত্র রূপকল্প নয়, তা ভাবনার বিন্যাসে প্রিমোডিয়াল ইমেজ তৈরি করে। তাঁর কবিতা অর্থ থেকে বিচ্যুত হয়ে ওঠে না, বরং একরৈখিকভাবেই কেন্দ্রস্থিত ভাবনার আবর্তেই থাকে। দুপুরের কবিতায় মধ্যবিত্ত সংসারের মধ্যে থাকা অনন্ত মানুষের ভাবনার অসীম ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে, সুচারু শব্দচয়নে তার কবিতায় থাকে আশ্লেষের ছোঁয়া। কবিতার ছোট ছোট জায়গায় নানান মানসিক টানাপোড়নের ছবি যা থেকে পাঠক খুঁজে পেতে পারেন প্রভূত সম্ভাবনা। দুপুরের কবিতায় জৈবনিক জটিল অংশগুলো ধরা দেয় কবিতার ঘোরের মধ্যে। সামাজিক এবং মানসিক টানাপোড়নের দ্বন্দ্বকে স্বল্প পরিসরে ব্যক্ত করার পূর্ণতা অর্জন করছে কবিতার ভাষা, তা কখনও তীক্ষ্ণ, কখনও ব্যঙ্গাত্মক উইট ও স্যাটায়ারের মিলনে এবং কখনও লাল গোলাপের অন্তর্লোকের মতো গভীর ভাবনায় পাঠককে তীব্র বোধের উন্মেষের দিকে ঠেলে দিয়ে অন্তর্নিহিত অর্থের অনুসন্ধিৎসাকে আরও জাগিয়ে তোলে অনুপম মাধুর্যতায়। দুপুরের কবিতার সমকালীন প্রেক্ষাপটগুলিও চিরকালীন। দুপুর এভাবেই নিভৃতে একের পর মুহূর্ত থেকে দৃশ্যকল্প ও দর্শনের মাঝামাঝি একধরনের জৌলুস নিয়ে অপুর্ব ব্যতিক্রমী ইমেজারি তৈরি করছেন ভিন্ন ইরোটিক স্বরে। দুপুর এইভাবেই ঠিক মাথার উপরে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন।

জুবিন ঘোষ


মধ্যবিত্ত সংসারের কবিতা -ত্রিপদী

দুপুর মিত্র





১।

এইভাবে চুপ করে থাকলে আমিও দিব ডুব।

আমিও সরে যাব, চলে যাব দূরে খুব।

আমিও নিশ্চুপ হয়ে যাব, শুধু গন্ধ বিলাবে ধূপ।

২। কত কথা হল তোমার, কত কথা হল বন্ধুর সাথে। 

কতদিন পর দেখা, কথা কি শেষ হয় রাত- বিরাতে।

শুধু একটি কথা বলা বাকি থেকে যায়, তোমার কি ভাল ঘুম হয় এখন, এখনো কি স্বপ্ন দেখ একসাথে। 

৩। মানুষ যখন বড় হওয়া শুরু করে তখন সে সাঁতরাতে থাকে স্বপ্নের ভেতর।

এক এক বছর করে বড় হয়, এক এক করে ভেঙে যায় ঘর।

একদিন টের পায় স্বপ্ন বলে কিছু নেই,বেঁচে থাকতে পারাটাই বড় ঝড়।

৪। কবিতার ছন্দ মিলাতে মিলাতে কবে হারিয়ে গেছে জীবনের ছন্দ টের পায়নি কবি।

কত সুতো ছিঁড়ে গেছে জীবনের, নেই তার আর কোন ছবি। 

তারপর অর্থহীন বেঁচে থাকা, তারপর সময়ের স্রোতে ভেসে যায় সবি।

৫। কষ্ট তো হয়ই, তুমি সাজিয়ে গুছিয়ে কত সুন্দর করে বানিয়েছ সংসার।

আর আমি সংসার বানাতে গিয়ে ভেঙে ফেলেছি সব, সব ভেঙে চুরমার। 

কে জানত একবার ভেঙে গেলে স্বচ্ছ সুন্দর কাঁচ

জোরা লাগেনা তা আর।

৬। আবার কি নতুন করে শুরু করা যাবে না, আবার কি নতুন করে জাগবে না সব।

নতুন করে তো চর জাগে আবার, সমস্ত প্রাণ হয় সরব।

আমার জীবন তবে কেন এমন,আমার জেগে ওঠা কেন নিশ্চুপ নিরব।

৭। আমি কি তাহলে এইভাবে ক্ষয়ে যাব, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাব তোমাদের শহরে।

