Tuesday, January 9, 2024

দুপুর মিত্রের পাল্প ফিকশন

 পাল্প ম্যাগাজিনের ইতিহাস আমেরিকায় সেই উনিশ -বিশ শতকে। সস্তা কাগজে বের হত। দামও রাখা হত কম। অধিকাংশ ম্যাগাজিনেরই পৃষ্ঠা সংখ্যা থাকত ৪৮ বা এর কাছাকাছি।

পাল্প প্রকাশনাগুলোতে অপরিচিত লেখকদেরই বেশি দেখা যেত। অপ্রথাগত গল্পে এক একটি সিরিজ বের হত। এক সপ্তাহে হয়ত একটি সিরিজ বের হল, পরে পাঠক যেন এই গল্পের মোহে পড়ে আবারও তা কিনতে আসে, সেজন্য সেই গল্পটা হয়ত চার সপ্তাহ পরে প্রকাশ করা হত। এসব লেখা থেকেই ক্ল্যাশিক হয়ে উঠেছে অনেক চরিত্র-উপন্যাস।

১৯১২ সালের দিকে টারজান অফ দ্য এপিস নামে সব গল্প এখানে শিরোনামে একটি পাল্প ম্যাগাজিন বের হয়। ১৯১৫ সালের দিকে গোয়েন্দা কাহিনী বের হয়। এগুলোই একেবারে প্রথম সময়ের পাল্প চর্চা। যা পাল্পের প্রাচীন ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।

সত্যিকার অর্থে পাল্প ম্যাগাজিনগুলোতে আগে যেসব কাহিনী-গল্প বের হত, সেসবই সত্যিকারের পাল্প। এটা সেই ১৯২০, ৩০, ৪০ এর দশকে।

এইসব কাহিনী তাদের জন্যই লেখা হত, যারা খুব ব্যস্ততায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, খুবই ব্যস্ত মা কিন্তু সামান্য সময় পান পড়ার জন্য তাদের জন্যই ছিল এসব পাল্প। এসব পাল্প সেইসব মানুষদেও জন্যই ছিল যারা কিছুটা সময় একটি ফিকশনের কল্পনার মধ্যে থাকতে চাইত। এগুলো প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য প্রকরণ-কৌশলের মত লেখা হত না। কিন্তু এভাবেই পাল্প থেকে তৈরি হত অসাধারণ সব ক্য¬াশিক। যেমন দ্য মেলিটজ ফেলকন। ব্লেক মাস্ক নামের পাল্প ম্যাগাজিনে ১৮৯৪ সালে বের হয়।

বাঙলাদেশেও সেবা প্রকাশনীর বই বেশ জনপ্রিয় ছিল এক সময়। এসব বই মানুষ ভাড়া করে পড়ত। এখানেও ওয়েস্টার্ন ছিল,গোয়েন্দা কাহিনী ছিল; মাসুদ রানার মত চরিত্র ছিল এবঙ তা ছিল খুবই জনপ্রিয় এমনকি এখনও। কিন্তু সেবা প্রকাশনীও সেই আগের মত নেই। তবে বিশ্বজুড়ে পাল্প ফিকশন লেখকদের আবারও নতুন করে জেগে উঠতে দেখা যাচ্ছে। পাল্পের বাজার শুকিয়ে গেলেও, ইন্টারনেটকে ধরে নতুন করে পাল্প অগ্রসর হচ্ছে।

পাল্প উপন্যাসগুলোতে ইতিহাসের চরিত্র থাকত এবং সেসব চরিত্রের ব্যাপক এডভেঞ্চার থাকতে হত। এডভেঞ্চার আর ফ্যান্টাসি মিলেও পাল্প হত। এছাড়া রহস্য গল্প বিশেষ করে ওয়েস্টার্নগুলোও পাল্প ফিকশন হিসেবে পঠিত ছিল।

বলা হয়ে থাকে, স্কুল-কলেজে পড়ার সময় প্রায় সবাই বিশেষ করে পশ্চিমে পাল্প ফিকশন পড়েনি এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না।

এখন নতুন করে পাল্প ফিকশনের ফিরে আসা দেখা হচ্ছে। ইন্টারনেটের কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক নাম না জানা লেখকের সাথে মানুষের যোগাযোগ হচ্ছে। সেল্ফ পাবলিকেশন্সে আসছেন অনেক লেখক। এবঙ সেল্ফ পাবলিকেশন্স এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে বিশেষ করে ই বুক রিডারদের কাছে যে অনেক নাম করা পাবলিকেশন্স হাউজের চাইতে সেল্ফ পাবলিশার লেখকের বই বেশি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।

পাল্প ফিকশনকে এখন বলা হচ্ছে নয়া পাল্প। অনেক লেখকই বিশেষ করে পশ্চিামা বিশ্বে নানাভাবে এই পাল্প লেখার চর্চা শুরু করেছেন। কোনও কোনও লেখক সেক্স আর ভায়োলেন্স প্রচুর পরিমাণ ব্যবহার করছেন এসব পাল্ফ ফিকশনে। ইন্টারনেটে ভূতের গল্প, রহস্যের গল্প, রোমান্সের গল্প খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কেউ কেউ একে বেশ সিরিয়াসলি নিচ্ছেন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন ফিকশনে। অনেক আধুনিক পাল্প লেখকদের মতে, পড়াকে আনন্দের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা ঘণ্টার ঘণ্টার টিভিতে যেসব সিরিয়ালগুলো দেখছি, লেখাকেও এই সিরিয়াল জগতের ভিতরে নিয়ে আসতে হবে। মানুষ যে কারণে টিভি সিরিয়াল দেখে সেসব বিষয়গুলো পাল্পে নিয়ে আসতে হবে।

পাল্প ফিকশন লেখকদের কেউ কেউ ১৮+ লেখার পক্ষে আবার কেউ কেউ ১৮ + লেখার পক্ষে নয়। কারণ কারও কারও মতে লেখা যদি সত্যিকার অর্থেই ভাল হয় তাহলে ১৮+ লেখার দরকার নেই। ভাল লেখা সকলেরই পড়া উচিত।

আধুনিক পাল্প লেখকরা এখন শুধু মারপিট আর এডভেঞ্চারের মধ্যে পাল্পকে রাখতে চান না, কারণ এখনকার পাঠক আরও জটিল চরিত্র চান। সেই আগের পাল্প ফিকশনের হিরো এখন আর নেই, এখনকার হিরো চরিত্র অনেক জটিল। এখানে চরিত্রের টুইস্ট ঘটানোর পক্ষে অধিকাংশ লেখক।

উচ্চমার্গীয় উপন্যাস বা মূল স্রোতের উপন্যাস বলতে আমরা যাকে মনে করি, প্লট খুব একটা সহজ বা সোজা সাপ্টা হওয়া চলবে না, গল্প বলার নানা কৌশল রাখতে হবে এটাকেও এখন পাল্প লেখকরা মাথায় রাখতে চান। তারা মনে করেন, পাঠক অনেক রকমের। সব দিক থেকেই লেখা উচিত।

আধুনিক পাল্প লেখকরা মনে করেন, প্লট খুবই সরলরৈখিক হলেও চলবে তবে একটি দুটি এডভেঞ্চার বা রহস্য থাকতে হবে। এখানে জ্যাজ ঢুকে গেছে। সাইন্স ফিকশন ঢুকে গেছে। তবে সাধু আর শয়তানের সেই প্রাচীন দ্বন্দ্বও এখানে প্রায় সব সময়ই রাখা উচিত, যেখানে নায়ক সবসবময়ই নায়ক আর সাহসী এবং শয়তান সবসময়ই শয়তান, নায়ক তাকে শেষপর্যন্ত শেষ করে দেয়।

বাঙলা ভাষায় পাল্প চর্চা আমি এই আধুনিক পাল্প চর্চাকারীদেও জায়গা থেকেই করার চেষ্টা করেছি। যদিও নিউজ পেপার স্টলগুলোতে রোমান্সের উপন্যাস এখনও বের হয়, রহস্যের গল্প, গোয়েন্দা গল্প এখনও বের হয়; কিন্তু তা বের হয় সেই উনিশ শতকের আমেরিকার; মত করে নয় বা সেবা প্রকাশনীর বের হওয়া বইগুলোর মত করেও নয়, যেসব বইকে পাল্প লেখার আওতায় আনা যায়। কেননা পাল্প ফিকশন লেখকরা আমেরিকায় সেই উনিশ শতকেই টাকা নিয়ে উপন্যাস করে দিত বা ভাড়া খাটত। এটা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি বা গড়ে ওঠার আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমি সেই শেষ হয়ে যাওয়া থেকে আধুনিক পাল্প ফিকশন লেখকরা যেসব বিষয় সামনে আনতে চান বা সামনে এনে লিখতে চান; সেসব জায়াগাকে বাঙলাভাষায় ব্যবহার করতে চেয়েছি একটি সীমিত পরিসরে। পাল্প ম্যাগাজিনের সেই পাল্প ফিকশন থেকে অনেক দূরে নতুন করে আবারও নিউ পাল্প নামের যে শব্দটি গড়ে ওঠেছে, তাকে কেন্দ্র করেই কিছু কাজ করেছি। আশা করি বাঙলা ভাষায় এই কাজ আরও বিস্তৃত হবে।


Warning adult game 

পাল্প:১

সে যখন বার্গার খাচ্ছিল, আমি তখনও খুব একটা নিশ্চিত ছিলাম না। আর নিশ্চিত ছিলাম না বলেই খুব একটা খারাপ কিছু ভাবার ইচ্ছেও আমার ছিল না। সম্ভবত এই খারাপ কিছু না ভাবার কারণেই আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি। হত্যা নয়, আমার সামনেই সে হেসে হেসে আত্মহত্যা করেছিল।

পাল্প ২

সোহানা খুব সুন্দরী কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার খুনি।

এই কথাটা কেউ প্রকাশ্যে বলে না। কিন্তু সবাই জানে। সবাই এই কথাটা এতটা জানে যে উঠতি বয়সী মহল্লার তরুণেরাও সোহানার মত সুন্দরী মেয়েকে দেথে শিষ দেয় না। এটা বিস্ময়কর কথা নয়, এটাই স্বাভাবিক।

তার প্রাসাদ সুন্দর বাড়িকে দেখিয়ে অনেক পুরুষেরাই নিজেদের মধ্যে আলাপ করত, এমনভাবে আলাপ করত যেন কেউ শুনতে না পারে।

বলত, এই বাড়িতেই অনেক রাতে একজন ভিক্ষুককে প্রায়ই ঢুকতে দেখা যায়। সে ওই সুন্দরীর মেয়েটির স্বামী। সে হুইল চেয়ারে চালিয়ে আসে আর সারাদিন ভিক্ষা করে।

ভিক্ষা করা মানে সত্যিকার অর্থেই সে ভিক্ষুক নয়। ভিক্ষা করার নামে সে নানা তথ্য সংগ্রহ করে বউকে জানাত।

একদিন সেই বাড়িতেই পুলিশের সাথে অনেক গোলাগুলি হল। শহরের সবাই বলাবলি করছিল সেই সুন্দরী মেয়েটিকে পুলিশ আটক করেছে।

কিন্তু না সেই বাড়ির রাস্তার পাশে যে মুদির দোকান ছিল, তাকে আটক করে পুলিশ। সে এই বাড়িটিকে বেশ্যালয় বানিয়ে রেখেছিল।

আর সুন্দরী মেয়ে সোহানা নামের এখানে কেউ থাকে না। এখানে অনেক রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক সুন্দরী মেয়ে আসত। আর গাড়িতে করে আসত শহরের নামজাদা সাহেবেরা।

গভীর রাতে মুদির দোকানদার ভিক্ষুক সেজে এই বাড়িতে ঢুকত।

পাল্প:৩

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচে সুন্দর শিক্ষিকার সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল সোহেলের।

সোহেল ইংরেজি পড়ত। ইংরেজি সাহিত্যের নানা ও জটিল কানাগলি ঘুরে বেড়াত সে। শিক্ষিকার সাথে সারাদিনই সে ঘুরে বেড়াত। কখনও দেখা যেত শিক্ষিকার সঙ্গে ‌ক্যাম্পাস ধরে হাটছে সে। সন্ধ্যায় দেখা যেত কোথাও কোনও রেস্টুরেন্টে বসে কিসব নিয়ে যেন গভীর ও মনোযোগ দিয়ে আলাপ করে যাচ্ছে। এসব নিয়ে অনেকেরই অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল। কেউ কেউ অবশ্য ঠাট্টা করে বলত,তাদের মধ্যে প্রেমটা বোধহয় হয়েই গেল। এসব কথা বার্তা অবশ্য শিক্ষিকার হাজবেন্ডের কানেও গিয়েছে। হাজবেন্ড জানত আসলে সোহেল আর তার শিক্ষিকার সম্পর্কটা কেমন। সে হিসেবে সোহেলের তার সাথেও বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।

সোহেলের সেই শিক্ষিকার বাড়িতেও ছিল অবাধ যাতায়াত। একদিন ঘনঘোর ও ঝড়-জলের সন্ধ্যায় সেই বাড়িতেই আটকে গেল সোহেল। বাড়িতে শিক্ষিকার হাজবেন্ডও নেই। শিক্ষিকা সোহেলকে বাড়িতে একা পেয়ে কি একটা ইশারা করে। সোহেল কিছুটা বুঝতে পেরে বুঝে আবার কিছুটা না বোঝার মত করে আটকে ছিল সেই বাসায়। শিক্ষিকার বেডরুমে সোহেল। সোহেল এই বিষয়টির জন্য প্রস্তুত ছিল না। আর এমনটা আশাও করেনি। সোহেলের ভিতর একটা প্রতারণাবোধ কাজ করে। তার মনে হয় শিক্ষিকার হাজবেন্ডকে সে ঠকাচ্ছে। সোহেলের মাথাটা গোবলেট পেকে যায়। শিক্ষিকা তার হাজবেন্ডের সাথে প্রতারণা করছে। সোহেল তার মুখটা শিক্ষিকার মুখের দিকে নিয়ে যায়। পাশের বালিশ দিয়ে চেপে ধরে শিক্ষিকার মুখ। এরপর ১০-১৫ মিনিট নিস্তব্ধ। শিক্ষিকার হাত-পায় কোনও প্রাণ নেই তখন আর। সোহেলরও কোনও হুশ নাই।

পুরো ঘর দীর্ঘক্ষণের নিরবতায়। হঠাত পেছনে থেকে কারও হাতের স্পর্শ পায় সোহেল। চমকে ওঠে সে। পেছনে তাকিয়ে দেখে সোহেলের হাজবেন্ড। সোহেল নিরুপায়ের মত তাকিয়ে থাকে। শিক্ষিকার হাজবেন্ড সোহেলকে পালিয়ে যেতে বলে। সোহেল কোনও কিছু না ভেবে ঘর থেকে দৌড়ে বেড়ুয়। এই ঝড়-জলের আবহাওয়ায় বিদ্যুতটা কেমন মাত্রাতিরিক্ত চমকাচ্ছিল।

সোহেল দৌড়ে চলে যায় বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে সোজা গ্রামের বাড়ি। পরের দিন পত্রিকায় খবর আসে। শিক্ষিকা খুন, স্বামী গ্রেফতার। সোহেল বুঝতে পারে শিক্ষিকার হাজবেন্ড ঘরেই ছিল। সবই সে দেখেছে। সবই সে জানে।

সোহেল এখনও ঢাকায় আসলে জেলখানায় দেখতে যায় তাকে। কারণ সোহেল জানে, জেলখানায় শিক্ষিকার হাজবেন্ড নয়, সেই আটকে আছে।


Warning adult game

পাল্প:৪

রুবি ছিল ভয়ানক কামুক আর স্বাধীনচেতা।

একবার আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে সময় এক বন্ধুর সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেই। সেখানেই ওই বন্ধুটির সাথে আলাপের এক পর্যায়ে সে সেই বন্ধুটির হাতের লোম সবার সামনে স্পর্শ করে দেখছিল। বন্ধুটি লজ্জা পেলেও আড্ডায় অন্য প্রসঙ্গ এনে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে লোম পরখ করার বিষয়টি কারও নজর এড়িয়ে যায়নি।

রুবির বিয়ে হয়েছিল অনেক আগেই। সেই ছেলেটির সাথে তার এখন আর সম্পর্ক নেই। রুবি একাই থাকে। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। রুবির বাসায় ছিল অনেক ছেলেরই যাতায়াত। অনেকেই এতে সন্দেহ করত। তবে সবচে বেশি সন্দেহ করত রফিককে। রফিকের সাথে তার ছিল খুবই দহরম মহরম সম্পর্ক। কিন্তু স্বাধীনচেতা মনবলের কারণে সে এসব কথা পাত্তা দিত না।

একদিন তার লাশ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের কে বা কারা তাকে হত্যা করে ফ্ল্যাটের সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখে যায়।

কয়েক সপ্তাহ পর পুলিশ রফিকসহ সন্দেহভাজন ৬/৭জনকে আটক করে। রুবির বন্ধুদের নিজেদের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ বিরক্ত হয় এই পরিস্থিতির জন্য। কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নেয় কোনওদিন যদি রফিকের সাথে দেখা হয় তাহলে তারা তার মুখে থুথু ছিটাবে।

অনেকদিন পর সবাই তখন রুবির নামও ভুলে গেছে। পুলিশ রুবির হাজবেন্ডকে আটক করে। পত্রিকায় খবর আসে রফিক রুবিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল রুবির সেই হাজবেন্ড;যার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে।

পাল্প:৫

:এই বাড়িটা থেকেই অনেক রাতে বেশ চিতকার শোনা যায়।

: এখন কয়টা বাজে ?

