Tuesday, January 9, 2024

দুপুর মিত্রের কথাকাহিনী

 

এনিমেল ফ্যাবল নিয়ে আমার এক্সপেরিমেন্টাল স্টোরিগুলো বেশ জনপ্রিয় হবার পরপরই আমি ফক টেল নিয়ে গল্পে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করি। মোট ৫০ টি কাজ করেছি এখানে। বড়দের রূপকথা নামের এনিমেল ফ্যাবল নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল স্টোরিও ৫০টি। আশা করি কথাকাহিনীও সবার দৃষ্টি কাড়বে।




কথাকাহিনী-১

এটা আসলেই সত্যি যে ভালবাসা যাদুর মত। এটা সবকিছুকে পাল্টে দিতে পারে। জগতের যে কোন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। এমনকি এমন কিছু যাদু যা মানুষ কখনই বিশ্বাস করবে না। ভাবতেই পারবে না যে ভালবাসা এমন কিছু করে ফেলে, এমন অবিশ্বাস্য কিছু পরিবর্তন; যা কখনও মানুষ ভাবতে পারেনি। সোহেলী এটা জানত। সে জানত সেই যাদুর ক্ষমতা কতখানি। আর এটা সে পেয়েছিল তার ভাইয়ের কাছে। ভাই আর বোন একসাথে বসবাস করত। কিন্তু ভাই চলে যাবার পর বোনের হাতে সেই ভালবাসা রেখে যায়। যাবার আগে বলে যায় এই ভালবাসাই তোকে সবসময় বিপদে- আপদে সাহায্য করবে।

ভাই চলে যাবার দুই তিন বছর পর এক ছেলের সাথে দেখা হয় সোহেলীর। সেখানে সে ভালবাসা দেখতে পেয়ে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু মা-বাবা এই বিয়েতে রাজি হয় না। মা-বাবা সোহেলীকে বলে আমি তোমাদের এই ভালবাসার বিয়ে মেনে নেব তখনই যখন তুমি আমার দেওয়া তিনটি কাজ করতে পারবে। সোহেলী রাজি হয় আর জানতে চায় কি সেই কাজ। মা-বাবা বলেন- প্রথম কাজ এই রাজ্যের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে, দ্বিতীয় কাজ রাজ্যের সমস্ত পানি ও পয়ঃ নিস্কাষণ ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে এবং একটি ফুল দিয়ে রাজ্যের সমস্ত মানুষের মন নিয়ে নিতে হবে। এই কাজগুলো করতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। সোহেলী রাজি হল আর ভালবাসার মাধ্যমে মানে ভালবাসার যাদু দিয়ে এক সপ্তাহের আগেই সে সবগুলো কাজ করে ফেলল। রাজ্যের সমস্ত মানুষার তার মা-বাব বিস্মিত হল। যে কাজ কয়েকশ বছর ধরে অসম্ভব হিসেবে পড়েছিল, সে কাজ তারা কিভাবে এক সপ্তাহের ভেতর করে ফেলল। সোহেলীর এমন কাজে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল।

এবং এরপর সোহেলী ও তার বর রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেল। পালানোর আগে প্রাসাদে একটুখানি ভালবাসার যাদু রেখে যায় তারা। যার ফলে তার মা-বাবা ভাবতে থাকে সোহেলী ও তার বর প্রাসাদেই আছে। মৃত্রুর পূর্ব পর্যন্ত তার মা-বাবা বুঝতে পারেনি সোহেলী ও তার বর আসলে প্রাসাদে থাকে না।

কথাকাহিনী-২

কিছু লোক থাকে তারা শুধু পথ হাঁটতেই পছন্দ করে। পথ হাঁটাকেই দর্শন মনে করে। তারা মনে করে পথটাই তাদের সংসার। তারা জানে এই পথের দর্শনই মানুষকে বাঁচায়। আর তাদেরকে কেউ আটকে রাখতে পারে না। পারে না ক্ষতি করতে। এমন দুই লোককেই একবার সুন্দরী রাক্ষসি আটকে ফেলে। আর তার প্রেমিক জেনে গেলে তাকে বলে দেয়, লোকদুটাকে মোটাতাজা করা হচ্ছে ভাল করে খাওয়ার জন্য। লোক দুটি ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু তারা এও ভাবতে থাকে পথ যাদের দর্শন তাদেরকে কোনও সুন্দরী রাক্ষসি আটকে রাখতে পারে না। আর তাদেরকে মেরে ফেলা তো দূরের কথা। তবু ভয় বলে তো একটা ব্যাপার আছে। তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলা কমে যায়। তবে এটা তারা জানত, যে নারী অনেক সুন্দরী সে আর মানুষ থাকে না রাক্ষসি হয়ে যায় আর যে পুরুষ অনেক ক্ষমতাবাণ সেও আর মানুষ থাকে না, হয়ে যায় রাক্ষস। তাদেরকে এখান থেকে পালাতে হবেই। তাদের পথের যাদুর কথা মনে হয়। মনে পড়ে ছোট বেলায় পথ তাদেরকে টেনে নিতে নিতে নিয়ে চলে গিয়েছিল অনেক দূরে। হারিয়ে গিয়েছিল তারা। তারা পথের এইসব শক্তির কথা মনে করতে থাকে।‌ আর অপেক্ষা করতে থাকে পথ কখন তাকে সেই বুদ্ধিটা দেবে, যা দিয়ে সে পালাতে পারবে। গভীর রাতে তারা খুব দূরে একটা আলোর মত কিছু একটা দেখতে পায়। আর তারা এটাকে পালিয়ে যাবার পথ ভেবে এগুতে থাকে। রাক্ষস টের পেয়ে তাড়া করলেও ভুল করে লোক দুটি হত্যার বদলে হত্যা করে ফেলে তার ছেলেকে।

আলো দেখতে দেখতে লোক দুটি চলে আসে শহরে। তারা এখানে একটি চাকরিতে যোগ দেয়। এই শহরেও সেই রাক্ষসের একটি বাড়ি থাকে। রাক্ষস টের পেয়ে লোক দুটিকে খোঁজ করেতে বাহিনী লাগিয়ে দেয়। লোক দুটি আটক হয়। এবার কি তাহলে সত্যি লোক দুটি মারা পড়বে। পথের দর্শন কি তাহলে তাদের ভুল পথে এনে দিল? যেখানে তারা নিজেদের রক্ষার বদলে আটকই হল, আর সেই পথ দেখাল স্বয়ং পথ নিজেই। লোক দুটি অন্য কিছুই ভাতে চাইল না। কারণ পথের ওপরেই তাদের আগাধ বিশ্বাস। না লোক দুটির বিশ্বাসই ঠিক। শহরের লোকেরা রাক্ষস আর রাক্ষস বাহিনীকে সন্ত্রাসী ভেবে গণ পিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে তাদের। আর প্রাণে রক্ষা পায় পথের দুই মানুষ।

কথাকাহিনী-৩

কেউ যখন ভাগ্যান্বেষণে বের হয়, তখন শুধু ভাগ্যান্বেষণ নয়-বিশ্বাসও তাকে পাইয়ে দেয় অনেক কিছু। দরিদ্র ছেলেটি এটা জানত। তাই সে ঘুরতে শুরু করে নানা জায়গা। প্রথম দিন ক্লান্তিটা একটু বেশিই লাগে। তাই তার ঘুরতে ঘুরতে যখন সন্ধ্যা নেমে এসেছিল, তখন সে ছিল একটি বনে। একটু রাত হতেই বনের ঘুটঘুটে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছিল একজন মেয়ের কান্না। ছেলেটি ভয়ে স্থির হয়ে বসে পড়ে। ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করে এটা কি সত্যি নারীকণ্ঠ নাকি অন্য কিছু। তারপর কান্নার উৎস ধরে এগুতে থাকে সে। সে একজন মেয়েকেই এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর আবিষ্কার করে। মেয়েটি ছেলেটিকে বলে যে তার সৎ মা তাকে কাঠ কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু সে কাঠ কাটতে পারে না। ছেলেটির মনে করতে থাকে এটা হয়ত ভাগ্য দেবতার খেলা। নয়ত এত রাতে এত গভীর বনে কোনো মেয়ে আসবে কোত্থেকে। তার মনে হয় নিশ্চয়ই তাকে পরীক্ষা করার জন্য এমন কিছু করা হচ্ছে। ছেলেটি জানপ্রাণ দিয়ে মেয়েটির জন্য কাঠ কাটে। তারপর তারা সৎমার বাড়িতে যাওয়ার পর দেখতে পায় তার মা-বাবা ঘরে মরে পড়ে আছে। মেয়েটির পৃথিবীতে এই মুহূর্তে সেই ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই। যখন কেউ বিপদে পড়ে নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে বিপদ থেকে তাকে উদ্ধারই মানুষের কাজ। ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করে সেই বনেই বসবাস করতে থাকে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪

চারপাশে এত অনাদর্শ। এত মিথ্যা, জোচ্চোরি। এর মধ্যে ছেলেটি আর টিকে থাকতে পারছে না। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিতে পারছে না সে সবের সাথে দুনিয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে যে সত্য পাল্টিয়ে মিথ্যা হয় এবং বর্তমানে সত্যের আকার ধারণ করে। ছেলেটি সিদ্ধান্ত নেয় যে চোর হবে। সে দেখতে পায় চোর এখন আর খারাপ কিছু নয়। অনেক শিক্ষিত চোর আছে যারা তাদের মেধা খাটিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা পয়সা নিয়ে যায়। ছেলেটি তার মাকে প্রার্থণা করতে বলে সে যেন তার দক্ষ চোর হওয়ার জন্য প্রার্থণা করে। এমন পর্যায়েই ছেলেটি একদল ডাকাতের কাছ থেকে অনেক টাকা আর ঘোড়া উপহার পায়। ছেলেটির মা বেশ ভয় পেয়ে যান। তিনি ছেলের এমন অবস্থা পুলিশকে জানিয়ে দেন।

পুলিশ সমস্ত কাহিনী শুনে ছেলেটিকে থানায় ধরে নিয়ে আসে। পুলিশ তাকে বলে তিনটি চুরি করতে পারলে তাকে সে দক্ষ চোর হিসেবে মেনে নেবে। এবং তাকে ছেড়ে দেবে। স্থানীয় এমপির বাসা থেকে একটি চাবি চুরি করতে হবে এবং চাবি চুরির এক ঘণ্টার মধ্যে অন্য জায়াগায় গচ্ছিত সম্পদ চুরি করে আবার তার কাছেই চাবি ফেরত দিয়ে আসতে হবে। ডিসি সাহেবের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে টাকা চুরি করতে হবে। এবং ডিসি সাহেবের মেয়ের চাদর চুরি করতে হবে। ছেলেটি রাজি হয় এবং যথারীতি সেসব কাজ সে করে ফেলে। পুলিশ ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তার পেছনে লাগিয়ে দেয় শহরের সমস্ত চোরকে। ছেলেটি যাই চুরি করবে তাই যেন আবার অন্যান্য চোররা চুরি করে তার কাছে কিছু এনে দেয়।

