Tuesday, January 9, 2024

আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজের কবিতা : দুপুর মিত্র

 

আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজের কবিতা
দুপুর মিত্র

প্রথম প্রকাশ: ২২ মে , ২০১৯

বইটি বিক্রির জন্য নয়

কপিলেফ্ট। এই বইয়ের সমস্ত লেখা কপিলেফ্ট। এই বইটির যে কোন অংশ যে কেউ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল লেখক ও লেখাকে অবিকৃত রেখে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি ব্যতিরেকেই যে কেউ নকল এবং পরিবেশন করতে পারবেন। এছাড়া বইটি কেবল মাত্র ই মেইলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করে যে কেউ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পাবেন। ই মেইল ঠিকানা-
mitra_bibhuti@yahoo.com

প্রকাশক
দুপুর মিত্র

প্রচ্ছদ
দুপুর মিত্র



ভূমিকা
গোলাম কিবরিয়া পিনু
কবি দুপুর মিত্রের ‘আত্মপ্রকৃতি সিরিজ’-এর ৫০টি কবিতা কাছে টেনে নিয়ে পড়লাম, অনেকের হাতে কবিতা যখন বিষয়বস্তুহীন শূন্যজাত হয়ে উঠছে ভয়াবহভাবে, পাঠকেরাও এইসব কবির উন্নাসিকতায় বিরক্ত, তখন এই কবির কবিতা পড়তে গিয়ে নিজের জীবনের শৈশবকাল ও জীবনের অনুসঙ্গ কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে শুধু পাই না, এইসব অনুসঙ্গকে ভিত্তিমূল করে বিভিন্ন বোধও উসকে দেন তিনি। স্বভাব কবির মত নয়, পরিকল্পিতভাবে বিষয় নির্বাচন করে কবিতার শিল্পশর্ত পূরণ করে তিনি কবিতা নির্মাণ করেছেন, এটাই তো হওয়া উচিত এই কালের কবিদের সৃজনশীল স্পর্ধা! আমরা যে যান্ত্রিক জীবন-প্রণালীকে ত্রমাগত গ্রহণ করছিÑপ্রশ্নহীনভাবে, বিবেচনাহীনভাবে, তাতে জীবনের সৌন্দর্য ও মানবিকতা কি বিপর্যস্ত হচ্ছে না? এমন দার্শনিকতাবোধ এসব কবিতার পরতে পরতে তিনি উচ্চারণ করেছেন। আমরাও মনে করি কবিরা শুধু নিছক অক্ষরজীবী নন, অগ্রসরমান মানুষও, সেই দিকটির উজ্জ্বলতা কবি দুপুর মিত্রের কবিতায় আমরা পাঠক হিসেবে পেয়ে যাই। পাঠক হিসেবে তার কবিতায় শিল্পসুষমা আরও কিছু খুঁজে পাবো, এটা বলা যেতে পারে।