: রাত তিনটা।

: এদিকে আয়, জানালার কাছে। এখনই আওয়াজটা শুনতে পাবি।

: হুম। কিন্তু গলাটা পরিচিত।

: ঠিক ধরেছিস।

: কার বলত?

: দাড়া মনে করছি। হ্যা এটা সেই লোকটার যে লোকটা আমাদের শুনিয়ে ছিল- এই এলাকা আগে জলমগ্ন ছিল। নৌকা দিয়ে লোকজর এই এলাকায় মাছ ধরতে আসত। তারপর ধীরে ধীরে এখানে বালু ফেলা হয়। আজ এখানে সেসবের চিহ্ন মাত্র নেই। এটা সেই লোকটার

: হ্যা ঠিক ধরেছিস।

: কিন্তু সেই লোকটা তো জীবিত নেই। খুব বেশি বয়স হয়নি লোকটার। তাড়াতাড়িই তো মারা যায়।

: হ্যা, এটা সেই লোকটার ছেলে।

: মানে ?

: হুম সেই লোকটার ছেলেই এ। সে রাতে বাবার সাথে কথা না বলে কখনও ঘুমুতে পারত না। বাবার সাথে কথা বলার পর ঘুমুতে যেত। বাবা মারা যাবার এক মাস পর থেকে ও এরকম হয়ে যায়। নিজে বাবার মত করে কথা বলে। সে নিজেকেই জিজ্ছেস করে, বাবা আমি এখন ঘুমুতে যাই। তারপর সেই বলে, যাও বাবা।

: বলিস কি, এমন হতে পারে।

: হুম হতে পারে। তবে আরেকটা বিষয় কি জানিস।

: না বল। এই ছেলেটিই তার বাবাবকে হত্যা করে।

: মানে?

: হুম। ওর বাবা আরেকটি বিয়ে করেছিল। সমস্ত সম্পত্তি ওই লোকটি সেই ঘরে দিয়ে দিতে চেয়েছিল। সম্পত্তি দখলে নিতেই সে তার মায়ের পরামর্শে বাবাকে হত্যা করে।

পাল্প:৬

এই বাড়িতে কেউ ট্যাংকের পানি খান না।

বাড়িতে যারা ভাড়া আসতে চান তাদেরকেও বলে দেওয়া হয় এই কথা। ট্যাংকের পানি সব জায়গায় ব্যবহার করা যাবে। সব কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু খাবারের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এটা এতটাই নিষিদ্ধ যে, কেউ যাতে এই পানি না খায় তার জন্য বাড়িওয়ালা ছাদে ওঠে ট্যাংকে ময়লা ফেলেও রাখেন। এটা বাড়িওয়ালা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে।

খাবার পানি বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। বাড়িওয়ালার পুরো পরিবার বাইরে থেকে খাবার পানি নিয়ে আসে। যারা ভাড়া থাকেন তাদেরকেও এটি করতে হয়।

বাড়িওয়ালির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। মারা যাবে যাবে অবস্থা তার। হাসপাতালে যাবার আগে বউকে সে বলে যায় তার কবর যেন বাড়ির নিচে যেখানে মর্টার বসানো অআচে সেখানে দেওয়া হয়।

অনেকেই এই কথায় অবাক হয়। মুত্যুর পর তার ইচ্ছেমত সেখানে কবর দিতে গেলে বাড়িওয়ালার কবর খুঁজে পাওয়া যায়।


Warning adult game

পাল্প:৭

সুবর্ণ এক্সপ্রেসটি ট্রেনটি রাতেই যেত। কোনওভাবেই এর সিডিউল দিনে কিংবা বিকালে ফেলা যেত না। কেউ চেষ্টা করলেও পারত না। এবং সর্বশেষ ময়মনসিংহ যাওয়ার ট্রেন এটি। দেখা যেত এই রাতের সবশেষ ট্রেনটি থেকেই কাউকে না কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না।

সুবর্ণ ছিল জেদি, একগুয়ে আর ভয়াবহ সাহসী। সে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনেই ওঠবে। এবং যথারীতি সে তাই করল।

সুবর্ণা ছিল খুবই সুন্দরী। সুবর্ণা সুবর্ণের ছোটবেলার বান্ধবী। সুবর্ণা প্রচুর কথা বলত। কিন্তু একটা বাজে অভ্যাস ছিল । সাধারণত ইয়ং মেয়েদের এই অভ্যাস থাকে না। সে পান খেত। পান খেয়ে মুখ লাল করে ফেলত। ওর কথার সাথে সাথে চিবানো পানও বের হত।

সুবর্ণের সাথে সুবর্ণার দেখা হয় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে। এটা কাকতালীয়। সুবর্ণ ভয়াবহ জেদী, একগুয়ে আর সাহসী। কারণ ও ছিল মেধাবী ও অনেক ধনীলোক। সুবর্ণা প্রচুর কথা বলত আর পান খেত। কারণ ও ছিল রাতের বেশ্যা। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে কেউ না কেউ হারিয়ে যায়।

সুবর্ণের সাথে সুবর্ণার প্রেম ছিল কিশোর বয়সে। এটা টিটকারি ছিল সুবর্ণার। কিন্তু ট্রেনটা সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছিল না। ট্রেনে সুবর্ণাও ছিল না।

সুবর্ণও ছিল না। কারণ সুবর্ণ ট্রেনের চাকার পিস্টে এমনভাবে থ্যাতলিয়ে গিয়েছিল যে তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।

পাল্প:৮

মেয়েটির দৈহিক সম্পর্ক ছিল তার বাবার বন্ধুর সঙ্গে।

তাকে ওই লোকটির সাথে হোটেলে প্রায়ই রাত কাটাতে দেখা যেত।

মেয়েটির নাম রুক্সানা। পরিবারের একমাত্র মেয়ে। বাবা রিটায়ার্ড। পরিবারটি টিকে আছে মেয়েটির ওপর ভর করেই। মানে পরিবারের আয় রোজগার বলে যা আছে তা কেবল মাত্র মেয়েটিই করে।

মেয়েটির বেশ কিছু আচরণের কারণে বাবার সাথে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকত। অনেকগুলো আচরণের মধ্যে একটি বিশেষ আচরণ ছিল সে মা-বাবার সামনেই সিগারেট খেত।

মা কখনও কখনও মানা করত। বাবা মুখ ফিরিয়ে নিত। কিন্তু মেয়েটি মেয়েটির মতই থাকত। বাবা কিছু বলতে হয়তে পারত না আয় রোজগারের আর কেউ নেই বলে। মা হয়ত এই কারণেই মেয়েটিকে আগলে রাখতে চাইত। মাঝে মাঝে মুখ চেপে কান্না-কাটি করত। কিন্তু কি একটা কারণে যেন বেশি আদরও করত।মাঝে মাঝে মেয়ের বিয়ের প্রসঙ্গও তুলতেন। কিন্তু মেয়েটির মা মেয়ের সাথে কথায় পারতেন না।

বাবা দিন দিন একা হতে থাকেন। বাবার বন্ধুটির সাথে কেবল মেয়েটিরই সম্পর্ক আছে। বাবার নেই। বাবার অন্য বন্ধুরা এই নিয়ে তাকে নানা কথা বলে। বাবা ঘর থেকে বের হন না। একদিন বাবা আত্মহত্যাই করলেন।

যেদিন তার সিলিঙে বাধা লাশ ঘরের ভেতর সেদিন মেয়েটির মা হেসে হেসে বলেছিলেন- মেয়েটি কেবল তার বাবার মত একটি ছেলেকে খুজত বিয়ের জন্য।

পাল্প:৯

একজন মানুষ কতখানি পাশবিক হলে কোনও মেয়ের শরীর কয়েকটুকরা করে কেটে হত্যা করতে পারে।

রুখসানা ছিল আমাদের সকলেরই প্রিয়। হাসিখুশি মানুষগুলোর যা হয়। এই মানুষটিরও বিয়ে হয়ে যায় স্কুলে। স্কুলে একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে তার সব সময়ের হাসিমাখা মুখের নিভে যাওয়াই বোধহয়।

কলেজে আমরা তখন। কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। আমরা যে যার মত ব্যস্ত। ভয়াবহ রকমের ব্যস্ত। মা আমার পাশে এসে বললেন, বাবা তোদের সাথে রুখসানা নামের একটা মেয়ে পড়ত না। ও মারা গেছে। প্রথমে খবরটা শুনে চমকে যাই। সেদিন রাতে তেমন পড়াশুনাও হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ি তাড়াতাড়ি।

দুপুরের দিকে বন্ধুদের কাছে এই ঘটনা বলি। ওরা সবাই জানে ঘটনাটা। ওরা বলল, রুখসানাকে তার হাজবেন্ড কয়েক টুকরা করে হত্যা করেছে।

আমার মুখে তখন একটি শব্দ আসে – কুত্তার বাচ্চা।

এরপর যা শুনি এদের কাছে তা ছিল আরও ভয়াবহ। আমাদের রুখসানাসহ সবাই যে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। ওই শিক্ষকের সাথেই ছিল রুখসানার সম্পর্ক।

সম্পর্কটা রুখসানা থেকে নয়। আমাদের এই শিক্ষক রুখসানার সাথে দৈহিক সম্পর্কের ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছিল। এর পর থেকে সে রুখসানাকে প্রায়ই দেখা করতে বলত। তা না হলে এই ছবি ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিত রুখসানাকে। শেষমেষ বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়।

রুখসানার হাজবেন্ড যেদিন বিষয়টা জানেন, এটা সেদিন রাতের ঘটনা।


Warning adult game

পাল্প:১০

খালেকের ঘরে নতুন বউ আসার পর খালেকের আচরণ এতটাই পালটে গেল যে অনেকেরই ধারণা খালেক দিনে তার বইকে চার বার করে।

খালেকের এটা দ্বিতীয় বউ। আগের ঘরের বউ আছে। সেই ঘরে একটি সন্তানও আছে।

খালেক এই বিয়েটা করবে এটা অনেকেরই ধারণা ছিল না। কেননা প্রথম বউয়ের সাথে তার অতি মনোহর সম্পর্কের কথা গ্রামের সবাই জানত। হুট করেই খালেক দ্বিতীয় বিয়েটা করে।

প্রথম এক মাস দুই সতীনের সঙসার ভালই কাটছিল। দ্বিতীয় মাসের শুরু থেকে কেমন যেন একটা গন্ডগোল শুরু হল। তৃতীয় মাসের মাথায় গর্ডগোলটা চরম আকার নিল।

চতুর্থ মাসের মাথায় খালেকের লাশ উদ্ধার করল পুলিশ। গ্রামবাসীরা ছি ছিল করতে লাগল। প্রথম বউ এমন কাজ করতে পারল। পুলিশ প্রথম বউকেও ধরে নিয়ে গেল।

অনেক দূর থেকে খালেকের আগের ঘরের ছেলে বলছিল- মা আমি বড় হয়ে জেল থেকে তোমাকে বের করে আনব। বাবাকে আমিই খুন করেছি।

পাল্প:১১

খুব ভোরে লুঙ্গি পড়া একটি লোক চাপাতি হাতে নিয়ে গান গেয়ে গেয়ে জোড়ে জোড়ে হাটছে। তার শার্ট ছিল রক্তাক্ত।

সে হাটছে আর গান গাচ্ছে। লোকটার শার্টে ছিল ছোপ ছোপ তাজা রক্ত। দেখে মনে হয় কোনও মানুষকে রাতভর কুপিয়ে সকালে সেই খুশিতে গান গেয়ে গেয়ে হেটে বেড়াচ্ছে।

পরদিন সকাল বেলা। রফিক অফিসে। রফিক এই দৃশ্যটি যে এলাকায় দেখেছিল, সেই এলাকারই একটি খবর চোখে পড়ে তার।

খবরে লেখা ছিল, এক লোক তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে খুন করে খুব ভোরে র্যাবের কাছে গিয়ে বলে, সে দুই ছেলে আর তার স্ত্রীকে খুন করেছে। তাকে যেন গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হয়।

খবরটির শেষ অংশে লেখা ছিল, পুলিশকে সে বলেছে স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে সে এসব করেছে।

পুলিশের ধারণা লোকটি পাগল। এরপর পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। কারণ লোকটি কোথায় থাকে, কি করে এসবের কিছুই সে বলতে পারেনি।

পাল্প:১২

বিয়ের সাত দিনের মাথায় মেয়েকে ছেলে বাড়িতে হত্যা।

শহরের কয়েকদিনের সবার মুখেই আলোচনার বিষয় ছিল এই। কেননা এই রকমের ঘটনা সচরাচর ঘটে না। বা প্রেম সঙক্রান্ত ঘটনায় এসব ঘটলেও এই বিয়ে হয়েছিল উভয় পক্ষের মা-বাবার সম্মতিতে। বলা যায় মা-বাবাদের ইচ্ছাতেই এই বিয়ে হয়। এখানে ছেলে-মেয়ের করার কিছুই ছিল না।

এরকম বিয়েতে হত্যার মত ঘটনা কে ঘটাতে পারে- এটা আশ্চর্যের বিষয় হলেও মেয়ের মা-বাবার সন্দেহ ছেলের মা-বাবার দিকেই। কেননা কিছু দেন-দরবার তখনও অসম্পূর্ণ ছিল। তাই যথারীতি মামলাও করলেন মেয়ের বাবা। ছেলে , ছেলের মা-বাবা সবাই জেলে। শহরের সব মানুষও ছি ছি করতে লাগল। কিছু দেন-দরবার বাকি ছিল তাতে কি। এটা হয়ত পরে মেয়ের বাবা পরিশোধ করে দিতেন। তাই বলে মেয়েকে মেরেই ফেলতে হবে। তাও এমনি এমনি হত্যা নয় মেয়েকে উপর্যুপুরি কয়েকবার ছুরি মারা হয়েছে।

কয়েক মাস পর মেয়ের বাসায় একটি বেনামি চিঠি আসে। চিঠিতে লেখাগুলো মেয়ের বাবার পরিচিত মনে হয়।

তাতে লেখা থাকে অসীমাকে সেই হত্যা করেছে। কারণ অসীমা অন্য কারও হোক এটা সে এখনও ভাবতে পারে না।

অসীমার বাবার ভাবতে বাকি থাকে না চিঠিটা কার।

পাল্প:১৩

শহরতলির এই সেতুটা অনেকের কাছে ভয়ঙকর হলেও এই সেতুদিয়েই লোকজনের যাতায়াত বেশি।

কেননা এটা ছাড়া শহর থেকে শহরতলিতেযাওয়ার আর কোনও রাস্তা নাই। আর ভয়ংকর এই কারণে যে সম্ভবত খুব কম দিনই পাওয়া যাবে যে এই সেতুর ওপরে কারও না কারও লাশ পাওয়া যায়নি। একদিন দেখা যেত কারও মুন্ডুবিহীন লাশ, আরেকদিন দেখা যেত কারও হাত-পা কাটা,ক্ষত-বিক্ষত লাশ। পরে সেইসব লাশ পুলিশ উদ্ধার করত এবঙ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করত।

কিন্তু কেউ এমনকি পুলিশ বাহিনীর বিশেষ টিমও উদ্ধার করতে পারেনি। আসলে ঘটনাটা কি? কেন লাশগুলো এভাবে পরে থাকে। কারা তাদের হত্যা করে। লাশগুলোর পরিচয় শেষমেষ কেন পাওয়া যায় না।

কেউ কেউ বলত, চরের লোকজন চরের কাউকে হত্যা করে এখানে লাশ ফেলে রেখে যায়। কেউ কেউ বলত,শহরের সন্ত্রাসীরা এই লাশ এখানে ফেলে রেখে যায়। কিন্তু এসব সবই ছিল এক ধরনের গুঞ্জন। কেউ ঠিকঠাক বলতে পারত না আসলে ঘটনাটা কি?