একবার সে অনেক বড় চুরি করতে যায়। সেই চুরি একসাথে করার জন্য শহরের আন্যান্য চোরদেরও সে দাওয়াত করে। আসলে সেটা কোনও বড় চরুই ছিল না। চুরিটা ছিল মন্ত্রীর বাসা থেকে ফুল চুরি। সব চোররা যখন ফুল চুরি করতে বাগানে নেমে আসে, তখন ছেলেটা চোর চোর বলে এবং বাঁচাও বা!চাও বলে চিৎকার করে। এতে সব চোরই ধরা পড়ে। ছেলেটা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৫

এক দেশে এক ছেলে খুব হতাশ হয়ে পড়ল। সে যে মেয়েকেই দেখতে যায়, ছেলেটির মেয়েকে পছন্দ হলেও মেয়েটির ছেলেটিকে পছন্দ হয় না। সে দেখতে পেলে তার সাথে সততা আর কষ্ট করে জীবন যুদ্ধ করতে কেউ রাজি নয়। কেউ সৎ থেকে গরীব আর সাধারণ জীবন-যাপন করতে রাজি নয়। বরং এত উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে তার এই সৎ থাকতে বলার ও চাওয়ায় প্রায় সবাই তাকে আধ পাগল হিসেবে প্রতিষ্ঠি ত করে ফেলেছে। তাই সে খুব হতাশ হয়ে পড়ল। হতাশ হয়ে নানা জায়গা ঘোরাঘুরি করা শুরু করল। পথে এক ধান্দাবাজের সাথে দেখা হল ছেলেটির। ধান্দাবাজ ছেলেটিকে বলল- তোমার এই জীবনে কেউ সাথী হবে না। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন নেই, ধান্দাবাজি খুব কম করতে পারি। তারপরও আমার সমাজে একটা নামডাক আছে। তুমি যদি ধান্দাবাজি শুরু কর, তাহলে তুমি খুব অল্প সময়েই অনেক বড় কিছু করতে পারবা। ছেলেটি সমস্ত উচ্চতর শিক্ষাকে হটিয়ে ধান্দাবাজি বিদ্যা পালন করা শুরু করল। ছেলেটি মনে মনে ভাবল-পৃথিবীর সমস্ত বিদ্যাই বিদ্যা। কিন্তু পৃথিবীতে এক এক সময় এক এক বিদ্যা শাসন করে। যখন যে বিদ্যা শাসন করে, তখন সে বিদ্যাকে অর্জন করে বাকীদের হারিয়ে দেওয়াই টিকে থাকার কৌশল। খুব অল্প সময়েইছেলেটি ধান্দাবাজি বিদ্যায় নাম করল। একদিন সে শুনতে পেল রাজপ্রাসাদে রাজার এক সুন্দরী কন্যা আছে। যে ধান্দাবাজি করে প্রাসাদের ভেতর রাজার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবে, সেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবে। ছেলেটি ধান্দাবাজি করে রাজার মেয়ের সাথে দেখা করল। তাদের বিয়ে হল। এবং এক সময় ধান্দাবাজি বিদ্রা দিয়ে ছেলেটি পুরো রাজ্যও নিজের দখলে নিল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৬

সোহেলের চোখ বুজতেই ডাক্তার আঙ্কেলের কথা মনে পড়ে। যে ডাক্তার আঙ্কেল প্রতিদিন তাকে স্কুলে যাওয়ার সময় মিষ্টি ওষুধ দিতেন। কখনও জ্বর হলে বা পেট ব্যথা করলে ডাক্তার আঙ্কেল তাকে এমন মিষ্টি ওষুধ দিতেন যে রোগ ভাল হয়ে যেত। সেই ডাক্তার আঙ্কেল এখন নাই। নাই মানে ডাক্তারি করেন না। তার ছেলে এমবিবিএস পাস করেছে। ছেলে নুতন ডাক্তার। অনেক পড়াশুনা তার। বাড়িতে এখন সেই ছেলের চেম্বার। ডাক্তার আঙ্কেলের চেম্বারটি আর নেই। সেই ওষুধগুলোও আর নেই, যা ছিল মিষ্টি আর চকলেটের মত।

তার ছেলের কাছে শুধু টাকা আর টাকা আসে। তার ছেলে কখনো কাউকে ডেবে নিয়ে মিষ্টি ওষুধ খাইয়ে দেন না। তার ছেলে রোগীকে হাজার হাজার টাকার টেস্ট করাতে বলেন। তারপর ওষুধ দেন। তার ছেলে একটি ব্যবসা করেন। মরে যাওয়ানোর ব্যবসা। যদি এই পরীক্ষা করাতে পার তো বাঁচ না হয় মরে যাও। যদি এই ওষুধ কিনতে পার তো বাঁচ না হয় মরে যাও। যদি চিকিৎসা ফি দিতে পার তো বাঁচ না হয় মরে যাও।

সোহেল স্টেথেস্কোপ নিয়ে বসে থাকা সেই ছেলে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তাকে বলে সোহেলের রোগের নাম দারিদ্রতা। ডাক্তার তাকে একটি পাখি কিনে খাওয়ার ওষুধ দেয়। যে এই পাখিটির মাথা খেতে পারেব সে পাবে রূপা আর যে হৃদপিণ্ড খেতে পারেব সে পাবে সোনা। সোহেল সেই পাখি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরে। রাতে পাখির মাথা ও হৃদপিণ্ড খায়। সকালে ওঠে সোহেলের বউ বালিশের নিচে প্রচুর সোনা ও রূপা দেখতে পায়। সোহেলের বউ পাখিটার কাহিনী জানতে পেরে সোহেলকে বমি করতে বাধ্য করে। এতে পাখির মাথা আর হৃদপিন্ড বেরিয়ে আসে। এটা সোহেলের বউ খায়। সোহেল এমন অবস্থায় আবারও ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তারকে সে বাড়িতে ডেকে আনে। ডাক্তার সোহেল বউয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকে। প্রচুর সোনা-রূপা দেখতে পেয়ে ডাক্তার আর সোহেলের বউ পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি করে। সোহেল এটা বুঝতে পেরে বিক্রেতা সেজে সে তাদের কাছে কিছু কুল বিক্রি করে। কুল খেয়ে সোহের বউ আর ডাক্তার মারা যায়। রাতেই সোনা-রূপা নিয়ে সোহেল অন্য দেশে পারি জমায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।
কথাকাহিনী-৭

রূপম স্যার যখন ক্লাশে ঢোকেন, তখন তিনি আমেরিকার মত করে ইংরেজি উচ্চারণ করেন। ইংরেজির ব্যাপারে তিনি খুবই সিরিয়াস। এজন্য মফস্বলে তার অনেক নাম-ডাকও আছে। রূপম স্যার ছাড়া ইংরেজি শিক্ষাই বৃথা। মফস্বল শহরটির সকল অলিতে-গলিতে রূপম স্যারের ইংরেজি উচ্চারণ ঘুরে বেড়াত। এই শহরের প্রায় সবাই তার কাছ থেকে ইংরেজি শিখেছে। রূপম স্যার স্কুলে তেমন ক্লাশ নিতেন না। যা পড়াতেন তা সবই তার বাসায় অনেক টাকার বিনিময়ে। কারণ উনি ইংরেজি পড়ান।

রূপম স্যার তখনও বিয়ে করেন নি। অনেক টাকা পয়সা হলে তিনি বাড়িতে একদিন হরিণ কিনে আনেন। হঠাৎ হরিণের মাথার সাথে তার মাথার আঘাত লাগে। এতে হরিণটি মারা যায়। কিন্তু হরিণের শিংগুলো রূপম স্যারের মাথায় গজাতে থাকে। এই অবস্থায় আমেরিকা থেকে অনেক লোকজন তার বাড়িতে আসতে থাকে। রূপম স্যারের খ্যাতি দিনকে দিন বাড়তেই থাকে।

এর কয়েক বছর পর রূপম স্যার বিয়ে করার জন্য পাত্রী খুঁজতে থাকেন। কিন্তু রূপম স্যারের মাথায় শিং থাকার কারণে কোনো মেয়েই তাকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। শেস পর্যন্ত রূপম স্যারের আর বিয়ে হয় না।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৮

বাবন ছিল ইংরেজি আর হিন্দি গানের মাস্টার। পুরো দেশে তার মত এত সুন্দর আর দরদ দিয়ে ইংরেজি আর হিন্দি গান গাইতে পারবে কিনা- এ নিয়ে যে কারও সন্দেহ হবে। বাবন প্রায় প্রতি মাসেই একটি করে কনসার্ট করত। আর সেসব কনসার্টে থাকত লোকে লোকারণ্য। বাবনের এই অসাধারণ দক্ষতা কোনও মেয়েরই নজর এড়ায়নি। মেয়েরা ছিল বাবনের জন্য পাগল।

একবার পরীরা বাবনকে দেখে ফেলে এবং তাকে দেখে আকৃষ্ট হয়। পরীরা বাবনকে কিভাবে পাওয়া যায় তার পরিকল্পনা করে। একদিন পরীরা তাকে মৃত্যুর মত ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেয়। এখনও পর্যন্ত বাবনকে আর পাওয়া যায় নি। লোকমুখে গোপনে শোনা যায়, পরীরা বাবনকে ধরে নিয়ে গেছে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৯

একটি কালো মেয়ে রবিনকে আঘাত করে অদৃশ্য হয়ে গেল। মেয়েটির চোখ অদ্ভুত সুন্দর আর কালো। মেয়েটির চুল অদ্ভুত সুন্দর আর কালো। মেয়েটির গায়ের রং অদ্ভুত সুন্দর আর কালো। রবিন মেয়েটিকে খুঁজতে বের হল। খুঁজতে খুঁজতে সে একটি রাজপ্রাসাদে চলে এল। সেখানে রাজকন্যাকে বন্দী দেখতে পেল। রাজকন্যার চোখ ছিল অদ্ভুত সুন্দর আর সাদা। রাজকন্যার গায়ের রং ছিল অদ্ভুত সুন্দর আর সাদা।
তাকে সে উদ্ধার করে পালাল।

পালানোর সময় রাজকন্যার রাক্ষসী মা তাদের পিছু ছুটল। রাজকন্যা রাস্তায় একটি চিরুনী ফেলল। এতে ওই অঞ্চল জঙ্গলে ভরে গেল। রাক্ষসী জঙ্গল পারি দিল। রাজকন্যা একমুঠো ছাই ফেলল। এতে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এল। রাক্ষসী আর মেয়েটিকে ধাওয়া করতে পারল না। রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে না পেরে রবিনকে রাক্ষসী অভিশাপ দিল। অভিশাপটি ছিল সে রাজকন্যাকে ভুলে যাবে। রবিন রাজকন্যাকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে ফিরে এল। সেখানে তার মা-বাবাকে দেখে রাজকন্যার কথা সে ভুলে গেল। কয়েকদিন পর রবিন সেই খুঁজতে বের হওয়া কৃষ্ণ সুন্দরীর দেখা পেল। অতঃপর তারা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বা করতে লাগল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১০

