Tuesday, January 9, 2024

তুৃমুল প্রেমের কবিতা - দুপুর মিত্র

 

তুমুল প্রেমের কবিতা

দুপুর মিত্র

প্রথম প্রকাশ:  জুলাই, ২০২০

বইটি বিক্রির জন্য নয়। কপিলেফ্ট। এই বইয়ের সমস্ত লেখা কপিলেফ্ট। এই বইটির যে কোন অংশ যে কেউ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল লেখক ও লেখাকে অবিকৃত রেখে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি ব্যতিরেকেই যে কেউ নকল এবং পরিবেশন করতে পারবেন।

এছাড়া বইটি কেবল মাত্র ই মেইলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করে যে কেউ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পাবেন। ই মেইল ঠিকানা-mitra_bibhuti@yahoo.com

প্রকাশক

দুপুর মিত্র

প্রচ্ছদ

দুপুর মিত্র



ভূমিকা

হাসনাত আবদুল হাই

দুপুর মিত্রের কবিতা আগে পড়িনি,তার কোনো বই বের হয়েছে কিনা, তাও জানা নেই। ফেসবুকে মেসেঞ্জারে এক সঙ্গে তার পঞ্চাশটা কবিতা পড়ে জানা গেল সে কবিতা লেখে এবং এই সব নিয়ে অচিরে একটি ই-বুক বের করবে।

দুপুর মিত্রের পঞ্চাশটি কবিতা এক সঙ্গে পড়া গেল এই জন্য যে সেগুলি খুব সংক্ষিপ্ত,দ্বিপদী। সব কবিতাই প্রেমের এবং তার ভাষায় ‘তুমুল প্রেমের’। একথা কে না জানে, সব আবেগের মধ্যে প্রেমই বিশুদ্ধ এবং প্রবল। আবেগের প্রবলতা তুমুল হয় যখন তা বাধাপ্রাপ্ত হয়।  দুপুর মিত্রের কবিতায় প্রেম তুমুল হয়েছে সাড়া না পাওয়ার জন্য, যাকে বাধা বলেই মনে করা যায়।

কিন্তু কোন অর্থে প্রেমকে তুমুল বলেছে দুপুর মিত্র? বৃষ্টির মত তুমুল, যা অঝোর ধারায় ঝরেই যায়? না, বাতাসের মত তুমুল যা কোনো বাধা মানে না, ছুটে যায় প্রবল বেগে? কিংবা যুদ্ধের মত তুমুল, যেখানে জয়-পরাজয় আছে? কবিতাগুলি পড়ে মনে হয় দুপুর মিত্র যে প্রেমের কথা বলেছে এবং যে সব ‘তুমুল প্রেমের কবিতা ‘লিখেছে, তা ওপরে যা বলা হয়েছে সেই সব অর্থ এবং আরো কিছুর মত।  অর্থাৎ যা কিছু প্রেমকে তুমুল করে তোলে সে সব নিয়েই তার এই পঞ্চাশটি কবিতা।

দুই।।

আগেই বলা হয়েছে দুপুর মিত্রের কবিতাগুলি দ্বিপদী।  তার সব কবিতাতেই অন্তমিল রয়েছে।  যার জন্য ধ্বনিগত ছন্দ শোনা যায়।  যেমন: পথ পথই থাকে, শেষ হয় না কখনো/কেবল কেউ জানবে না কেন দুপুর বেলায়, পুরো পৃথিবী এত খাঁ খাঁ শুন্য।(১৭)।  মুখের কথাই ভাষা হয়েছে তার কবিতায়, কঠিন কোনো শব্দ নেই, যার জন্য মনে হয় কল্পিত কবিতা নয়, প্রেমিকের মনোলগ–স্বগত সংলাপ শোনা যায়।  কখনো কখনো উপমা ব্যবহার করেছে দুপুর মিত্র, কিন্তু তা তার স্বগত সংলাপ এর অনুষঙ্গেই। যেমন, বুকের ভেতর পাহাড়ের মত(২০) কিংবা একটা একটা আধুলির মত নিজেকে জমিয়েছি মাটির ব্যাংকে (২৪) এবং “ঠাণ্ডা জ্বরের মত তুমি কেন আস পাছে (১৯)? আরো একটা কবিতায় ‘জ্বর’ এসেছে প্রেমের তীব্রতার দ্যোতক হয়ে: “তোমার শরীর জুড়ে শিউলি ফুল,আমার শরীরে জ্বর(৩৪)।  জ্বর এখানে প্রেমের মেটাফর।