অনেকদিন পর সেতুর টোল আদায় করে যে তাকে আটক করে পুলিশ। জানা যায়, অনেক রাতে যে সব প্রাইভেট কার এই সেতু পার হওয়ার জন্য আসত, সেইসব প্রাইভেট কারের লোকজনদের হত্যা করে, সে প্রাইভেট কার নিয়ে নিত।

পাল্প:১৪

একজন পেশাদার খুনী দেখতে কেমন হতে পারে? তার জীবন-যাপন কেমন হতে পারে? সে দেখতে কেমন? তার কি সংসার থাকে? সে কি কাউকে ভালবাসতে পারে? সে কি হাসে? মানুষের মত কথা বলে?

মাঝে মাঝে এসব মাথায় ঘুরঘুর করত। যখন মনে হত পেশাদার খুনী বলেও একটা পেশা আছে। এটা আমাকে ভাবাত। আর মনে মনে খুজতাম, একজন পেশাদার খুনী। মনে মনে ভাবতাম তার সাথে যদি দেখা হয়ে যেত,তাহলে আমি তার সাথে হাসি মুখে কথা বলব।

একদিন দুপুর বেলা কড়া রোদের ভেতর কিছু পুলিশকে দেখলাম বন্দুক উচিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাদের সামনে হাটতে ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল এখনই বোধহয় খুন করা হবে আমায়।

হুট করেই পেশাদার খুনী শব্দটা মাথায় চলে এল।

পাল্প:১৫

ধর্ষকের মনস্তত্ত্ব আসলে কি? কেউ যখন সামাজিকভাবে ধর্ষক হিসেবে পরিচিতি পায়, তখন তার জীবনটা কেমন হয়? সে কি কাইকে ভালবাসতে পারে? হেসে কথা বলতে পারে? মেয়ে মানুষ কি তার সামনে যায়?

কলেজের সেই আন্দোলন। ধর্ষকের ঠাই নেই ক্যাম্পাসে। ধর্ষককে বিতাড়িত করা হল। আন্দোলন সফল। আন্দোলনকারী প্রধান প্রধান নেতা-নেত্রীরাই আমার বন্ধু।

ধর্ষককে সরিয়ে দেবার আন্দোলন সফল হবার এক বছর পর একদিন আন্দোলনকারী বান্ধবীর সাথে তর্ক শুরু হয়ে গেল।

এ রকম একটা নামকরা ধর্ষক ছেলের কাছে কিভাবে মেয়েরা যায়?

বান্ধবীটা বলল,ওর ক্ষমতা আছে,টাকা আছে। দেখতে সুন্দর। ওর কাছেই তো মেয়েরা যাবে।

পরে ওই বান্ধবীর কাছেই শুনলাম,সেই ছেলে এখন ইংল্যান্ডে। শহরের নাম করা এক বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছে সে।

পাল্প:১৬

বেশ অনেকদিন হল লোকটা তাকে ফলো করে।

লোকটা মানে তার বন্ধু, শৈবাল। এইভাবে অনেকদিন কেউ কাউকে ফলো করাটা সন্দেহজনক। তারপরও সে চুপচাপ থেকেছে। থেকেছে এই কারনে যে বন্ধুর সাথে সে কোনও ঝামেলায় আসতে চায়নি।

সে নানা ভাবে বুঝতে চাইত লোকটা কেন তাকে ফলো করে। কিন্তু কখনো বুঝতে দিত না যে তাকে ফলো করার বিষয়টা সে জানে।

একদিন হঠাত সে বন্ধুকে বলেই ফেলে, শৈবাল মাধবীকে দুজনে মিলে ভালবাসা যায় না।

পাল্প:১৭

শাহানা প্রতিদিনই দা-বটি ধার দিত। আর যখন ও দা-বটি ধার করে সেসব ঘরে ঢুকাত, তখনই আমার গাটা শিউরে ওঠত।

বটি-দা ধার করা থাকলে ওটা চিকচিক করে আর মনে হয় এটি কারও শরীরের রক্তের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনই আচর দিয়ে রক্ত বের করে নেবে।

শাহানাকে কোনওভাবেই আমি বোঝাতে পারিনি প্রতিদিন কেন বটি দা ধার দিতে হবে। ছ মাস পর বা এক মাস পর একবার ধার দিলেই তো হয়। শাহানা আমার যুক্তি মানে না। প্রতিদিনই একটি লোক- এই দা-বটি ধার করাবেন, এই দা বটি ধার করাবেন বলে বাড়ির সামনে দিয়ে চিতকার করে যেত। আর তখনই শাহানা চঞ্চল হয়ে উঠতে। ডাক দিয়ে আনত সেই অদ্ভুত বিদঘুটে চেহারার দা-বটি ধার করনেওয়ালা লোকটাকে।

শাহানার সাথে এ খাটে আমার ঘুমুতে ভয় করত। কারণ শাহানা প্রতিদিনই সেই বটি-দাটা বিছানার নিচে রেখে ঘুমাত।

পাল্প:১৮

প্রতিরাতেই রাত তিনটার দিকে কে যেন কে যেন পাশের দেয়ালে ঠক ঠক শব্দ করত।

প্রথম যেদিন এই শব্দটা শুনি সেদিন থেকেই ভয়টা শুরু। এত রাতে কারও তো দেয়ালে ঠক ঠক করে শব্দ করার কথা না।

আমি একা থাকি। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে একা থাকার মধ্যে কিছু শান্তি যেমন রয়েছে, তেমনি ভয়টাও থেকে যায়। তাই বিষয়টা কিছু না, এমন ভেবেই বালিশে মুখ গুঝে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম।

একদিন কৌতুহল হল, আসলে বিষয়টা কি হতে পারে? প্রতিরাতেই এমন ঘটনা ঘটবে। এটা তো স্বাভাবিক না। কিছু একটা বিষয় তো এর ভেতরে আছেই। আমি বাড়ি ওয়ালাকে জানিয়ে রাখলাম যে অনেক রাতে তাকে ডেকে নিয়ে দেখাব যে এই শব্দটা হয় এবং তাকে নিয়েই এর রহস্যটা জানব আসলে বিষয়টা কি?

যথারীতি সেই রাতে সেই শব্দের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা। সত্যি সত্যি শব্দটা শুরু হল। বাড়িওয়ালা জানালার একটা ফাক বের করলেন যা দিয়ে দেখা যাবে কি হচ্ছে বিষয়টা। আমরা দেখলাম, একটা লোক দেয়ালে পড়া তার ছায়াকে উপুর্যপুরি কিল-থাপ্পড় মেরে যাচ্ছে।

পাল্প:১৯

অনেক রাতে মাঝেমাঝেই যখন আমার ঘুম আসেনা, তখন আমি ঘরের সব বাতি বন্ধ করে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাই।

অধিকাংশ সময়েই সিগারেটের পুরো প্যাকেটটা নিয়ে ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসে থাকি। বেলকনির এই চেয়ারটা আমার অনেক প্রিয়। বসার সময় পুরো শরীরটা দিয়ে দিতে হয় এই চেয়ারটাকে। চেয়ারটা আমার মাথা, আমার চুল হাতিয়ে দেয়। তখন ঘুম এসে আমার চোখ ছুয়ে ধরে।

আবার এই চেয়ারটাকে মাঝে মাঝে ভয়ও লাগে। একটা চেয়ার সারাদির একা একা বেলকনিতে পরে থাকা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই তার।

মাঝে মাঝে মনে হয় চেয়ারটা খুব ক্ষিপ্ত আমার ওপর। সে একটা সুযোগ খুঁজছে আমাকে হত্যা করার।

একদিন সিগারেট ধরিয়ে বসে আছি আমি। চারদিক অন্ধকার। সিগারেটটা লাল আলোর মত টিম টিম করে জ্বলছে।

বেলকনির ওপর রাখা সিগারেটের প্যাকেটটা কেমন সরে উঠল। সেখানে একটি লাল আলো জ্বলতে দেখলাম যা আমার সিগারেটের লাল রঙটির মত।

শরীরটা শিউরে উঠল। তারপর পরই টের পেলাম আমার মাথায় ও চুলে কারও স্পর্শ। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

কে যেন বলল- কি ঘুম আসছে না। না গলার আওয়াজটা আমার বউয়েরই ছিল।


Warning adult game

পাল্প:২০

এমন একটা বাড়ি যার এক মাইলের মধ্যে কারও কোনও বাড়ি নেই, সেই বাড়িতেই থাকতে হবে কয়েকটা দিন।

চারপাশে গাছ আর গাছ। দিনের বেলাতেও মনে হয় এখানে রাত হয়ে আছে।

তবে বাড়িটাতে ঢুকেই বেশ অবাক হলাম, এত বড় বাড়ি আর এক মাইল জুড়ে কেবল বাগান আর বাগান। এই বাড়িটা এত পরিস্কার করে রাখা অথচ কেউ থাকে না। একজন মাত্র কেয়ারটেকার আছে।সে এত বড় বাড়িটাকে সামলায় কিভাবে? আর সে থাকেই বা কিভাবে?

একেতো এক বড় বাড়ি, তারপর আবার এক মাইল জুড়ে অন্য কোনও বাড়ি নেই, কেবল বাগান আর বাগান। তারপর কেয়ারটেকার একা থাকেন।

লোকটাকে দেখে কেমন একটু অন্যরকমই মনে হল। স্বাভাবিক কোনও মানুষের মত মনে না হলেও খারাপ বা ক্ষতিকর মনে হল না।

যাই হোক,বাড়িতে ঢুকতেই উনি সবকিছু দেখিয়ে দিলেন। কোথায় আমার লাগেজ রাখতে হবে। কোথায় গোসলখানা। কোথায় ঘুমাব। গোসলটোসল সেরে একটু বিছানায় শরীরটা গড়িয়ে নিচ্ছি। কেমন যেন তন্দ্রা এসে গেল। চোখ মেলে বাইরে তাকাতেই দেখি চারপাশ অন্ধকার। আর করুন সুরে একটানা ঝিঝি ডেকে যাচ্ছে। এই অন্ধকারের ভেতর বাড়ানে ফুটে উঠেছিল জোনাকির আলোয়।

জোনাকি জ্বললে এত আলো হয় তা আমি আগে কখনও দেখিনি। সেই আলোয় কুয়াশা ভেসে উঠেছে।এরই মাঝে এই বিশ্বভুবনে আমি একা। বেশ ভালই লাগছিল। রবীন্দ্র সংগীত শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কেয়ারটেকার আমি জেগেছি বুঝেই বলল- ভিতরে খাবার রেডি হয়ে আছে। আমি হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। ক্ষিদেটা আসলেই বেশি লেগেছিল। এতক্ষণ টের পাইনি।

খেয়ে দেয়ে বাড়িটা কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম। একা একা কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। এরই মাঝে কেয়ারটেকার এল। তার সাথে কিছুক্ষণ আলাপ হল।

সে বলল- এই বাড়িটা যার সে এখন দেশের বাইরে থাকে। বাড়ির মালিক মহিলা। এই বাড়িতেই তার হাজবেন্ড আগুনে পুড়ে মারা যান। এই বাড়িটা তার হাজবেন্ডের অনেক প্রিয় ছিল। এরপর থেকে এখানে কেউ থাকে না। কিন্তু হাজবেন্ডের স্মৃতি জড়িয়ে থাকার কারণে এই বাড়িটার প্রতি তার আলাদা যত্ন।এই বাড়িটার এদিক সেদিক উনি করতে দেন না।কিন্তু অনেকে বলেন, এই বাড়িটা আসলে সেই মহিলার যিনি এখন দেশের বাইরে থাকেন। হাজবেন্ড সেই মহিলাকে এই বাড়িতে হত্যা করে। সেই মহিলা আসলে দেশের বাইরে নয়, জীবিতই নেই।

রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু বার বার এসব কথা মনে হচ্ছিল। ভাবতে ভাতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি টের পাইনি।

রাতে বাথ রুম পাওয়ায় জেগে যাই। তখন আমি একজন নারী আর পুরুষের হাসি মুখে কথা বলতে শুনি।যে বাড়িতে সারাদিন আমি কাইকে দেখলাম না, যে বাড়িটা একা, যে বাড়িটার এক মাইলের মধ্যে কেই থাকে না, সেই বাড়িটাতে এত রাতে কে? আমি বিদ্যুত জ্বালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। এক পর্যায়ে টের পেলাম আমি আমার শোবার ঘর থেকে বের হতে পারছি না।

পাল্প:২১

এই বাড়ি থেকে অনেক রাতে একজন বুড়োলোকের কান্না শোনা যায়।

এত রাতে কারও বাড়ি থেকে কান্না ভেসে ওঠলে কার না ভেতরটা জড়সড় হয়ে যায়।

আমরা এই এলাকায় নতুন। কার কোন বাড়ি,কে কেমন কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি আশপাশের অনেকেই মনে হয় জানেন। তাদের আচার- আচরণ দেখলে তাই মনে হয়। কিন্তু কারও তেমন এ নিয়ে কথা-বার্তা শুনি না। মনে হয় এই কান্নাটা যেন স্বাভাবিক। এত রাতে প্রায় প্রতিদিন একটি বাড়ি থেকে কান্না ভেসে ওঠবে আর এটি হবে স্বাভাবিক। লোকজন কিছুই এসবের বোঝার চেষ্টা করবে না এটা আমরা মেন এনিতে পারলাম না।

আমাদের পরিবারের সবার সাথে এ নিয়ে আলাপ হল। আমরা ঠিক করলাম, আমরা যেহেতু নতুন তাই এ বিষয় নিয়ে আপাতত চুপচাপ থাকি। নিশ্চয়ই লোকজন একটা না একটা কিছু করবে। তাছাড়া আমরা এই এলাকায় নতুন। এ এলাকা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তাই চুপচাপ থাকাই ভাল।

কিন্তু আমার কৌতূহলটা গেল না। রাত হলে একটা বাড়ি থেকে একদিন না দুই দিন না প্রতিদিনই কান্না শোনা যাবে। আর লোকজন কেউ এটা নিয়ে কিছুই বলবে না। এটা হতে পারে না।

একদিন সাহস করেই সেই বাড়ির দারোয়ানের সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম। দারোয়ান বলল, যে বাসা থেকে কান্না শুনেন এই বাড়ির মালিক তারাই। যার কান্না শুনেন, সেই আসলে এই বাড়ির মালিক। কিন্তু বাড়িটা তার ছেলের নামে না লিখে দেওয়ার কারনে তাকে ঘরেই আটকে রাখা হয়।

পাল্প:২২

একটি ঠোট, হোক না সেটা মেয়ে মানুষের, তাই বলে কি এতটা অস্থির করে রাখকে কাউকে।

ববির ঠোট। আমি মাঝে মাঝে ভাবতে পারতাম না, একটা ঠোটে আসলে কি থাকে যে সময়ে-অসময়ে, প্রায়ই এই ঠোটের কথাই আমার মনে হয়। এই ঠোটের দৃশ্যই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