একদেশে এক কুমার বাবা আদেশে কালো মেয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ের একবছরের মাথায় সে ওই কন্যাকে তালাক দেয়। এরপর সে আরেকটি বিয়ে করে। এই বউ খুব সুন্দর। এক বছরের মাথায় সেই বউ মারা যায়। এরপর সে আরেকজন সুন্দরীকে বিয়ে করে। এক বছরের মাথায় সেই বউও মারা যায়। এইভাবে সে সাতটি বিয়ে করে এবং প্রত্যেক বউই এক বছরের মধ্যে মারা যায়। কুমারের মনে হয় এটা হয়ত প্রথম বউইয়েরই অভিশাপ। কুমার সংসার ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ায়। একবার এক মৃত বাগানে ক্লান্ত হয়ে কুমার ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে দেখা যায় সেই মৃত বাগান ফুল-ফলে ভরা। ঘুম্নত কুমারকে দেখে বাগানের মালিনীর মনে হয়- এ হয়ত অসাধারণ কেউ। সে কুমারকে ঘুম থেকে ডেকে ভাল খাবার ও বস্ত্র পড়িয়ে দেয়। দুই তিন দিন পরে কুমার বুঝতে পারে সে যে বাড়ির মালিনীর কাছে উঠেছে সেই বাড়িটি তার প্রথম বউয়ের। একদিন আড়ালে বাড়ির ভেতরের মানুষদের চেনার চেষ্টা করে। সেখানে সে সত্যিকার অর্থেই প্রথম বউকে দেখতে পায়। একদিন ফুল তুলতে আসলে কুমার প্রথম বউয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে। প্রথম বউ কুমার তার ভুল ভুঝতে পেরেছে বলে তাকে ঘরে তুলে নেয়। তারা আবার নতুন করে সুখের সংসার গড়ে তুলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১১

এক দেশে আলীম নামের এক কৃষক অনেক সুখী ছিলেন। তার ছয় ছেলে ছিল। তাদের অনেক ধন-সম্পত্তি ছিল। আলীম তখন হুঁকো টেনেই সময় কাটাতেন। একদিন ছয় ছেলে স্বপ্ন দেখল। তারা প্রত্যেকে আলাদা হলে তাদের ঘরে একটি করে অজগর আসবে। এতে তারা অনেক ধনী হবে। ছেলেরা বুড়ো আলীমকে তাদের স্বপ্নের কথা জানাল। বুড়ো আলীম কোন কিছু না বুঝিয়ে ছেলেদের যা ইচ্ছা আর যা মনে হয় তাই করার কথা বললেন। ছেলেরা ভাগ হয়ে গেলেন। বুড়ো আলীম এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন।

ছেলেরা আলাদা হবার কষ্টে আলীম এখন বিছানায় পড়ে গেছেন। কোনও ছেলেই এখন আর তাকে দেখতে আসেন না। এদিকে প্রত্যেক ছেলের বাড়িতে একটি করে আজগর এল। তারা প্রচুর ধন-সম্পত্তি অর্জন করল। কয়েকদিন পর তাদের বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ছেলেরা তার কোনো খোঁজ খবর নিলেন না। এর মধ্যেই তাদের সবার বাড়ি থেকে একদিন রাতে অজগর চলে গেল। তারা গরীব হতে থাকলেন। এক নিঃস্ব হয়ে সব ভাইয়েরা আবার তাদের বাবার কাছে আসলেন। ছেলেরা বাড়িতে এসে দেখলেন তাদের বাবা অজগর সাপ হয়ে গেছেন।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১২

এক গ্রামে বারোটি ঘর ছিল। এই ঘরের সবাই এতটা মিলেমিশে থাকত যে গ্রামটিই ছিল একটি পরিবার। কোনও ঘরে রান্না করার সময় কোনো কিছু কম থাকলে তারা আরেকটি ঘর থেকে নিয়ে আসত। বিশেষ করে লবণ। এক ঘরে যদি না থাকত তারা আরেকটি ঘর থেকে নিয়ে নিত। এতে করে গ্রামের একটি ঘরের সাথে আরেকটি ঘরের সম্পর্কটা ছিল খুব দৃঢ়। একবার এক ঘর লবণ দিতে আপত্তি জানাল। তারা বলল- এভাবে লবণ না থাকলে আরেকটি ঘর থেকে নেওয়াটা তো খারাপ। একটি ঘরে লবণ কেন থাকবে না? তারা নিয়ে রাখবে। না হলে দোকান থেকে কিনে আনবে।

এভাবে সব ঘরই লবণ আদান-প্রদানের সংস্কৃতি থেকে সরে পড়ল। এতে করে এক ঘরের সাথে আরেক ঘরের যোগাযোগও ধীরে ধীরে কমে এল। একবার এই গ্রামেই মনমাঝি এল। মনমাঝি গ্রামে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়ল। কিন্তু কেউ তার অসুস্থতায় এগিয়ে এল না। মনমাঝি এমন ঘটনায় গ্রামবাসীকে অভিশাপ দিল যে তারা বন্যায় ডুবে মরবে। কেউ কেউ এই অভিশাপের কথা শুনতে পেল। কিন্তু তারা এটা আমলে নিল না। কেননা গ্রামটি একটি পাহাড়ের উপরে। এই পাহাড়ে কস্মিনকালেও বন্যা হয় নি। হবে বলে কখনও কেউ ভাবেও না। বরং মনমাঝির অভিশাপটি তাদের কাছে হাস্যকর ঠেকল। একদিন গভীর রাতে প্রত্যেক ঘরের লবণ গলতে শুরু করল। গলতে গলতে পুরো গ্রাম লবণের জলে ভেসে গেল। এই বন্যায় কেউই আর রক্ষা পেল না।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৩

সুন্দরী কোনও মেয়েকে বিয়ে করবে প্রতিজ্ঞা করে এক যুবক সেই সুন্দরী যুবতীর সন্ধানে বের হয়। সুন্দরী যুবতী মানে তার চেহারা সিনেমার নায়িকাদের মত হতে হবে। সুন্দরী যুবতী মানে যুবতীর হাসি সিনেমার নায়িকাদের মত হতে হবে। সুন্দরী যুবতী মানে সে থাকবে খুবই স্মার্ট। অন্য আট-দশটা মেয়ের মত নয়। একদিন পথে এমন এক যুবতীর সাথে পরিচায় হয়। কিন্তু যুবতী তার সাথে বিয়েতে রাজি হয় না। একদিন সে যুবতীকে ফাঁদে ফেলে মানে তার নগ্ন ছবি তোলে বিয়ে করতে রাজি করায়। যুবতীর বাবা ছিল একজন ডাকাত সর্দার। যুবতী রাজি হলেও ডাকাত-সর্দার আর বিয়ে করাতে রাজি হয় না।

ডাকাত সর্দার যুবককে কতগুলো শর্ত দেয়। সেইসব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তার মেয়েকে বিয়ে দেবেন বলে কথা দেন। প্রথম শর্ত থাকে যুবককে বাঘের দুধ আনতে হবে। যুবক এই শর্ত পূরণ করে। দ্বিতীয় শর্ত থাকে যুবককে সর্দারের পূর্ব-পুরুষেরা স্বর্গে কেমন আছে তা জানাতে বলে। যুবক এই কাজ কিভাবে করবে তা বুঝতে পারে না। সর্দার তার একজন সহচরকে দিয়ে তাকে বুদ্ধি দেয় যে খুব শীতকালে নদীর ধারে আগুন জ্বেলে আগুনের ওপর নিজেকে রাখলে স্বর্গে কে কেমন আছে তা জানা যায়। যুবক তাই করতে রাজি হয়। এবং আগুনে পুড়ে মারা যায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৪

দুই বন্ধু একবার বাজি রাখল যে যে কোন দেশটি স্বর্গের মত- যে দেশে পুলিশ লাঠি-বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই দেশ, না যে দেশে পুলিশ কোনো অস্ত্রছাড়া শুধুমাত্র জনগণের সেবা করে, সেই দেশ। তারা একজন পুরুতের কাছে গেল। যে বন্ধুটি যে দেশে পুলিশ লাঠি-বন্দুক নিয়ে থাকে সেই দেশকে স্বর্গ মনে করে, সেই বন্ধু পুরুতকে আগে থেকেই ঠিক করে রাখে যেন তাকেই রায় দেয়। দুই বন্ধু যাবার পর পুরুত লাঠি-বন্দুকের পুলিশের দেশকেই স্বর্গ বলে রায় দেয়।

বাজিতে সর্বস্ব হারিয়ে অপর বন্ধু ঘুরে বেড়াতে থাকে। পথে সে একবুড়োর দেখা পায়। বুড়োর সাথে ভাল ব্যবহারের দরুন বুড়ো তাকে ধনী হবার উপায় বলে দেয় যে এই দেশেই একটি গাছ আছে। গাছটি সব সময় কড়া পাহারার মধ্যে থাকে। যে এই পাহারা এড়িয়ে গাছে উঠতে পারবে সেই ধনী হবে। এই বন্ধুটি তাই করে এবং যথারীতি ধনী লোক হয়ে যায়।

বাজিতে যে বন্ধুটি জিতেছিল সে এই খবর পেয়ে সেও ওই গাছটিতে ওঠে। কিন্তু পাহারার লোকজন টের পেয়ে যায় এবং তাকে হত্যা করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৫

এটা দুই প্রতিবেশীর কাহিনী। এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে একদমই দেখতে পারত না। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ছিল খুবই প্রতিযোগিতা। প্রথম এক প্রতিবেশী বিল্ডিং ঘর তুলল। এতে আরেক প্রতিবেশীও এক বছরের মাথায় বিল্ডিং ঘর তুলল। এ প্রতিবেশী পিড়িতে বসে আর ভাত খেল না, তারা খাবার খাওয়া শুরু করল ডাইনিং টেবিলে। এই প্রতিবেশীর দেখাদেখি অপর প্রতিবেশীও ডাইনিং টেবিলে খাবার খাওয়া শুরু করল। এক প্রতিবেশীর ঘরে এইচডি টেলিভিশন এল বলে অপর প্রতিবেশীর ঘরেও এইচডি টিভি এল। এক প্রতিবেশী জোরে জোরে গান শোনে বলে অপর প্রতিবেশীও জোরে জোরে গান শুনতে শুরু করল। এইভাবে তারা দিন কাটাকে লাগল।

একদিন এক প্রতিবেশীর বাসা পুলিশ রেট দিল। বলল- তাদের বাসায় মানুষ নয়, রাক্ষস-খোক্কস থাকে। পুলিশ সত্যি সত্যি সেই বাসা থেকে যাদেরকে আটক করল তারা দেখল এতদিন ধরে যাদেরকে তারা মানুষ হিসেবে বাস করতে দেখেছে তারা আসলে মানুষ নয়, রাক্ষস-খোক্কস। পুলিশ প্রতিবেশী রাক্ষস-খোক্কস ধরে নেবার কয়েক বছরের মাথায় দেখা গেল অপর প্রতিবেশীকেও পুলিশ আটক করেছে। কেননা তারাও মানুষ ছিল না। ছিল রাক্ষস-খোক্কস।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৬