দুপুর মিত্রের কবিতা:
বাইনোকুলারে দেখা বদলে যাওয়া মানুষের মুখ ও মুখোশ্রী

মুক্তি মণ্ডল
আমরা জানি কবিতার সুনির্দিষ্ট কোনো সঙ্গা উপস্থাপন করা সম্ভব নয়, মানব মনের মত কবিতাও জল-হাওয়া, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও সমাজ ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নির্মিত হয়, গড়ে তুলতে হয় নিষ্ঠার সাঙ্গাতের আলিঙ্গনে। কবিতা অনেক রকমের হয়, হতে পারে, তার ধরণও হয় ভিন্ন ভিন্ন, হতে পারে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে বহুমাত্রিক ও বহুরৈখিক। দুপুর মিত্র ঘোষণা দিয়েই কবিতা নির্মাণ করেছে আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজ। নিজের কথামালার সরল বিবৃতির মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে নিজেরই জীবনানেখ্য। কোনো ভণিতা নেই। নাগরিক জীবনের দৃষ্টিকটু জটিলতা নেই। পরিবেশ-প্রতিবেশ কিভাবে বদলে গেছে সেসবের সহজ বর্ণনা তথ্যচিত্রের মত উঠে এসেছে। একজন সমাজ গবেষক যেভাবে সমাজ পরিবর্তনের চিত্র নানাবিধ সংগ্রহকৃত তথ্য ও পর্যবেক্ষণকৃত তথ্যের সমন্বয়ে বিধৃত করেন এবং পরিবর্তনের নতুন রূপের ছটা আমাদের কাছে উন্মোচিত হয়, একইরকমভাবে দুপুর মিত্রের কবিতাও আমাদের সেইরকম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। দুপুর মিত্র তাঁর যাপিত জীবনের সবকিছুকেই তিনি তাঁর কবিতার ভিতর ঠেসে দিয়েছেন। এর ভিতর জীবনযাপনের টুকরো টুকরো নানা ধরণের স্মৃতি, দেখা, নগরায়নের বাইরে কর্পোরেট ও এলিট সমাজের বাইরে বেড়ে উঠার সহজ ও সাধারণ প্রক্রিয়াও উঠে এসেছে খোলামেলাভাবে। বর্তমান সময় যন্ত্রনির্ভরতার দিকে যাচ্ছে, এই সময়ের বাইরের চেহারায় ঝকমক করে উঠছে বণিক পুঁজির মসৃণতা, তারই কাঠামোর চাকচিক্যের ঝলকে একদল মানুষ সুবিধাভোগ করছে আর একদল মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাঁরা শ্রম দিচ্ছে। শ্রমের মূল্য পুরোটা তাঁদের পকেটে ঢুকছে না। এটা একটা দৃষ্টিকটু বৈষম্য, সামাজিক বৈকল্যও বটে—এসব সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির পরিবর্তন অবলোকন করলে টের পাওয়া যায়। দুপুর মিত্রের কবিতায় সরাসরি এসব নাই, কিন্তু তাঁর কবিতায় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের নানা অনুষঙ্গ আছে। নিজের বেড়ে উঠাসহ আশপাশের যতরকম বদল ঘটছে তা দুপুর মিত্রের এথনোবাইনোকুলারে সবকিছু উঠে এসেছে। যদিও তিনি বলছেন এটা তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি, কিন্তু পাঠক হিসেবে মনে হচ্ছে এর ভিতর ঢুকে গেছে আমাদের পরিবর্তিত সমাজ, দেশকাল ও বদলে যাওয়া বহু মানুষের মুখ ও মুখোশ্রী।
ভূমিকা
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
ইতঃপূর্বে আমরা দুপুর মিত্রের নানা গোত্রের কবিতা পড়েছি। যেমন ভৌতিক কবিতা, বৈজ্ঞানিক কবিতা, হ্যাশট্যাগ কবিতা, ব্যাখ্যা কবিতা, ভাট কবিতা, ফ্লার্ফ কবিতা ইত্যাদি। একটা নির্দিষ্ট ধরনের ভিতরে গিয়ে নয়, নানাভাবে ভাবনাকে অবগুণ্ঠনরহিত করে পাঠকের কাছে নিয়ে আসার প্রবণতা আমরা এই কবির কবিতায় দেখি। তো এ পর্যায়ে আমরা পড়বো দুপুর মিত্রের ‘আত্মপ্রতিকৃতি’ সিরিজের কবিতা। এই যে আত্মপ্রতিকৃতি বা প্রতিকৃতি কবিতা এইটা বাঙলা কবিতায় বা বিশ্ব কবিতায় পোর্টরেট বা সেল্ফপোর্টরেট পোয়েম নতুন কিছু নয়, অনেকেই লিখেছেন। কিন্তু দুপুর যেহেতু সিরিজ হিশেবে অনেকগুলি কবিতাই লিখেছেন, কবিতাগুলি যেনো ভাঙা আয়নার খণ্ড খণ্ড টুকরোয় আলাদা ভাবে নিজেকেই দেখিয়েছেন। ফলত সব মিলিয়ে একটা বিস্তারিত সিনারিও আমরা পেয়ে যাই। আমরা আত্মপ্রতিকৃতি বা নিজেকে অনেকভাবেই দেখতে পারি। নার্সিসাস জলের আয়নায় নিজের প্রতিকৃতি দেখতে পেয়ে তার প্রেমে পড়ে যায়। এটি যে কেউ নয়, তার নিজেরই প্রতিচ্ছবি মাত্র, তা সে বুঝতে পারে না। সে হাত বাড়িয়ে প্রতিবিম্বটি ধরতে চাইলে তা পানিতে হারিয়ে যায়। নিজের সৌন্দর্যের মায়া কাটাতে না-পেরে একসময় সে বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মৃত্যু পর্যন্ত সে প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তো সচেতনভাবে নিজেকে দেখার প্রথম এবং প্রধান উপায় হচ্ছে আয়না। তবে আয়না পজিটিভ ইমেজ দেখায় না, দেখায় নেগেটিভ ইমেজ। এর বাইরে নিজের মতো আরেকজনকে দেখে মানুষ নিজের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা নেয়। এই দুই মিলে মানুষের মাথার ভিতর জমা হয় নিজের রূপ, যাকে মানুষ স্বপ্নের ভিতর দেখে, কল্পনা করতে পারে। আর স্বপ্ন কিংবা কল্পনায় কিন্তু মানুষ নিজেকে অবিকলই দেখতে পায় মানে নিজের পজিটিভ আকার। এই গেলো মানুষের নিজেকে দেখার প্রাইমারি বিষয়-আশয়। কিন্তু মানুষতো সৃজনশীল, মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। মানুষের এই সৃজনশীলতা ও চিন্তাশীলতাই নিজেকে নানারূপে দেখার জন্যে দায়ী। পুনর্জন্মের ধারণাও অনেকটা দায়ী। জীবনদাশ বলেছিলেন, ‘…হয়তো বা হাঁস হবো/কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়’… ইত্যাদি। ইংরেজিতে পার্সোনিফিকেশন বলে একটা টার্ম আছে—মানবীয় দোষগুণ ইতর ও জড়ের মধ্যে প্রতিস্থাপন করাই মূলত পার্সোনিফিকেশন। তো কবি দুপুর মিত্রের আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজের কবিতাসমগ্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এই কবি মূলত নিজেকে নানা রূপে পার্সোনিফিকেশনই করেছেন। কখনো গাছ রূপে, কখনো চেয়ার, কখনো রাস্তা বা হাওয়া বা উঠান, কখনো অন্যের ঘরের বিছানা, কখনো ঘাস বা মেঘ বা মাটি, রোদ, ফসলের ক্ষেত, সমুদ্র বা কবিতা ইত্যাদি নানারূপে নিজেকে তিনি বর্ণনা করেছেন। ‘আমি’ আশ্রয়ে এইসব বিষয়াবলি কবির আত্মপ্রতিকৃতি রূপে প্রকাশ পেয়েছে। আর ‘তুমি’ কে প্রশ্ন করার মাধ্যমেও নিজের অবস্থারই বিবৃতি দিয়েছেন এই কবি। আসুন পড়ি কবি দুপুর মিত্রের আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজের কবিতাসমগ্র।

আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজের কবিতা
০১.
আমি ছোট বেলায় রিং ঘুরাতাম
রিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কোথায় চলে যেতাম…
বন্ধুরা প্রতিযোগিতা করে রিং চালাতাম
রিং ঘুরত তার পিছনে ঘুরতাম আমরা
আমি এখন বড় হয়েছি
এখন আর রিং ঘুরিয়ে দৌড়াই না
নিজেই কবে রিং হয়ে গেছি টের পাইনি
শুধু টের পাই আমি ঘুরছি তো ঘুরছিই
০২.

আমি যখন কাগজে লিখতাম
কতবার কাটাকাটি করতাম
নকশা তৈরি হত
সেই নকশা থেকে হত কবিতা
সব লেখাই থাকত
দেখা যেত কোন রাস্তা ধরে হঠাৎ কোন ঘরে যেন ঢুকে গেছি
আমি এখন কম্পিউটারে লিখি
কোন কাটাকাটি নাই
আগের লেখা বিলীন করে দিয়ে ভাসে নতুন লেখা
মুক্তোর মত হাসে
কেবল কাটাকাটি করতে গিয়ে যে পথ দেখা যেত
সেই পথের হদিশ মিলে না
০৩.

আমি যখন কাঁচা রাস্তা ছিলাম
বৃষ্টি হলেই জলে ডুবে যেত ভরে যেত কাদায়
জলকাদা পেরিয়েই চলাচল করত
কখনো তেমন কোন গাড়ি ছিল না
সন্ধ্যার আগেই লোকজন হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরত
আমি এখন পাকা রাস্তা
চকচকে থাকে
একের পর এক গাড়ি চলে
কাউকে কখনো তেমন হাঁটতে দেখি না
এত মসৃণ পথ অথচ এখন অনেকে অনেক রাত হলেও বাড়ি ফিরে না
০৪.

আমি যখন শৈশবে ছিলাম
তখন মনে হত কবে বড় হব
বড় হলে স্বাধীন হয়ে যাব
যেখানে খুশি সেখানে যাওয়া যাবে
কেউ কিছু বলবে না

আমি এখন যখন বড় হয়েছি
তখন মনে হয় শৈশবেই স্বাধীন ছিলাম
শৈশবে কোন চিন্তা ছিল না
কখন বাজারে যেতে হবে
কখন অফিসে যেতে হবে
কিভাবে বাঁচাতে হবে সংসার

০৫.

