Tuesday, January 9, 2024

ভাট কবিতা দুপুর মিত্র

 

 

ভাট কবিতা  ১

 

সমস্ত গ্রাম জানে

অন্ধকার গভীর হলেই বাঘ এসে হানা দেয়

প্রতিদিন কোন না কোন মানুষ খায়

আর ভরপেটে চলে যায় গভীর বনে

বাঘের চোখে জ্বলে লাল আগুন আর প্রতিশোধের রক্ত

এই গ্রামের মানুষ বাঘের সাথে শিকারে বের হয়

সারারাত শিকার করে

 

ঘন অন্ধকারে বাঘের বেশে আসে তাদের পিতৃপুরুষ

প্রতিদিন একজন করে মানুষ স্বেচ্ছায়

পিতৃপুরুষের কাছে যায়

বাঘ তাকে পরমযত্নে খেয়ে নেয়

যে মানুষ বাঘের পেটে যায়

সে মানুষের আত্মা চলে যায় স্বর্গের দেশে

 

 


ভাট কবিতা ২

 

লোকটা ঘরে ঢুকলেই রাক্ষসের গন্ধ পেত

জেগে থাকত সারারাত

কোন কথা বলত না

সমস্ত আলমিরা, ফ্রিজ, ঘরের আনাচে কানাচে খুঁজে বেড়াত

ভয়ে সে রাক্ষসের নাম পর্যন্ত বলত না

শুধু বিড়বিড় করত

খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত বিছানায়

গন্ধ তত তীব্র হত

একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল

তার চোখ লাল ফুলের মত ফুটে আছে

আর ভয়ার্ত স্ত্রী গলার হারের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে

তাদের একমাত্র সন্তান, ডালিম কুমারকে

 

 

 

ভাট কবিতা ৩

ছিদ্র পাত্রে পানি এনে যে পুকুর ভরাট করেছিল
তার নাম বৃষ্টি
তবু এক মুঠো ছাই হাতে দাঁড়িয়ে ছিল বাতাস
ঘন কুয়াশায় অন্ধকার করে রেখেছিল পৃথিবী
এক রাতে পাহাড় কেটে যে ফলেছিল ফসল
তার ঘরে ঢুকে পড়েছিল হাঁসপরীর হাঁসি
হয়ত সেই জানত
চিরুনি ফেলে দিলে পশ্চাতে গড়ে উঠে ঘন জঙ্গল
যে যুবকের জামা ছুঁড়ে মারলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়
সে স্বপ্নে দেখে তার চুল সাপ হয়ে নড়ছে
তবু মরা গাছে কেউ একজন ফুল ফোটায়
রাজার সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।-

 

ভাট কবিতা ৪

 

দূর থেকে কোন এক আমলার নিঃশ্বাস এসে লাগে গায়ে

মন্ত্র বলে ডেকে আনে পাখি

খাদ্যের সন্ধানে যে যুবক যাত্রা করে বিদেশ

সে নদীর পানি পান করে মরে পেট ফেটে

অথবা এক রাতে রাজপ্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছিল সেই আমলা

আর যে যুবক একদিন আগুনে প্রবেশ করেছিল

সে লাশ নয়

ঠিক জ্যান্ত হয়ে ফেরে

 

ভাট কবিতা  ৫

 

এই হাত শুধু প্রেমিকের নয়

এই হাত হয়ে উঠতে পারে সর্বগ্রাসী একটি ব্যাঙ

যার পেটের ভেতর উড়ে বেড়াতে পারে

অজস্র ড্রাগন ফ্লাই

যেদিন চখা আহত হবার ভান করে পড়েছিল রাস্তায়

সেদিন বক লুকোচুরি খেলেছিল বালিকাদের সাথে

অতিআগ্রহী চালাকেরা শেষমেষ ঝুড়িতে প্রবেশ করে মরে

এই হাত স্পর্শ করেছিল সেইসব মৃতদেহ

কতজন পাগল আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে বনে চলে যায়

এই হাত কুঠারের মত কাঠ কেটে ঘরে ফেরে ঠিকই

দেখা করে প্রতিদিন শ্বেতশুভ্র খরগোশের সাথে

 

 