এই গ্রামে ট্রেন ঢোকে পড়ল। যেদিন ট্রেন ঢোকল, সেদিন রেললাইনের দুই ধারে এত মানুষ ছিল যে কল্পনাও করা যায় না। হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছিল একটি বিশাল গাড়ি আর তার ভেতরে অনেক ছোট ছোট খুপরী আর সেখানে মানুষ মুখ বের করে রেখেছে। আর তারা দেখল এই যে শুরু এই ট্রেনের আর শেষ নেই। শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সবাই বিস্মিত হল আর তারা আলাপ করতে থাকল একটি দৈত্যের কথা। যে এই ট্রেনের মতই ছিল বিশাল আর যে প্রতিরাতে একজন করে মানুষ নিয়ে যেত প্রতি রাতে।

ট্রেন চলাচলের কয়েকদিন পর প্রতি সকালে দেখা যাচ্ছিল হয় একটি শেয়াল না হয় কুকুর না হয় অন্য কোনও প্রানী মারা পড়ে থাকত রেললাইনের ওপর। গ্রামের মানুষ কেমন যেন একটা অশুভ সংকেত টের পেল। তারা আবারও সেই দৈত্যের কথা আলাপ করতে থাকল।

এর কয়েকদিন পর প্রতি সকালেই রেললাইনের ওপর দেখা যাচ্ছিল একজন করে মানুষ মরে পড়ে আছে। গ্রামের মানুষ আর ভীত আর সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা সেই দৈত্যের কথা মনে করতে লাগল যে প্রতিরাতে অনেকশব্দকরে আসত আর একজন করে মানুষ গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যেত। আরও কয়েকজন গ্রামের মানুষ ট্রেনে চাপা পড়ে মরে যাবার কারণে গ্রামের মানুষ একজোট হল। একদিন গভীর রাতে ট্রেন আসতেই সেই দৈত্যের ওপর হামলা চালাল গ্রামের মানুষ। সবাই বলতে লাগল ট্রেনে ডাকাত পড়েছে। গ্রামের মানুষ ট্রেন পুড়িয়ে দিল। অসংখ্য পুলিশ এসে মানুষশূন্য করে দিল সেই গ্রাম।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৭

সমস্ত কিছুর আনাগোনা তো পথেই। পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসে ভালবাসা-প্রেম; আবার দুঃখ-যন্ত্রণা-মরন। পথ দিয়েই হেঁটে আসে ভাগ্য, উন্নয়ন আর সুখ। কিন্তু কেউ কি জানে কোন পথ দিয়ে কখন কি আসবে? জানলে তো অনেক আগেই সতর্ক হওয়া যায়। গ্রামের এক বৃদ্ধ লোক এমন ভাবতে ভাবতে আরেক বৃদ্ধ লোকের কাছে গেল যে বলতে পারে ছয় মাস পরে আসলে কি হবে। সে আরও দুইজনকে খুঁজে পেল এদের একজন ছয় মাস পরে যা আসবে তাকে তীরবিদ্ধ করতে পারে এবং অপরজন ছয়মাস পরের কোনও বস্তুকে বর্তমানেই নিয়ে আসতে পারে।

যে বৃদ্ধ লোকটি ছয় মাস পরে কি হবে বলতে পারে, সে বলল- ছয় মাস পরে এই গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না। এখানে আসবে উন্নয়ন। এই গ্রাম হয়ে ওঠবে শহর। আর এই গ্রামে আমরা যারা আছি, তারা কেউই থাকতে পারব না। এখানে থাকবে ভিনদেশীরা। বৃদ্ধ লোকটি ছয় মাস পরের ঘটতে যাওয়া পরিণতিকে মেনে নিতে পারছে না।

যে বৃদ্ধ লোকটি ছয় মাস পরে যা আসবে তাকে তীরবিদ্ধ করতে পারে, তাকে সে ছয় মাস পর যে উন্নয়ন এই গ্রামে আসবে তাকে তীরবিদ্ধ করতে বলল। বৃদ্ধ তাই করল।

যে বৃদ্ধ লোকটি ছয় মাস পরের কোনও বস্তুকে ছয় মাস আগেই বর্তমানে নিয়ে আসতে পারে তাকে এখনই সেই উন্নয়ন নিয়ে আসতে বলল। বৃদ্ধলোকটি তাই করল।

এভাবে গ্রামে উন্নয়নও হল এবং তারাও বিতাড়িত হলেন না এবং সুখেশান্তিতে বাস করতে লাগলেন।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৮

দূর দেশ থেকে নৌকা আসে। বড় বড় নৌকা। দূর দেশে নৌকা চলে যায়। নৌকা করে অনেক মানুষ আসে। আসে সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি। আবার নৌকা করে অনেক মানুষও যায়। সাথে যায় সাহিত্য, সংস্কৃতি অর্থনীতি।

বিকালবেলায় একবার রাজপুত্র ভ্রমণ করছিলেন।তার সামনে দিয়ে একপি মস্ত বড় নৌকা পাল তুলে চলে যাচ্ছিল। নৌকায় ছিল অনেক সুন্দরী এক কন্যা। রাজুকুমারকে দেখে কন্যা ১৫ টি আঙুল দেখাল। রাজকুমার প্রথমে এর মানে বুঝতে পারল না। তারপর তার মনে হল আমেরিকার পতাকায় ১৫টি তারা। রাজকন্যা আসলে আমেরিকার কথাই বুঝিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা তো মহাপরাক্রমশীল, এক রোখা আর খুনী। তারসাথে যুদ্ধের তো কল্পনাই করা যায় না। আর রাজকন্যা। এ কি করে সম্ভব। রাজকুমারকে ফেরানো গেল না। ব্যর্থ হল সকল সভাসদ। বহুদেশ বহুনদী পেরিয়ে রাজকুমার আমেরিকায় আসল। রাজপ্রাসাদের এসে সে তার পরিচয় দিল। এবং রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল।
আমেরিকার রাজা বলল- দুইটি শর্তে সে রাজি হবে। এক. রাজকুমারের এই প্রস্তাবে সে রাজি হবে যদি রাজকুমারের দেশটা আমেরিকাকে দিয়ে দেয়। আর তার প্রজারা আমেরিকার দাস হয়ে কাজ করে। দুই. তার দেশে একজন নরখাদক রাক্ষস আছে তাকে হত্যা করতে হবে। রাজকুমার রাজি হল। প্রথম শর্ত পালন করল। আর দ্বিতীয় শর্ত পালন করতে গিয়ে রাজকুমার মারা গেল। আমেরিকার রাজকন্যা আমেরিকাতেই থেকে গেল। আর রাজকুমারের দেশ হল আমেরিকার দাস।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-১৯

এক দেশ একবার স্বাধীন হল। স্বাধীন হবার পর একটি নিজেদের শাসক শ্রেনী হল। শাসক শ্রেনী দেখল যে উপনিবেশিক শাসক যেভাবে চলত, যে আইন যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সেটাই শাসক শ্রেনীর জন্য সুখকর। এই কাঠামোকে জনগণতান্ত্রিক করতে গেলে শাসক শ্রেনীরই বরং অসুবিধা, তা সে যে ধরনের শাসক শ্রেনীই হোক না কেন। তাই তারা উপনিবেশিক কাঠামোতেই শাসন করতে লাগল। এবং বলতে লাগল স্বাধীন দেশে এখন নাগরিকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। জনগণ কয়েকদিন পর টের পেলে যে আগের শাসক শ্রেনী আর স্বাধীনতার পরে তারা যে শাসক শ্রেনী নির্বাচিত করেছে, তার মধ্যে কোনও ফারাক নেই।

এক দিন এই শাসকে শ্রেনীর প্রধানের মেয়েকে দেখে এক সওদাগর প্রেমে পড়ে যায়। শাসক প্রধান বিয়েতে রাজি হয়। সওদাগর মেয়েকে বিয়ে করে তার দেশের উদ্দেশ্যে তরী ভাসায়। শাসকপ্রধান এতে আপত্তি করে। শাসক প্রধানও তরী দিয়ে সওদাগরের পিছু ছোটে। শাসক প্রধানের মেয়ে যাদু জানত। সে যাদুর মাধ্যমে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি করে। ঝড়ে সেই রাজ্যের সমস্ত লোক মারা যায়। শাসকপ্রধান কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে যায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২০

করিম কখনও শহর দেখেনি। শহর নিয়ে অনেক গল্প সে শুনেছে। শুনেছে শহরের মানুষ অনেক চালাক আর খারাপ। শুনেছে শহরের মেয়েরা ছেলে দেখলেই ধরে নিয়ে যায়। শুনেছে শহরে অনেক অনেক টাকা ওড়ে। আর সেই টাকায় ভেসে ভেসে বেড়ায় স্বপ্ন আর সুখ। করিম হাঁটতে হাঁটতে সত্যি শহরে এসে পৌঁছল। শহরে ঢুকতেই দেখল কত রকমের কত রংএর যে গাড়ি। এত সুন্দর সুন্দর নানা আকৃতি আর রং এর গাড়ি সে কখনও দেখে নাই। শহরের আরও একটু ভেতরে এসে সে দেখতে পেল একটি ছোট্ট সুন্দর ঘরে একটি বিছানা পাতা আছে। পরিশ্রান্ত করিম এখানে ঘুমিয়ে পড়ল। যে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ল সেখানে আসলে রাজকন্যা উজীরের সঙ্গে অবৈধ সংগম করত।

রাতে রাজকন্যা উজীর মনে করে করিমের সঙ্গেই মিলিত হয়। ভোর বেলায় রাজকন্যা টের পায় এটা উজীর নয় অন্য কেউ। উজীর চলে আসতে পারে এই শঙ্কায় রাজকন্যা তখন তাকে পালাতে অনুরোধ করে। কিন্তু করিম বিছানা ছাড়ল না। পরে রাজকন্যা তার গলার হার ও অন্যান্য স্বর্ন দিয়ে তাকে চলে যাবার অনুরোধ করে। করিম সেই সব স্বর্ণ নিয়ে আরামে আয়েশে, প্রচণ্ড আনন্দ নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আর ভাবে শহর আসলেই খুব মজার জায়গা। করিমের এবার সত্যি বিশ্বাস হয় যে শহরে সত্যি নারীরা ছেলেদের ধরে নিয়ে যায় আর অনেক টাকা ওড়ে। করিম কিছু স্বর্ণ বিক্রি করে আর বাকি স্বর্ণ দিয়ে সে ধুমধাম করে বিয়ে করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২১