ববি যখন কথা বলত, তখন তার কথা নয়, মনোযোগ চলে যেত তার ঠোটের দিকে। ববি যখন হাসত, তখন তার হাসি নয়, মনোযোগ চলে যেত ববির ঠোটের দিকে। ববি যখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকত, তখন মনে হত ববি নয়, ওর ঠোট দুটো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ববিকে কখনও এসব বুঝতে দেইনি। বুঝতে দেইনি যে ববি নয়, ক্রমশ আমি ববির ঠোটের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।

একদিন ববি কি একটা কথা বলতে গিয়ে -বাল বলে একটা গালি দিয়ে ফেলেছিল। এরপর থেকে খেয়াল করলাম ববির ঠোট আমাকে আর আগের মত আকর্সণ করছে না।

পাল্প:২৩

একটা জিনিস খেয়াল করেছিস, অফিসের এই লোকটি চুপচাপ কাজ করে, সবার সাথেই আড্ডা দেয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এটা একদিন দুই দিনের ঘটনা না। প্রতিদিনই লোকটা এরকম করে।

লোকটার সব কাজ অনেক গোছানো। সব কাজ সে সময় মত করে। সবার সাথেই সে কথা বলে। কিন্তু সবার সাথেই সে পরিমিত আচরণ করে। কোনও কথা সে তার মাপের বাইরে করবে না। এমনকি সে যখন হাসে, সেই হাসিটাও থাকে পরিমাণ মত।

কিন্তু সে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অফিস থেকে বের হয়ে কোথায় যায়, এটা ছিল খুবই রহস্যের। সে কি করে,না করে এটা জানা কারও পক্ষে সম্ভব না, যদি না সে দীর্ঘ সময় তাকে স্টাডি না করে।

কারণ কাজগুলো সে নিখুঁতভাবে করে। সে নির্দিষ্ট সময়ে বের হলেও ঠিক কখন সে বের হয়ে গেল তা ধরা যায় না তার অদ্ভুত ক্যারিশমার কারণে।

আমি নিজেও প্রথম দিকে এক সপ্তাহ ধরতে পারিনি যে সে অফিস থেকে কখন বের হল। আমি জানতাম এই সময়টাতে সে বের হবে, ঘরির কাঠা ধরে ফলো করছি তাকে, কিন্তু কখন চোখের পলকে সে বেরিয়ে গেছে টের পাইনি অনেক দিন আমি।

একদিন অনেক চেষ্টা করে আমি তার অফিস থেকে বের হওয়াটা দেখতে পাই। আমি তাকে ফলো করার চেষ্টা করি। সেদিন আমি দেখতে পাই, লোকটি লাঞ্চের সময় অফিসের ঠিক পেছনে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে সে হেসে হেসে একা একা কথা বলতে থাকে। কিন্তু দূর থেকে মনে হবে সে কোনও একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে। সে একা একা কথা বলছে মনে হলেও আসলে সে একটি মেয়ের সাথেই লাঞ্চ আওয়ারে কথা বলতে বের হয়। আর সেই মেয়েটি তার স্ত্রী। উনি এখন বেঁচে নেই।

পাল্প:২৪

একটা জিনিস খেয়াল করেছিস, অফিসের এই লোকটি চুপচাপ কাজ করে, সবার সাথেই আড্ডা দেয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এটা একদিন দুই দিনের ঘটনা না। প্রতিদিনই লোকটা এরকম করে।

লোকটার সব কাজ অনেক গোছানো। সব কাজ সে সময় মত করে। সবার সাথেই সে কথা বলে। কিন্তু সবার সাথেই সে পরিমিত আচরণ করে। কোনও কথা সে তার মাপের বাইরে করবে না। এমনকি সে যখন হাসে, সেই হাসিটাও থাকে পরিমাণ মত।

কিন্তু সে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অফিস থেকে বের হয়ে কোথায় যায়, এটা ছিল খুবই রহস্যের। সে কি করে, না করে এটা জানা কারও পক্ষে সম্ভব না, যদি না সে দীর্ঘ সময় তাকে স্টাডি না করে।

কারণ কাজগুলো সে নিখুঁতভাবে করে। সে নির্দিষ্ট সময়ে বের হলেও ঠিক কখন সে বের হয়ে গেল তা ধরা যায় না তার অদ্ভুত ক্যারিশমার কারণে।

আমি নিজেও প্রথম দিকে এক সপ্তাহ ধরতে পারিনি যে সে অফিস থেকে কখন বের হল। আমি জানতাম এই সময়টাতে সে বের হবে, ঘরির কাঠা ধরে ফলো করছি তাকে, কিন্তু কখন চোখের পলকে সে বেরিয়ে গেছে টের পাইনি অনেক দিন আমি।

একদিন অনেক চেষ্টা করে আমি তার অফিস থেকে বের হওয়াটা দেখতে পাই। আমি তাকে ফলো করার চেষ্টা করি। সেদিন আমি দেখতে পাই, লোকটি লাঞ্চের সময় অফিসের ঠিক পেছনে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে সে হেসে হেসে একা একা কথা বলতে থাকে। কিন্তু দূর থেকে মনে হবে সে কোনও একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে। সে একা একা কথা বলছে মনে হলেও আসলে সে একটি মেয়ের সাথেই লাঞ্চ আওয়ারে কথা বলতে বের হয়। আর সেই মেয়েটি তার স্ত্রী। উনি এখন বেঁচে নেই।

পাল্প:২৪

আমি আর পিন্টু তখন একই মেসে ভাড়া থাকতাম। এক খাটে ঘুমুতাম। এক সাথে ভাত খেতাম। কিন্তু একটা জিনিস ছিল যা একসাথে কলা হয়ে উঠত না। সেটা ছিল, আমি অনেক রাতে ঘুমুর রাজ্যে থাকতাম। আর পিন্টু থাকত মোবাইলের রাজ্যে।

মাঝে মাঝে রাতে ঘুম না আসলে বিরক্ত হতাম। বিরক্তি নিয়ে আবার ঘুমিয়েও পড়তাম। এ নিয়ে কিছু বলতাম না। অনেকটা বলতে চাইতাম না। কারণ মেসে ভাল রুমমেট পাওয়াটা অনেকটা কষ্টের ব্যাপার। পৃখিবীর সব কাজের সাথেই আমাদের অনেক মিল রয়েছে। এই কেবল একটি কাজে আমাদের অমিল। তাতে কি? এক সাথে থাককে হলে কখনও কখনও সেক্রিফাইস করতে হয়। এই হিসেবে ও প্রতিদিন এত রাতে কার সাথে আলাপ করে কি আলাপ করে এই নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা ছিল না।

ছয় মাসের মাথায় আমার শেষমেষ কৌতুহল চাপল। আসলে সে কার সাথে এত রাতে কথা বলে,এটা জানা দরকার। কি কথা বলে এটা জানা দরকার।

আমি রাতে চোখ বুজে ঘুমের ভান করে থাকলাম। সে রাত তিনটার দিকে বেলকনিতে দাঁড়াল মোবাইল নিয়ে। ধীরে ধীরে আমিও উঠলাম। বেলকনির পাশের দেয়ালে দাঁড়িয়ে থাকলাম ওর কখা শোনার জন্য।

সে বলছিল,সোহাগভাই আমার পরীক্ষা এই মাসেই শেষ হবে। পরীক্ষা শেষ হলেই আমি মা-বাবার কাছে চলে যাব। মা -বাবা বাড়িতে একা থাকেন। আমি তাদের কখনই কষ্ট দিব না।

কথাগুলো শুনে ও যাতে না বুঝতে পারে তাই আগে ভাগে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।মনে মনে ভাবলাম ও বুধহয় সচরাচর যার সাথে কথা বলে আজ আর তার সাথে কথা বলেনি বোধহয়।

পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একসাথে নাস্তা খেলাম। একবার ওর পরিবারের প্রসঙ্গ নিয়ে আসলাম আলাপে। ও নিজে থেকেই বলল,তার এক বড় ভাই ছিল। খুবই মেধাবী। মা-বাবার অনেক ইচ্ছে ছিল সে বড় হয়ে পরিবারটা দেখবে। কিন্তু বছর খানেক আগে উনি কার এক্সিডেন্টে মারা যান। তার নাম সোহাগ।

আমি প্রথমত থতমত খেলাম। তারপর ভাবলাম,আমি ভুলও শুনতে পারি। সোহাগভাই মারা গেছেন। তাহলে সে মোবাইলে সোহাগ ভাইয়ের সাথে কথা বলবে কেন?

সেদিন রাতে আমি আবারও সে কি বলে তা শুনতে লাগলাম। না সে মোবাইলে সোহাগ ভাইয়ের সাথেই কথা বলছে। কিভাবে সম্ভব এটা?

সাহস করে আমি পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে মোবাইলটা কেড়ে নিলাম। দেখলাম মোবাইল স্ক্রিনে সোহাগ ভাই নাম লেখা। তাতে কল করেছে সে। কিন্তু মোবাইলটা বন্ধ। আর মুখের দিকে যখন তাকালাম, তখন দেখলাম ও শিশুর মত কাঁদছে।

আমি তার-মাথায় একবার হাত দিয়ে বললাম, সোহাড় ভাইকে তুই খুব ভালবাসতি তাই না?

পাল্প:২৫

রকিব আজ মরেই যেত,যদি না একটু খেয়াল না হত যে গাড়িটা তার দিকেই আসছে।

এবঙ আশ্চর্যের বিষয় যে এত রাতে শহরে পাবলিক বাস চলে না বললেই চলে। আরও আশ্চর্যের বিষয় এই বাসে কোনও ডাত্রী ছিল না। কেবল একটা ছায়ার মত কাউকে গাড়িটা চালাচ্ছিল বলে মনে হচ্ছিল।

বাসটি এত দ্রুত চলে যায় যে তাকে রকিব ধরতে পারেনা। আর এত রাতে রাস্তায় কোনও জনমানব না থাকায় বাসটি অনায়াসেই চলে যেতে পারে।

ব্যবসা থেকে রকিবকে প্রায়ই অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হয়। এতদিন এমন কিছুই হয়নি। তিন-চার দিন ধরে দেখা যাচ্ছে সে একটা না একটা দুর্ঘটনার তাকে তেড়ে বেরাচ্ছে। এবঙ আরও আশ্চর্যের বিষয় হল ঠিক যে জায়গাটিতে যেমন করে আজ সে দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিল, এর আগেও সে তিন-চার বার এমন দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয়।

বিষয়টা নিয়ে রকিব একটু বেশি চিন্তিতই হয়ে পড়ে। রাত তিনটা-চারটার দিকে ছায়ার মত একজন লোক যাত্রী ছাড়া একটি পাবলিক বাস অনেক দ্রুত চালায়। আর যখনই সে রাস্তার মোড়ে পৌছোয়,তখনই যাত্রীবাহী বাসটি তার ওপর দিয়ে চলে যেতে চায়। রকিব বাসায় ফিরে ঠাণ্ডা মাথায় একটু ভাবে। কোনও সুরাহা করতে পারে না। গোসল শেষ করে কোনও খাওয়া-দাওয়া না করেই ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে আবারও সেই চিন্তাটাই আসে। সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতে এমন ঘটনা ঘটার আগেই সে বাসটি জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাবে। এবঙ লোকটি কে তা সে কে, তাকে সে দেখে নেবে।

যথারীতি রাস্তার মোড়ে রাত তিনটার দিকে দাড়িয়ে রকিব। না আজ এমন কোনও বাস আসছে না। মোগটা ক্রস করতেই পেছনের তীব্র আলো গ্রাস করে ফেলে তাকে। কিন্তু রকিব কৌশলে বাসটির জানালা দিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।

না ছায়ার মত দেখতে লোকটি একজন মানুষ। পেছন থেকে সে তার হাত দিয়ে গলা জাপটে ধরে।

লোকটি আর কেউ নয়। রকিবের বন্ধু ও ব্যবসায়ী পার্টনার। রকিব তেমন কিছু না ভেবে তার বন্ধুটির মাথা বরাবর রিভলবারের একটি গুলি ঢুকিয়ে দেয়।

পাল্প:২৬

অমির হাজবেন্ড বাসা থেকে বের হবার ১০/১৫ মিনিটের মাথায় আরেকজন পুরুষ ঢুকে। লোকটা রাতে থাকে না। অমির হাজবেন্ডের অফিস থেকে বাসায় ফেরার এক দেড় ঘণ্টা আগে আবার সে বেরিয়ে যায়। বিষয়টা প্রথম প্রথম আমার চোখে পড়েনি। ইদানিঙ প্রায়ই এই লোকটাকে দেখি। অমি কি তাহলে পরকীয়া করে এই লোকটার সাথে?

একবার মনে হয় না। অমির মত এরকম মেয়ে পরকীয়া করবে। আবার মনে হয় না হতে পারে । মেয়েদের মন। বলা যায় না। কখন কি করে?

কিন্তু অমি যদি পরকীয় নাই করে, লোকটি কেন ঠিক অমরি হাজবেন্ড বের হবার ১০/১৫ মিনিটের মাথায় অমিদেও বাসায় যাবে। আবার অমির হাজবেন্ড অফিস থেকে আসার এক দেড় ঘণ্টা আগে বেরিয়ে যাবে? তাছাড়া লোকটাকে কখনও অমির হাজবেন্ডের সাথে দেখেছি বলেও মনে হয় না। কখনও আলাপ হয়েছি এই লোকটির সাথে অমির হাজবেন্ডের মনে পড়ছে না। পরকীয়াই বোধহয়।

মাথাটা কেমন গরম হয়ে যায় আমার। অমি পরকীয়া করে। এরকম লক্ষ্মী একটা মেয়ে। তার হাজবেন্ড সারাদিন খেটেখুটে অফিস করে বাসায় ফিরে আর অমি পরকীয়া করে। কেমন যেন মানতে ইচ্ছে হল না আমার।

আমি কয়েকদিন অমিদের বাসায় এই লোকটি ঢুকার পরপরই অমিদের বাসায় যাব এরকম একটি ভাব নিয়ে অমিদের বাসার দরজার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছি। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শুনেছি ওদের হাসি। না অমি পরকীয়াই করে।

এটা আমার অমির হাজবেন্ডকে জানিয়ে রাখা উচিত- এরকম সিদ্ধান্ত নিলাম। বেচারা লোকটা সারা জীবন হাড় খাটুনি খেটেই গেল। এক সময় খুব কষ্ট পাবে সে এটা নিশ্চিত। পরে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আগেভাগে সাবধান করে দেওয়াটাই ভাল।

একদিন অমির হাজবেন্ডের সাথে দেখাও হয়ে গেল। কিছু বলার আগেই অমির হাজবেন্ড বলা শুরু করল- সঙসারে একদমই সময় দিতে পারি না, আর অঅড্ডা দেব কি? বাসার সব কাজ ওই অমির বড় ভাইটাই করে দিয়ে যায়। আমি বাসা থেকে বের হই, আর অমির ভাই আসে। এসে বাসার সব বাজার-টাজার করে। দুপুরে খেয়ে-দেয়ে চলে যায়। একবার ওনার সাথে আমার দেখাও হয় না।

পাল্প:২৭

অনেক রাত। ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে শন শন করে বাতাস বইছে। রাস্তায় কেউ নেই। কোনও গাড়িও নেই যে বাড়ি ফিরব। ঝড়ে বিদ্যুতের লাইন সব কেটে গেছে। চারপাশটা একেবারেই বিদঘুটে অন্ধকার। একটা যাত্রী ছাউনিতে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবছি কিভাবে বাসায় ফেরা যায়। মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। আকাশ ডাকছে ঘন ঘন।

একবার মনে হল আজ আর বাড়ি ফিরব না। এই যাত্রী ছাউনিতেই ঘুমোব। কত লোকই তো ঘুমোয়। আর আমি ঘুমুলে কি অসুবিধা। আবার মনে হয় না এখানে তো ঘুমুনো যাবে না। মশা কামড়াবে। আর মাঝে মাঝেই বৃষ্টির ছাট এসে গায়ে লাগবে। সিদ্ধান্ত নিলাম এই বৃষ্টিতে হেঁটে হেঁটেই বাড়ি ফিরব। যাত্রী ছাউনি থেকে এক পা বাড়াতেই কেমন শিশুর কান্নার মত একটা শব্দ শুনতে পেলাম। গা কেমন শিউরে উঠল।