আমি একসময় লাঙল ছিলাম
ধীরে ধীরে কর্ষণ করতাম মাটি
মাটি খুরলে বেড়িয়ে আসত সার
কৃষকেরা গান ধরত আর ফলত আবাদ
আমি এখন বিশাল বড় ট্র্যাক্টর
নিমিষেই চূর্ণ করে মাটি,
পরে দিতে হয় সার
আবাদ হয়
কিন্তু কৃষকের মুখো ফোটে না হাসি আর গান

০৬.

আমি একটি পুরুনো বই
ম্লান হয়ে গেছি
ময়লা জমে গেছে শরীরে
পোকা হয়েছে
ধীরে ধীরে খেয়ে নিচ্ছে আমায়
যখন নতুন ছিলাম অনেকে আমার গন্ধ শুকত
পড়তে পড়তে আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যেত
এক একটি পৃষ্ঠায় এক একটি লাইনে থাকত গভীর মনোযোগ
এখনো মানুষ আমাকে নিয়ে স্মৃতি হাতড়ায়, পুণর্বার পড়ে, হাসে কাঁদে
শুধু নতুন বইয়ের মত কেউ গন্ধ শুঁকে দেখে না আমায়।
০৭.

আমি একটি ইজি চেয়ার
মানুষেরা আমার উপর দোল খায়
প্রতিদিন হেলান দিয়ে বসে
গান শুনে
প্রতিদিন আমার উপরে পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে প্রেমিকার কথা ভাবে
অনেকে বসার আগে আমাকে ভাল করে দেখে নেয়
অনেকে ঠিকঠাক বসতে পারে না
আমি তাদের সাহস দেই বসার
আমার উপরে বসে অনেকে ঘুমিয়ে পড়ে
শুধু আমি জেগে থেকে মায়ের মত তাকে দোল দিয়ে যাই।
০৮.

আমি মানুষের খাবার থালা
মানুষের রান্না ঘরে থাকি
প্রতিদিন ধুয়ে মুছে রাখা হয়
খাবার আগে আমাকে ধুয়ে নেয়
প্রতিদিন আমার উপরে রেখে মানুষেরা খাবার খায়
অনেকে খাবার আগে আমাকে ভাল করে দেখে নেয়
অনেকে খাবার শেষ হলে অল্প কিছু খাবার রেখে দেয় ঈশ্বরের জন্য
সারাদিন সারারাত আমি কেবল একলা থাকি
সবাই আমার উপর খাবার রেখে খায়
কেবল আমি অভুক্ত থাকি

০৯.

আমি পথ
প্রগতির মুখ
যে শান্ত, তীক্ষ্ণ,গভীর
যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়, ভালবাসে মানুষ আর গতি
যে আঘাত দেখেছে, দেখেছে মানুষের হেঁটে চলা আর অগ্রগতির চাকা
যে ঘৃণা করে কোলাহল, সংঘাত আর বাজে প্রতিযোগিতা
যার ভয় হয় বন্ধ হয়ে যাবার, আটকে যাবার, মানুষহীন থাকার
যে স্বপ্ন দেখে প্রেম, সফলতা, উন্নতির
যে পেয়েছে শুধু মানুষের বঞ্চনা
অথচ শুয়ে থাকে মানুষের পাশে
১০.

আমি হাওয়া
এর মানে এই না যে সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাই
এর মানে এই না যে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে
এর মানে এই না যে গাছপালা উপড়ে পড়ে
আমি হাওয়া
এর মানে এই না যে সমুদ্র থেকে উঠিয়ে আনি ঝড়
এর মানে এই না যে অজস্র মানুষ বাস্তুহারা
এর মানে এই না যে ফসল শেষ হয়ে গেছে এক রাতে
আমি হাওয়া
এর মানে এই না যে ভেসে আসে শুধু কান্না
এর মানে এই না যে চারিদিকে হাহাকার
এর মানে এই না যে মরে গেছে গৃহপালিত সকল পশু
আমি হাওয়া
কেন সব উড়ে যাবে?
কেন মেঘ ভাসবে না হাওয়ায়?
কেন ঘুরবে না শিশুর হাতের ঘূর্ণি ?
বন থেকে যে সুগন্ধ ভেসে আসে মানুষের ঘরে তার
নামও হাওয়া
১১.

আমি একসময় কৃষকের মুখে মুখে ছিলাম
কৃষকেরা কিস্সা বলত
ছড়া কাটত
কৃষকেরা একসাথে বসে কৃষির কথা বলত
বলত কিভাবে এক রাতে সোনাভরা ধানে গোলা ভরে যায়
সকালে কিভাবে রঙিন হয়ে ফোটে কিষাণ-কিষাণির স্বপ্ন।

আমি এখন কৃষকের মোবাইলে মোবাইলে
কৃষকেরা অনেক কথা বলে
হাসে
রং তামাশা করে
মানুষেরা বলে কৃষির উন্নয়ন কৃষকের উন্নয়ন
কৃষকের কতশত উন্নয়নের খবর
শুধু কৃষকের আত্মহত্যার খবর কারো জানা হয় না।

১২.