পৃথিবীতে কোনও কোনও গ্রাম থাকে যে গ্রামে শহর ঢুকতে পারে না। শহর সেই গ্রামে ঢোকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। এটি তেমনি একটি গ্রাম। সবুজে ঘেরা, শান্ত, নিশ্চুপ একটি গ্রাম। এখানে মানুষের শব্দের চাইতে পাখিদের কিচিরমিচিরই বেশি। এই গ্রামেই একদিন সন্ধ্যা বেলায় শহরের রাক্ষসরা এসে বলল মানুষের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই গ্রামে থাকত এক বুড়ি আর এক যুবতী। রাক্ষস আসায় যুবতী অনেক ভয় পেয়ে গেল। তার মনে হল এই বুঝি রাক্ষসরা খেয়ে ফেলবে তাদের। রাক্ষরা চলে যাবার পর বুড়িকে যুবতী বলল- এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে হয়ত বেশি দিন বাঁচা যাবে না। একদিন না একদিন তাদেরকে রাক্ষস টের পাবেই আর হয়ত তখনই খেয়ে ফেলবে পুরো গ্রাম।

বুড়ি শুনে খিল খিল করে হেস বলল- এই গ্রামের মরণ এত সহজ নয়। এই দেশের যিনি রানী তার পেটে এক বানর জন্ম নেবে। সেই বানর এখানে এসে সাত তাল জমির নিচে এক পুকুরে ঢুকবে। সেই পুকুরের তলায় একশ মণ ভারী লোহার কলসীর নিচে এক ভ্রমর আছে। সেই ভ্রমর মারলে তবেই এই গ্রামের মৃত্যু হবে। এটা কেউ জানে না। শহরের রাক্ষসরাও না।

যুবতী একদিন শহরের রাক্ষসদের এই কথা বলে দেয়। রাক্ষসরা পুকুরে ডুব দিয়ে কলসি খোঁজে পায়। কিন্তু কলসি আর পুকুরের ওপরে তুলতে পারে না। পুকুরে ডুবে একে একে সব রাক্ষস মারা যায়। গ্রামটিও থেকে যায় আগের মত। সবুজে ঘেরা, শান্ত, নিশ্চুপ।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২২

এক দেশে দুই বন্ধু ছিল। দুইজনই ছিল বেশ দেশপ্রেমিক। তবে একজন মনে করত দেশ প্রেম মানে দেশের পণ্য বাইরে ছড়িয়ে যে যত দিতে পারবে সে তত বেশি দেশপ্রেমিক। আরেকজন মনে করত না বিদেশের জিনিস এনে যদি দেশের মানুষের বেশি উন্নয়ন করা যায়, তাহলে ওটাই বেশি দেশ প্রেম। দুই বন্ধু , দুইজনই দেশ প্রেমিক কিন্তু স্পষ্ট ব্যবধান আছে তাদের।

এই দুই বন্ধু একবার এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। মেয়েটি বলে যে এক মাস তরমুজ খেত পাহাড়া দিয়ে রাখতে পারবে সে তাকেই বিয়ে করবে। প্রথম বন্ধু রাতে পাহাড়া দেয় আর দ্বিতীয় বন্ধু পাহাড়া দেয় দিনে। একদিন দ্বিতীয় বন্ধুটি তরমুজ খেয়ে ফেলে। রাতে প্রথম বন্ধুটি আসলে দ্বিতীয় বন্ধু মেয়েটিকে নিয়ে আসে আর বলে যে সে তরমুজ খেয়ে ফেলেছে। প্রথম বন্ধুটি আরও দুইজন স্বাক্ষীকে নিয়ে বিচারকের কাছে যায়। যাওয়ার পথে দ্বিতীয় বন্ধুটি প্রথম বন্ধুকে মেরে ফেলে। বিচারকের মাধ্যমে পরে দুই স্বাক্ষী দ্বিতীয় বন্ধুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৩

একবার এক দেশ অনেক উন্নতি করল। সে দেশে অনেক ফসল হল। কৃষকেরা তাদের ঘরে ফসলের স্তুপ করে ফেলল। কৃষকেরা গান গাইতে শুরু করল মনের সুখে। বেশ কিছুদিন তারা সুখনিদ্রায় কাটাতে লাগল। কয়েকদিন পর কৃষকেরা দেখতে পেল তাদের ঘরের ফসলের স্তুপ ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। কৃষকের আবার ফসল কেটে স্তুপ বড় করল।

কিন্তু কয়কদিন পর আবারও দেখতে পেল ফসলের স্তুপ ছোট হয়ে আসছে। কৃষকেরা এর কারণ বুঝতে পারল না। কেউ কেউ ধারণা করল কেউ হয়ত ওদের ফসল চুরি করে নিয়ে যায়। কৃষকেরা বুদ্ধি করে একটি জাল তৈরি করল। যেন কেউ চুরি করতে এলেই এই জালে আটকা পড়ে। কয়েকদিন পর কৃষকেরা এসে দেখল তাদের ছেলেরা জালে আটকা পড়ে আছে। এই ফসল চুরি করে ছেলেরা সিনেমা দেখতে যায়।
ধরা পড়ার পর থেকে কৃষকের ছেলেরা আর লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিল না। তারা কাকতাড়ুয়া হয়ে ক্ষেতের ফসল পাহারা দেয়া শুরু করল। এখনও কৃষকের ছেলেরা কাকতাড়ুয়া হয়ে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৪

একদিন এক জ্যোতিষ এক বুড়োর হাত দেখে বলল যে, তার ভাগ্য লেখা আছে একটি বলদের ভেতর। সে যদি বলদটি ধরে খেতে পারে তবেই সে অনেক ধনপতি হবে। বুড়ো বলদটি ধরল এবং তা কেটে রান্না-বান্না করল। রান্নার পাশে সে কাউকেই থাকতে দিল না। এমনকি তার ছেলদেরও না। রান্না করার সময় বুড়োর টয়লেটে চাপ এল। বুড়ো এসময় কয়েকজন এনজিও কর্মীদের দেখতে পেল। তাদেরকে চুলোর পাশে রেখে সে টয়লেটে গেল। কি রান্না হচ্ছে, এটা পরীক্ষা করতে গিয়ে এনজিও কর্মীরা সেই সব বলদের মাংস খেয়ে ফেলল।

এই ঘটনা বুড়ো ছেলেদের বলল। জ্যোতিষিকে বুড়ো আবার ডেকে আনল। জ্যোতিষি বলল- এনজিও কর্মীদের মাংস খেতে পারলে তার ভাগ্য ফিরে আসবে। এনজিও কর্মীরা এই কথা জানতে পেরে বুড়োকে ছাগলের মাংস খাইয়ে বলে দিল যে এটা এনজিও কর্মীদের মাংস। বুড়োর ভাগ্য আর ফিরে এল না। ধনপতি হল এনজিও কর্মীরা।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৫

এক দেশে এক শহর ছিল। এই শহরে ছিল এক রাজা। রাজা সবকিছুই নিজের হাতে করতে চাইতেন। তাই সবকিছুই ছিল রাজার করায়ত্তে। দেশের সবকিছুই করা হত রাষ্ট্রীয়ভাবে। একদিন রাজা একের পর এক করে ছয়টি বিয়ে করলেন। ছয় রাণীই এই সঙ্গে অন্তঃস্বত্ত্বা হল। কিন্তু রাজা স্বপ্ন দেখলেন- যে হাসপাতালটি রাজার স্পর্শের বাইরে সেই হাসপাতালেই কেবল রাণীর গর্ভ থেকে জীবিত সন্তান জন্মাবে। অন্যথা রাজার কপালে থাকবে ছয় মৃতসন্তান।

রাজা দেশেজুড়ে খুঁজতে থাকলেন কার হাতে এত টাকা আছে যে হাসপাতাল দিতে পারবে। রাজা কাউকে খুঁজে পেলেন না। হতাশ হয়ে গেলেন। দেশে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল নেই। সরকারি হাসপাতালের চাইতে তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল ভাল। রাজা কি করবে ভেবে পেলেন না। তিনি একবার ভাবলেন সবকিছু বেসরকারি করে দেবেন। সরকারি হলে সবাই অলস হয়ে যায়। কাজ করতে চায় না।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রাজা সুন্দরী এক যুবতীকে দেখতে পেলেন। যুবতী সব শুনে রাজাকে বলল- আপনার এই স্বপ্নটি আসলে আপনাকে পথে বসানোর স্বপ্ন। সুন্দরী যুবতীর কথায় রাজা আশ্বস্ত হলেন। খুশি হয়ে তিনি তাকে বিয়ে করলেন। এবং যথারীতি রাজা সুন্দর ফুটফুটে ছয় সন্তান জন্ম হল রাজার গড়া সরকারি হাসপাতালেই।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৬

একবার গণতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রের বন্ধুত্ব হয়। তারা আজীবন বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা করে। গণতন্ত্র একবার সমাজতন্ত্রকে খাবার আমন্ত্রণ জানায়। সমাজতন্ত্র পেট ভরে খায়। এরপর সমাজতন্ত্র গণতন্ত্রকে আমন্ত্রণ করে।

সমাজদন্ত্রের পুকুরে অনেক মাছ দেখতে পেয়ে গণতন্ত্র মাছ ধরতে নেমে পড়ে। কিন্তু কৌশল না জানা থাকার কারণে একটি মাছও ধরতে পারে না। গণতন্ত্রের ব্যর্থতা দেখে সমাজতন্ত্র হাসে। এতে ক্সিপ্ক হয়ে সমাজতন্ত্রকে গণতন্ত্র খেয়ে ফেলে। পরে সমাজতন্ত্রের কাছে যা ছিল সবই গণতন্ত্র খায়। এতে তার পেট ভরে যায়।

পেট বেশি ভরে গেলে রাস্তায় গণতন্ত্র হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সে একটি কাঠের থাম দেখতে পায় রাস্তায়। এটি পার হতে গিয়ে গণতন্ত্র পেট ফেটে মরে যায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৭

একবার বনে উপনিবেশিক আইন ও স্বাধীন দেশের আইন শিকারে গেল। মৌচাক দেখে উপনিবেশিক আইন গাছে ওঠল। এবং মধু পান করল। স্বাধীন দেশের আইন নিচ থেকে চেয়ে দেখল যে সে মধু খাচ্ছে। স্বাধীন দেশের আইনকে উপনিবেশিক আইন গাছে উঠতে বলল। স্বাধীন দেশের আইনের গাছে ওঠে মধু পান করার সময় উপনিবেশিক আইন নিচে নেমে আসল এবং নিচ থেকে মই সরিয়ে নিল। উপনিবেশিক আইন স্বাধীন দেশের আইনকে গাছে রেখেই চলে গেল। স্বাধীন দেশের আইন গাছ থেকে নিচে নামতে না পারায় অনেক কান্নাকাটি করল এবং একদিন মারা গেল। এরপর থেকে দেশে শুধু উপনিবেশিক আইন জারি রয়েছে। স্বাধীন দেশের কোনও আইন কার্যকর নাই।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৮