আশপাশে তাকালাম। কেউ তো নেই। এমন কি রাস্তার কুকুর পর্যন্ত নেই। একটু সাহস করলাম মনে মনে। শব্দটা যাত্রী ছাউনির পেছন থেকেই হয়েছে মনে হল। আমি পেছনের দিকে কেউ আছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করলাম। কিছু খুঁজে না পেয়ে যাত্রী ছাউনির সামনের দিকে তাকাতেই মনে হল-না মানুষের মত একটা ছায়াই তো দেখলাম। এবার আরও একটু যাত্রী ছাউনির পিছনে এগিয়ে তাকালাম। হ্যাঁ মানুষই তো। এবার পুরোটা শরীর যাত্রী ছাউনির পিছনে ঢুকিয়ে দিলাম। দেখলাম একজন মানুষকে গরুর মাথা কেটে যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়, সেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিদ্যুত চমকানোর আলো আরও বেশি করে যেন আমাদেও ওপর এসে পড়ল। মনে হয় বৃষ্টি নয়, আরও কিছু রক্ত এসে আমার শরীরে পড়ল। কেউ তাকে খুুন করে এভাবে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। মৃত মানুষটির হাত ধরার চেষ্টা করলাম। কেমন শীতল আর মনে হল সে আমার কাছে বাঁচতে চাইছে। না আমার পালাতে হবে। মনে হল- এই লোকটিকেই আমি খুন করেছি। আমি দৌঁড়াতে শুরু করলাম। বাসার দিকে একটানা পেছনে না তাকানো ছাড়া, একবার জড়িেিয় না নেওয়া ছাড়া দৌঁড়াচ্ছি। আর মনে হচ্ছে সেই মৃত মানুষটি আমার পা আকড়ে ধরে আছে। বলছে আমাকেও নিয়ে নাও। না আমি আর দৌঁড়াতে পারছিলাম না। পা ক্রমশ ভারি হয়ে আসে, শরীর ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে। এই রাস্তায়, এই ঘন ঘোর বিদ্যুত চমকানো বৃষ্টির রাতে আমি একা পড়ে থাকি। আর যাত্রী ছাউনির পেছনে পড়ে থাকে লাশ।

পাল্প:২৮

প্রতিদিনই ঠিক বারোটা এক মিনিটে ব্ল্যাঙ্ক মেসেজ আসে মোবাইলে। কিন্তু সেই নম্বরে কল করলে কেউ ধরে না। আমি প্রথম প্রথম ভাবতাম, ভুল করে হয়ত এই মেসেজটি চলে এসেছে। একদিন হঠাত খেয়াল হল, মেসেজটি একটি নম্বর থেকে আসে। এবঙ ঠিক বারোটা এক মিনিটে এটা ভুল করে হবার কথা নয়। এই বিষয়টি অবশ্যই পরিকল্পিত।

কল করার পর যেহেতু কেউ ধরছে না, আমি কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বিষয়টি জানাই। কিন্তু কাস্টামার কেয়ার এই নম্বরটি কার তা বলতে পারে না। নিরুপায় হয়ে এই নম্বরটি আমি ব্লক করি।

কয়েকদিন পর আবারও একটি নম্বর থেকে মেসেজ আসে। এবঙ প্রতিদিন ঠিক বারোটা এক মিনিটে আগের মত করে মেসেজ আসে। আমি কল করার পর এই নম্বও থেকে— কেউ কল ধরেন না। এটিও আমি ব“ক করে দেই।

কয়েকদিন পর আবারও আরেকটি নম্বর থেকে মেসেজ আসে। আমি যারপরনাই বিরক্ত হই। একদিন সেই ন¤বরে আমি অনবরত কল করতে থাকি। আমার সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই আমার পরিচিত কেউ এমন করছে। কিন্তু এতগুলো নম্বর ব্লক করার পর নিশ্চয়ই পরিচিত হলে এতদিনে তার নাম পরিচয় বলে দিত। একবার মনে হয় সে কি আমাকে কিছু বলতে চায়, যা সরাসরি বলতে পারছে না। অনেক ভেবে দেখলাম এরকম কাউকেই মনে পড়ছে না। আবার ভাবি সে কি আমার অফিসের কেউ যে আমার প্রেমে পড়েছে কিন্তু আমাকে বলতে পারছে না। না এরকম— কাউকে মনে পড়ছে না। এবারের এ নম্বরটিও কেউ ধরে নাই। অনবরত কল করার পরও। এই নম্বরটিও আমি ব্লক করে দেই।

এরপর অনেকদিন ঠিক বারোটা এক মিনিটে কোনও ব্ল্যাঙ্ক মেসেজ আসে নাই।

হঠাত একদিন ঠিক বারোটা এক মিনিটে একটি মেসেজ আসে। এটি ব্ল্যাঙ্ক নয়। এতে লিখা- আমি রিনা। তোমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। আমি দেশের বাইওে চলে যাচ্ছি। ভাল থেকো।

পাল্প:২৯

রিনার দিকে যখনই একটু বেশি সময় ধরে তাকাতাম তখনই দেখতে পেতাম রিনার চোখ অস্বাভাবিক রকমের বড় হয়ে আসছে। আর মনে হত রিনা এই বুঝি আমাকে খেতে আসছে। এখনই আমাকে গিলে খাবে।

প্রায়ই রিনার সাথে কথা বলার সময় আমি মাথা নিচু কওে থাকতাম। আর ভাবতাম রিনার দিকে তাকালেই রিনার এমন রাক্ষসী চেহারা আমার চোখে ভেসে ওঠে কেন? রিনা কি তহলে ডাইনি? ডাইনি কি আসলেই আছে। মানুষে ভিতরেই তো ডাইনি ভর করে। রিনার ভিতরে কি ডাইনি ভর করেছে। এরকম ভাবতে ভাবতে মনে হত, রিন কে চেখে দরকার।

রিনার চোখ বড় হয়ে আসে আর আমাকে খেয়ে ফেলতে চায়। ওর দিকে তাকালেই এমন ডাইনি চেহারা কেন ভেসে ওঠে। রিনা বোধহয় ভাল মেয়ে নয়।

রিনা কয়েক মাস হল আমাদেও পরিচয়। যখন একা হয়ে পড়ি, রিনাকে কল দিয়ে ডেকে এনে গল্প গুজব করি। রিনা যখন একা হয়ে পড়ে তখন সেও আমাকে কল করে গল্প-গুজব করে। এইভাবে এক সময় মনে হতে থাকে রিনারর প্রেমে আমি পড়েছি। আবার মনে হতে থাকে রিনাও আমার প্রেমে পড়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে জানায়নি আমরা। যেন দুজনেই দুজনকে চেখে দেখছি।

রিনা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। এক পর্যায়ে মনে হয় রিনার প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ি আমিই। আর সেই কারণে রিনার সমস্ত খোঁজখবর নেয়ার জন্য হন্যে হয়ে পড়ি। রিনা কেমন? আগে তার প্রেম ছিল কিনা? ইউনিভার্সিটিতে তার বন্ধু কয়জন ইত্যাদি। এরই ভিতর রিনার আরেক বান্ধবীর সাথে পরিচয় হয়ে যায় আমার।

একদিন রিনার ওই বান্ধবী আমাকে হঠাত প্রশ্ন কওে বসে- আচ্ছা, রিনা কি প্রতিমাসই আপনার কাছ থেকে টাকা নেয়? এই প্রশ্নে আমি প্রথমত বিস্মিত হই। পরে ভদ্রতাবশত বলি- হ্যাঁ নেয়। তারপর ও যা বলে তা এখনও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সে বলেছিল- এরকম অনেকের সাথেই রিনা সম্পর্ক রাখে। এটা ও ইচ্ছে কওে রাখে এমন নয়। ওর বাবা খুব কষ্ট করে ওকে লেখাপড়া করায়। কিন্তু প্রতি মাসে যে টাকা পাঠায়, তাতে ওর চলে না। পড়াশুনার খরচের জন্যই ওর এসব করতে হয়। আপনাকে খুব সহজ-সরল বলে মনে হয়েছেে বলেই এসব বললাম। আবার অন্যভাবে নিবেন না। আমি ভদ্রতার কারণে হেসে না বললেও বিষয়টি আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। তবে সন্দেহটা থেকে যায়। আর ভেতরে ভেতরে কেমন যেন একটা কষ্ট লাগতে থাকে। এরপর নানাভাবে এসবের সত্যতা জানার চেষ্টা করি। এবঙ সত্যতা খুঁজে পাই। যেদিন এসব জানতে পারি, সেদিন আবারও রিনার চোখ বড় হয়ে ওঠার, আমাকে খেয়ে ফেলতে চায় এমন মনে হবার কারণটা খুঁজে পাই। আর সেদিন মনে হতে থাকে, তাহলে কি প্রকৃতিতেই এমন কিছু বিষয় আছে, এমন কিছু সংকেত ব্যবস্থা, যা মানুষকে আগেভাগেই অনেক কিছু থেকে সাবধান করে দেয়।

পাল্প:৩০

রুনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে দুই-তিন বছর। এতদিন তার ভেতরে আমি এসব দেখিনি। গত দুই-তিন ধওে আমি রুনার আচরণের রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। রাত দুইটা কি তিনটার দিকে যখন আমি ঘুমে বেঘুর, তখনই রুনা আমার গলা চেপে ধরে। আমার ঘুম ভেঙে যায়। আর আমি চিৎকার করে ওঠি- এই রুনা। কি হয়েছে। ঘুমের ভেতর থেকে রুনা বলতে থাকে হুম-হুম। আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আমি বিছানা ছেড়ে এক গ্লাস পানি খাই। রুনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি। দেখি সে বেঘুরে ঘুমুচ্ছে। রুনার কপালে হাত দিয়ে তার চুল নেড়ে কাথাটা তার শরীরে তুলে দেই। ভাবতে থাকি কি হল রুনার। এরূপ ভাবতে ভাবতে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।

এরপর দুই দিন, তিন দিন এর থেকে এটা কয়েক দিনের পর্যায়ে চলে যায়। সকালে উঠে রুনাকে রাতে কি করেছিলে জিজ্ঞাস করা হলে- সে কোন কিছুই বলতে পারেনা।

এর মধ্যে একদিন রাতে রুনা আমার গলায় হাত টিপে ধরতেই জানালার কাছে একটা ছায়া দেখতে পাই। এত রাতে জানালার কাছে ছায়া। আমি রুনাকে ছাড়িয়ে জানালার কাছে যেতেই দেখি ছায়াটা মিলিয়ে গেল। সন্দেহটা আমার বাড়তে থাকে। আমার মনে হয় রুনাকে সাইকিয়াটিস্ট দেখানো দরকার। কিন্তু ছায়াটার সমাধান আমি করতে পারছিলাম না।

এরকম অবস্থায় আমি গোপনে বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ নিয়ে আসি। সেদিন আমি ঘুমের ভান করি। রুনা যথারীতি তিনটার দিকে দু হাতে গলা টিপে ধরে। আর জানালার পাশে ছায়াটা বড় হতে থাকে। আমি হ্যাঁ বলতেই গোয়েন্দা পুলিশ ছায়াটাকে ধওে ফেলে। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রুনা যা বলেছিল তা আজও আমি বিশ্বাস করতে পারিনা।

পাল্প:৩১

আমি আর নীনা সন্ধ্যা বেলায় সিবিচ ধরে হাঁটছিলাম। বালুর ওপর আমার যেখানে পায়ের ছাপ পড়ছিল,নীনা সেই ছাপের ওপর তার পা ফেলছিল। আর নীনা গুণগুণ করে বলছিল,আমায় তুমি নিয়ে যাচ্ছ তোমার আপন ঘরে। হঠাত একটি পাগল চিৎকার করে ওঠে। আর নীনার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে এখন বাড়ি যাও,এই সিবিচে প্রতিদিনই একজন করে মানুষ খোয়া যায়। নীনা একটু বেশিই ভয় পেল। ভয়টা আমিও যে পাইনি তা নয়। আমরা পাগলের কথায় গুরুত্ব না দিলেও এই সিবিচে সন্ধ্যার পর প্রতিদিনই একজন মানুষ খোয়া যায়-এই কথাটা মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল।

রত্নার সারা শরীরে যা আছে তার ভেতর এক হাসিই এত সুন্দর যে, যে কারও মনে হয় রত্না যদি সবকিছু বাদ দিয়ে সারাক্ষণ কেবল হাসত, তাহলে পৃথিবীর সব গ্লানিগুলো নিশ্চিত উড়ে যেত। এই সন্ধ্যায় সিবিচে এসে সেই রত্নার হাসিটাই কেমন স্তিমিত হয়ে এল। স্বপন ভিতরে ভিতরে রত্নারএই আচরণে একটু বিরক্তই হল। স্বপন একবার রত্নার হাত ধওে আর রত্না সেই হাত সরিয়ে নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। স্বপন বারবার রত্নার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে। আর রত্না বারবার মুখটা এমনভাবে সরিয়ে নেয়,যেন রত্নার এই মুখ সমুদ্রের বাতাস ছাড়া আর কেউ ছুতে না পারে। এমনকি তাকাতেও না পারে। স্বপন রত্না এমন আচরণের উদ্দেশ্য বোঝে না। রত্নার পথ আকড়ে ধরে স্বপন।

প্রেমা আর সঞ্চয়। বিয়ের পাঁচ বছর পর সিবিচে এসেছে। তারা শুধু দু জন নয়,তাদের সাথে এখন রয়েছে এক দুরন্ত শিশু নাম প্রেম। রত্নারা হাঁটতে হাঁটতে যে দোকানে ফুচকা খেতে বসেছিল,প্রেমা-সঞ্চয় এবঙ আমরাও সইে দোকানে। প্রেম এতটাই দুরন্ত একবার আমাদেও কাছে আসে,আবার রত্নাদের কাছে যায়; আবার নীনার কাছে আসে। রাত নয়টার দিকে আমি আর নীনা তখন রিক্সায় উঠব,সে সময় একটা হৈচৈএর শব্দ পেলাম। লোকজন বলাবলি করছিল- একটা ছেলে একটা মেয়েকে চাকু মেরেছে। মেয়েটা মারা গেছে আর ছেলেটা পালিয়ে গেছে।

পাল্প:৩২

এটা খুবই খারাপ রাস্তা। এই রাস্তায় একবার ঢুকে গেলে কেউ বের হতে পারে না। এটা করিম জানত না। কিন্তু কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আসবে আসবে যখন তখন করিম বুঝতে পাওে কিছুক্ষণ আগে তার গাড়িটা কেউ একজন টেনে ধরেছিল। কিন্তু গাড়ি থামিয়ে চারপাশ পরখ করেও সে কিছু দেখতে পায়নি।

সোহানা আর আলী শহর থেকে অনেক দূর চলে এসেছে। অনেক দিন পর তারা একসাথে বেরিয়েছে। নিজেকে উদযাপনের সময়ই আসলে পাওয়া যায় না। নিজেদের এতটাই আজ ভাল লাগছিল যে আলী ড্রাইভ করতে করতে কতদূর চলে এসেছে তার হিসাব করেনি। গাড়িতে একটা মদের বোতল নিয়ে বেরিয়েছিল আলী। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির ভিতরে বসেই বোতলটা শেষ করল আলী আর সোহানা। কিন্তু অ™ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এরপর অনেক চেষ্টা করেও গাড়িটার স্টার্ট নেওয়াতে পারে নি আলী।