ভাট কবিতা ৬

তাই তাই তাই

রোদের বুকে আলো খেলে

শিমুল তুলো ওড়াই

যেখানে নদীর স্রোতের শুরু

সেখানে সাঁতরাই

তাই তাই তাই

বৃষ্টির জলে

সবুজ গলে

মাঠের কাছে যাই

মাঠের ওপর শুয়ে দেখি

আকাশ কাছে নাই

তাই তাই তাই

বন্যা খড়া বৃষ্টি হল

কতশত খবর এল

তোমার খবর নাই

রাতের কাছে চিঠি লিখি

দিনের দেখা পাই

তাই তাই তাই

নদীর বুকে ভালবাসা

হাঁসের চোখে কত আশা

পথে পথে ছড়াই

ঘুমের ভেতর চেয়ে থাকি

মনে মনে কত ডাকি

যদি দেখা পাই

হঠাৎ কারও সুর শুনি

কত ধ্বনি প্রতিধ্বনি

আজও হাতড়াই

তাই তাই তাই

 

ভাট কবিতা 

 

এই তো শস্য হল ফসল হল মাঠ ভরে

হাসি তবু নেই মুখে টাকা নাই ঘরে

কত কষ্ট কত ঘামে ফসল ফলে

আড়ৎ দারের মুখে শুধু হাসির দৌড় চলে

ধানের গাছের মুথা পুড়ে ভাত রান্না হয়

ভাতের সাথে নুন শুধু আর কিছু নয়

চায়ের দোকানে বসে কৃষক বাংলা সিনেমা দেখে

অল্প জমিতে অধিক ফসল হয় কিভাবে শেখে

ফলন বাড়ে টাকা বাড়ে কত টাকা বাড়ে

অভাব শুধু লেগে থাকে অভাব না ছাড়ে

রাতের বেলা পুকুর জলে তারামাছ হাঁটে

সকাল বেলা কৃষকবধূ সেই মাছ কাটে

সকাল-বিকাল তারা দিয়ে ভাত খায় কৃষক

দুপুর বেলা রোদে দেয় বিছানার তোষক

দিন যায় রাত যায় বাড়ে শুধু দেনা

কৃষক শুধু কৃষক থাকে অভাব ছাড়ে না

 

ভাট কবিতা  

পাহাড় ভায়া পাহাড় ভায়া

কেন থাক চুপ

আদিবাসী জীবন দেখ

নেই কি কোন রূপ

পাহাড়ি নদী পাহাড়ি নদী

কেন বও নিরবধি

কোথায় তোমার ক্ষিপ্রগতি

জীবনের দিকে চাও

বনের মানুষের কথাসব

বয়ে নিয়ে যাও

বনের গাছ বনের গাছ

কেন এত কিচির মিচির

দেখ না কত নজির

কষ্ট মানুষের

পাতাদের সুরে সুরে

কিছুটা সময় জুড়ে

কেন গান নাই তাদের

ভাট কবিতা ৯

সবুজ গ্রাম ছেড়ে                        সবুজ পাহাড় ছেড়ে

কোন দেশে এলাম হঠাৎ

সারারাত আলো জ্বলে                   যন্ত্রের শব্দ গলে

রাতঘুমে কার সাক্ষাৎ

আমার আদিবাসী জীবন               রয়েছে পাখির মন

পারিনা কি থাকতে শহরে

কলাপাতায় মোড়ে          বাঁশের চোঙাতে ভরে

কষ্ট কি যাবে না উড়ে

কাঁচা আলের উপর দিয়ে     স্ত্রী-পুত্র-কন্যা কাঁদিয়ে

আলোর শহরে জ্বলে চোখ

স্বপ্ন খেতে আসে ইঁদুর       ভাসতে ভাসতে কতদূর

মুখে ভাসে কাদের অসুখ

 

ভাট কবিতা ১০

ছোট বেলার ডাইনিটা এখনও আসে বাজারে

সন্ধ্যা বেলায় আসে

চারপাশে ধূলো ওড়ে

শো শো শব্দ করে

নেমে আসে রাত

হঠাৎ সব কিছু নিরব হয়ে যায়

দুধের বাজারে কোন দুধ থাকে না

সারারাত ঘরে ঘরে কেঁদে যায় শিশু

সকালে কয়েকজন দুধওয়ালার মৃত দেহ পাওয়া যায়

 