কেউ আসবে না কাছে আমার, কেউ ডেকে নিবে না কারো ঘরে। 

বলবে না তোমাকেও আমাদের মত বাঁচতে হবে, তোমারও স্বপ্ন মোড়া সোনার মহরে।

৮। আমাকে এ কোন প্রতিযোগিতায় দাঁড় করালে তুমি।

তুমি জিতলে খাবার পাবে, হারলে না খেয়ে থাকব আমি।

তুমি জিতলে বেঁচে থাকবে আর আমি হব কবরের ভূমি।

৯। কোন উচ্চাভিলাষ নেই, জল মাটিতে শুয়ে থেকেই বাঁচে।

ঘুরে বেড়ায় গ্রাম শহরের আনাচে-কানাচে।

আকাশও মাথা নুয়ায় তখন এই জলের কাছে।

১০। দুঃখী মানুষেরও সুখ থাকে, যেমন মেঘের থাকে নানা রঙ।

কালো মেঘ কখনো সাদা হয়, কখনো নানা আকারে করে ঢং।

কখনো ছেঁড়া তুলোর মত ভালবাসে জীবনের সং।


১১। সরে যাচ্ছি দূরে ধীরে ধীরে কবিতার থেকে।

স্পর্শ করছি ক্রমাগত ক্ষুধা দারিদ্রতাকে।

আর ফিরে পাব না উজ্জ্বল সবুজ মুখ তোমাকে। 

১২। এই শহর থেকে দূরে ঘুরে ঘুরে নদী সমুদ্র পাহাড়ের কাছে কি পেয়েছে পর্যটন মন।

আবার তো ফিরে গেছে ঘরে, আবার কে লাশ হয়ে পড়ে আছে এখন।

কে তবে বাজায় বাঁশি, সংসার না সন্ন্যাস, কোন আলোয় নাচে ভুবন।


১৩। সব কি আগুনে পুড়ে, সব?

ছাই হয়ে উড়ে যায় সৌরভ? 

তবে কেন কোন কোন ইতিহাস হয়ে উঠে গৌরব। 

১৪। কতবার ভেবেছ বাড়ি থেকে বের হয় যাবে।

এই ক্ষুধা দারিদ্রতা মিথ্যা মরীচিকার সংসার থেকে দূূরে কোথাও হারাবে।

হারিয়ে হারিয়ে একদিন হঠাৎ সংসারের স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাবে তোমার,ফিরে আসতে আসতে তুমি তখন কাকে ফিরে পাবে।

১৫। ক্রমে ক্রমে সবাই কি গুটিয়ে নেয় হাত?

কবিতা লেখা থেকে, প্রেম থেকে, সংসার থেকে হঠাৎ।

খুব কি একা হয়ে যায়, খুব কি জোরে লাগে জীবনের কষাঘাত।

১৬। মাথা উঁচু করে আর দাঁড়ালে কোথায়, এখনো তো রয়ে গেলে নিচু।

সাহেবদের কাছে ধমক খেতে খেতে স্যুট টাই পরে

ছুটছ কার পিছু পিছু।

গাছও ভেঙে পড়ে, হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকে জীবনের সবকিছু। 

১৭। কত শত দিন গেল, কত শত রাত জেগে ভেবেছি, সয়েছি অপমান।

নিজের ভেতর তাকালে ভেসে আসে কাদের মুখ, কে ছুড়ছে তীব্র বাণ।

অপমানে অপমানে চোখ কেন ভিজে যায়, এত কান্নার স্রোতে ভাসে কোন সাম্পান।

১৮। তুমি যখন শহরে আস, তোমার সাথে আসে নিরিবিলি ছবির মতো গ্রাম।

সবুজ সমুদ্রের ঢেউ লেগে থাকে গায়ে তোমার, লেগে থাকে প্রেমিকার নাম।

শহরে থাকলেই প্রেমিকা ছবি হয়ে ওঠে, মিথ্যা প্রেমে ভরে পাঠাও খাম।

১৯। সকল পূজাতেই বিসর্জন আছে, এই কথা মনে হলেই কেঁদে ওঠে বুক।

এত আয়োজন, এত উদযাপন, এত ভক্তি আর আবাহনের সুখ;