স্বপন এই এলাকারই ছেলে। তবে স্বপনেরও এই রাস্তায় আসা বারণ। স্বপ্ন কেন, ওদের এলাকার কেউই এই রাস্তা ব্যবহার করেন না। এমনকি যদি কখনও কেউ অসুস্থ হন, এই রাস্তায় অনেক তাড়াতাড়ি যাওয়া গেলেও এম্বুলেন্স অন্য আরেকটি রাস্তা দিয়ে যায়। কিন্তু কি একটা কারণে স্বপনের আজ এই রাস্তা ব্যবহার করতেই ইচ্ছে করে। তার মনে হয়, যা হোক হবে। কি আর এমন হতে পারে। এসব ভেবে ভেবে মোটরবাইকটা এই রাস্তাতেই তুলে দেয়। কিছুদূর আগানোর পর স্বপন একবার পিছু হটার চেষ্টা করে। এত বিশাল বিশাল ঝোপঝাড়। কোনও মানুষ নাই। এমন ভুতুরে রাস্তায় তার গলা শুকিয়ে আসে। কিন্তু পেছনে তাকাতে গিয়ে খেয়াল হল তার সে এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে যেখান থেকে পেছনে যাওয়াটা হবে আরও কষ্টের। সে সামনের দিকেই দ্রুত ছেড়ে দেয় বাইক। হঠাত তার মনে হয় বাইকটিকে সে একজন মানুষের ওপর তুলে দিয়েছে। তার কিছু দূরেই সে খেয়াল করে একটি গাড়ি। বিষয়টিকে একটি ফাদ মনে হয় তার। বাইকের স্পিড বারিয়ে দেয় সে। আরও কিছুদূর এগোতেই দেখে সে দুজন মানুষ তাকে ডাকছে। স্বপন বাইকটি আরও জোরে চালায়। চোখ বন্ধ কওে টান দেয় সে। পরদিন সকালে স্বপন টের পায় তার মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে। আর বাইকটি একটি গাছের গোড়ায় আটকে আছে।

পাল্প:৩৩

কেবল বাড়িওয়ালা জানত এই বাসায় একজন থাকেন, এক ফ্ল‌্যাট থেকে আরেক ফ্ল্যাট ঘুরে বেড়ান। কিন্তু কেউ তা জানে না। কাউকে সে বলে না। এমনকি পুরাতন ভাড়াটিয়াকেও না। নতুন ভাড়াটিয়াকেও না।

কমল আর মাধবী। এই দুজনই শুধু থাকবেন। বাসায় মাঝে মাঝে মাধবীর ছোট ভাইটা আসবে। ফ্ল্যাটে ঢুকার পরপরই মাধবী বলছিল, এই ফ্ল্যাটে কেউ একজন আছেন। কমল হেসে দেয়। তারা তো তালা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকেছে। তারপরও আগে থেকে কেউ যদি থেকে থাকে এজন্য পুরো ফ্ল্যাটবাসাটা আবারও সে ঘুরে দেখে। না কাউকেই সে দেখতে পায় না। কিন্তু মাধবীর সন্দেহটা যায় না। রাতে ঘুম থেকে ওঠে বাথরুমে যাওয়ার সময় ঘরের ভেতরে হাটতে দেখে কাউকে। মাধবী চিঁকার করে ওঠে। কমল সারা ঘর তন্নতন্ন করেও কাউকে পায় না। বিষয়টা পরদিন সকালে কমল বাড়িওয়ালাকে জানায়। বাড়িওয়ালা কথাটা হেসেই উড়িয়ে দেয়। পরামর্শ দেয় বাসায় ভাবীকে একা না রেখে একজনকে রাখতে।

রবিন সাহেব পুরুনো ভাড়াটে। উনি কমল সাহেবকে বললেন, এই বাসায় একজন আছেন মনে হয়। ছায়ার মত কেউ। এরকম প্রথম প্রথম তারা যখন নতুন আসেন, সে খুব বিরক্ত করত। এখন আর তেমন বিরক্ত করে না। রবিন সাহেব কেমন রহস্যময় হাসি হাসেন।

এক সপ্তাহের মাথায় বাড়িওয়ালের বাসার উপরের ট্যাঙক থেকে একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু শিশুটি কে কেউ চিনতে পারে নি।

পাল্প:৩৪

খুব ভোরে রহিম সাহেব বাজারে চলে যায়। বাজারে মাংসের দোকানে গিয়ে দেখে একটা লোক একটা মানুষের চামড়া ছাড়িয়ে নিচ্ছে। তারপর একে একে মানুষটির হাত আর পায়ের মাংসগুলো কেটে কেটে আলাদা করে রাখছে।

যে লোকটি মানুষের মাংস কাটছে, সে লোকটির দিকে একবার তাকায় রহিম সাহেব। লোকটি একমনে মাংস কেটেই যাচ্ছে, কোন ভ্রুক্ষেপ নাই তার।

রহিম সাহেবের আর বাজার করা হয় না। বাজার থেকে বের হবার সময় রহিম সাহেবের মনে হয়, তাকে কেউ অনুসরণ করছে। রহিম সাহেব আর পিছনের দিকে তাকায় না। একটা রিক্সায় চড়ে সোজা চালাতে বলে। রিক্সা ওয়ালার পা থেকে রক্ত ঝড়ছে। আর যে রাস্তা দিয়ে রিক্সাটা যাচ্ছে, সে রাস্তায় রক্তের দাগ বসে যাচ্ছে। রিক্সাওয়ালাকে থামতে না বলেই রহিম সাহেব রিক্সা থেকে লাফ দেন। এরপর জোরে একটি দৌড় দেন তিনি। পেছন থেকে রিক্সাওয়ালা হাসতে থাকেন।

ঘরে ঢুকেই হাপাতে থাকেন রহিম সাহেব। নিজের শোবার ঘরে ফ্যান ছেড়ে হাপাতে থাকেন তিনি। হঠাত তার খেয়াল হয় যে ইজি চেয়ারে তিনি বসে আছেন, সেখানে একটি মানুষের কাটা হাত পড়ে আছে।

রহিম সাহেব কোন কিছু না ভেবে এক লাফ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। তখন আকাশ লাল হয়ে ফুটে উঠছিল।

পাল্প:৩৫

রাত তখন একটা। লোটাসের সামনে একজন মৃত নারী। লোটাস প্রথমে সেই নারীর স্তন দুটি কাটে। তারপর সেটাকে আরও আরও খন্ড করে টয়লেটে ফেলে ফ্ল্যাশ ছেড়ে দেয়। তারপর মৃত নারীটির হাত কাটে, পা কাটে, সমস্ত শরীর আরও আরও খন্ড করে। একে একে মৃত নারীটির সমস্ত শরীর টয়লেটে ফেলে ফ্ল্যাশ ছেড়ে দেয়।

তারপর সে পুরো হোটেল রুমটি পরিস্কার করে। হঠাত সে পাখির কিচির-মিচির শব্দ শুনতে পায়। হোটেল বয়কে ঘুম থেকে ডেকে চাবিটা দেয় লোটাস। যে হোটেল রুমে দুইজন ঢুকেছিল, সে হোটেল রুম থেকে বের হয় একজন।

পাল্প:৩৬

হঠাত করেই ঘর সুগন্ধিতে ভরে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ কোনও সুগন্ধি দেয় নি ঘরে। সে দিনই রুমা তার বান্ধবীর মৃত্যুর খবর পায়। এই ঘটনাই নয়। এরপর আরও দুইবার এমন ঘটনা ঘটে। রুমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাগর ও রুমার দাদার মৃত্যুর খবর যেদিন পেয়েছিল, সেদিনও রুমার ঘরে হঠাত করেই একটা সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কেউ এই সুগন্ধি দেয় নি ঘরে। রুমার ধারণা এই সুগন্ধিটা কারও আত্মার। তার পরিচিত যারা মারা যায়, তাদের আত্মা রুমার ঘরে আসে। রুমা সেটা বুঝতে পারে। কখন তার বান্ধবী ঘরে এসেছে। কখন তার বন্ধু সাগর ঘরে এসেছে। কখন তার দাদা ঘরে এসেছে।

যেদিন রুমার বান্ধবী ঘরে আসে, সেদিন রুমা তার জন্য তার সব প্রিয় খাবারগুলো দিনভর রান্না করে। তারপর ছাদের ওপরে গিয়ে দুজনে মিলে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। যেদিন রুমার বন্ধু সাগর আসে, সেদিন সে আকাশি রঙের শাড়ি পড়ে। আর যেদিন তার দাদা আসে সেদিন সে চুপচাপ ঘরে বসে থাকে। দাদার তার সাথে গল্পগুজব করে, কবে রুমার বিয়ে ঠিক হবে এসব নিয়ে।


Warning adult game

পাল্প:৩৭

প্রায়ই যখন অফিস ছুটি হয়, সবুজ আর ববি এক সাথেই বাসায় ফেরে। সবুজ আর ববিদেও বাসা একই এলাকায়। সবুজ অনেকটা সঙগ্রামী ধাচের মানুষ। অমানুষিক পরিশ্রম করতে পারে। কাজ করে, কাজ করে যে আয় হয়; তাই দিয়ে কোনরকমে সঙসার চালায়। ববির এসবের পছšদ নয়। ববির হিসেব অন্যরকম। সে যকন টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেনি, তখন থেকেই তার এই পরিবর্তন। যেভাবেই হোক সেটা সৎ উপায়েই হোক আর অসৎ উপায়েই হোক, এ নিয়ে প্রশ্ন থাকে না তার। আয়টাই হল বড় কথা।

ববিরা গত বছর ফ্ল্যাটও কিনে ফেলেছে। ববির হাজব্যান্ডও বেশ স্মার্ট। কিন্তু সেই তুলনায় সবুজ কিছুই করতে পারেনি। সারা জীবন কেবল হাড় ভাঙা খাটুনিই করে গেল। এ নিয়ে সবুজের কোনও আক্ষেপ না থাকলেও ববি প্রায়ই সবুজকে বলে, একটু স্মার্ট হও সবুজ। তোমার বিপদেও সময় তোমাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসবে না। নিজেরটা নিজেকেই করে নিতে হবে। তারপরও সবুজ ওসব পারে না। সৎ থাকাটা সবুজের যেন চেষ্টা নয়, এটা তার অভ্যাস। এর বাইরে সে যেতে পারে না।

প্রায়দিনের মত সবুজ আর ববি রিক্সায় বাসায় ফিরছিল। হঠাত সবুজের খেয়াল হয়, তারা যে এলাকায় থাকে রিক্সাটা সেই এলাকার দিকের রাস্তায় যাচ্ছে না। সবুজ ববির দিকে তাকায়। রিক্সাওয়ালাকে বলে, এটা এই রাস্তা নয়। ববি সবুজের হাত ধরে। সবুজ কিছু বুঝতে পারে না। হঠাত রিক্সাটি একটি অন্ধকার গলির দিকে চলে যায়। তারপর ববি রিক্সা থেকে নেমে সবুজকে একটু অপেক্ষা করতে বলে। সবুজ এসবের মানে বুঝতে পারে না।

এক ঘণ্টা হয়ে যায়, ববি ফেরে না। দুই ঘণ্টা হয়ে যায় ববি ফেরে না। মোবাইলে কল করল সবুজ। ববির মোবাইল বন্ধ। অগত্যা রিক্সা নিয়ে সবুজ একাই বাড়ি ফিরল। কিন্তু টেনশনটা গেল না। ববি কোথায় গেল, এই অন্ধকার গলির ভিতর।

পরদিন সকালে অনেক আগেই অফিসে চলে আসে সবুজ। অপেক্ষা করে ববি কখন আসবে। ববি অফিসে ফিরলে সবুজ তাকে জিজ্ঞেস করে, কাল কোথায় গেলে এই অন্ধকার গলি ভেতর। গেলে তো গেলে আর ফিরলে না যে। ববি সবুজের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। হেসে হেসে বলে, মানে কি? কাল তো আমি অফিসেই আসিনি।

পাল্প ৩৮.

ডাক্তার রবিন। দাঁতের ডাক্তার। নামকরা ডাক্তার হলেও কেউ তার কাছে যেতে চাইত না। কারণ সবাই বলত এই ডাক্তারের কাছে গেলে শুধু দাঁত নয়, পুরো মুখটাই পাল্টিয়ে দেয়।

কেউ কেউ বলত, ডাক্তার প্রথমে দাঁতে একটা ইনজেকশন দেন। পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে, একটা বড় ধারালো চাকু দিয়ে মাথাটা কেটে ফেলেন। এরপর ডাক্তারখানায় ডিপ ফ্রিজে রাখা আরেকটা মাথা বের করে সেখানে সেলাই করে দেন।

এই কথাই শুধু লোকজন বলত না, উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিত। বলত রমিজ ছিল সামান্য কাঠমিস্ত্রী। তার দাঁতের এত ব্যথা হয় যে তাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছেই স্মরণাপন্ন হতে হয়। ডাক্তারখানা থেকে বের হতেই রমিজের নতুন চেহারা দেখা যায়। কাঠমিস্ত্রী রমিজ শহরে নতুন দোকান দেয়। কেউ তার মুখ দেখে চিনতে পারত না, এটা সেই আগের কাঠমিস্ত্রী রমিজ।

এই ডাক্তারকে নিয়ে লোকজনের যত না কৌতুহল, তারচেয়ে অনেক বেশি ভয় আর রহস্যই ছিল। কারণ আরও ছিল। খুব গম্ভীর থাকত সে। মানুষের সাথে মিশত না। কেউ তার ওখানে গেলে বিদঘুটে হাসি দিত।

একদিন সেই ডাক্তারখানায় আগের ডাক্তারকে আর দেখা গেল না। দেখা গেল তার মত গম্ভীর, রহস্যময় আরও এক ডাক্তার বসে আছে। কিন্তু আগের ডাক্তার কোথায় গেল, কি করল তার কোনও হদিস কেউ বের করতে পারল না।

পাল্প ৩৯

রুবেল হঠাত করেই অফিসের বসের রুমে ঢুকে পড়ে। রুবেলের বস আর তার সহকর্মী সোমা প্রায় অর্ধনগ্ন। ওরা স¤ভবত সেক্স করছিল। ওদের একে অপরের মুখ কাছাকাছি ছিল। রুবেল রুমে ঢুকতেই ওরা ক্ষেপে যায়। কিন্তু রুবেল দেখতে পায়, ওদের দুজনেরই চোখ ছিল ভীষণ রকমের লাল। আর ওদের মুখ থেকে রক্ত পড়ছিল। রুবেলের এই দৃশ্যটি সত্যিকারের মনে হয় না। তবু তাকে খুব দ্রুতই কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগে রুমটি ছাড়তে হয়।

রুবেলের খুবই অস্বস্তি লাগছিল। কোনরকমে অফিস শেষ করে সে পার্কে এসে বসে। পার্ক কিচুক্ষণ বসার পর পরই তার সামনে প্রেমিক-প্রেমিকা এসে বসে। রুবেলের হঠাত চোখে পড়ে প্রেমিক-প্রেমিকা দুজন চুমু খাচ্ছিল না। দুজনের মুখ থেকেই রক্ত ঝড়ছিল। একটু দূর থেকে রুবেল স্পষ্ট দেখতে পায় ওরা একজন আরেকজনের মুখ থেকে রক্ত শুষে খাচ্ছিল। রুবেল এখানেও বসে থাকতে পারে না। নিজেকে অসুস্থ মনে হতে থাকে। সে পার্ক থেকে দ্রুত বাসার দিকে হাঁটতে থাকে। নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয় তার।মনে হয় তার অনেক ঘুমানো প্রয়োজন।

বাসার পথে আসার রাস্তায় রুবেলের এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়। রুবেলকে দেখেই বন্ধুটি বলে ওঠে- কিরে তোর চোখ এত লাল কেন?