একবার এক গ্রামে এক সাদা লোক আসে। সে ধর্ম প্রচার করতে থাকে। অনেকেই তার ধর্ম প্রচারে আকৃষ্ট হয়। সে ওই গ্রামে একটি সুন্দর বাড়ি বানায়। সেখানে দুজন চাকর রাখেন। একজন চাকর ও আরেকজন চাকরানি। দুজনের আনুগত্য পরীক্ষার জন্য চাকর ও চাকরানিকে তিনটি কাজ দেয়। প্রথম কাজ তার প্রাপ্ত সকল আবাদি জমির একরাতে ফসলি জমা করে ফেলা। চাকর ও চাকরিনা তা করতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় কাজ দেওয়া হয় একটি বড় পুকুর খনন করা। এটিও তারা করতে পারে। এবং তৃতীয় কাজ দেয়া হয় তিনদিনের মধ্যে একশ জন শিষ্য যোগার করা। এটিও তারা করতে পারে। কিন্তু সাদা লোকটি তারপরও চাকর-চাকরানির পিছু ছাড়ছিল না। একসময় চাকর-চাকরানি জানতে পারে যে তাদের সাদা লোকটি মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। তখন চাকর-চাকরানি দুজনেই পালিয়ে যায় এবং প্রাণে বাঁচে। এরপর থেকে তারা আর সাদা লোকটির গ্রামে যায় নি।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-২৯

এক ছেলে অনেক ভাল হাডুডু খেলোয়ার ছিল। দশ গ্রামে ছিল তার নাম। বলা হত ওউ ছেলে যে দলে থাকবে তার জিৎ নিশ্চিত। ওই ছেলেই একবার পাত্রীর খোঁজে বেরুল। অগ্রাহায়ন মাসেই বিয়ে করবে সে। তাই সে মেয়ে দেখছে। প্রথম এক পাত্রীর কাছে গেল। সেই পাত্রীর পরিবার বলে দিল- এখন তো ফুটবলের যুগ। আমরা হাডুডু খেলোয়ারের কাছে পাত্রী দেব না। এরপর সে যে পাত্রীই দেখতে যায়, হয় পাত্রী , হয় পাত্রীর বাবা, হয় পাত্রীর মা না হয় পাত্রীর বড় ভাই বলে যে হাডুডু খেঐওয়াড়দের কাছে তারা পাত্রী দেবে না। কারণ এতে টাকা নাই। আর এখন ফুটবলের যুগ। আর হাডুডু একটা গ্রাম্য খেলা। এখন কি কেই হাডুডু খেলে। এখন সবাই খেলে ফুটবল। ছেলের বাড়ি থেকে বলা হল। তুই হাডুডু খেলা বাদ দিয়ে ফুটবল খেলায় নেমেপড়। যুগের চাহিদা। কিন্তু ছেলে রাজি হয় না। ছেলে মানতে পারে না সমস্ত লোকহই হুল্লোর করছে আর সে একটা ছোট বল সাথে নিয়ে দৌঁড়ুচ্ছে। ছেলে শুধু স্বপ্ন দেখে সেই হাডুডু খেলার মাঠ। কিছুতেই মানতে পারে নাই শেষপর্যন্ত ছেলেটি। বিয়েও করেনি। কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জান-প্রাণ দিয়ে খেলে গেছে হাডুডু খেলা। তারপর একদিন সেই ছেলের সাথেই হারিয়ে গেল হাডুডু খেলা। এখনও কোথাও আর তেমন হাডুডু খেলা দেখা যায় না। চারিদিকে তাকালেই দেখা যায় ফুটবল খেলা।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।



কথাকাহিনী-৩০

দুই কবির মধ্যে একদিন বিরাট তর্ক বেধে যায়। একজন বলে যে ইউরোপের প্রকরণ খুবই সুন্দর। এটা ছাড়া কবিতা অচল। আরেকজন বলে দেশেই অনেক সাহিত্যের প্রকরণ আছে যা ইউরোপের প্রকারণের চেয়ে অনেক সুন্দর। তারা বাজি ধরে এ নিয়ে। একজন পুরুতের কাছে গিয়ে বলে যে কোন প্রকরণ সুন্দর। দুই কবির এক কবি আগে থেকেই পুরুতকে ঠিক করে রাখে। এতে সে ইউরোপের পক্ষে রায়। বাজিতে হেরে এক কবি সর্বস্বান্ত হয়ে হাঁটতে থাকে। পথে সে শুনতে পায় যে সে যে দেশে ঢুকে পড়েছে সে দেশের রাজা অন্ধ। যে এই অন্ধত্ব দূর করতে পারবে তাকে সে অনেক ধন দৌলত দেবে। কবিটি গুহ্য জ্ঞানের মাধ্যমে একটি গাছে উঠে। এবং পরে রাজার অন্ধত্ব দূর করে। এতে এত ধন দৌলতের মালিক হওয়ায় অপর বন্ধুটিও ঈর্ষান্বিত হয় এবং সেও গুহ্য জ্ঞানের দ্বারা একটি গাছে উঠে। রাজা এটা জানতে পেরে ওই কবি বন্ধুকে মেরে ফেলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩১

ব্যান্ড সংগীত শিল্পী ও একজন বাউল শিল্পীর মধ্যে বেশ সখ্যতা ছিল। তারা দুজনে মিলে একদিন খিচুরি রান্নার আয়োজন করে। সারাদিন ভরে তারা খিচুরি রান্না করে। ব্যান্ড সংগীত শিল্পী রান্না শেষ হলে বলে যে সিন্নি না দিয়ে খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। সে বাউল শিল্পীকে সিন্নি দিতে পাঠায়। এর মধ্যেই ব্যান্ড শিল্পী সব খিচুরি খেয়ে ফেলে। বাউল শিল্পী ফিরে এসে কোন খাবার না পেয়ে এর প্রতিশোধ নেবার চিন্তা করে।

একদিন সে ব্যান্ড শিল্পীকে একটি কনসার্টে নিয়ে যায়। বাউল শিল্পী বলে যে এই জায়গাটা তাদের আখড়া। এখানে তারা উলঙ্গ হয়ে গান করে। আর যারা দর্শক তারা লাঠি হাতে উল্লাস করে। ব্যান্ড শিল্পীকে বলে দেয় সে যেন দর্শকদের হাতে লাঠি দেখে ভয় না পায় এবং গান গাইতেই থাকে।

যথারীতি কনসার্ট শুরু হয়। সবাই মিলে স্টেজে উলঙ্গ হয়ে গান করছে বলে দর্শকরা ক্ষেপে যায়। এবং লাঠি হাতে তাড়া করতে থাকে। কিন্তু ব্যান্ড শিল্পীকে ভয় না পাবার কথা বলার কারণে সে চোখ বুজে গান গাইতেই থাকে। এবং দর্শকরা তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েই মেরে ফেলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩২

ইংরেজি সিনেমা আর বাংলা সিনেমা দুই বন্ধু। একবার তারা কিছু কলা চুরি করে। ইংরেজি সিনেমা কলাগুলো নিয়ে গাছে ওঠে এবং খেয়ে কলার খোসাগুলো নিচে ফেলে দেয়। একে একে ইংরেজি সিনেমা সব খেয়ে ফেলে। শেষমেষ বাংলা সিনেমা কিছুই পায় না।

এতে বাংলা সিনেমা ক্ষেপে যায়। এবং কিছু একটা প্রতিশোধ নেবার কথা ভাবে। বাংলা সিনেমা ইংরেজি সিনেমাকে নিয়ে একবার কচু ক্ষেতে যায়। ইংরেজি সিনেমা বাংলা সিনেমাকে জিজ্ঞেস করে যে সে কি করছে। বাংলা সিনেমা উত্তর দেয় যে সে রাজার আখ বাগান পাহারা দিচ্ছে। বাংলা সিনেমা ইংরেজি সিনেমাকে রেখে একটু ঘুরতে যায়। এই সময় ইংরেজি সিনেমা আখ ভেবে কচু খাওয়া শুরু করে। এবং গলার চুলকানিতে ভোগে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৩

ফাস্ট ফুডের দোকানে একজন ভদ্র বাঙালি পিজ্জা খাচ্ছিল। এ সময় একজন অভদ্র বাঙালি এসে সেই খাবার দাবি করে। অভদ্র বাঙালি ফাস্ট ফুডের দোকানে কিছু একটা করে ফেলতে পারে, এই ভয়ে অর্ধেক পিজ্জা দিতে রাজি হয়। ভদ্র বাঙালি তাকে নিক্তি আনতে অনুরোধ করে। অভদ্র বাঙালি তা নিয়ে আসতে গেলে ভদ্র বাঙালি সব খেয়ে ফেলে। এতে অভদ্র বাঙালি বিস্মিত হয়।

একদিন অভদ্র বাঙালি ভদ্র বাঙালিকে নিমন্ত্রণ করে। ভদ্র বাঙালি নিমন্ত্রণে আসে। অভদ্র বাঙালি বলে যে তার শরীর হঠাতই খারাপ হয়ে গেছে। সে আর আজ কিছু খাবে না। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে এতকিছু খাবার সব ভদ্র বাঙালিদের জন্যই করা হয়েছে। এতে ভদ্র বাঙালিরা খুশি হয় এবং পেট পুরে খায়। ভদ্র বাঙালি খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরলে পেটের অসুখ শুরু হয়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৪

দুই বন্ধুর এক বন্ধু শুধু দেশি পোশাক পড়ত, আরেক বন্ধু বিদেশি পোশাক পড়ত। দেশি পোশাকে খরচ হত খুবই কম টাকা। আর বিদেশি পোশাকের জন্য আরেক বন্ধুকে অনেক টাকা খরচ করতে হত।

একদিন এই দুই বন্ধুকেই রাজা দাওয়াত করল। রাজপ্রাসাদে যে বন্ধুটি দেশি পোশাক পড়েছে তাকে অনেক দাম দেওয়া হল। রাজ্যের মন্ত্রী, সভাসদরা কেবল তার কুশলই নিল। কিন্তু বিদেশি ও এত দামি পোশাক পড়েও অপর বন্ধুটি তেমন দাম পেল না। পরে বন্ধুটি বুঝতে পারল- এখনকার মানুষের রুচি পাল্টিয়েছে। বিদেশি পোশাকের চাইতে ভদ্র ও বড়লোকি পোশাক আসলে দেশি পোশাক। এরপর থেকে এই বন্ধুও দেশি পোশাক পড়া শুরু করল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৫

এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার ছেলে আইএলটিএস, জিআরই করা। কয়েকদিন পরই সে ধনী দেশে যাবে। একদিন সে ইংরেজি নাটক দেখতে গেল। সেখানে সে নাটকের নায়িকার প্রেমে পড়ে গেল। নায়িকা বলল-তার দেশ অমুক দেশ পেরিয়ে, অমুক বন পেরিয়ে, অমুক পাহাড়ের ধারে একটি সমুদ্র পেরিয়ে সে দেশ পাওয়া যাবে। সেই দেশের দানবরাজাই হল তার পিতা। পিতাকে বাধ্য করতে পারলে তবেই তার বিয়ে হবে। নাটকের নায়িকা এই বলে অদৃশ্য হয়ে গেল।