কোন এক গভীর সুরের সাথে মিশে যায়, পড়ে থাকে শুকনো পাতার মুখ। 

২০। কোথায় গেলে শান্তি মিলে, কোথায় গেলে মনে জাগে সুখ। 

এতবার খুঁজি তারে তবু কেন চারপাশে এত বেশি অসুখ৷

কেন এত দুঃখ আসে, কেন ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে দুঃখের ভিক্ষুক। 

২১। ছোট তো হচ্ছি, ছোট তো হচ্ছি মানুষের কাছে ক্রমাগত। 

যে মানুষেরা ছোট তারাই এখন শাসায়, তাদের বিশাল অট্টালিকার পাশে আমাদের ঘর এখন ময়লা ফেলার ডাস্টবিনের মত।

আমাদের আদর্শ এখন হাস্যকর, সময়ের চাকায় ওরাই এখন বীর, আমরা সমাজের নষ্ট কীট যত।

২২। গ্রাম থেকে শহরে এসেছি লজ্জায় পড়ে যাই।

এত কিছু পাল্টালাম তারপরও  কি করে যেন বুঝে যায় সবাই।

সারাদিন ধরে আমি শরীর থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন লুকাই।

২৩। ব্যস্ততার শহরে কবিতা থাকে না, থাকে কবিতার শো পিচ। 

সেখানে থাকে অনেক গুরু গম্ভীর কবি, সেলিব্রিটি হ্যান্ডসাম কবিরা করে গিজগিজ।

সেইখানে দরদাম হয় কবিদের, বিক্রি হয়, কেউ উঁচু দরে কেউ নিচ।

২৪। তবু এ সংসার, বাবার বুকে চিনচিনে ব্যথা।

মা একা কাঁদেন, একাকী ঘর তার শ্রোতা।

ছেলেমেয়ে বড় হয়, ছেলেমেয়ে বুঝে না কি তাদের কথা।

২৫। কত কিছু হয়ে গেল সবাই, আমাকে পোঁছে না কেউ।

কত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপকের ভিড়ে কবিদের বাসে না ভাল প্রেমিকা সেও।

কবি আবার হয় নাকি কেউ, খুব দূর থেকে ভেসে আসে হাহাকারের ঢেউ।



২৬। আমার মাথাতো কেউযায় সন্ধ্যায়।

৪৭। যাদের রাস্তা শেষ হয় তারা ফিরে পায় বাড়ি।

আমার রাস্তা শেষ হয় না, আমার যেন জীবনের সাথে আড়ি।

আমার রাস্তা শেষ হয় না, শান্তি নেই কোনো,  নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মত শান্তি আমি কি ফিরে পেতে পারি? 

৪৮। আমি এত ঘেমে যাই কেন, কেন ঘামে ভিজে যায় পুরো শরীর। 

যেবার তোমার সাথে দেখা হল, তোমাকে অনেক শান্ত-স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল, তবু আমার শরীরে ছিল  অস্থিরতার ভিড়।

আমি স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে চাই, পাখিদের মত জীবন চেয়েছি শুধু, তবু কে মারছে সুতীব্র তীর।

৪৯। শহর থেকে চলে গেছ দূরে,  ভাল করেছ তুমি বন্ধু।

আর এসো না এখানে, দানব আর রক্ত পিশাচের শহরে কিন্তু। 

যদি পার তাদের শিখিয়ো প্রেম, শহর থেকে যে যাবে তোমার ঘরে, ভালবাসা ঢেলে দিও বিন্দু বিন্দু। 

৫০। আমি আর কি করব, কোন কিছুই করতে পারছি না আর।

কোথাও কোন চাকরি নেই, ভেবে পাচ্ছি না কী করে হবে দুমুঠো ভাত জোগাড়।

বন্ধুরাও দেখে না আজকাল, পেট চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে থাকব এবার।