পাল্প-৪০

একটা জিনিস খেয়াল করেছিস, কোনও ছবি তোলার সময় মেয়েটি ক্যামেরার সামনে থাকে না। আমি প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করিনি। একবার তাকে না জানিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু সে কিভাবে যেন টের পেয়ে ‌ক্যামেরার লেন্সের বাইরে চলে যায়।

তবে সবচেয়ে রহস্যের বিষয় ছিল, আমি একবার তাকে টার্গেট করেই অনেকগুলো ছবি তুলি। সবগুলোতেই ফোকাসে রেখেছিলাম তাকে। কিন্তু ছবি প্রিন্ট করার পর একটিতেও তাকে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র তাকে ফোকাস করে যে ছবি তুলেছিলাম, সে ছবিগুলোতেও তার কোনও ছবি নেই। দেয়ালের ছবি উঠে এসেছে। বিষয়টি আমাকে খুব বিস্মিত করে।

বিষয়টাতে আমি একটু ভয়ও পাই। একটা মেয়েকে ফোকাস করে ছবি তুললাম, কিন্তু একটাতেও সে নেই। আমি একবার এক পার্টিতে সারাক্ষণ লেগে থাকি, তার ছবি তুলবই। এমন জেদ চেপে যায় আমার।

আমি খুব মনোযোগ দিয়ে তার ছবি তুলার চেষ্টা করছি। হঠাতই বিদ্যুত চলে যায়। সে সময় পেছন থেকে কে যেন আমাকে ধাক্কা দেয়। আমার গলা শুকিয়ে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখতেই বিদ্যুত চলে আসে। তাকিয়ে দেখি মেয়েটি।

মেয়েটি হেসে আমাকে ছাদের ওপরে নিয়ে যায়। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার সাথে ছাদে চলে যাই। সেখানে মেয়েটি বলতে থাকে- আমার যে মুখটি দেখছেন, এত সুন্দর সেটি আমার মুখ নয়। খুব ছোট বেলায় কার এক্সিডেন্টে আমার মুখ পুরোটাই ঝলসে যায়। এরপর প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।

পাল্প-৪১

ইদানিং প্রায়ই মোবাইলে একটি ফোন আসে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে মোবাইল স্ক্রিনে কোনও নম্বর দেখা যায় না। এবঙ মোবাইল ধরার পর কেউ কথা বলে না।

প্রথম প্রথম আমি ভেবেছি এটি নিছকই কোনও মোবাইল সপটওয়্যার কেন্দ্রিক ঝামেলা। কিছুদিন পর এরকম একটি ফোন রিসিভ করতেই কেউ একজন বলে উঠে, হ্যালো।

এই হ্যালো শব্দটি এতটাই মুগ্ধকর যে আমি প্রায় এক মিনিটের মত আবিষ্ট হয়ে ছিলাম। কোনও কথা বের হয় নি আমার মুখ থেকে। এরপর আমি যখন কথা বলার প্রস্তুতি নেই, তখনই মোবাইলটি বেটে যায়।

এরকম ঘটনা আরও কয়েকবার হল। কেউ একজন মোবাইল করে, হ্যালো বলে এবঙ আমি এই নম্বরটি ম্রবাইল স্ক্রিনে দেখতে পাই না। পরে ভাবলাম মোবাইলটি টেকনিশায়ানের কাছে নিয়ে যাই। উনি হয়ত বলতে পারেবন- কোনও ঝামেলা হচ্ছে কিনা আমার মোবাইলে। বাকি সব মোবাইলের নম্বর দেখা যায়, কিন্তু একটি নম্বর দেখা যায় না। এমন বিস্ময়কর বিষয়ের কোনও সমাধানও উনি করতে পারলেন না।

ইদানিঙ প্রায়ই এই অদ্ভুব নম্বরটা থেকে কল আসে এবঙ এমন সময়ে কলটি আসে যখন আমি কোনও বড় রাস্তা পার হচ্ছি বা বিশেষ কোনও রিস্কি কাজ করছি এমন সময়গুলোতে। আর এমন ঘটনা ঘটে, অন্য কোনও নম্বর থেকে ফোন আসলে আমি টেরই পাইনা। বা ধরতে ইচ্ছে হয় না। বা ধরা হয় না। কিন্তু এই নম্বরটি আমাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে যে এই নম্বরটি আমাকে ধরতেই হয়। সেদিন রাস্তা পার হবার সময় এমন ঘটনা ঘটেছিল। আমি ঠিক রাস্তাটা পার হব। পেছন থেকে একটি বাস আসছে। আর সামনে ট্রাক। সেই মুহূর্তে ফোন। অদ্ভুত ব্যাপার সেই ফোনটি আমি ধরলাম। সেদিন অল্পের জন্য বেচেও গেলাম। আমার সন্দেহ বাড়তে থাকে ক্রমশ ফোনটি কি আমাকে খেয়ে ফেলতে চায়। মেরে ফেলতে চায়? আমি এই নম্বরটি চ্যাঞ্জ করে অন্য নম্বর নেই। মোবাইলটিও চ্যাঞ্জ করি। কিন্তু এই নতুন নম্বরেও সেই অদ্ভুত, রহস্যময় ফোনটি আসছেই।

পাল্প ৪২

একদিন স্বপ্না স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে যে সে এমন একটি সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে অাচে যে সেতুটি অদ্ভুত সুন্দর, চারপাশে অনেক বিরান সবুজ আর সেতুটি অনেক পুরুনো।

স্বপ্না সেই সেতুটির ওপর দাড়িয়ে। সেখানে এক রাজপুত্রের সাথে তার দেখা হয়। রাজপুত্রটি তাকে তার ভালবাসার কথা জানায়। স্বপ্না হেসে হেসে সেই ভালবাসা গ্রহণ করে।

স্বপ্না সকালে জেগে সেই সেতুটির কথা মনে করতে থাকে। কিন্তু কোথাও এমন সেতু দেখেছে কিনা সে মনে করতে পারে না। অনেক দিন তার মাথায় সেই সেতুটি ঘুরতে থাকে। সেই সেতু আর রাজপুত্রকে কোথাও খুজে পায় না সে।

একদিন শেরপুরে একটি পিকনিকে গিয়ে বনের অনেক ভিতরে সেই সেতুটি দেখদে পায় সে। স্বপ্না সেই স্বপ্নের মত সেতুটির ওপরে ওঠে। তার মনে হতে থাকে স্বপ্নের কথা। তার মনে হতে থাকে রাজপুত্রের কথা। হঠাত সেই সেতুটি ভেঙে নদীর ওপরে পরে যায় স্বপ্না। এরপর তাকে আর উদ্ধার করা যায়নি। অনেকে বলেন, স্বপ্না জীবীত আছে। প্রায়ই স্বপ্না সেতুতে বসে সেই রাজপুত্রের অপেক্ষা করে।

পাল্প৪৩.আমরা একটা শহরে ঢুকে পড়েছিলাম, যে শহরে সন্ধ্যার পর কোনও মানুষকে দেখা যায় না। দখো যায় না মানে একদমই না। কেউই বের হন না। আম দেও অবশ্য বলে দেওয়া হয়েছিল, শহরে পৌঁছতে পৌঁছতে যদি সন্ধ্যা হয়ে যায়; তাহলে যেন আমরা সেই শহরে না ঢুকি।
কেননা বলা হয় যে সন্ধ্যার পর এই শহওে কেউ বের হলে, কেউই বেঁচে থাকতে পাওে না। তার হয় গলার দিকে কামড়ানো লাশ, না হয় হাত-পা কামড়ানো লাশ আবার কখন কখন কাউকে খুঁজেও পাওয়া যায় না।কিন্তু আমাদের এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল, আমরা এমন একটি জায়গায় চলে এসেছিলাম; যেখান থেকে ফিরে আসার কোনও অবস্থা ছিল না। আবার আশেপাশে কোথাও রাত কাটানোরও কোনও জায়গা ছিল না। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে সেই শহরেই ঢুকতে হয়।আসলেই অবাক ব্যাপার সন্ধ্যা কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে, অথচ কোনও মানুষ নেই। কোনও মানুষ নেই মানে একেবারেই জনমানবহীন। কোনও দোকান খোলা নেই। কোন হোটেল খোলা নেই। এমনকি মানুষের ঘরগুলোতে পর্যন্ত কোনও বিদ্যুত জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না। এমনিতেই মানুষ নেই, তার ওপর এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভয়টা এবার সত্যিকার অর্থেই চেপে বসল আমাদের। একবার আমরা ভাবলাম ফিরে যাব, কিন্তু ফিরে যেতেও যে সময় লাগবে আর যত পথ হাঁটতে হবে তা ভেবে শরীর যেন আরও বেশি অবশ হয়ে গেল। না আমরা ধীরে ধীরে হাঁটতেই থাকলাম। মনে মনে সাহস করতে থাকলাম যে আরও একটু হাটলেই আমরা আমাদের জায়গায় চলে যেতে পারব।

হঠাত করেই কিছু লোক হুড়মুড় করে আমাদেও উপর ঝাপিয়ে পড়ল। আমরা চিৎকার করতে থাকলাম। না লাভ নেই। কেউই এগিয়ে আসল না। এই ঘুটঘুটে অন্ধকাওে কাউকে চিনতেও পারছিলাম না। আমরা হঠাত করেই মদের গন্ধ পেলাম। বুঝতে পারলাম এরা ড্রাঙকার। আমরা চুপ হয়ে গেলাম। এরপর এরা চলে গেল। এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম আমরা এবঙ এও টের পাচ্ছিলাম এদের কেউ কেউ আমাদের অনুসরণ করছিল। কিছু দূর এগুনোর পর ওদের কেউ আর থাকেনি।

প্রায় আধা কিলোর মত হেঁটেছি। তেষ্টা পাচ্ছিল খুব। কিন্তু কিছুই করার ছিল না আমাদের। হঠাত দেখা গেল একজন সুন্দরী নারী আমাদের দেখে হাসছে। আমাদের প্রত্যেকেরই নজর ছিল তখন ওই নারীর দিকে। আমরা দেখলাম ওই নারী শুধু হাসছিল না, আমাদেরকে তার কাছে যাওয়ার জন্যও ইশারা করছিল। আমরা আর বিপদ বাড়াতে চাইনি। তাছাড়া শরীরের অবস্থাও ছিল বেশ কাহিল। আমরা নিজেদের মতই হাঁটতে লাগলাম।

কিছুদূর হাঁটার পর বেশ কয়েকজন এবার গতিরোধ করল আমাদের। তাদের হাতে ছিল ধারাল অস্ত্র। আমরা খেয়াল করলাম ওরা কেউ কোনও কথা না বলেই আমাদের ওপর হামলা করতে আসছিল। আমরা কোনও কিছু না ভেবেই চোখ-মুখ বন্ধ করে দৌঁড়িয়ে একটি বাসায় আশ্রয় নিলাম। সেই বাড়ি থেকেও বলা হল, এ শহরে রাতে কেউ ঘরের বাইরে বের হয় না। আমরা যেন এই বাড়িতেই খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে সকালে উঠে যেন আমরা আমাদের কাজে বের হই।

পাল্প ৪৪.

অসীম ছিল ভয়াবহ মেধাবী আর প্রচণ্ড যৌনকাতর। ওকে কেউ তেমন পড়াশুনা করতে দেখেনি। পরীক্ষার আগের রাতে এক কি দুই ঘণ্টা কি সব পড়ত। আর এতেই ওর হয়ে যেত। পরীক্ষার ফল বেরুলে দেখা যেত, ওর মার্কসই হায়েস্ট। এই কারণে ওর বন্ধুরা যতটা না হিংসা করত, তারচেয়ে বেশি বিস্মিত হত।

আর যৌনকাতরতার বিষয়টিও কারও অজানা ছিল না। টিউশনি করে ও যত আয় করত, তার প্রায় সবটাই ঢালত এই বাজারি মেয়েদের পেছনে। ও হলে একদিন কি দুই দিন থাকত, বাকি সব সময়গুলোই সে বাইরে কাটাত। এই কারণে অসীমের রুমমেট তেমন কিছু জানতেও চাইত না। এই রুমমেট একই বভিাগের এবঙ অসম্ভব পড়–য়া।
একদিন কি একটা কারণে কোন এক সেমিস্টার পরীক্ষায় অসীমের রুমমেটের চেয়ে অনেক কম মার্কস পায়। এই ফলাফল দেখে সে সোজা চলে যায় কোন এক বাজারি মেয়ের কাছে। ওই মেয়েটির ঘরে ঢুকেই সে শুয়ে পড়ে বিছানায়। মেয়েটি অসীমকে ভাইয়া বলে ডেকে ওঠতেই ওর শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে যায়। অসীম লাফ দিয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে। অসীমের এই আচরণে বিস্মিত হয় মেয়েটি। অসীম তার পকেট থেকে একটি পাঁচশ টাকার নোট বের করে মেয়েটির হাতে দেয়। তারপর একটি সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে থাকে অসীম। অসীম সারারাত ধরে হাঁটে আর একটি করে সিগারেট ধরায়।

এক একটি সিগারেট তারার মত জ্বলতে থাকে অসীমের ঠোঁটে।

পাল্প ৪৫.

প্রতিদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই পার্কে হাঁটতে বের হন মঞ্জু। একদম সকাল বেলা পার্কে তেমন মানুষ থাকে না। কেবল হাতে গোনা কয়েকজন হাঁটেন। সেদিন একেবারেই মানুষ ছিল না। বলতে গেলে একাই হাঁটছিলেন মঞ্জু।

হঠাত মঞ্জুর খেয়াল হল একটু দূরে পার্কের বেঞ্চে বসে কাঁদছিল এক মেয়ে। এত ভোর বেলা একা একটা মেয়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে কাঁদছে দেখে এগিয়ে গেল মঞ্জু। হঠাত মঞ্জুর খেয়াল হল মেয়েটি নেই। কোন ফাঁকে মেয়েটি চলে গেল সে টেরই পেল না।

মঞ্জু একা একা আবারও হাঁটতে লাগল। সকাল বেলা কিছুটা হাঁটা হলেও শরীর ভাল থাকে। কিছু দূর এগিয়ে আসার পর আবারও তার খেয়াল হল- আগে যে ড্রেস পড়া মেয়েটি কাঁদছিল, ঠিক একই ড্রেস পড়া অন্য আরেকটি মেয়ে কাঁদছে। এবারও সে এগিয়ে গেল। একই ড্রেস পড়া আরেকটি মেয়ে কাঁদছে। বিষয়টা এবার তাকে একটু বিস্মিত করল। কিন্তু এই মেয়েটির কাছেও মঞ্জু যেতে পারল না। বেঞ্চের কাছে আসতেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল সে।

মঞ্জুর হাঁটা এবার একটু দৌঁড়ের আকার নিল। পার্কের গেটের কাছে আবারও আরেকটি একই ড্রেস পড়া মেয়ে দেখতে পেল সে। এবার মঞ্জু একেবারে চোখের ফলক না ফেলে মেয়েটির কাছে আসতে লাগল। মেয়েটির কিছুটা কাছে আসতেই, পার্কের গেটে একটি খালি বাস এসে থামল। মেয়েটি সেই বাসে উঠে পড়ল। বাস থেকে মেয়েটি মঞ্জুর দিকে তাকিয়ে রইল। আর বাসটি দৌঁড়াতে শুরু করল।

পাল্প ৪৬.

একটা মেয়ে নিস্তেজ নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকবে, নড়বে না, চড়বে না। কথাও বলবে না। এরকম মেয়ের সাথে সুমন বিছানায় যেতে চায় না। কিন্তু যেতে হয়। বাধ্য হয়ে যেতে হয়। কারণ মেয়েটি সুমনের বউ রত্না।

রত্না জানি কেমন। এমনিতে সে বেশ হাসিখুশি-চঞ্চল। কখনই তার সাথে কথায় পারা যায় না। কিন্তু রত্না যখনই বিছানায় যায়, রত্না যখনই নগ্ন হয়; তখনই কেমন যেন সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তার শরীর তো নড়েই না, মুখও নড়ে না। হাঁসেও না আবার কাঁদেও না। মনে হয় কেবল নিস্তেজ হয়ে পড়ে থেকে সুখটুকু নিয়ে নেয়।

কিন্তু সুমনের এমন মেয়ে ভাল লাগে না। বিছানায় কোনও মেয়ে যদি একটিভ না থাকে, বিছানায় কোনও মেয়ে যদি চঞ্চল না থাকে, বিছানায় কোনও মেয়ে দি লাফিয়ে সুমনের উপর নাই উঠে পড়ে তাহলে কিসের আবার যৌনজীবন।

তাই ইদানিং সুমন বিছানায় যাওয়ার আগে এলকোহল নেয়। রত্নাও এলকোহল নেয়। তারপর সুমন রত্নাকে তার ওপরে বাসায়। তারপর সারারাত মাতলামি করে। মাতলামি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সুমন আর রত্না।

পাল্প৪৭.