যেহেতু বক্তব্যের সহজ সরল প্রকাশই উদ্দীষ্ট, সেই জন্য ভাষার কারুকাজ বেশি নেই দুপুর মিত্রের কবিতায়। তুমুল প্রেমের উচ্চারণে দুপুর মিত্র পোষমডার্ন নয়, এমন কি মডার্নও নয়। সে মনে হয় বলতে চেয়েছে প্রেম যেমন সনাতন আর চিরায়ত, তার প্রকাশও একই ভাবে পরিবর্তনহীন। সহজ, সরল প্রকাশে যে পারে তুমুল আবেগ জানাতে তাকে কষ্ট করে কঠিন স্বরে উচ্চকিত হতে হয় না।

তুমুল  প্রেমের কবিতা ১

কতটুকু হারাবে আমায়, কতটুকু ঠেলে দিবে দূরে।

আমার নামই ভেসে ওঠবে দেখ সব হারানো গানের সুরে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২

বার বার আসছি মানে এই নয় যে প্রতিদিনই আসব।

একদিন খুঁজেও পাবে না, একদিন নিশ্চিত  জেন  হারিয়ে যাব।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩

দেখছ খুব পরিপাটি গোছানো ভদ্র সাজানো গোছের ছেলে,

শুধু দেখনি ভেতরটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায় তুমি চলে গেলে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪

কেউ কখনো না এলেও পথ অপেক্ষা করে

অপেক্ষা করে কেউ এলে তাকে ঠিক পৌঁছে দিতে ঘরে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৫

যতটা ভেবেছ সরে যাবে, ততটা সহজ না।

দিনের সব আলোই জানে রাতের চাঁদের কান্না।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৬

প্রতিদিনই উঠে, প্রতিদিনই ফুটে, প্রতিদিনই তারা জ্বলে।

কেবল আমরাই মেঘ দিয়ে ঢেকে বলি আজ আকাশে তারা নেই, আজ অন্ধকার পড়ছে গলে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৭

ভেবেছিলাম  চলে যাব,  সেখানে যাব যেখানে তুমি নেই।

সেখানে যাই, ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নে দেখি তুমি সেই।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৮

সব ফেলে দাও  স্বপ্ন -সম্পর্ক -স্মৃতি সব যা কিছু আমার।

শুধু একটি পথ খুলে রেখ, কোনদিন ফিরে এসে তোমাকে দেখবার।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৯

এখনো তোমাকে দেখি, খুব দূর থেকে, স্পষ্ট তোমাকে।

শুধু তুমি জান না, এখনো তিলে তিলে খেয়ে ফেলছ, চুপিসারে আমাকে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১০

অবহেলা কর, যত পার অবহেলা কর, অবহেলায় দূরে ঠেলে দাও আমায় না হয়।

দেখ, অবহেলায় বেড়ে ওঠা বটবৃক্ষ, একদিন মানুষের আশ্রয় হয়।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১১

এভাবে এড়িয়ে গেলে

একদিন হারিয়ে যাব আমি শহরের অন্তরালে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১২

অপেক্ষাই প্রেম, নানা রঙ আর হাসিতে ফুলেরাও স্থির অপেক্ষায় ফুটে থাকে গাছে।

একদিন পরাগায়ন হয়, মিলনের সুখ নিয়ে ঝরে পড়ে,  নিজেদের গড়া স্বপ্নের কাছে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৩

পাখি তবু বুকে পুষলে বড় হয়, আদর করে নাম ধরে ডাকে।

শুধু তুমি দেখলে না, তোমাকে বুকে পোষার কষ্ট কিভাবে ক্ষয় করে আমাকে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৪