দশ বছর পর রাজার ছেলে সেই দেশ খুঁজে পেল। দানবরাজার কাছে তার কথা জানাল। দানবরাজা বলল- তিনটি শর্তে সে এই বিয়েতে রাজি হবে। প্রথম শর্ত সমুদ্র থেকে ঘোড়ায় করে মানিক নিয়ে আসতে হবে। রাজকুমার তা পারল। দ্বিতীয় শর্ত, সবগুলো ইংরেজি শব্দ মুখস্ত বলতে হবে। রাজকুমার পারল। তৃতীয় শর্তটি ছিল বনের বাঘিনী দুইয়ে দুধ আনতে হবে। রাজকুমার তা করতে গেল। এবং মারা পরল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৬

এক দেশে ছিল এক ধূর্ত রাজা। সে বুঝতে পারল মানুষ নয়, রাষ্ট্রই মানুষকে ধর্মান্তরিত করতে পারে । সে রাষ্ট্রীয় ধর্মের প্রবর্তন করল। এবং এমনভাবে নিরপেক্ষতা রাখল বা এমনভাবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলল যে সবাই তার তার ধর্ম পালন করতে পারবে কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা রাষ্ট্রীয় কোনও কাজ বা অধিকার চাইতে গেলে তাকে ধর্মান্তরিত হতে হবে। সেই দেশেই একবার এক ছেলে আর এক মেয়ে জন্ম নিল যারা ধর্ম বিশ্বাস করে না। ছেলেটি ভিন্ন ধর্মের আর মেয়েটি প্রধান ধর্মের। তারা বিয়ে করতে চাইল। কিন্তু সমাজ তাদের বাধা দিল। তারা জানত যে সমাজ তাদের বাধা দিবে। তাই আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। অতএব সমাজ তাদের কিছু করতে পারল না। তাদের বিয়ে হল।

কিন্তু বিয়ের সময় ছেলে ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় মেয়ের রাষ্ট্রীয় ধর্মেই বিয়ে হল। কারণ ধর্ম যার রাষ্ট্র তার। ছেলেটি বিয়ে করল। এবং তাদের নিজেদের মধ্যেকার বোঝাপড়া ছিল বলে তাদের রাষ্ট্রও দমাতে পারল না। তারা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল। একদিন তাদের ঘরে ফুটফুটে বাচ্চা এল। বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে তো আর ছিনিমিনি খেলা ঠিক হবে না। আর রাষ্ট্রের ধর্মের লোকদের সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাই ছেলের নাম রাখা হল রাষ্ট্রীয় ধর্মানুসারে। একদিন ভিন্ন ধর্মের বিবাহিত ছেলেটিও ধর্মান্তরিত হল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৭

বিদেশ থেকে অনেক বিদ্যা অর্জন করে রাজপুত্র ঘরে ফিরল। বিদ্যা পরীক্ষার জন্য সে দেশের ভিতর ঘুরতে শুরু করল। একদিন পথে সে শুনতে পেল এক দেশে এক সুন্দরী কন্যা আছে। যে কন্যা যে প্রাসাদে থাকে, সে প্রাসাদের কুকুর বিনা আঘাতে বা কোনও বিষ না খাইয়ে হত্যা করতে পারবে, সেইই ওই রাজকন্যাকে বিয়ে করতে পারবে। রাজপুত্র সেই রাজপ্রাসাদে গেল এবং বিদেশের শিক্ষা দিয়ে বিনা আঘাতে ও কোনও প্রকার বিষ বা অন্য কিছু না খাইয়ে কুকুরটিকে হত্যা করে।

কিন্তু কন্যার পিতা ছেলেটিকে মেনে নিতে রাজি হয় না। কারণ রাজপুত্র যে জ্ঞান দিয়ে কুকুর হত্যা করেছে তা বিদেশি জ্ঞান- বিদেশি শিক্ষ। বিদেশি শিক্ষা প্রথম দিকে ভাল বা কম সময়ের জন্য ভাল মনে হলেও আসলে এটি খারাপ শিক্ষা বলে মনে করত কন্যার পিতা। কন্যার পিতা রাজপুত্রকে কন্যা দিতে অমর্জি হয়। রাজপুত্র ও রাজকন্যা মিলিত হয়ে বুদ্ধি করে রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যাবার। রাজকন্যা যাদু জানত। যাদুর মাধ্যমে তারা রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যায়। এটা কন্যার বাবা জানতে পেরে রাজপুত্রকে বন্দি করে ও হত্যা করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৮

এক দেশে ছিল এক চিন্তাবিদ। তাকে বিদেশি পন্ডিতই বলেন সবাই। সমস্ত দূতাবাসের সাথে তার রয়েছে রহস্যজনক সুন্দর সম্পর্ক। একদিন সে চিন্তান্বেষনে বেরিয়ে এক যাদুবিদ্যায় পারদর্শী লোকের চাকর হয়। চিন্তাবিদের সেবাযত্নে সন্তুষ্ট হয়ে সে তাকে একটি লাঠি দেয়। এই লাঠি দিয়ে বাতাসের বেগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়। এছাড়া সে একটি সোনার গোলক পায়। এসব দিয়ে চিন্তাবিদ অনেক ধনবান হয়। তারপর চিন্তাবিদের বিয়ের ইচ্ছে তৈরি হয়।

একদিন সে পাত্রীর সন্ধানে বের হয়। পথে হংসপরীর দেখা পায় এবং তাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর হংসপরী চিন্তাবিদের সবকাজেই বিরক্ত হয়। চিন্তাবিদকে সে পাগল মনে করে। এবং তাদের বিবাহিত জীবন অসুখী হয়। হংসপরী একদিন চিন্তাবিদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরপর চিন্তাবিদ সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যায়। এবং যাদুর লাঠি দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ায়।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৩৯

সিভিল সোসাইটির দুই সদস্যের মধ্যে একবার খুব বন্ধুত্ব হয়। তারা একে অপরের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ার পণ করে।

একদিন সিভিল সোসাইটির দুই বন্ধুর একজন এক বুড়িকে চাউলের গুড়োএ পোটলা নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যেতে দেখে। তখন সে পোটলাটি চুরির করার কথা ভাবে। বুড়ির যাওয়ার রাস্তায় ওই বন্ধু আহতের ভান করে পড়ে থাকে। বুড়ি পোটলাটি এক পাশে রেখে তাকে দেখতে যায়। এ সময় অন্য বন্ধু চাউলের পোটলা নিযে পালিয়ে যায়।

পরে দুই বন্ধু মিলে চাউলের গুড়ো দিয়ে পিঠা তৈরি করে। পিঠা তৈরি শেষ হলে এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে কলা পাতা আনতে পাঠায়। কলা পাতা আনার সময় অন্য বন্ধু সব পিঠা খেয়ে ফেলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪০

এক দেশে ছিল এক বামপন্থি। ছোট বেলা থেকেই সে নিপীড়িত-গরীবদের নিয়ে ভাবত। সে দেখতে পেল পৃথিবীতে একটাই শয়তান আছে এবং তার নাম বৈষম্য। সে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল। লড়াই সংগ্রাম আর বিপ্লবের স্বপ্নে কোন রকম স্কুল- কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় পার করল। তারপর সে চলে চরাঞ্চলে। মাটির সাথে, মাঠের জন্য রাজনীতিই যদি না করা হয়, তাহলে আবার কিসের বামপন্থা। দীর্ঘ পাঁচ বছর চরাঞ্চলের মানুষের সাথে কাটাল। তারপর তার একদিন শহরে আসার ইচ্ছে হল। শহরে এসে তার বন্ধুদের খোঁজ করল। দেখল তার সাথে যারা বামান্দোলন করত, তাদের অনেকেই প্রেম করে বিয়ে করেছে, অনেকের বাচ্চা-কাচ্চা আছে, কেউ কেউ আবার গাড়িও কিনেছে। তারা এখন বলে এক সময় এই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল বলে তারা গৌরবান্বিত। পার্টিতে এখন মোটা অঙ্কের টাকা দেয় তারা। পার্টির সভাপতি তাই মাঠের নেতার চাইতে মোটা অঙকের টাকা পায় যার কাছে তার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখে। যে ছিল কর্মী তাকে বেশ সম্মান আর আদর যত্ন করে। পার্টি তো চালাতে হবে।

বন্ধুরা তাকে চরাঞ্চলে কাজের জন্য বাহবা দিল। পুরো চরাঞ্চল তাদের পার্টির দখলে এটা সত্যিই গৌরবের। তবে বন্ধুরা তাকে বলল- পার্টির কাজের মত এখন অনেক এনজিও চরাঞ্চলে কাজ করে। সে চাইলে তাকে এমন কাজ ম্যানেজ করে দিতে পারবে। এতে পার্টির কাজও হল। কিছু টাকাও তার হল। সেই বামপন্থি রাজি হল। এক সময়কার পার্টির দখলকরা চরাঞ্চলে খুব দ্রুত সুজলা-সুফলা হয়ে উঠল এনজিওর টাকায়। এখন সেখানে আর পার্টির কাজ নেই। সেই বামপন্থিও আর পার্টি করে না।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪১

এক দেশে ছিল এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। স্কুলের বেতন বাড়লেও তার ছিল অনেক অভাব। যে গ্রামে থাকত সে গ্রামে সবাই স্কুল শিক্ষ হওয়ায় তাকে অনেক সম্মান করত। বিভিন্ন গ্রাম্য সালিশে তাকে ডাকত সবাই। সে বিচার করে দিত। এক সময় সে বুদ্ধি করল যে সে টাকা নিয়ে বিচারের রায় দিবে। অনেক বিচার আচারে সে এইভাবে রায় দেয়া শুরু করল।

গ্রামের মানুষ প্রথম প্রথম এটি ধরতে পারেনি। এরপর ওই শিক্ষকের অনেক সাঙ্গ পাঙ্গ হল। গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পারল এই শিক্ষক আসলে ভাল শিক্ষক নয়। আসলে শিক্ষকও অন্য অনেক জিনিসের মত পাল্টিয়েছে। তাই তারা এক বুদ্ধি করল। নিজেরা নিজেরা একটি ঝামেলা করে তাতে সালিশ ডাকল। ওই শিক্ষককে টাকা দিয়ে রায় নিয়ে নিল। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হাতেনাতে ধরা পড়ল। এবং তাকে সেদিন বেদম পেটানো হল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪২

এক দেশে ছিল এক ডাক্তার। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরেছে। প্রতিদিনই তার নামে মাইকিং করা হয়। অনেক কিছুতে বিশেষজ্ঞ তিনি। তার চ্যাম্বারে রোগীতে ভরে গেল। আর হাসিফুটে ওঠল ডাক্তারের মুখে। প্রতিদিনই শত শত রোগী। ডাক্তার তার ভিজিট বাড়িয়ে দিল। কয়েকদিন পরেই সে নিজেই একটা বড় ক্লিনিক বানাল।