শ্যাওড়াগাছ
কালো,নিশ্চুপ, অন্ধকার,রহস্যময়
পছন্দ করে সবুজ পাতা, মানুষের পূজা, অঞ্জলি
ভয় কেউ তাকে কেটে ফেলে,পরিস্কার করে, পুড়িয়ে দেয়
তাই মানুষকে ভয় দেখায়
মানুষের কাছে থেকে
শ্যাওড়া গাছ।
১৩.

আমি একসময় ভরা নদী ছিলাম

শিশুরা সাঁতার কাটত
মানুষেরা গোসল করত
জেলেরা মাছ ধরত
পাল তুলে দিয়ে বাতাসকে বলে দিত যেদিকে দুচোখ যায় যাও।

আমি এখন ভরাট নদী

এখানে এখন ঘরবাড়ি রাস্তা
মানুষেরা বাসা করে থাকে
ড্রেনের কালো জলে বয়ে যায়
শুধু কেউ বাতাসকে বলে না চলে যাও মন চায় যেদিকে।

১৪.

বটবৃক্ষ
স্থির,ধ্যানী,প্রাজ্ঞ,একা
পথিকের আশ্রয়
পছন্দ করে কথা বলতে, হাত ধরে বসে থাকতে, স্বপ্ন দেখতে
ভয় নিঃসঙ্গতা, একা থাকা, মৃত্যু
তাই সকলের আশ্রয় হয়ে
মানুষের
বটবৃক্ষ।
১৫.

নদী
শান্ত, স্নিগ্ধ, রহস্যঘন, উচ্ছল
জেলেদের মা
পছন্দ করে ঘুরতে, হাসতে, নাচতে
জেলেদের বুকের কাছে রাখতে
ভয় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঢেউ
তাই চাঁদের আলোতে হাসিমাখা মুখে
একাকী
নদী।
১৬.

ধানক্ষেত
সবুজ, সোনালি, দুরন্ত, স্নিগ্ধ
কৃষকের পুত্র
পছন্দ করে দৌড়াতে, ভিজতে, ভাসতে
কৃষকের স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে
ভয় শিলাবৃষ্টি, বন্যা, খড়া
তাই বাতাসের ঢেউয়ে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে এখনো একাকী
ধানক্ষেত।
১৭.

তুমি কি আমার কান্না দেখেছ

চকচকে মুক্তা
নুনতা স্বপ্ন
স্বচ্ছ ভেজা
চাপা অভিমান

মাটি।



১৮.

আমি একসময় উঠান ছিলাম

মানুষেরা আমার কাছে এসে গোল হয়ে বসত
গল্প করত, শিশুরা দৌড়াত
নির্ভয়ে আনন্দে কেটে যেত।

আমি এখন বাসার ছাদ

মানুষেরা এখনও আমার কাছে এসে গোল হয়ে বসে
গল্প করে, শিশুরা দৌড়ায়
তবে ভয় হয় এই বুঝি কেউ ছাদ থেকে পড়ে যাবে ।
১৯.

আমি একসময় মাটির পাত্র ছিলাম

মানুষেরা আমার কাছে খাবার রাখত
খাবার খেত
পরিস্কার করে রেখে দিত।

আমি এখন প্লাস্টিকের পাত্র

মানুষেরা এখনও আমার কাছে খাবার রাখে
কিন্তু খাবার খেতে ভয় পায়
ভয় হয় কেউ বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
২০.

আমি একসময় সাদাকালো টিভি ছিলাম

সমস্ত পৃথিবী সাদাকালো দেখাত
ঘরবাড়ি গাছপালা নদীনালা সব
এমনকি মানুষের স্বপ্নও।

আমি এখন রঙিন টিভি

এখন সবকিছুই রঙিন দেখা যায়
পৃথিবী মানুষ রাজা প্রজা সব
এমনকি মানুষের কান্না দুঃখ বেদনা মৃত্যুও।
২১.