ভাট কবিতা  ১১

 

একবার স্বপ্নে লক্ষ্মী পেঁচা এসে বলল

তুমি বাজার থেকে সার কিনে এনে দাও জমিতে অনেক ফসল ফলবে

কিষাণ সকালে না খেয়ে শহর থেকে সার কিনে এনে দিল জমির গায়ে

কিষাণ সারাদিন  খেটেখুটে অনেক ফসলের স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে

দিন যায় মাস যায় বছর যায়

কিষাণের পেট হু হু করে কেঁদে ওঠে

আরেকবার স্বপ্নে পঙ্খিরাজ ঘোড়া এসে বলল

আগাছা মাড়াই কর ওষুধ ছিটিয়ে

শহর থেকে নামিদামি ওষুধ এনে দিল

এবার ফলে ওঠ ফসল

দিন যায় মাস যায় বছর যায়

কিষাণীর চোখ জুড়ে হাহাকার কেঁদে ওঠে

তারপর একদিন মোবাইল ফোন পেল কৃষক স্বপ্নে

দিন-রাত ফোন করে যায় পেঁচা আর ঘোড়ার কাছে

একটা শহুরে মেয়ে অপেক্ষা করুন বলে আর ফিরে আসে না।

 

ভাট কবিতা ১২

 

ওয়ান টু থ্রি

যাব চাঁদের বাড়ি

নাই যে কোন গাড়ি

পকেটে নাই টাকা

আকাশখানি  বাকা

চাঁদের মুখে মিষ্টি হাসি

বাসী কথা ফলে বেশি

পুকুরঘাটে চাঁদ

মা আজ ইলিশ রেঁধেছে

ঘরে খুশির হাট

 

 

 

 

 

ভাট কবিতা ১৩

মাটি কোথায়

সরে গেছে

কোথায় গেছে

নদী জানে

নদী কোথায়

চোখের ভেতর

চোখ কোথায়

স্বপ্ন জানে

স্বপ্ন কোথায়

রাত্রি জানে

রাত্রি কোথায়

বিশ্ব জানে

বিশ্ব কোথায়

মাটি জানে

মাটি কোথায়

সরে গেছে

 

 

 

ভাট কবিতা ১৪

ইকরি মিকরি চাম চিকরি
রাজার কাছে যাই

রাজা এল গুলি নিয়ে

বাড়ি ফিরে যাই

বাড়ি যাব বাড়ি যাব

বাড়ি গিয়ে কি করব

ঘরে শান্তি নাই

গাড়ি দিয়ে নেতা আসে

নেতারা সব মাচায় বসে

বক্তৃতা দিয়ে যায়

আমরা সবাই খারাপ লোক

হাসতে হাসতে আমরা

ন্যাংটো হয়ে যাই

ন্যাংটো লোকের হাসি দেখে

আমলারা সব ছুটে আসে

মাইনে বেড়েছে সবার

ন্যাংটো মানুষ মার খেল

রক্ত ঝড়ল রক্ত ঝড়ল

কার কাছে যাই

ইকরি মিকরি চাম চিকরি
রাজার কাছে যাই

রাজা এল গুলি নিয়ে

বাড়ি ফিরে যাই

 

 

ভাট কবিতা ১৫

ইচিং বিচিং চিচিং ছা
গাছের পাতা পড়ে যা
মাটিতে পড়ল পাতা
হাত হল কাটা
পাতা গেল মাটির ঘরে
ভালবাসা লুটে পড়ে
ইচিং বিচিং চিচিং ছা
পাতা তুই উড়ে যা
উড়ে উড়ে কোথায় যাবি
গানের বাড়ি যেখানে পাবি
গানের বাড়ি গেলি না
আমার কথা মানলি না
পাতা তুই কেমন নারী
আমার সাথে তোর আড়ি

ভাট কবিতা ১৬
কান্না এসে জমছে শহর
সুখ বসে থাকে পরের ঘর
টবে টবে বাড়ে স্বপ্নের সর
কালো রাস্তায় নামে ব্যর্থ বহর
গোপনে গোপনে ধেয়ে আসে ঝড়