বুক ভরে শ্বাস নেই, বুক ভরে জেগে ওঠে সুখ।

দিনরাত কথা বলে আমার সাথে তোমার কাজল করা চোখ।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৫

আমি তো পুড়তে এসেছি নিজেকে, তোমাকে পাওয়ার নেশায় পুড়ে যাব ঠিক। 

তুমি কেন এসেছ এই দূষিত গঙ্গায়, তুমি চলে যাও, নয়ত তোমাকেও ভাসিয়ে নিবে দিকবিদিক।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৬

আমিই তোমার সেই, মানুষ স্বপ্নের ভেতর যাকে তুমি খোঁজ, জানি তুমি মানবে না।

সেদিন তুমি মানবে যেদিন আমাকে ফিরে পাবার এক বিন্দু সম্ভাবনাও থাকবে না।

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৭

পথ পথই থাকে, শেষ হয় না কখনো। 

কেবল কেউ জানবে না দুপুর বেলায় পুরো পৃথিবী কেন এত খাঁ খাঁ শূন্য। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ১৮

এই শহরের দেয়ালগুলোতে লিখে রাখি ব্যর্থ প্রেমের কথা।

এই শহরের দেয়ালের রঙে ঢেকে যায় তোমার-আমার ব্যথা।



তুমুল প্রেমের কবিতা ১৯

ভুলে থাকা জীবনের কাছে

ঠাণ্ডা জ্বরের মত তুমি কেন আস পাছে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২০

প্রেম তো সহজ, বাগানে ফোটা রঙিন ফুল।

কষ্ট শুধু টিকে থাকা, জলের স্রোতে যেন না ভাঙ্গে কুল।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২১

কি এক অভ্যাসে চলে আসি কাছে,

বুঝিনি গোপনে হৃদয় তোমার জন্যই নাচে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২২

কতবার পথ সরে গেল, কতবার দেখা হল পথে।

এমনো কি পথ আছে, মুখোমুখি দু’জন, তবু বলব না কথা একসাথে। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৩

যে ব্যথা জমেছে বুকের ভেতর পাহাড়ের মতো, সেও পড়বে ঝরে।

আকাশের বুকে যতই কালো করে জমে উঠুক না মেঘ, সেও বৃষ্টি হয়ে পড়ে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৪

একটা একটা আধুলির মতো নিজেকে জমিয়েছি মাটির ব্যাংকে কখনো যদি হয় প্রয়োজন।

যেদিন ভেবেছি এই বুঝি পেয়েছি সময় নিজেকে ব্যবহারের,ততদিনে আমি অচল সিকি,  নিস্প্রয়োজন।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৫

এখনো বুঝিনি চলে গেছ তুমি, এতটা বোকা আমি।

এখনো অজান্তে রিক্সা থেকে তোমার বাসার সামনে নামি।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৬

তোমার কথাই রাখলাম, চলে গেলাম অনেক দূরে।

জানলে না তুমি দূরে থাকলেই ভালবাসার তুলো ওড়ে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৭

সারারাত যে জেগে থাকে, চেয়ে থাকে আকাশের পানে।

সেই জানে কোন তারা খসে পড়ে, কোন তারা কার ঘরে যায় গোপনে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৮

পোস্ট বক্স নেই, তবু সে চিঠি লেখে হাতে। 

কেউ পড়বে না, তবু সে লেখে চিঠি, চিঠি লেখে গভীর রাতে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ২৯

নিখোঁজ হয়ে হয়ে আমি তোমাকে দেখতে চাই।

তুমি কেমন করে হাসো, কেমন তোমার শরীরের রোশনাই।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩০

যা জানানো হয়নি কে জানত তা আর জানানোই হবে না।

ভোর হলেই ঝরে যায় সন্ধ্যামালতী ফুল, সূর্যের মুখ আর দেখা হয় না।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩১

এই মাটিও ভেসে আছে জলের উপর এতটা ব্যাপ্ত আমি।

চোখের জলে নুয়ে পড়ব ভেবেছ, যতটা পার কষ্ট দিয়ে যাও তুমি। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩২

মেয়েটি জানে তার ছবি কার চোখে ভাসে।

শিশির তবু নেমে আসে, জড়িয়ে থাকে ঘাসে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৩

সমুদ্রের কাছে যাই, সমুদ্রের কাছে যায় দ্বিধান্বিত মন।

কে কার কাছে হেরেছি জানি না, আমি না জীবন?