আমি কালো

অন্ধকারের পুত্র
যার প্রয়োজন ফুটে উঠা, উজ্জ্বল, সুন্দর
যে ভালবাসে কালো মেয়েকে, মায়াবী, শান্ত
যে দেখেছে আকাশের আড়ালে কালো মেঘের হাসি
যে ঘৃণা করে কাউকে ঘৃণা করা
যার ভয় আগুন এসে পুড়িয়ে যাবে তাকে
যার স্বপ্ন অন্ধকার হবার এত বিশাল আর বিদগ্ধ
কবিতার কালো অক্ষর যার খুব পছন্দ

কালো বাস করে অন্ধকারে, অন্ধকারের কালো।
২২.

আমি একসময় মানুষের স্মৃতিতে থাকতাম

তখন এত মোবাইল ক্যামেরা ছিল না
ছবিগুলো হৃদয়ে থাকত
চোখ বুজে সেই ছবি দেখতে পেতাম।

আমি এখন মানুষের তোলা ছবিতে থাকি

মোবাইল আর ক্যামেরায় তোলা অসংখ্য ছবি
এত এত নানা রকমের ছবি
এখন কোন ছবিই আর মনে ধরে না।
২৩.

আমি একসময় চিঠি ছিলাম

কবিতার মত লিখত আমায়
হাতে তুলে নিয়ে আদর করত
রেখে দিত যত্নে।

আমি এখন ইমেল বা এসএমএস

কোন প্রাণ নেই যেন আমার
মানুষ কোনোরকম দেখে আমায়
তারপর নাই করে দেয়।
২৪.

আমি একসময় টিনের চাল ছিলাম

বিদ্যুত চমকানো
বৃষ্টিস্নাত
ঝমঝম শব্দের

আমি এখন বিশাল ছাদ

রৌদ্রদগ্ধ
শ্যাওলাপড়া
কালো।
২৫.

আমি একসময় রৌদ্রতপ্ত ছিলাম

মাটিফাটা
চৌচির
তৃষ্ণার্ত

আমি এখন বরফশীতল

জলকাঁদাপূর্ণ
থৈথৈ
বন্যা।
২৬.

তুমি কি আমার আগুন দেখেছ

তপ্ত লাল
একরোখা গোয়ার
বাধাহীন নিশ্চুপ
রহস্যময় ভয়ংকর

কান্না।
২৭.

পুকুর
শান্ত, রূপালি, হাস্যময়ী, চঞ্চল
বৃষ্টির প্রথম পুত্র
পছন্দ করে রোদে হাসতে, বৃষ্টিতে থৈ থৈ করতে, একাকী থাকতে
সবসময় হাসিখুশি থাকতে চায়
ভয় পায় শুকিয়ে যেতে আর পাড় ভেঙ্গে গেলে
তাই সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে থাকত
পুকুর।

২৮.

তুমি কি আমার আঁকানো হাত দেখেছ

বলিষ্ঠ সুন্দর
পেশীবহুল ফর্সা
নতুন শাখা
নব পত্রপল্লব

বাস্তবে কুৎসিত।

২৯.

তুমি কি আমার চোখ দেখেছ

কাপড়ে বাধা
অন্ধকার চারপাশ
অনুভূতি বুঝে
যতটুকু দেশ

সফল।
৩০.

আমি মানুষের ঘরের বিছানা

মানুষের ঘরের ভিতর শুয়ে থাকি
প্রতিদিন আমার পোশাক পাল্টানো হয়
সমস্ত রাতের ময়লা আমার শরীরে লেগে থাকে
প্রতিদিন আমার উপর শুয়ে মানুষেরা স্বপ্ন দেখে

মাঝেমাঝে চাঁদের আলো এসে শুয়ে থাকে আমার ওপর
মাঝেমাঝে দিনের বেলায় রোদ এসে কথা বলে
সারাদিন সারারাত আমি কেবল শুয়ে থাকি
মাঝেমাঝে বাইরের মানুষ এসেও বসে থাকে আমার ওপর

আমি মানুষের ঘরের বিছানা
৩১.

তুমি কি আমার হৃদয় দেখেছ

তুমুল বৃষ্টির
ঠাণ্ডা বাতাস
অন্ধকার আকাশ
বিদ্যুত চমকানো

আবেগের।
৩২.

তুমি কি আমার ঘর দেখেছ

টিনের চাল
রৌদ্র ঝলমল
গাছপালা ঘেরা
বৃষ্টি সংগীতময়

সুখের।

৩৩.

তুমি কি আমার শার্ট দেখেছ

রঙ জ্বলা
ময়লা জমা
ভাজ পড়া
ছিঁড়ে যাওয়া

বেদনার্ত ।

৩৪.