 


ভাট কবিতা ১৭

লাল জোনাকি নীল জোনাকি
একটা ছবি আঁকতো দেখি
নারে বাবা আঁকব না
রঙ হারালে বাঁচব না
সুতা কেটে দিয়ে
ঘুড়ি দেব উড়িয়ে
লাল ফড়িং নীল ফড়িং
একটু ঘরে আসতো দেখি
নারে বাবা আসব না
ঘরে থাকলে বাঁচব না
আকাশে আকাশে গিয়ে
জীবন দেব ছড়িয়ে

ভাট কবিতা ১৮
সমুদ্রের বুকে কে
আমি ঢেউ রে
কি খাস
জীবন
জীবনের দাম কত
এইটা
জীবনের দাম দিবি কবে
যে কোন বার
কয় ভাই
পাঁচ ভাই
এক ভাই দিয়ে যা
ছুঁতে পারলে নিয়ে যা

ভাট কবিতা ১৯

কানা মাছি ভো ভো
বাজারে বাজারে স্বপ্ন ছো
নানান রকম স্বপ্ন থাকে বাজারে বাজারে
কেউ ধনী হয় কেউ গরীব হয় হাজারে হাজারে
মালিকেরা স্বপ্ন বানায় স্বপ্ন বেচে দোকানদার
কেউ কেউ স্বপ্ন কিনে জমিয়ে রাখে স্বপ্ন বেচার আড়ৎদার
কানা মাছি ভো ভো
তৃতীয় বিশ্বের স্বপ্ন ছো
সামান্য কটা ভাত পেতে চাই
থাকার একটু জায়গা চাই
এমন স্বপ্ন কোথাও নাই কোন বাজারে
এমন স্বপ্নের কারখানা নাই
মালিক নাই উৎপাদন নাই
শুধু এমন স্বপ্ন দেখে মানুষ হাজারে হাজারে

 

ভাট কবিতা ২০
সারারাত সমুদ্রে মাছ ধরল চাষী
জালে জালে উঠল তারাদের হাসি
আকাশে তাকিয়ে দেখি তারা নেই তেমন
নৌকোয় লাফাচ্ছে ওরা মাছেরা যেমন
মাছ নেই মাছ নেই ডালা ভর্তি তারা
সারারাত জেলেদের চোখ ঘুমহারা
সেই তারা নিয়ে এল বাজারে বাজারে
নতুন মাছ কিনল মানুষ হাজারে হাজারে
হাজারে হাজারে মানুষ কিনল মৃত তারা
তারা খেয়ে মানুষেরা হল ঘুমহারা
সেই থেকে শহরের মানুষ দিনেতে ঘুমায়
সারারাত জেগে থাকে আলোরে চুমায়
দিনের বেলা শহর হয় রাতের মত
রাতের বেলা শহরে জাগে দিনের ক্ষত

 

ভাট কবিতা ২১
সকাল সকাল উঠে বধূ বাগানেতে যায়
লাল নীল ফুল তোলে ফুলদানি সাজায়
প্রতিদিন উঠে বধূ প্রতিদিন তুলে ফুল
প্রতিদিন ফুলদানি গন্ধে ব্যাকুল
ফুলে ফুলে ভরে উঠে ছোট সংসার
ঘরেতে আনন্দ বধূর মুখে হাসি তার
একদিন সেই গন্ধে ঢুকে পড়ে সাপ
মৃত ফুলের গন্ধে জাগে কার অভিশাপ
সেই সাপ কামড় দিল স্বামীর পায়ে
ফুলের গন্ধে লাগে অভিশাপ গায়ে
হাসি নয় খুশি নয় দুঃখ ঢুকে ঘরে
বাগানের ফুল নয় মৃত ফুল ওরে
সেই থেকে কুলবধূ কথা না কয়
ফুলদানি ভাঙে বধূ ভাঙে তার হৃদয়

 

 

 

 