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৪

রাত্রি শেষ হলে তোমার শরীর জুড়ে ভোর।

তোমার শরীর জুড়ে শিউলি ফুল,  আমার শরীরে জ্বর।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৫

তোমার স্বপ্নও আজ বিজ্ঞাপনে দেখি, দেখি কি উজ্জ্বল।

আমিও আজকাল বিজ্ঞাপনে, বিজ্ঞাপনে নাচছি মৃত্যুবাদল।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৬

কেউ জানেনা এমন কর্মমুখর শহরে

কত ব্যথা বুকে জমে মেকি আড্ডার বহরে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৭

এই শহরে মানুষ নাই, মানুষ নামের যন্ত্র আছে।

এই শহরের প্রেমগুলো তাই, বিজ্ঞাপনের কথায় নাচে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৮

এত এত মানুষ তবু নিজের মানুষ নাই।

সমুদ্রের বুকে ঢেউ সারাজীবন কাতরায়। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ৩৯

একদিন মিথ্যে করে হলেও আমার হাতে রেখ হাত।

একদিন মিথ্যে করে হলেও পৃথিবী হাসুক না পেয়ে আঘাত। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪০

আমি এখন ভালো আছি,  ব্যাংক থেকে অনেক ভালোবাসা নিয়েছি ঋণ।

তুমিও ভালো থেক, তোমারও মূল্য বাড়ছে ব্যাংকের কাছে দিন কে দিন।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪১

আমাকে বেঁচে থাকতে দিবে না, আমাকে বানাবে লাশ।

যেখানে পতিত হয়ে আছে জমি, সেখানে গজাবে সবুজ ঘাস।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪২

অপেক্ষা বলে নেই কোন কিছু।

সমুদ্রতীরে ঢেউ আসে পিছুপিছু।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৩

উপেক্ষা কর, যত পার উপেক্ষা কর, যত চাও উপেক্ষা দেখাও।

গ্রীষ্মে ডোবা শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় জল আসে, জানি তুমি চুপিসারে  ভালবাসা শেখাও।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৪

কখনো থেম না হেঁটে যেও, দৌড়াও, না পৌঁছানো পর্যন্ত।

সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে বলেই সূর্যমুখী ফুল সূর্যের মত।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৫

বৃক্ষ সয়ে যায়, সয়ে যায় বৃক্ষ চিরকাল।

নিজের শরীর দিয়ে বানানো কুঠারের আঘাতও সে সয়, তুমি জান না, জানে মহাকাল।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৬

শহর জুড়ে মাইকিং হবে, সারা শহর আর শহরের মানুষ আমাকে খুঁজবে। 

কেউ টের পাবে না, আমি দেখে যাব, সারা শহর উদভ্রান্তের মত তুমি ঘুরবে।

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৭

ও মেয়ে বল তুমি শহরের মেয়ে নও, মফস্বলের সেই স্নিগ্ধশান্ত মেয়ে।

তোমাকে আমি নিয়ে যাব শহর থেকে দূরে, যেখানে তারা নামে ঝর্ণা বেয়ে। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৮

জল জমে থাকা কাচে সব আবছা মনে হয়।

কষ্ট জমে থাকা চোখে সব আঁধার কেন রয়?

তুমুল প্রেমের কবিতা ৪৯

এ শহর ছেড়ে দূরে যেতে যেতে চেয়েছি পেতে কতকিছু। 

সম্বল তোমার দুই এক ফোঁটা হাসি, চুরি হয়ে গেছে কবে ততটুকুও। 

তুমুল প্রেমের কবিতা ৫০

তুমি চাইলে আবার ফিরে আসব, হাতে হাত রেখে বসব আবার।

পথ হারানো পাখিও পথ খুঁজে, চেষ্টা করে নীড়ে ফিরবার৷