আমি ঘাস

মাটির পুত্র

যে বসে, দাঁড়ায়, হাঁটে

যে নিজেকে ভালবাসে, ভালবাসে সবুজ আর রোদ

যে রঙ দেখেছে, দেখেছে মানুষের পা আর গাড়ির চাকা

যে ঘৃণা করে ব্যর্থতা, হতাশা আর কষ্ট

যার ভয় হয় পিষ্ট হবার, থেতলে যাবার, মরে পড়ে থাকার

যে স্বপ্ন দেখে হাত ধরে নাচার, হেসে বেড়াবার, ফুল ফোটাবার

যে পেয়েছে শুধু দুঃসময়ের স্মৃতি

বাস করি মাঠেঘাটে

৩৫.

তুমি কি আমার ঘুড়ি দেখেছ

রঙ বেরঙের
উড়তে থাকা
দূরে যেতেযেতে
ছিঁড়ে যাওয়া

হারানো।
৩৬.

আমি মেঘ

বাতাসের পুত্র

যে উড়ে, ভাসে, কাঁদে

যে তার স্ত্রীকে ভালবাসে, ভালবাসে তার সন্তান, সংসার

যে ঝড় দেখেছে, দেখেছে বৃষ্টি আর বিদ্যুৎচমক

যে ঘৃণা করে বন্যা খড়া ঝড়

যার ভয় হয় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তাপদাহ

যে স্বপ্ন দেখে ফসলের ক্ষেত, কৃষকের হাসি, মাছের সাঁতার

যে পেয়েছে মাঠভর্তি ফসলের যৌবন

বাস করে আকাশে

৩৭.

তুমি কি কোকিল দেখেছ

ঘরহীন থাকে
অন্যের ঘরে
ডিম পাড়ে
ফোটায় কাক

কোকিলকণ্ঠী।

৩৮.

তুমি কি আমার হাত দেখেছ

মেঘের মত সবুজ রঙের স্বপ্নে দোলা

তুমি কি আমার পা দেখেছ

সরু রাস্তা ধূলো উড়ানো হৃদয় ভুলা

তুমি কি আমার গা ছুঁয়েছ

স্নিগ্ধ হাওয়া সাতটা রঙের বৃষ্টির মত

তুমি কি আমার মুখ দেখেছ

দিগন্ত জোড়া হাসি মোড়ানো ইচ্ছা যত
৩৯.

তুমি কি কখনো আমার চোখ দেখেছ

শ্যাওলা পড়া
কাদা জমা
আবর্জনা ভরা
পোকা খাওয়া

রূপালি।

৪০.
তুমি কি কখনো জল দেখেছ
চাপা কান্নার সংসারী বাবার ভাঙ্গা ঘরের
তুমি কি কখনো কাগজে লিখেছ
যন্ত্রণার ঘুম অন্ধকার চাঁদ মিথ্যা প্রেমের
তুমি কি কখনো গন্ধ শুঁকেছ
টুংটাং শব্দ সূর্যের আলো কালো ঘামের
তুমি কি কখনো স্বপ্ন দেখেছ
গম্ভীর রাত শুকনো নদী নিঃশব্দ ড্রামের
৪১.
তুমি কি কখনো আমার আকাশ দেখেছ
ছেড়া শার্টের
অসমাপ্ত মুখের
নির্লিপ্ত চোখের
নিস্প্রভ হাসির
রোদেলা।
৪২.
তুমি কি কখনো আমার বাগান দেখেছ
কাটা পায়ের
কাটা আঙুলের
রক্ত স্বপ্নের
লবণাক্ত ঘামের
রঙিন।
৪৩.
আমি সিগারেট
যার খুব প্রয়োজন জ্বলতে থাকা
পুড়তে থাকা
পোড়তে পোড়তে নিঃশেষ হতে থাকা
যে ভালবাসত তার চাকরি
সংসার
পরিবার
যে দেখেছে মানুষ কিভাবে তাকে আগুন ধরিয়ে দেয়
তারপর ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকে
আর ছাই হতে থাকে জীবন
যে ঘৃণা করে প্রতিশোধ, অহংকার, ক্রোধ
যে ভীত থাকে তাকে মুচড়িয়ে ফেলে দেয়ার, পায়ে পিস্ট করার আর জলে ভিজে যাওয়ার
যে স্বপ্ন দেখে একটি লাল আলো সারারাত জ্বলবে
মিষ্টি ধোয়ায় ছেয়ে যাবে ঘর আর ভালবাসা ফুটবে
যার নিরবে জ্বলতে থাকা জনপ্রিয় হবে খুব।
সবশেষে ঘর হবে মানুষের নর্দমায়।
৪৪.
আমি সমুদ্র
প্রশান্ত
বিরাট
নীলাভ
গম্ভীর
বোকাসোকা
হাহাকার
হুহু করে ঢেউ তোলা
লবণাক্ত
রহস্য
মানুষ আমাকে দেখতে এলেও মানুষ জানেনা তার চোখই সমুদ্র।