ভাট কবিতা ২২
এত অপরূপ দেহ উজ্জ্বল বর্ণ তার
পৃথিবীর কেউ নয় যেন অবতার
যে তারে দেখে তড়িৎ আকৃষ্ট হয়
প্রেমেতে মজে যায় আর কিছু নয়
এমনতর রূপ নিয়ে শুয়ে থাকে পুকুর
সারারাত ধরে ডাকে পাড়ার কুকুর
গভীররাতে বেড়ে উঠে পুকুরের জল
কার হাসির শব্দ যেন কার রূপের ছল
প্রতিরাতে ঘর ছেড়ে একজন করে মানুষ বের হয়
প্রতি সকাল উঠে মানুষ আর দেখা নয়
কে যায় কোথায় যায় আর দেখা না মিলে
হঠাৎ করে ভাসে লাশ পুকুরের জলে
কার রূপে মুগ্ধ হয় কার গুণে মানুষ
প্রতি রাতে কে হারায় কে উড়ায় ফানুস

 

ভাট কবিতা  ২৩

সারারাত ধরে সে দেয়াল রঙ করে
সকালবেলা দেয়াল অন্য রঙ ধরে
সারারাত ধরে দেয়াল সবুজ রঙ করল
সকাল বেলা সেই দেয়াল হলুদ হয়ে উঠল
পরদিন রাতের বেলা দেয়াল করল লাল
লাল আর লাল নেই নীল হল দেয়াল
এইভাবে প্রতিরাতে রঙ পাল্টায়
চুপিচুপি কেউ এসে পৃষ্ঠা উল্টায়
কে করে এইসব কেউ না জানে
হাহাকার কেঁদে উঠে মনে আর প্রাণে

 

ভাট কবিতা ২৪
কেউ কথা বললেই গোলাপের পাপড়ি যায় ঝরে
ঝরে যায় উড়ে উড়ে মাটিতে এসে পড়ে
গোলাপের পাপড়ি টানে পিঁপড়া কতশত
ভালবাসা কার চোখে অশ্রুর মতো
সেই থেকে গোলাপের সাথে কথা বলে না তো কেউ
ফুল ফোটে বড় হয় জাগে শুধু ঢেউ

 

ভাট কবিতা ২৫
খোপের ভিতর কবুতর জোড়া রাখতে হয়
তা না হলে চলে যায় দূরে বোধহয়
কতদূরে যায় তারা কেউ না জানে
খোপ খালি পড়ে থাকে কষ্ট নিয়ে প্রাণে
সাথী যদি পায় তাকে সাথে নিয়ে আসে
সারারাত কথা কয় ভাল কত বাসে
সাথী যদি না পায় একা পড়ে থাকে
একদিন মরে যায় দুঃখ পড়ে থাকে

 

ভাট কবিতা ২৬

বাতাসের গন্ধেই সে টের পেত সব
কার কান্না পোড়ে কার পড়ে আছে শব
কোন ফুলে ব্যাখ্যা ফোটে কোন ফলে দর্শন
কোন নদী ভাসায় কার দশানন
একদিন পড়ে থাকল সেই গন্ধরাজ
বাতাসে ছিল না গন্ধ ছিল শুধু সাজ

লোক( ভাট) কবিতা ২৭

এখনো ভেসে ওঠে জয়ানন্দের লাশ

মন্দিরে বসে থাকেন চন্দ্রাবতী

সন্ধ্যা হলেই কার কান্না শোনা যায়

আলো জ্বেলে কে দেয় আরতি

দুজনেই ভেসে গেছে

দুজনেই ভেসে যায়

যে নদীতে ভাসল তারা

সে নদীও শুকিয়ে যায়

তবু রাত-বিরাতে জয়ানন্দ-চন্দ্রাবতী নাচে

ঘরে ঘরে মানুষকবিরা স্বপ্নে সাজে

 

ভাট কবিতা ২৮

 

শহরে শুধু বিষ

উন্নয়নের দাঁত

হৃদয়ে হৃদয়ে পড়ছে ছড়িয়ে

দিও না তোমার হাত

বিষের ওপর বেড়ায় ভাগ্য

কার হাতে গিয়ে পড়ে

হয়ত পেয়েছ কিছু

এ শহর মনে রাখে না তোমারে

ব্যাংকে ব্যাংকে লুকিয়ে রেখেছ

ভাগ্য তোমার

একদিন সব লুট হয়ে যায়

যেন নাই কিছু করার