ডাক্তার নিজে বাড়ি বানাল। বিশাল বাগান বাড়ি। ডাক্তারের সুখের শেষ নাই। ডাক্তার হলে মানুষের কতটাকা পয়সা হয় আর ঘর ভরে যায় সুখে। একদিন এই ডাক্তারের বাড়িতেই পুলিশ এল। জানা গেল ডাক্তার সব সার্টিফিকেটই ভুয়া। সে আসলে ডাক্তারিতেই পড়াশোনা করেনি। কিন্তু কিভাবে সে এত রোগী দেখল, ট্রিটমেন্ট করল আর রোগী ভাল হল – এসব নিয়ে সবার ভেতরে একটা জল্পনা-কল্পনা থেকেই গেল।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৩

একদেশে ছিল এক কলেজ শিক্ষক। সে ছিল বিজ্ঞানের শিক্ষক। তার ছিল অনেক টাকা। সারা বছর সে প্রাইভেট তো পড়াতই তবে বিশেষ করে পরীক্ষার মাসে তার টাকা অনেক বেড়ে যেত। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে প্র্যাক্টিকেলের মার্কস আটকিয়ে দিত। তাই সব ছাত্রকেই বাধ্য হয়ে তার কাছে পড়তে হত। এই কারণে অনেক টাকা তার ঘরে আসত। সে এত প্রাইভেট পড়াত যে কলেজে পড়ানোর সময় সে পেতনা। অধিকাংশ সময় তারই ছাত্র দিয়ে সে ক্লাস করাত।

অনেক বড় বাড়ি বানিয়েছিল সে। ছিল তার প্রাইভেট কার। একদিন এইসব বাড়িঘর ছেড়ে সে চলে গেল। কেউ জানল না। কেন সে চলে গেল। কেবল কিছু ছাত্র আলাপ করছিল। সেই স্যারের বাসায় নাকি অনেক ছাত্র চিঠি লিখেছে। তারা অনেক টাকা দিবে। স্যার কি তার সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে দেবে কিনা।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৪

এক দেশে ছিল এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সে ক্লাস নিত না। তবে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিত। সে ছেলেদের সাথে কথা বলত না। তবে মেয়েদের সাথে হেসে কথা বলত। সে অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করত। কিন্তু কাউকে নম্বর দিতে কার্পন্য করত না। সে খুব অল্প সময়েই অনেক টাকা পয়সা পায়। সবই আসে তার কোচিং সেন্টার থেকে। তার নামে অনেক বই আছে। তবে বেশিরভাগই গাইড বই। তবে সেসব সে লিখে নাই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নামের একটা মূল্য আছে। সেই মূল্যটা সে বিক্রি করেছে। মানে অন্যেরাই বই লিখেছে। সেখানে তার নাম দিএওয়া হয়েছে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এর লেখক এটা দেখে ছাত্ররা বইটি কেনে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে সে বেশ ভাল নম্বর দিত বলে সে বেশ জনপ্রিয় ছিল।

একদিন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। সে অনুনয়-বিনয় করেছিল। বলেছিল দেখুন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের একটা মান সম্মান আছে। তার সাথে পুলিশের এই আচরণ করা উচিত নয়। পুলিশ সে কথা শুনেনি। পরে জানা যায় কোচিং এর মাধ্যমে সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করে ব্যবসা করত।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৫

এক দেশে ছিল এক নারীবাদী। তার ছিল ছোট ছোট চুল। কথা বলার সময় গম্ভীর হয়ে ঠোঁটে সিগারেট রেখে কথা বলত। কম বয়সী স্মার্ট ছেলেরা তার সাথে থাকত। তারা তাকে আপা আপা ডেকে অস্থির হযে যেত । মনে হত সেই সব ছেলেরা এই নারীবাদীর জন্য এখনই প্রাণ দিয়ে দিবে। সবাই ভেবেছিল সে বিয়ে করবে না। আর বিয়ে যদি করেই এমন কোনও ছেলেকে করবে যে তার চেয়ে বয়সে ছোট, এ তারচেয়ে একটু খাটো, যে তার চেয়ে একটু রোগা। একটু গরীব। কেননা এই ধরনের ছেলেরা তেমন বিরোধিতা করেনা। অন্ততপক্ষে শাসন করতে আসবে না। উল্টো সেই শাসন করতে পারবে।

একদিন সেই নারীবাদী কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করল। সবাই বেশ কৌতুহলি হল। কাউকে না জানিয়ে সে কাকে বিয়ে করল, এ নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা চলল। সব বন্ধুরাই না জানিয়েই দল বেধে বাড়িতে চলে এল। এসে দেখল সে যে ছেলেকে বিয়ে করেছে সে তারচেয়ে বয়সে বড়, তারচেয়ে লম্বা। তারচেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং ধনবান। সব বন্ধুরাই দাঁত চেপে মুখ চেপে হাসতে লাগল। সবার এমন অবস্থা দেখে নারীবাদী মেয়েটি বলল- শেষমেষ আমি বুঝেছি মেয়েরা যৌক্তিক ধর্ষনে আনন্দ পায়।
আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৬

সাম্রাজ্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীর মধ্যে একবার বন্ধুত্ব হয়। তারা সাধারণ মানুষের মাথায়এক ঝুড়ি কলা দেখে তাকে ঠকিয়ে কলা নেওয়ার বুদ্ধি করে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাধারণ মানুষটির সাথে বিনয়ের স্বরে বলে যে বহুদিন তার সাথে দৌঁড়ে পাল্লা দেবার ইচ্ছে, সে যদি অনুগ্রহ করে তবে তা সহজেই বাস্তবায়িত হবে। সাধারণ মানুষটি কলা রেখে সাম্রাজ্যবাদবিরোধীর সাথে দৌঁড়ায়। বেশ কিছু দূল যাবার পর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তার সাথে পরাজয় স্বীকার করে নেয়। দৌঁড়ানোর সময় সাম্রাজ্যবাদ কলা খেয়ে ফেলে।

এরপর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাম্রাজ্যবাদের কাছে আসে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধীকে দেখে তার গায়ের ওপর সাম্রাজ্যবাদ বমি করে দেয়। নদীতে গিয়ে সাম্রাজ্যবিরোধী গা ধুয়ে আসে। সাম্রাজ্যবাদ জিজ্ঞেস করে সে কিভাবে পরিস্কার করেছে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বলে ধোবা তাকে পরিস্কার করে দিয়েছে। এরপর সাম্রাজ্যবাদ ধোবার কাছে গেলে ধোবা সাম্রাজ্যবাদকে মেরে ফেলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৭

সচেতন সমাজ আর অচেতন সমাজ দুই বন্ধু। উভয়ে একদিন তাড়ি তৈরি করে। সচেতন সমাজ যে তাড়ি তৈরি করে তা বেশ ভাল হয় না। কিন্তু অচেতন সমাজের তাড়ি ভাল হয় । একদিন অচেতন সমাজ তাড়ি খেয়ে নেশায় পড়ে যায়। বেশি নেশায় পড়ে সচেতন সমাজকে অনেক গালিগালাজ করে।

একদিন সচেতন সমাজ বুদ্ধি করে। সবাইকে জানিয়ে রাখে যে অচেতন সমাজ আসলে চোর। সচেতন সমাজ রাস্তায় ডিম রেখে দেয় আর সবাইকে বলে রাখে এই ডিম ফেটে শব্দ হলেই বুঝবেন তারা এসেছে। তখন আপনারা ধরে মারধর করবেন।

একদিন অচেতন সমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে এই পথে হাঁটতে থাকে। ডিম ভেঙে শব্দ হওয়া মাত্র সবাই বের হয়ে অচেতন সমাজকে ধরে ফেলে এবং অনেক মারধর করে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৮

জনগণ আর রাষ্ট্র দুই বন্ধু। একবার দুইয়ে মিলে বীজ বপন করে। উভয়ে উভয়ের ফলন ভাগাভাগি করার প্রতিজ্ঞা করে। জনগণ পানি দেয় বলে গাছে ফল ধরে। আর রাষ্ট্র পানি দেয় না বলে গাছ মরে যায়।

জনগণ খেজুরের বীজ বোনে। খেজুর হয়। উভয়ে ভাগ করে খায়।

রাষ্ট্র ছাগল ছানার হার বোনে। কিন্তু এতে ফলন হয় না। কেউ খেতে পারে না।

একদিন জনগণ রাষ্ট্রকে ফাঁকিবাজ বলে ও নানা রকম ঠাট্টা করে।

এতে রাষ্ট্র ক্ষেপে গিয়ে জনগণকেই খেয়ে ফেলে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৪৯

রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এবার বন্ধুত্ব হয়। রাজনীতিবিদ প্রতিদিন মাংস আনত। আর সাধারণ মানুষ প্রতিদিন আনত ফুল ও মধু।

সাধারণ মানুষটি একদিন মধু এনে গোসল করতে যায়। এ সময় লুকিয়ে রাজনীতিবিদ সব মধু খেয়ে ফেলে। সাধারণ মানুষ এর প্রতিশোধ নেবার চিন্তা করে।

একদিন সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদের আনা মাংস লুকিয়ে খেয়ে ফেলে। রাজনীতিবিদ এসে দেখেন কোনও মাংস নেই। খুঁজতে খুঁজতে রাজনীতিবিদের সাধারণ মানুষের সাথে দেখা হয়। সাধারণ মানুষের শরীরের তখন ছিল রক্তের দাগ। এতে রাজনীতিবিদ বুঝতে পারে সেই মাংস লুকিয়ে খেয়েছে। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে রাজনীতিবিদ সাধারণ মানুষটিকে খুন করে।

যার ফলে এখনও পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের লড়াইয়ে রক্তের দাগ লেগে থাকে।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।

কথাকাহিনী-৫০

একবার শিক্ষিত আর অশিক্ষিত লোকের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। শিক্ষিত লোকটি এক পথচারীকে ঝুড়িতে করে মাছ নিতে দেখে তা চুরির বুদ্ধি করে। অশিক্ষিত লোকটি পথে মরার মত পড়ে থাকে। ঝুড়ি রেখে পথচারী অশিক্ষিত লোকটিকে দেখতে গেলে শিক্ষিত লোকটি মাছ চুরি করে নিয়ে নেয়।

শিক্ষিত লোক অশিক্ষিত লোককে দা আনতে পাঠায়। এরই ফাকে শিক্ষিত লোক সব মাছ খেয়ে ফেলে। অশিক্ষিত লোক এমন অবস্থায় আরও একজন অশিক্ষিত লোককে ডেকে আনে। তারা দুজনে মিলে শিক্ষিত লোকটিকে পেটায়।

এরপর থেকে শিক্ষিত লোক আর অশিক্ষিত রোক এক সাথে চলতে পারে না।

আমার কথা ফুরাল
নটে গাছটা মোড়াল।