রহমান সাহেবের বয়স পঞ্চান্ন কি ষাট হবে। এখনও তাকে দেখলে মনে হয় তাগড়া যুবক। কয়েক মাস আগেই সম্ভবত মার্চেই হয়ে গেল তার বউয়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এক ছেলে এক মেয়ে। সবাই দেশের বাইরে থাকে। ছেলেটা সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কখনই বাঙলাদেশে আসতে চায় না। মেয়েটা সাইকিয়াটিস্ট। আমেরিকাতেই থাকে। মার সাথে এর আগে ও বাঙলাদেশে এসেছে। কিন্তু মা মারা যাবার পর এক বারও তার পা বাঙলাদেশে পড়েনি। রহমান সাহেব বাঙলাদেশে একাই পড়ে থাকেন। গ্রামের আত্মীয় মতন একটা ছেলে আছে। তার বাসাতেই থাকে। সেই যা দেখাশুনা করে। ছেলে-মেয়েরা তাকে বাঙলাদেশ ছেড়ে বিদেশে চলে আসতে বলে। কিন্তু রহমান সাহেব যেতে চান না। তার অস্বস্তি লাগে। বাঙলাদেশেই উনি মরতে চান। এবঙ কবরটা চান তার বউয়ের পাশেই গ্রামের বাড়িতে।

রহমান সাহেব ঢাকা একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। ঠিক পড়ান না, সময় কাটানই বলা যায়। এত সময় একা একা তিনি কিভাবে কাটাবেন, এর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের সাথে পড়াশোনা নিয়েও থাকা যায় আবার সময়টাও ভাল কাটে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়েই জবা নামের একটি মেয়ের সাথে রহমান সাহেবের বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে যায়। বলা যায় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ান্যান্য ছেলেমেয়েদের চাইতে জবার সাথেই বেশি সময় কাটান তিনি। জবাকে তার ভালও লাগে। রহমান সাহেবের ভযসের ভারিক্কিটা দিন দিন কেমন যেন কমতে থাকে। চঞ্চলতা বাড়তে থাকে। জবাকে নিয়ে শপিঙএ বের হন। নতুন নতুন পোশাক কেনেন। নিজে পড়েন। জবার জন্য কেনেন। বিকেলে ঘুরতে বের হন। রহমান সাহেব নিজের যৌবন যেন ফিরে পেলেন। তবে রহমান সাহেব জবাকে কি যেন বলতে চান, প্রায়ই কি যেন বলতে চেয়ে থেমে যান। বিষয়টা জবাও খেয়াল করেছে। কিন্তু জবা কখনও সেই প্রসঙ্গ টানেনি।

একদিন রহমান সাহেব জবাকে তার বাসায় ডিনার করতে বলেন। জবার রাজি না হওয়ার অবশ্য কোনও কারণ নেই। জবা যথারীতি বাসায় আসল। বিশাল আয়োজন। বিশাল বাড়ি। কিন্তু কোনও আয়া নেই, বুয়া নেই। রহমান সাহেব নিজেই খাবার পরিবেশন শুরু করেন। পরে জবাও তাতে যোগ দেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে শুরু হয় আড্ডা।

আড্ডায় রহমান সাহেব হঠাত করেই তার হাতটা জবার হাতের ওপর রাখেন। জবা রহমান সাহেবের দিকে পাপড়ির মত চোখ মেলে তাকায়। রহমান সাহেব তার ছোট বেলার কথা বলেন। প্রেমে পড়ার কথা বলেন। রহমান সাহেব জবার শরীরের সাথে নিজের শরীর লাগিয়ে বসেন। জবা পাপড়ির মত নুইয়ে পড়ে রহমান সাহেবের দিকে। রহমান সাহেব তার বিয়ের কথা বলেন। তার ক্যারিয়ারের কথা বলেন। রহমান সাহেব দুই হাতে জবার মুখমণ্ডল তুলে ধরেন। জবা পাপড়ির মত হেলে পড়ে রহমান সাহেবের মুখের দিকে। রহমান সাহেব জবার ঠোঁটে ঠোঁট মেলান। জবা আরও লাল থেকে লাল হতে থাকে। রহমান সাহেব জবার বুকের ওপর চুমু এঁকে দেন। জবা রহমান সাহেবের চুল দু হাতে টেনে ধরে রহমান সাহেবের কপালে একটা চুমু দেয়। রহমান সাহেব চুমু খেতে খেতে জবাকে আরও লাল, লাল থেকে তীব্র লাল করে তুলেন। রহমান সাহেব এক এক করে জবার ব্রার হুক খুলেন, পাজামা খুলেন। জবা রহমান সাহেবের শার্ট খুলে দেয়, পেন্ট খুলে দেয়। রহমান সাহেবের শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে আসে। রহমান সাহেবের শরীর হঠাত করেই কেমন ক্লান্ত হয়ে ওঠে। রহমান সাহেবের পুরো শরীর হঠাত করেই কেমন অবশ হয়ে যায়। রহমান সাহেবের শরীর হঠাত করেই কেমন নিশ্চুপ হয়ে যায়। একটি বিশাল সবুজ মাঠের ওপর রহমান সাহেব ক্লান্ত, অবসন্ন, নিশ্চুপ, অবশ,নিস্তেজ একটি শরীর নিয়ে একা পড়ে থাকেন; আর একটি নারী ঘোড়া এক মনে দৌঁড়াতে থাকে , দৌঁড়াতে থাকে।


Warning adult game

পাল্প ৪৮.

আমি তখন স্কুলে পড়ি। আমাদের পাশের বাড়িতেই ছিল আমার স্কুল শিক্ষকের বাসা। উনি অবশ্য ভাড়া থাকতেন। স্যারের তখন বেশ বয়স। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। স্যারের বাসায় শুধু পড়তে যেতাম না। সময়ে-অসময়ে যে কোন সময়েই বলা যায়, স্যারের বাসায় চলে যেতাম। স্যার সে বছরই বিয়ে করেন। লোকজন বলত স্যারের এত বয়স কিন্তু বউটা কেমন ছোট ছোট। স্যার বেশি বয়সে বিয়ে করলেই কি, আমাদেও তো নতুন একজন ভাবী হল। স্যারের বাসা শুধু স্যার আর ভাবী। একেবারেই ঝামেলাবিহীন একটা পরিবার। স্যার প্রায় সময়েই বাইরে থাকতেন। আর পুরো বাসায় একা একা বসে থাকতেন ভাবী। আমি মাঝে মাঝে যেতাম। নতুন বউ, সে হিসেবে আবার আমার লজ্জাও লাগত। ভাবী আসার পর স্যারের বাসায় তেমন একটা যেতে চাইতাম না। একবার কি একটা কারণে স্যারের বাসায় গিয়ে দেখি স্যার নেই, একজন অপরিচিত লোকের সাথে ভাবী হেসে হেসে কথা বলছে। সেদিন আর আমি ভাবীর সাথে কথা বলিনি। কথা না বলেই চলে এসেছি। এরপর প্রায়ই দেখতাম স্যার যখন বাসায় থাকে না তখন ওই লোকটা স্যারের বাসায় আসত। একদিন ভাবী পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন। উনি আমি কোন ক্লাসে পড়ি-এরকম অনেক প্রশ্ন করেছিলেন।

একদিন স্যারের বাসায় গিয়ে দেখলাম স্যার আর ভাবী অনেক ঝগড়া করছে। ভাবী কান্নাকাটি করছে আর স্যারের সাথে রেগে কথা বলছে।

একদিন বাসায় গিয়ে দেখলাম স্যারের গায়ে পড়া সাদা শার্টটা রক্তাক্ত আর স্যার দরজায় হাটু গেড়ে বসে আছে। ভাবীকেও আশেপাশে দেখলাম না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম- স্যার কি হয়েছে? স্যার বললেন- কিছু না- তোর ভাবী কতগুলো মুরগি কাটতে দিয়েছিলেন। এগুলো সেসবের রক্ত।

পাল্প ৪৯.

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ছিলাম। যখন যা খুশি তাই করতাম। হাতে সব সময়ই একটা পিস্তল রাখতাম। আর যা খুশি করে বেড়াতাম। ক্ষমতা যে কি মজার জিনিস এটা উপভোগ না করলে টের পাওয়া যায় না।

আমরা যেখানেই যেতাম, বিশাল বহর নিয়ে যেতাম। এমনকি ক্যান্টিনে, হোটেলে যেখানেই খাওয়া- দাওয়া করতাম; পিস্তলটি রাখতাম টেবিলের ওপরে। এতে সুবিধা ছিল দুইটা প্রতিপক্ষ যদি আমাদের ওপর হামলা চালায় তাহলে তাৎক্ষণিক গুলি করা যাবে। আর পিস্তলটি দেখলে আশ-পাশের লোকজনও ভয়ে থাকে। এমনকি হোটেল থেকে খনও টাকা-পয়সাও চায় না। সবকিছু আগেভাগে চলে আসে।

আমাদের বিভাগেই পাপড়ি নামের একটি মেয়েকে আমি খুব পছন্দ করতাম। পছন্দ করতাম মানে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই পাপড়ির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। আমাদের প্রেম হওয়াটাও বেশ মজার ছিল। একদিন একা একা ওদের হলে গিয়ে পাপড়িকে ডেকে পাঠালাম। পাপড়ি একটি নীল রঙের জামা পড়ে এসেছিল। জামার রঙটা এখনও আমার মনে পড়ে। আর পাপড়িকে লাগছিল অসম্ভব সুন্দর। পাপড়ি আমাকে দেখে বিস্মিত হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম আমি যে পাপড়িকে পছন্দ করি এটা পাপড়ি জানে। আমরা হলের সামনে মাঠের ওপর গিয়ে বসলাম। মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর আমার পিস্তলটা রাখলাম। তারপর সেই সবুজ ঘাসের ওপর পিস্তলটা আঙুল দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে চোখ নিচে নামিয়ে আমি পাপড়িকে বললাম- আমি তোমাকে ভালবাসতে চাই। পাপড়ি হা হা করে হেসে ওঠেছিল। আমি প্রথমে ভরকিয়ে যাই। তারপর পাপড়ি আমার হাতের ওপর হাত রাখে। দীর্ঘদিন আমার একসাথে চা-সিগারেট- রঙবাজি সবই করেছি। একদিন আমাদের গ্রুপেরই এক ছোট ভাই খবর দেয়- পাপড়ির আরেকটি ছেলের সাথে প্রেম আছে। সে সেই ছেলেটির সাথে পাপড়িকে অনেকবার ঘুরতে দেখেছে। আমি তাকে সেই ছেলের সমস্ত তথ্য যোগাড় করে দিতে বলি। তারপর হটাত একদিন সে খবর দেয় পাপড়ি সেই ছেলেটির সাথে ক্যাফেটারিয়ায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। দলবল নিয়ে আমি ক্যাফেটারিয়ায় চলে যাই। ক্যাফেটারিয়ার সমস্ত গেট বন্ধ কওে দেই যাতে ছেলেটি পালিয়ে যেতে না পারে। আশপাশের সব লোকজনদেও তাড়িয়ে দেই। পাপড়ি আর সেই ছেলেটি আমাকে দেখে বেশ বিস্মিত ও হতচকিত হয়ে যায়। আমি পিস্তল নাড়াতে নাড়াতে পাপড়ির পাশে গিয়ে বসি। পাপড়ি আর সেই ছেলেটি মাথা নিচু করে থাকে। আমি সেই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে পাপড়ির মুখ আমার মুখের কাছে এনে একটা চুম্বন করি। আমি পিস্তলটি ঘুরাতে ঘুরাতে ছেলেটির দিকে তাক করি। পাপড়ি কেঁদে ফেলে। আমি পিস্তলটি ছেলেটির হাতে গুঁজে দিয়ে পাপড়িকে আরেকবার চুমু দেই। ছেলেটিকে আমি গুলি করতে বলি। ছেলেটি পিস্তলটি হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। তারপর পিস্তলটি ফিরিয়ে নেই। পাপড়ি আর আমার হাত একসাথে করে টেবিলের ওপর রাখি। পাপড়ির হাতের তলার ওপর আমার হাতের তলা। বা হাত দিয়ে একটি গুলি ফুটিয়ে দেই আমাদের দুই হাতের ওপর। ছেলেটি চিৎকার করে ওঠে। আর আমার আর পাপড়ির হাত দিয়ে চুইয়ে পড়তে থাকে রক্ত।

পাল্প ৫০.

কোন কথা না বলেই সবুজকে বেশ কয়েকটি কিল-ঘুষি মারে প্রতিপক্ষের লোকজন। বিষয়টা এত দ্রুত আর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যে সবুজ গ্রুপের লোকজনও তা বুঝতে পারে না। ঘটনা ঘটার পরপরই সবুজের গ্রুপের লোকজন এর প্রতিষোধ নিতে চায়। কিন্তু সবুজ বাধা দেয়। কারণ সবুজের ভাষায় এটাই সবুজের রাজনীতি।

কয়েকদিন পর ক্যাম্পাস পোস্টারে ছেয়ে যায়। পোস্টারে লিখা- রহমান গ্রুপের হামলায় আহত সবুজ। এটা নিয়ে ক্যাম্পাস তখন তোলপাড় আলোচনা। বিভিন্ন গ্রুপ কয়েকবার করে শো ডাউন দেয়। সবুজের গ্রুপের লোকজন চুপচাপ থাকলেও প্রচার চালাতে থাকে সবুজ ক্যাম্পাসে কখনও কোন খারাপ কাজ করেনি। এখনও পর্যন্ত সবুজের ক্যাম্পাসে কোন মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছে এমন কেউ দেখাতে পারবে না। অথচ সবুজের ওপর হামলা করল রহমান গ্রুপের পুলাপান। ক্যাম্পাসের ছাত্রদের মুখেও এই আলাপ চলতে লাগল।

এই ঘটনার পর রহমান গ্রুপ আরও শক্তিশালী আকার নেয়। প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ রহমান গ্রুপ ক্যাম্পাসে ঘুরাফেরা করা শুরু করল। ছাত্ররাও আতঙ্কিত তখন। কখন কি হয়? এর কয়েকদিন পরই রহমান গ্রুপ সবুজ গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। দুপুর বেলা ডিপার্টমেন্টের সামনে থেকে সবুজকে বের করে আনে। সবুজকে সবার সামনে মারধর করে। সবুজ গ্রুপের ছেলেরা খবর পেয়ে আসে। কিন্তু সবুজ তাদেরকে কোন কিছু করতে নিষেধ করে। কারণ এটাই সবুজের রাজনীতি।

ক্যাম্পাসের সব ছাত্ররা এই ঘটনা দেখছিল। এক পর্যায়ে সবুজ ওঠে যখন চলে যাচ্ছিল, তখন রহমান গ্রুপের একজন সবুজের দিকে চাকু মারতে এগিয়ে আসতে থাকে। ক্যাম্পাসের ছাত্ররা তখন রহমান গ্রুপের এই ছেলেকে বাধা দেয়। এ সময় সবুজ রহমান গ্রুপের ছেলেদের ওপর তার ছেলেদের হামলা চালাতে বলে। কারণ এটাই সবুজের রাজনীতি।

রহমান গ্রুপের সব ছেলেকে সব ছাত্ররা মিলে সেদিন বেধরক পেটায়। রহমানকে সবুজ গ্রুপের ছেলেরা ধরে নিয়ে আসে সবুজের কাছে। সবুজের কাছে মাফ চাইতে বলে আর ক্যাম্পাসে কখনও আসবে না হাতজোর করে ছাত্রদের এই কথা বলতে বলে। কারণ এটাই সবুজের রাজনীতি।

এরপর দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে রহমান গ্রুপকে দেখা যায়নি। হঠাত একদিন সবুজের সাথে রহমানকে ঘুরতে দেখে ছাত্ররা। বলাবলি হতে থাকে, সবুজই আবার রহমানগ্রুপকে নিয়ে আসছে ক্যাম্পাসে। কারণ এটাই সবুজের রাজনীতি।


Warning adult game