৪৫.
আমি কে
আমি বাসার চারপাশের বেড়ে উঠা গাছ
গাছের ঝোপে হওয়া পাখির বাসা
বাসার চারপাশের শ্যাওলা পড়া দেয়াল
আমি বাসার পাশের পুকুর
পুকুরের জলে ভেসে বেড়ানো মাছ
পুকুর পাড়ের ঝোপঝাড়
আমি ঘরের ভেতর মন খারাপ করা জানালা
স্বপ্নে মোড়া ছাদ
ভালবেসে বেড়িয়ে পড়া দরোজা
আমি ঘরের দিকে চলে আসা একটি সরু নিরিবিলি রাস্তা।
৪৬.
আমি কে
আমি নদীর উপর হেলতেদুলতে থাকা নৌকা
দৌড়াতে থাকা স্টিমার
লুকিয়ে থাকা কচ্ছপ
আমি রাস্তার উপর হাঁটতে থাকা রিক্সা
দৌড়াতে থাকা বাস
লুকিয়ে থাকা পা
আমি আকাশের উপর উড়তে থাকা বিমান
ভাসতে থাকা হেলিকপ্টার
লুকিয়ে থাকা রঙিন ঘুড়ি
আমি বিছানায় পড়ে থাকা একাকী চাদর।
৪৭.
আমি তখন ফসলের ক্ষেত ছিলাম
শান্তশীতল জল গড়িয়ে যেত আমার শরীরে
কৃষকেরা নিড়িয়ে দিত পরম আদরে
সবুজে ভরে যেত আমার শরীর
শো শো হাওয়া বইত
প্রচণ্ড রোদেও ঘুমিয়ে পড়তাম আমি।
আমি এখন শহরের জমি
আমার উপর দিয়ে বয়ে যায় বর্জ্য
সুউচ্চ দালান দাঁড়িয়ে থাকে শরীরে
কালোয় ছেয়ে গেছে আমার শরীর
গরম হাওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে যেন সব
অনেক রাতেও ঘুমুতে পারি না আমি।
৪৮.
আমি রোদ
এর মানে এই না যে শুধু তীব্র
এর মানে এই না যে ঘাম ঝরায় শুধু
এর মানে এই না যে মাটি ফেটে চৌচির
আমি রোদ
এর মানে এই না যে শুকিয়ে যায় নদী
এর মানে এই না যে মরে যাচ্ছে গাছ
এর মানে এই না যে ফসল ফলে না ক্ষেতে
আমি রোদ
এর মানে এই না যে মরুভূমি সব
এর মানে এই না যে চারিদিকে আকাল
এর মানে এই না যে মৃত্যু আর মৃত্যু
আমি রোদ
কেন সব রোদে পুড়ে যাবে?
কেন আকাশ হাসবে না আলোয়?
কেন শক্ত হয়ে দাঁড়াবে না গাছ ?
হাড়কাঁপানো শীতে যে গরীবের পাশে দাঁড়ায় তার নামও রোদ।
৪৯.
আমি কবিতা
এর মানে এই না যে ছন্দ আছে
এর মানে এই না যে অলংকার আছে
এর মানে এই না যে উপমা-উৎপ্রেক্ষা আছে
আমি কবিতা
এর মানে এই না যে বিষয় আছে
এর মানে এই না যে সুর আছে
এর মানে এই না যে নাড়া দেয়
আমি কবিতা
এর মানে এই না যে চিত্র আছে
এর মানে এই না যে চিত্রকল্প আছে
এর মানে এই না যে পরাবাস্তব আবহ আছে
আমি কবিতা
কেন এত কিছু থাকতে হবে?
কেন একই রকম সাজতে হবে?
কেন ভিন্ন হওয়া যাবে না?
আমি ভিন্ন তাই আমি কবিতা।

৫০.
আমি এখানে যেখানে বসে আছি
সেখানে রাতও বসে
সন্ধ্যা থেকে পালা করে আসে বাদুড়
সারারাত একটু একটু করে খেতে থাকে আমায়
দিনের বেলা পড়ে থাকে খেয়ে ফেলা ফলের খোসা
আমি যেখানে বসে থাকতাম
সে ঘরেও আঁধার হত
পালা করে ঢুকত ইঁদুর চিকা
সারারাত একটু একটু করে খেয়ে নিত সব ঘুম
আর মাদুরের নিচে গর্তে পড়ে থাকত ঘুমের খোসা